🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🦜শ্রীশ্রীগৌর লীলামৃত🦜

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গজয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌরভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্তকোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’

 

নমস্ত্রিকাল - সত্যায়জগন্নাথসুতায়চ।

স - ভৃত্যায়স -পুত্রায়স - কলত্রায়তেনমঃ।।

🍁দিব‍্যোন্মাদ অবস্থায় মহাপ্রভুর প্রলাপ🍁

একদিন মহাপ্রভু স্বপ্নে রাসলীলা দর্শন করছেন,-

''ত্রিভঙ্গ সুন্দর দেহ মুরলীবদন ।

পীতাম্বর বনমালা মদন মোহন ।।

মণ্ডলীবন্ধে গোপীগণ করেন নর্ত্তন।

মধ্যে রাধাসহ নাচে ব্রজেন্দ্র নন্দন ।।

দেখি প্রভু সেই রসে আবিষ্ট হইলা ।

বৃন্দাবনে কৃষ্ণ পাইনু, এ জ্ঞান হৈলা।।

প্রভুর বিলম্ব দেখি গোবিন্দ জাগাইলা।

জাগিলে স্বপ্নজ্ঞান হৈল প্রভু দুঃখী হৈলা ।।‘’

প্ৰভু জেগে উঠে বাহ্যজ্ঞানের উদয়ে দুঃখিত হলেন । অভ্যাস বশতঃ নিত্যকৃত্য সমাপন করে যথাসময়ে জগন্নাথ দৰ্শন করলেন। তিনি প্রতিদিনের মত গরুড় স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে জগন্নাথ দৰ্শন করছিলেন। একজন উৎকলবাসী রমণী লোকের ভিড়ে জগন্নাথ দর্শনে অসমর্থ হয়ে গরুড় স্তম্ভে চড়ে অজ্ঞাতসারে প্রভুর কাঁধে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে জগন্নাথ দেখছিলেন । গোবিন্দ দেখতে পেয়ে ঐ রমণীকে ভর্ৎসনা করতে লাগলেন । প্ৰভু বললেন,- ‘’গোবিন্দ, ওঁকে কিছু বোলোনা, উনি আপন ইচ্ছামত জগন্নাথ দর্শন করুন।‘’ স্ত্রীলোকটি কিন্তু নিজের ঘোরতর অপরাধ বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ মাটিতে নেমে আৰ্ত্তি প্ৰকাশ করতে লাগলেন। প্ৰভু তা দেখে বললেন,- ''আহা! জগন্নাথ আমাকে আপনার মত আৰ্ত্তি দিলেন না।''

আদিবস্যা এই স্ত্রীকে না কর বর্জন ।

করুক যথেষ্ট জগন্নাথ দরশন।।

আস্তেব্যস্তে সেই নারী ভূমিতে নামিলা।

মহাপ্ৰভু দেখি তাঁর চরণ বন্দিলা ॥

তার আৰ্ত্তি দেখি প্ৰভু কহিতে লাগিলা ।

এত আর্ত্তি জগন্নাথ মোরে নাহি দিলা ।।

জগন্নাথে আবিষ্ট ইহার তনু মন প্ৰাণে ।

মোর কান্ধে পদ দিয়াছে ইহা নাহি জানে ॥

অহো ! ভাগ্যবতী। এই বন্দ ইহার পায় ।

ইহার প্রসাদে ঐছে আর্ত্তি আমার বা হয় ।।

 

মহাপ্রভু বললেন,- ''এই নারী অতি ভাগ্যবতী, জগন্নাথ দেব তাঁর দেহ-মনকে এতটাই আবিষ্ট করেছিলেন যে তাঁর কোন হুঁশই ছিলনা।সেজন্যে তিনি জানতেন না যে উনি আমার কাঁধে পা রেখেছেন ! আমি তাঁর চরণে প্রার্থনা করি যে, তাঁর মতো জগন্নাথ দর্শনের আর্তি লাভের জন্য তিনি যেন আমাকে অনুগ্রহ করেন। "  (চৈতন্য চরিতামৃত/ অন্ত্য /১৪:২৮-৩০ )

 

প্ৰভু এতক্ষণ স্বপ্নে দেখা শ্ৰীবৃন্দাবন লীলাই দৰ্শন করছিলেন । এরপর তাঁর মনে হল , তিনি স্বয়ং রাধারাণী, কুরুক্ষেত্রে কৃষ্ণ সন্দর্শনে এসেছেন । বাসায় ফিরে এসে ভূতলে বসে নখ দ্বারা ভূমি লেখনে প্ৰবৃত্ত হলেন । চোখের জলে মৃত্তিকা কর্দমময় হতে লাগল। দেহের স্বভাবে স্নান- ভোজনাদিও করলেন । ক্রমে রাত্ৰি হলে স্বরূপ ও রামানন্দ এসে সাক্ষাৎ করলেন । শ্রীকৃষ্ণের  বিরহজনিত বিভ্রমবশে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর মন, দেহ ও বুদ্ধি দ্বারা যে সমস্ত ভাব-চেষ্টা আদি প্রকটন করেছিলেন, নীচের পদ‍্যাংশে তারই কিছুটা অংশ বলা হয়েছে । উদ্ধব- দর্শনে যেমন রাধার বিলাপ, রাধিকার ভাবে বিভাবিত মহাপ্রভুর সেরকমই উন্মাদ- প্রলাপ হতে লাগল । অধিরূঢ় ভাবে দিব্যোন্মাদ অবস্থায় প্রলাপ হয়।

 যথা রাগঃ

প্রাপ্ত রত্ন হারাইয়া, তার গুণ সঙরিয়া,

মহাপ্রভু সন্তাপে বিহ্বল।

রায় স্বরূপের কণ্ঠে ধরি, কহে হাহা! হরি! হরি!

ধৈর্য্য গেল হইল চপল॥

 

শুন বান্ধব! কৃষ্ণের মাধুরী।

যার লোভে মোর মন, ছাড়িলেক বেদ ধর্ম্ম,

যোগী হইয়া হইল ভিখারী॥ ধ্রু॥

টীকা:– স্বরূপ রামানন্দকে শ্রীচৈতন্য বলছেন, আমার আত্মা কৃষ্ণরত্ন হারিয়ে দেহরূপ গৃহ পরিত্যাগ করে কাপালিকের ধৰ্ম্ম অবলম্বন করে ইন্দ্রিয় রূপ শিষ্যবৃন্দের সঙ্গে বৃন্দাবনে গমন করেছে ।

 

কৃষ্ণলীলা মণ্ডল (ক), শুদ্ধ শঙ্খ কুণ্ডল,

গড়িয়াছে শুক - কারিকর।

সে কুণ্ডল কানে পরি , তৃষ্ণা লাউথালি ধরি ,

আশা ঝুলি স্কন্ধের উপর॥

 

চিন্তা-কান্থা উড়ি গায়, ধূলিবিভূতি মলিন কায়

হাহা! কৃষ্ণ প্রলাপ উত্তর।

উদ্বেগ দ্বাদশ হাতে, লোভের ঝুলনী মাথে,

ভিক্ষাভাবে ক্ষীণ কলেবর॥

 

ব্যাসশুকাদি যোগিগণ কৃষ্ণ আত্মা নিরঞ্জন(খ)

ব্রজে তাঁর যত লীলাগণ।

ভাগবতাদি শাস্ত্রগণে, করিয়াছেন বর্ণনে,

সেই তর্জ্জা (গ) পড়ে অনুক্ষণ॥

 

দশেন্দ্রিয় শিষ্য করি , মহাবাউল নাম ধরি,

শিষ্য লঞা করিনু গমন।

মোর দেহ স্বসদন , বিষয় ভোগ মহাধন,

সব ছাড়ি গেলা বৃন্দাবন॥

 

বৃন্দাবনে প্রজাগণ, যত স্থাবর জঙ্গম,

বৃক্ষলতা গৃহস্থ আশ্রমে।

তার ঘরে ভিক্ষাটন , ফল মূল পত্রাশন,

এই বৃত্তি (ঘ) করে শিষ্যসনে॥

 

কৃষ্ণগুণ রূপরস, (ঙ) শব্দ গন্ধ পরশ,

সে সুধা আস্বাদে গোপীগণ।

তাসবার গ্রাস শেষে, আনি পঞ্চেন্দ্রিয় শিষ্যে,

সে ভিক্ষায় রাখেন জীবন॥

 

শূন্য কুঞ্জ মণ্ডপ কোণে যোগাভ্যাস কৃষ্ণধ্যানে,

তাঁহা রহে লঞা শিষ্যগণ।

কৃষ্ণ আত্মা নিরঞ্জন , সাক্ষাৎ দেখিতে মন,

ধ্যানে রাত্রি করে জাগরণ॥

 

মন কৃষ্ণ বিয়োগী , দুঃখে মন হৈল যোগী,

সে বিয়োগে দশ দশা হয়।

সে দশায় ব্যাকুল হঞা , মন গেল পলাইয়া,

শূন্য মোর শরীর আলয়॥

 

কৃষ্ণের বিয়োগে গোপীর দশ দশা হয় ।

সেই দশ দশা (চ) হয় প্রভুর উদয় ।।

টীকা:–

[(ক) কৃষ্ণলীলা সমুহ রূপ সকল মালিন্যমুক্ত শঙ্খের কর্ণভূষণ যা ব্যাসপুত্র শুকদেব নির্ম্মান করেছেন (অর্থাৎ শ্রীমদ্ভাগবত রচনা করেছেন ), তা ভূষণরূপে কর্ণে ধারণ করে (অর্থাৎ শ্রবণ করে ) , তৃষ্ণারূপ লাউয়ের ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে, (কৃষ্ণপ্রাপ্তির জন্য ) আশা-ঝুলি কাঁধে নিয়ে, কৃষ্ণচিন্তা -রূপ কাঁথা গায়ে দিয়ে, বিভূতিরূপ (কৃষ্ণপ্রাপ্তির অস্থিরতায় মাটিতে গড়াগড়ি দেবার ফলে ) সর্ব্বাঙ্গে ধূলা মেখে, হা কৃষ্ণ হা কৃষ্ণ ইত্যাদি প্রলাপ বাক্য উচ্চারণ করে, মনের উদ্বেগরূপ দ্বাদশ যষ্টি ( লাঠি ) হাতে নিয়ে, লোভরূপ পাগড়ী (ঝুলনি ) মাথায় ধারণ করে ভিক্ষার অভাবে (কৃষ্ণ অদর্শনে) ক্ষীণতনু হয়েছেন ।

 

এখানে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যে যোগীসুলভ রূপ আরোপিত হয়েছে । যোগীদের কানে কুণ্ডল , হাতে লাউয়ের পাত্র, গায়ে কাঁথা , সর্ব্বাঙ্গে ভস্ম বিভূতি , মাথায় পাগড়ী থাকে । ( গুরুদত্ত দ্বাদশ গুণসূত্র দ্বাদশ দণ্ড ) ।

( খ ) নিরঞ্জন — কৃষ্ণ পরমাত্মা , তাঁতে কোন অঞ্জন বা মায়ার বর্ণ নেই ।

(গ) তর্জ্জা — হেঁয়ালী ।

(ঘ) বৃত্তি — জীবিকা নির্বাহ । স্থাবর ও জঙ্গম — এই দুই রকমের প্রজা । যোগীরা গৃহস্থের কাছে যেমন ভিক্ষা করেন , মহাপ্রভুর মনোরূপ যোগীও বৃন্দাবনের বৃক্ষলতাদির কাছে ( স্থাবর প্রজা ) সশিষ্য ফলমূল ভিক্ষা করেন ।

(ঙ) ভগবান শ্রীকৃষ্ণে রূপ-রসাদি পঞ্চগুণ একমাত্র বৃন্দাবনের মধুর ভাবাশ্রিতা গোপীরাই আস্বাদন করেছিলেন । সুতরাং সেই (জঙ্গম — প্রজারূপ ) গোপীদের ভুক্তাবশেষ ভিক্ষা করে আপন পঞ্চেন্দ্রিয় রূপ শিষ্যদের সাথে গ্রহন করে জীবন রক্ষা করেন ।

( চ ) চিন্তা, অনিদ্রা, উদ্বেগ, ক্ষীণতা, অঙ্গমালিন্য, প্ৰলাপ, পীড়া, উন্মত্ততা, মোহ এবং নিস্পন্দতা — এই দশটি লক্ষণের নাম দশ দশা ॥ ]

(১)

জয় জয় জগন্নাথ সচীর নন্দন।

ত্রিভূবন করে যাঁ'র চরণ বন্দন।। 

(২)

নিলাচলে সঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-ধর।

নদীয়া নগরে দণ্ড-কমণ্ডলু কর।।

(৩)

কেহ বলে,- 'পুরবেতে রাবণ বধিলা'।

গোলোকের বৈভব লিলা প্রকাশ করিলা।।

(৪)

শ্রীরাধার ভাবে এবে গোরা অবতার।

''হরে কৃষ্ণ'' - নাম গৌর করিলা প্রচার।।

(৫)

বাসুদেব ঘোষ বলে করি' জোড হাত।

যেই গৌর, সেই কৃষ্ণ, সেই জগন্নাথ।।

🏵️জয় গৌর🏵️জয় নিতাই🏵️জয় গৌর🏵️জয় নিতাই🏵️