🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

🦚শ্রীকৃষ্ণের পুষ্যাভিষেক যাত্রা🦚

🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I আজ শ্রীকৃষ্ণের পুষ্যাভিষেক যাত্রা উপলক্ষ্যে সবাইকে জানাই কৃষ্ণপ্রীতি এবং শুভেচ্ছা । শাস্ত্রে কথিত হয়েছে,-

‘’অনুগ্রহায় ভূতানাং মানুষং দেহমাশ্রিতঃ।

ভজতে তাদৃশীঃ ক্রীড়াঃ যাঃ শ্রুত্বা তৎপরো ভবেৎ।।‘’     ( ভা - ১০/২৪/২৭ )

অর্থাৎ,- ''ভগবান ভক্ত-অভক্ত নির্বিশেষে সকলকে অনুগ্রহ করবার জন্য গোলকধাম থেকে ভূলোকে এসে লীলা করেন।''

স্কন্দপুরাণে শ্রীকৃষ্ণের দ্বাদশ মাসে দ্বাদশ যাত্রার উল্লেখ আছে,- বৎসরের প্রতিমাসে বিষ্ণুর এক এক উৎসব। বৈশাখে - চন্দনযাত্রা, জ্যৈষ্ঠে - স্নানযাত্রা, আষাঢ়ে - রথযাত্রা, শ্রাবণে - শয়ন যাত্রা, ভাদ্রে - দক্ষিণ পার্শ্বপরিবর্তন যাত্রা, আশ্বিনে - বামপার্শ্ব পরিবর্তন যাত্রা, কাৰ্ত্তিকে - উত্থান যাত্রা, অগ্রহায়ণে - ছাদন যাত্রা, পৌষে - পুষ্যাভিষেক যাত্রা, মাঘে - শাল্যোদনী যাত্রা, ফাল্গুনে - দোল যাত্রা ও চৈত্রে - মদনভঞ্জিকা যাত্রা। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য বৈষ্ণবীয় উৎসব গুলি হল,- ঝুলনযাত্রা, জন্মাষ্টমী ও রাসযাত্রা; যেগুলি মহাধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে। স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে পুষ্যাভিষেক যাত্রা মূলত শ্রীপুরী জগন্নাথ মন্দিরের দ্বাদশ যাত্রার একটি, এই তিথিতে শ্রীদারুব্রক্মের বিজয় বিগ্রহ শ্রীমদনমােহনের বিশেষ অভিষেক, শৃঙ্গারাদি হয়ে থাকে, সে থেকেই পুষ্যাভিষেক অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এখন সেটাকে কেন্দ্র করেই শ্রীশ্রীরাধা-মাধবের এদিনে পুষ্প শৃঙ্গার ও অভিষেকাদি হয়ে থাকে।

পুষ্যাভিষেক বা পুষ্প অভিষেক কি ?

পৌষ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অনুষ্ঠেয় শ্রীশ্রী রাধা-কৃষ্ণের অভিষেক অনুষ্ঠান। পুষ্যা নক্ষত্রে এই অভিষেক হয়েছিল তাই পুষ্যাভিষেক। এইদিন নানা রঙ্গের ফুল দিয়ে শ্রী শ্রী রাধামাধবকে অনেক আড়ম্বরপূর্ণভাবে অভিষেক করে বলে অনেকে পুষ্পাভিষেকও বলে। ব্রজলীলায় এইদিন ব্রজগোপীগণ পরম আদরে শ্রীশ্রীরাধা-শ্যামসুন্দরকে বহুবিধ বনফুল দিয়ে সাজিয়েছিলেন। রাধাকৃষ্ণের নিত্য চিন্ময় সেবা সুখ বৃদ্ধিই ব্রজ গোপীকাদের একমাত্র মনােবাঞ্ছা। যুগল স্বরূপের আনন্দ বর্ধনই তাদের প্রাত্যহিক কর্ম। ব্রজগোপীরা এইদিন ব্রজেশ্বরী রাধারাণী ও প্রাণনাথ শ্যামসুন্দরকে নানা রং ও গন্ধের পুষ্প ও মাল্য দিয়ে এত পরিমাণ সাজিয়েছিলেন যেন, তারা তাদের নিজের সৌন্দর্যকেই ভুলে যান।

কৃষ্ণ যখন কোন অসুরকে নিধন করতেন তখন কৃষ্ণের বন্ধুরা পুষ্প বৃষ্টি করে তাঁকে স্বাগত জানাতেন। গোপীগণ রাসলীলায়ও পুষ্প বৃষ্টি করে শ্রীশ্রী রাধা-শ্যামসুন্দরের আনন্দ বর্ধন করেছেন। দ্বারকায়ও শ্রীকৃষ্ণকে পুষ্প বৃষ্টি করে দ্বারকাবাসীরা স্বাগত জানিয়েছেন। অযােধ্যার নাগরিকগণও ভগবান শ্রী রামচন্দ্রকে পুষ্পবৃষ্টি করে অযােধ্যাতে স্বাগত জানিয়েছিলেন। মাতঙ্গ ঋষি মাতা শবরীকে বলেছিলেন একদিন ভগবান রামচন্দ্র তার আশ্রমে আসবেন। সেই থেকে মাতা শবরী দিনের পর দিন বছরের পর বছর প্রতিদিন নতুন নতুন পুষ্প দিয়ে আশ্রমের রাস্তা সজ্জিত করেছেন ভগবানের আসার প্রতীক্ষায়।

কিভাবে উদযাপন করবেন ?

শ্ৰীমদ্ভগবদগীতায় বলা হয়েছে,-

‘’পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।

তদহং ভক্ত্যুপহৃতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ ।।‘’     (ভগবদ্‌গীতা ৯/২৬)

পত্রম্ – পত্র;  পুষ্পম্‌ – ফুল;  ফলম্‌ – ফল;  তোয়ম্‌ – জল; যঃ – যিনি;  মে –  আমাকে;  ভক্ত্যা – ভক্তি সহকারে;  প্রযচ্ছতি – প্রদান করেন;  তৎ – তা;  অহম্‌ – আমি;  ভক্ত্যুপহৃতম্‌ – ভক্তি সহকারে নিবেদিত;  অশ্নামি – গ্রহণ করি;  প্রযতাত্মনঃ – আমার ভক্তি প্রভাবে বিশুদ্ধচিত্ত সেই ব্যক্তির ।

অর্থাৎ,- যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে পত্র, পুষ্প, ফল ও জল অর্পন করেন, আমি তাঁর সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি। আপনি যখন ভক্তি ও প্রীতি সহকারে ভগবানকে একটি পুষ্প নিবেদন করবেন তখন আপনি অনুভব করতে পারবেন ভগবান আপনার নিবেদিত পুষ্প গ্রহণ করেছেন এবং শ্রীবিগ্রহের হাস্যোজ্জল মুখমণ্ডলে আপনি দর্শন করতে পারবেন।

পুষ্প অভিষেক হচ্ছে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের উৎসব। Festival of Unity in Diversity. এই দিন পুষ্প, অলংকার ও বস্ত্র দিয়ে শ্রীশ্রী রাধা-মাধবের শ্রীবিগ্রহকে সুন্দরভাবে সজ্জিত করা হয়। হরিভক্তিবিলাস অনুসারে এই দিন শ্রীবিগ্রহগণকে ঘি দিয়ে অভিষেক করানো উচিত। আপনিও নিজগৃহে সারাদিন যে কোনো সময় হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্ত্তন করে শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দকে পুষ্প দিয়ে সাজাতে পারেন ও পুষ্প অভিষেক করতে পারেন।  

কবে কৃষ্ণ ধন পাব, হিয়ার মাঝারে থোব,

জুড়াইব তাপিত - পরাণ।

সাজাইয়া দিব হিয়া, বসাইব প্রাণপ্রিয়া,

নিরখিব সে চন্দ্রবয়ান।।

হে সজনী! কবে মোর হইবে সুদিন।

সে প্রাণনাথের সঙ্গে, কবে বা ফিরিব রঙ্গে,

সুখময় যমুনা পুলিনে।।

ললিতা বিশাখা লঞা,   তাঁহারে ভেটিব গিয়া,

সাজাইয়া নানা উপহার।

সদয় হইয়া বিধি, মিলাইবে গুণনিধি,

হেন ভাগ্য কি হইবে আমার ???

দারুণ বিধির নাট, ভাঙিল প্রেমের হাট,

তিলমাত্র না রাখিল তার।

কহে নরোত্তম দাস, কি মোরে জীবনে আশ,

ছাড়ি গেল ব্রজেন্দ্রকুমার।। 

🏵️জয় রাধেশ্যাম🏵️🏵️জয় ব্রজধাম🏵️🏵️জয় রাধেশ্যাম🏵️