🌳🌴🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🌴🌳
🌺🌷🌺শ্রীকৃষ্ণের বংশী🌺🌷🌺
🌳🌴🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🌴🌳
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্তকোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
আনন্দে মুরলী ধ্বনি, কৈলা যবে ব্রজমণি,
প্রাণী মাত্র ধর্ম্ম হইল আন ।
ত্রিভুবনে বইসে যত, সুন্দরী তরুণী কত,
বংশী কাষ্ঠ কৈল তার প্রাণ ।।
সে ধ্বনি অনঙ্গ ঘুণ, তাহাতে লাগিল দুন,
নাশ কৈলা নারী মন বাস ।
যত স্থিরচরগণ, উলটা ধরম বন,
ছয় ঋতু বৈভব প্রকাশ ।।
অমৃতের কণাগণ, শ্রবণ
মুরলী গান,
স্থিরচর প্রাণী সিঞ্চে তায় ।
বংশী ধ্বনি বাণ ধাইয়া, অবলা হৃদয়ে যাইয়া,
মাতাইয়া ধৈর্য্যতা ছাড়ায় ।।
যতেক পুরুষ গণে, কামপীড়া হইল মনে,
কে তাতে অবলা জড়কামা ।
পর্ব্বত হইল পানী, শুনিয়া বেণুর ধ্বনী,
দশদিগে ঝরে তেজাগমা ।।
পশু পক্ষী আদি গণ, তৃষ্ণায় পীড়িত মন,
যাইয়া জল খাইতে না পারে ।
নিকটে আইল জল, তাহে পিতে নাহি বল,
জড় হইয়া আছয়ে নিচলে ।।
যতেক নদীর নীর, স্রোত গণ হইল স্থির,
পাষাণ সমান ভেল তায় ।
হংস হংসীগণ তাতে, না পারে মৃণাল খাইতে,
শিকলি লাগিল তার পায় ।।
স্থগিত হইল বাত, ঘুরে সব বৃক্ষ মাথ,
পুষ্পছলে হাসে বৃন্দাবন ।
এ যদুনন্দন কহে, কেমনে ধৈরজ রহে,
গান
করে মদনমোহন ।। ( গোবিন্দ লীলামৃত )
শ্রীকৃষ্ণ তিন প্রকারের বাঁশি ব্যবহার করেন। একটিকে বলা হয় বেণু, অন্যটি মুরলী এবং তৃতীয়টি বংশী। বেণু অত্যন্ত ছোট তা ছয় ইঞ্চির বেশি নয়, এবং তাতে ছয়টি ছিদ্র থাকে। মুরলীর দৈর্ঘ্য প্রায় আঠার ইঞ্চি। মুখরন্ধ্র ছাড়া তার গায়ে চারটি ছিদ্র থাকে। বংশী প্রায় পনের ইঞ্চি লম্বা এবং তাতে নয়টি ছিদ্র থাকে। শ্রীকৃষ্ণ প্রয়োজন অনুসারে এই তিন রকমের বাঁশি বাজান। শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির অন্য একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি তাঁর যার উদ্দেশে বাঁশি বাজান, শুধু সেই শুনতে পায়, অন্য কেউ পাশে থাকলেও শুনতে পায় না।
শ্রীকৃষ্ণের আর একটি বাঁশি আছে যা আরও লম্বা, যাকে
বলা হয় মহানন্দ বা সম্মোহনী। এ বাঁশি মহানন্দ থেকেও যখন লম্বা হয় তখন তার নাম হয় আকর্ষণী। এবং এই বাঁশি যখন আকর্ষণী থেকেও লম্বা হয় তখন তাকে বলা হয় আনন্দিণী। এই আনন্দিণী - বংশীধ্বনি গোপবালকদের অত্যন্ত প্রিয়। এর আর একটি নাম বংশুলী। মনিরত্ন দিয়ে তৈরী হয় সম্মোহনী আর স্বর্ণ দিয়ে তৈরী হয় আকর্ষণী।
শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি সম্বন্ধে বলা হয় যে, সেই অদ্ভুত যন্ত্রটির ধ্বনি মহর্ষিদেরও ধ্যান ভঙ্গ করে দিতে পারে। এইভাবে সমগ্র জগতে তাঁর অপ্রাকৃত মহিমা ঘোষনা করে। শ্রীকৃষ্ণ কামদেবকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করেন। শ্রীমদ্ভাগবতের
দশম স্কন্ধে গোপিকারা মা যশোদাকে বলছেন , " যখন
আপনার পুত্র তাঁর
বাঁশি বাজায়, তখন শিব , ব্রহ্মা, ইন্দ্র আদি মহাপণ্ডিত মহাত্মারাও মোহিত হয়ে যান। শ্রীকৃষ্ণের সেই বাঁশি শুনে তাঁরা গম্ভীর হয়ে যান এবং বিনয়ে তাঁদের মস্তক অবনত হয়ে যায়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বংশীধ্বনি অসাধারণ। শ্রীল রূপ গোস্বামীপাদ রচিত বিদগ্ধ-মাধব নাটকে কৃষ্ণসখা মধুমঙ্গলের উক্তি থেকে জানা যায়,- চলমান মেঘও শ্রীকৃষ্ণের বংশীধ্বনিতে স্তব্ধ হয়ে যায়, নদী উজানে বইতে শুরু করে । তুম্বুরু নামে গন্ধর্বরাজ যিনি সমস্ত রকমের মধুর স্বরলহরীর সঙ্গে পরিচিত, তিনি শ্রীকৃষ্ণের বংশীধ্বনি শুনে সেই স্বরমাধুর্যে এতই বিস্ময়ান্বিত ও চমৎকৃত হন যে, তিনি ভাবতে থাকেন এই রকম অপূর্ব মূর্ছনা তো কখনও শুনিনি, কখনও কল্পনায়ও আসেনি।
সনক সনাতন আদি ঋষিগণ যাঁরা সব সময় ব্রহ্মানন্দে নিমগ্ন হয়ে থাকেন, তাঁদের কানেও যখন বংশীধ্বনি প্রবেশ করে তখন তাঁরা ধ্যান ভঙ্গ পূর্বক বিচলিত হয়ে অন্য কোন আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়েন। শ্রীব্রহ্মা যিনি জড়জগৎ সৃষ্টি রচনা কার্যে নিযুক্ত তিনিও কৃষ্ণের বংশীধ্বনি শুনে সৃষ্টিকার্য ভুলে গিয়ে বিস্মিত হন। সমুদ্রের মতো গম্ভীর প্রকৃতি বলী মহারাজ, তিনিও বংশীধ্বনি শুনে চঞ্চল হয়ে পড়েন। অনন্তদেব যিনি মস্তকে পৃথিবী ধারণ করে অবিচলিত ভাবে অবস্থান করছেন তিনিও বিচলিত হয়ে পড়েন। এই বংশীধ্বনি কেবল এই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রকট লীলায় ব্রহ্মাণ্ডে অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ যখন বংশীধ্বনি করেন সেই ধ্বনি ব্রহ্মাণ্ড কটাহ ভেদ করে বিরজা ও পরব্যোম অতিক্রম করে চতুর্দিকে ভ্রমণ করতে থাকে।
কালা গরলের জ্বালা, আর তাহে অবলা,
তাহে মুঞি কুলের বৌহারী ।
অন্তরে মরম ব্যথা, কাহারে কহিব কথা,
গুপতে সে গুমরিয়া মরি ।।
সখি হে বংশী দংশিল মোর কানে ।
ডাকিয়া চেতন হরে, পরাণ না রহে ধড়ে,
তন্ত্র মন্ত্র কিছুই না মানে ।।
মুরলী সরল হয়ে, বাঁকার মুখেতে রয়ে,
শিখিয়াছ বাঁকার স্বভাব ।
দ্বিজ চণ্ডীদাস কয়, সঙ্গদোষে কি না হয়,
রাহুমুখে শশী মসি লাভ ।।
🏵️জয় রাধেশ্যাম🏵️জয় ব্রজধাম🏵️জয় রাধেশ্যাম🏵️জয় ব্রজধাম🏵️
No comments:
Post a Comment