Thursday, March 18, 2021

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🍁🌻মধুমাখা কৃষ্ণনাম🍁

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''গুরু - বৈষ্ণব - ভগবান তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে হয় বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

 

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,

সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,

বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

 

সন্ন্যাস পরে মহাপ্রভু একবার কাশিতে আসেন। মহাপ্রভুর সঙ্গে সে সময়ে মায়াবাদের প্রকাণ্ড  একজন সন্ন্যাসী প্রকাশানন্দ সরস্বতী সহিত সাক্ষাৎ হয়। তিনি মহাপ্রভুকে বলেছিলেন,-

 সন্ন্যাসী হইয়া কর নর্তন-গায়ন।

 ভাবুক সব সঙ্গে লইয়া কর সংকীর্ত্তন।।

 বেদান্ত -পঠন, ধ্যান, সন্ন্যাসীর ধর্ম।

 তাহা ছাড়ি' কর কেনে ভাবুকের কর্ম।।

 প্রভাবে দেখিয়ে তোমা সাক্ষাৎ নারায়ণ।

 হীনাচার কর কেনে ইথে কি কারণ।।

 অর্থাৎ,- "তুমি একজন ত্রিদণ্ডধারী সন্ন্যাসী। অতএব তুমি ভাবুকের সঙ্গে নৃত্য করে, গান করে সংকীর্ত্তন কর কেন? বেদান্ত পাঠ ধ্যান করাই হচ্ছে সন্ন্যাসীর ধর্ম। সেই ধর্ম ত্যাগ করে কেন ভাবুকের মতো নৃত্য- কীর্ত্তন করছ? তোমার প্রভাব দেখে মনে হয় তুমি যেন সাক্ষাৎ নারায়ণ। কিন্তু তুমি নিম্নশ্রেণীর মানুষদের মতো আচরণ করছ কেন, তার কারণ কি?

 তখন মহাপ্রভু কি বললেন জানেন? মহাপ্রভু উওর দিলেন,-

 প্রভু কহে শুন শ্রীপাদইহার কারণ

 গুরু মোরে মূর্খ দেখিকরিল শাসন ।।

 মূর্খ তুমি, তোমার নাহিক  বেদান্তধিকার

 কৃষ্ণমন্ত্র, জপ সদা, এই মন্ত্রসার ।।

 কৃষ্ণমন্ত্র হৈতে হবেসংসার - মোচন

 কৃষ্ণনাম হৈতে পাবেকৃষ্ণের চরণ ।।

 নাম বিনা কলিকালে  নাহি আর ধর্ম

 সর্বমন্ত্রসার নাম, এই শাস্ত্রমর্ম ।।

 

 অর্থাৎ,-  শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রকাশানন্দ সরস্বতীর প্রশ্নের উওরে বললেন,- হে শ্রীপাদ! তার কারণ আমি বলছি, দয়া করে আপনি তা শুনুন। আমার গুরুদেব বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমি একটি মূর্খ এবং তাই তিনি আমাকে শাসন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,-  তুমি একটি মূর্খ, বেদান্ত দর্শন অধ্যয়ন করার অধিকার তোমার নেই, তুমি কেবল কৃষ্ণমন্ত্র জপ কর। এটিই হচ্ছে সমস্ত বৈদিক মন্ত্রের সার। কেবলমাত্র শ্রীকৃষ্ণের দিব্যনাম কীর্ত্তন করার ফলে জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায়। ‘’হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্ত্তন করার ফলেই কেবল শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্মের দর্শন লাভ করা যায়। এই কলিযুগে ভগবানের দিব্যনাম কীর্ত্তন করা ছাড়া আর কোন ধর্ম নেই। এই নাম হচ্ছে সমস্ত বৈদিক মন্ত্রের সার। এটিই সমস্ত শাস্ত্রের মর্ম।‘’

 

 তারপর মহাপ্রভু আরোও বললেন,-

 এই আজ্ঞা পাইয়া  নাম লই অনুক্ষণ

 নাম লৈতে লৈতে মোর  ভ্রান্ত হৈল মন ।।

 ধৈর্য ধরিতে নারি, হৈলাম উন্মুও

 হাসি, কান্দি, নাচি, গাই, যৈছে মদমও ।।

 তবে ধৈর্য ধরি' মনে  করিলু বিচার

 কৃষ্ণনামে জ্ঞানাচ্ছন্ন  হইল আমার ।।

 পাগল হইলাঙ আমিধৈর্য নাহি মনে

 এত চিন্তি' নিবেদিলুঁ  গুরুর চরণে ।।

 

অর্থাৎ,- আমার গুরুদেবের কাছ থেকে এই আদেশ পেয়ে, আমি নিরন্তর ভগবানের দিব্যনাম কীর্ত্তন করতে লাগলাম এবং এইভাবেই নাম নিতে নিতে আমার মন বিভ্রান্ত হল। এভাবেই ভগবানের নাম নিতে নিতে আমি নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না এবং তার ফলে আমি উন্মাদের মতো হাসতে লাগলাম, কাদঁতে লাগলাম, নাচতে লাগলাম এবং গান গাইতে লাগলাম। তখন নিজেকে একটু সংযত করে আমি বিচার করতে লাগলাম যে, কৃষ্ণনাম কীর্ত্তন করতে করতে আমার জ্ঞান আচ্ছন্ন হয়েছে। আমি ভাবলাম যে এভাবেই দিব্যনাম কীর্ত্তন করার ফলে আমি পাগল হয়ে গিয়েছি, তখন আমি আমার গুরুদেবের চরণে সেই কথা নিবেদন করলাম।


 কিবা মন্ত্র দিলা, গোসাই, কিবা তার বল।

 জপিতে জপিতে মন্ত্র  করিল পাগল।।

 হাসায়, নাচায় মোরে  করায় ক্রন্দন।

 এত শুনি' গুরু হাসি  বলিলা বচন।।

 অর্থাৎ,-  মহাপ্রভু উনার গুরুদেবকে বললেন হে প্রভু,আপনি আমাকে কি মন্ত্র দিয়েছেন? অদ্ভুত তার প্রভাব। সেই মন্ত্র জপ করতে করতে আমি পাগল হয়ে গেলাম। দিব্যনাম কীর্ত্তনের আনন্দ আমাকে হাসায়, নাচায় ক্রন্দন করায়। আমার এই কথা শুনে গুরুদেব হেসে বললেন,-

 কৃষ্ণনাম - মহামন্ত্রের  এই ' স্বভাব।

 যেই জপে, তার কৃষ্ণে  উপজয়ে ভাব।

 অর্থাৎ,-  হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের এটিই হচ্ছে স্বভাব, যে তা জপ করে, তারই তৎক্ষণাৎ শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেমময়ী ভক্তিভাবের উদয় হয়।


 এই হরিনাম সম্পর্কে মহাপ্রভুর গুরুদেব আরোও বর্ণণা করছেন যে,-

 প্রেমায় স্বভাবে ভক্ত হাসে, কান্দে গায়।

 উন্মও হইয়া নাচেইতি-উতি ধায়।।

অর্থাৎ,- কারও চিত্তে যখন ভগবৎ - প্রেমের উদয় হয়, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবে কখনও ক্রন্দন করেন, কখনও হাসেন, কখনও গান করেন এবং কখনও উন্মাদের মতো এদিক ওদিক ছোটাছুটি করেন।


 স্বেদ, কম্প, রোমাঞ্চাশ্রু, গদ্গদ, বৈবর্ণ্য।

 উন্মাদ, বিষাদ ,ধৈর্য, গর্ব, হর্ষ,দৈন্য।।

 এত ভাবে  প্রেমাভক্তগণেরে  নাচায়।

 কৃষ্ণের  আনন্দামৃত সাগরে  ভাসায়।।

 অর্থাৎ,- স্বেদ, কম্প, রোমাঞ্চ, অশ্রু, গদ্গদ স্বর, বৈবর্ণ, উন্মাদনা, বিষাদ, ধৈর্য, গর্ব, হর্ষ দৈন্য; এগুলি হচ্ছে ভগবৎ - প্রেমের কয়েকটি স্বাভাবিক লক্ষণ, যা হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্ত্তন করার সময় ভক্তকে নাচায় এবং আনন্দামৃতের সমুদ্রে ভাসায়। আজ আমরা মহাপ্রভুর গুরুদেবের কথার স্বার্থক রুপদান দেখতে পাচ্ছি সম্পূর্ণ বিশ্বে I সত্যিই অদ্ভুত এই কৃষ্ণনাম মহামন্ত্রের প্রভাব যা সবাইকে আজ হাসাচ্ছে, নাচাচ্ছে এবং কৃষ্ণের আনন্দমৃতের সাগরে ভাসাচ্ছে।

জয় জয় হরিনামচিদানন্দামৃতধাম,

পরতত্ত্ব অক্ষর - আকার

নিজ - জনে কৃপা করি’, নামরূপে অবতরি',

জীবে দয়া করিলে অপার ॥১॥

 

জয় হরি - কৃষ্ণ - নাম,   জগজন - সুবিশ্রাম,

সর্বজন - মানস - রঞ্জন

মুনিবৃন্দ নিরন্তর,   যে নামের সমাদর,

করিগায় ভরিয়া বদন ॥২॥

 

ওহে কৃষ্ণনামাক্ষর,   তুমি সর্বশক্তিধর,

জীবের কল্যাণ বিতরণে

তোমা বিনা ভবসিন্ধু,   উদ্ধারিতে নাহি বন্ধু,

আসিয়াছ জীব - উদ্ধারণে ॥৩॥

 

আছে তাপ জীবে যত,   তুমি সব কর হত,

হেলায় তোমারে একবার।

ডাকে যদি কোন জন,   'য়ে দীন অকিঞ্চন,

নাহি দেখি’  অন্য প্রতিকার ॥৪॥

 

তব স্বল্পস্ফূর্তি পায়,   উগ্রতাপ দূরে যায়,

লিঙ্গ - ভঙ্গ হয় অনায়াসে ।

ভকতিবিনোদ কয়,   জয় হরিনাম জয়,

'ড়ে থাকি তুয়া পদআশে ॥৫॥

🌻জয় পতিত - পাবন শ্রীগৌরহরির জয়🌻🌻জয় সকল ভক্তগণের জয়🌻





 

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...