💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐

🌷মহাশিব রাত্রি🌷

💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I হরে কৃষ্ণ, আজ মহাশিব রাত্রি ব্রতের উপবাস। সকল ভক্তদের জানাই  শিবপ্রীতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন । আশা করি সকল ভক্তবৃন্দরাই এই মহাব্রত ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আদি পালন করিবেন।

 

(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯ / ৪৯ মিঃ মধ্যে মহাশিব রাত্রির পারণ)

আপনি নিজে মহাশিব রাত্রি ব্রত পালন করুন ও অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।

 

বৃন্দাবনাবনিপতে জয় সোমমৌলে ।

সনক - সনন্দন - সনাতন - নারদেভ্য ।। 

গোপীশ্বর ব্রজবিলাসী - যুগাংঘ্রি - পদ্মে ।

প্রেম প্রয়চ্ছ নিরুপাধি নমো নমস্তে ।।

 

‘’নিম্নগানাং যথা গঙ্গা   দেবানামচ্যুতো যথা । 

বৈষ্ণবানাং যথা শম্ভুঃ  পুরাণানামিদং তথা ।।‘’     ( ভা. ১২ - ১৩/১৬ )

অর্থাৎ,- নদীগণের মধ্যে গঙ্গা, দেবগণের মধ্যে বিষ্ণু এবং বৈষ্ণবগণের মধ্যে শম্ভু সর্ব্ব শ্রেষ্ঠ, সেইরূপ পুরাণগণের মধ্যে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রেষ্ঠ হইয়া থাকে।

"ওহে ক্ষেত্রপাল শিব তুমি দয়াময়।

কৃষ্ণ ভক্তি দেহ মোরে হইয়া সদয়।।"

তাই বৈষ্ণবরা শিবরাত্রি ব্রত পালন করেন, মহান বৈষ্ণব শিবের কৃপা লাভ করার জন্য।

মহাশিবরাত্রি পূজা বিধি।

শিবকে বলা হয় আশুতোষ। অর্থাৎ আশু বা খুব তাড়াতাড়ি অল্পেই তুষ্ট হন যিনি! ফলে, সব পুরাণ মতে তাঁকে তুষ্ট করার জন্য পঞ্চাক্ষর বীজমন্ত্র 'ওঁ নমঃ শিবায়'-এই যথেষ্ট! নিষ্ঠা সহকারে, ভক্তি ভরে ওঁ নমঃ শিবায় -এর উচ্চারণেই তাই সাঙ্গ হয় শিব পূজার যাবতীয় বিধি। কিন্তু মহাশিবরাত্রির পূজা অন্য দিনের শিবপূজার চেয়ে একটা দিক থেকে আলাদা। এটি ব্রত অর্থাৎ, এটি বিশেষ পূজার দিন। যে কোনও ব্রত পালনের কিছু বিশেষ নিয়ম থাকেই। মহাশিবরাত্রিরও রয়েছে। যেহেতু সারা বছরব্যাপী শিবপূজার মধ্যে এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ, তাই এই ব্রত পালন শুরু হয় মহাশিবরাত্রির আগের দিন থেকে। শেষ হয় পরের দিন। অতএব, সেই ব্রত পালনের জন্য তৈরি হওয়া যাক আজ থেকেই!

ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিই শিবপুরাণ মতে মহাশিবরাত্রি। তাই ত্রয়োদশী তিথি থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে এই বিশেষ পূজার জন্য। শিবপুরাণ মতে এবং মহাশিবরাত্রি ব্রতপালন বিধি অনুসারে ত্রয়োদশীতে এক বেলা নিরামিষ আহার খেয়ে থাকতে হয়। যাতে চতুর্দশীতে উদরে আহারের কণামাত্রও না থাকে! মহাশিবরাত্রির দিন একেবারে সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়া নিয়ম। ঘুম থেকে উঠেই স্নান গইকরে নিতে হয়। কালো তিল ভেজা জলে স্নান করাই বিধেয়। শিবপুরাণ মতে, তাতে শরীর শুদ্ধ হবে। স্নান শেষ হয়ে গেলে মনে মনে সঙ্কল্প করুন - চতুর্দশীর সারা দিন এবং রাত আপনি শুদ্ধ শরীরে এবং মনে থাকবেন। থাকবেন উপবাসে। সঙ্কল্প হয়ে গেলে "ওঁ নমঃ শিবায়" বীজমন্ত্রে প্রণাম জানান শিবকে। তাঁর আশীর্বাদ কামনা করুন। যাতে আপনার সঙ্কল্প রক্ষা হয়।

অনেকে আজকাল দুপুরের মধ্যেই শিবপূজা সেরে নেন। কিন্তু যখন বলাহচ্ছে মহাশিবরাত্রি, তখনই স্পষ্ট- এই পূজার আদর্শ সময় রাত। সারা রাত ধরে চলে মহাশিবরাত্রির ব্রত। তাই সন্ধেবেলাতেও একবার স্নান করে শুদ্ধ হয়ে পূজার জোগাড় করুন। হাতের কাছে গুছিয়ে রাখুন জল, দুধ, দই, ঘি, মধু, ফুল, বেলপাতা, গোলাপ জল, চন্দন বাটা, কুঙ্কুম বা সিঁদুর, ধূপ, ঘিয়ের প্রদীপ, পাঁচটি ফল, মিষ্টি। মহাশিবরাত্রিকে ভাগ করা হয় চারটি প্রহরে। এক একটি প্রহরে গঙ্গামাটি দিয়ে তৈরি করতে হয় একটি করে শিবলিঙ্গ। খেয়াল রাখুন, এক প্রহরের লিঙ্গের পূজা অন্য প্রহরে করা যায় না। কেন না, প্রহর ভেদে শিবের চারটি রূপের পূজা করা হয় এই রাতে। তবে, গঙ্গামাটি না পেলে বা শিবলিঙ্গ বানাতে না জানলে কালো পাথরের একটিই লিঙ্গ বা বাণলিঙ্গ, নর্মদালিঙ্গ, রত্নলিঙ্গ ইত্যাদি বিহিত আধারে পূজা করা যায়।

মহাশিবরাত্রির পূজার প্রথম ধাপ অভিষেক। অর্থাৎ, লিঙ্গকে স্নান করানো। প্রথম প্রহরে ‘ *হৌঁ ঈশাণায় নমঃ* মন্ত্রে দুধ দিয়ে, দ্বিতীয় প্রহরে ‘ *হৌঁ অঘোরায় নমঃ'* মন্ত্রে দই দিয়ে, তৃতীয় প্রহরে ‘ *হৌঁ বামদেবায় নমঃ*  মন্ত্রে ঘি দিয়ে এবং চতুর্থ প্রহরে ‘ *হৌঁ সদ্যোজাতায় নমঃ* ' মন্ত্রে মধু দিয়ে স্নান করিয়ে পুজো করতে হয়। এই সময় প্রার্থনা করা হয়‚ হে শিব! তোমাকে নমস্কার। তুমি সৌভাগ্য, আরোগ্য, বিদ্যা, অর্থ, স্বর্গ, অপবর্গ দিয়ে থাকো। তাই এগুলো তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। হে গৌরীপতি, তুমি আমাদের ধর্ম, জ্ঞান, সৌভাগ্য, কাম, সন্তান, আয়ু ও অপবর্গ দাও। অভিষেকের পরে শিবলিঙ্গে চারপ্রহরে চারটি অর্ঘ্য দেওয়া নিয়ম। তার পর, ফুলে সাজিয়ে দিন শিবলিঙ্গ। ফুল এবং মালা দেওয়ার সময়ে উচ্চারণ করুন ওঁ নমঃ শিবায়। তার পরে চন্দন বাটার প্রলেপ দিন শিবলিঙ্গে। চন্দনের পরে কুঙ্কুম বা সিঁদুরের আলেপন দিন।এর পর ধূপ এবং ঘিয়ের প্রদীপ নিয়ে "নমঃ শিবায়ঃ" মন্ত্রে আরতি করুন।

আরতির পর ফল এবং মিষ্টি নিবেদন করুন শিবকে। সবার শেষে সম্ভব হলে পাঠ করুন শিবের অষ্টোত্তর শতনাম। প্রত্যেক প্রহরেই এভাবে পুজো করুন শিবকে। উপবাস ভঙ্গ করুন পরের দিনে। খেয়াল রাখবেন, মহাশিবরাত্রির পরের দিন সূর্যোদয়ের আগেই স্নান করে, চতুর্দশী তিথি থাকতে থাকতে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়। কোনও ব্রাহ্মণের কাছে শিবরাত্রির ব্রতকথা শুনে, তাঁকে দক্ষিণা দিয়ে উপবাস ভঙ্গ করুন। বিধি অনুযায়ী পূজা রাত্রির চার প্রহরে চার বার ---দুধ, দই, ঘি ও মধু দিয়ে শিব স্নান কর্ত্তব্য।

         প্রথমে

                    --সঙ্কল্প--

ওঁ শিবরাত্রি ব্রতং হ্যেতৎ

করিষ্যে দৃহং মহাফলং।

নির্বিঘ্নমস্তু মে দেব তৎপ্রাদাজ্জগৎপতে।।

এইবার বিধিসম্মত পূজা করে নীচে দেওয়া হল।

আসনে বসে রুদ্রাক্ষমালা, ভস্মত্রিপূণ্ড্র ধারণ করে পঞ্চবিধ শুদ্ধি, সূর্যার্ঘ্য, গুরু, ইষ্ট এবং পঞ্চদেবতার পূজা করতে হবে। বিশেষ স্নান ও অর্ঘ্য মন্ত্রে রাত্রির চার প্রহরে শিবপূজা কর্ত্তব্য।

প্রথম প্রহর

'ওঁ হৌঁ ঈশানায় নমঃ' এই মন্ত্রে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে পরে জলে স্নান করাতে হবে ---

                অর্ঘ্য মন্ত্র

ওঁ শিবরাত্রি ব্রতং দেব পূজাজপপরায়ণঃ।

করোমি বিধিবত্তং গৃহাণার্ঘ্যং মহেশ্বরঃ।।

          দ্বিতীয় প্রহর

'ওঁ হৌঁ অঘোরায় নমঃ' এই মন্ত্রে দই দিয়ে স্নান করিয়ে পরে জলে স্নান করাতে হবে ---

                 অর্ঘ্য মন্ত্র

ওঁ নমঃ শিবায় শান্তাায় সর্ব্বপাপহরায় চ।

শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যং প্রসীদ উময়া সহ।।

        তৃতীয় প্রহর।

'ওঁ হৌঁ বামদেবায় নমঃ' এই মন্ত্রে ঘি দিয়ে স্নান করিয়ে পরে জলে স্নান করাতে হবে।

              অর্ঘ্য মন্ত্র

ওঁ দুঃখদারিদ্রশোকেন দগ্ধোঽহং পার্বতীশ্বর।

শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যং উমাকান্তং প্রসীদ মে।।

       চতুর্থ প্রহর

         

'ওঁ হৌঁ সদ্যোজাতায় নমঃ' এই মন্ত্রে মধু দিয়ে স্নান করিয়ে পরে জলে স্নান করাতে হবে ---

               অর্ঘ্য মন্ত্র

ওঁ মমকৃত্যান্যনেকানি পাপানি হর শঙ্কর।

শিবরাত্রৌ দদামর্ঘ্যং উমাকান্তং গৃহাণ্ মে।।

🌷হর হর মহাদেব🌷শ্রীউমা-মহেশ্বরায় নমঃ🌷হর হর মহাদেব🌷