🌸শ্রীল রঘুনাথদাস গোস্বামী🌸

💐🦚🌷🌹🌻🌸🌻🌹🌷🦚💐

হরে কৃষ্ণ, আগামী ২৮/১০/২০২০ ইং রোজ - বুধবার পরম বৈষ্ণব পরম ভাগবত ষড় গোস্বামীর অন্যতম শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর পূর্ণ কৃপাপাত্র শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামীর শুভ তিরোভাব তিথি I সকল ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে করবদ্ধ নিবেদন সবাই এই পরম শ্রীভক্তি সিদ্ধান্তাচার্য্য, বৈরাগ্যের পরাকাষ্ঠা, শুদ্ধ ও নিষ্কাম ভক্তের পুৎ জীবনচরিত কীর্ত্তন আর স্মরণ অবশ্য করিবেন আর এই আচরণ সমূহ নিজের দৈনন্দিন জীবনে আচরণ করিবেন।

 

''দাস শ্রীরঘুনাথস্য পূর্ব্বাখ্যা রসমঞ্জরী।

অমুং কেচিৎ প্রভাষন্তে শ্ৰীমতীং রতিমঞ্জরীম।।

ভানুমত্যাখ্যয়া কেচিদাহুস্তং  নামভেদতঃ ।।''

 

শ্রীকৃষ্ণলীলায় যিনি রসমঞ্জরী মতান্তরে রতিমঞ্জরী অথবা ভানুমতী। তিনি শ্রীগৌরলীলায় শ্রীরঘুনাথ দাস গোস্বামী রূপে আবির্ভূত হইয়াছিলেন।

আনুমানিক ১৪১৬ শকাব্দে হুগলী জেলার অন্তর্গত সপ্তগ্রাম হইতে কিছুদূরে দক্ষিণ দিকে প্রাচীন সরস্বতী নদীর পূর্ব্বতীরে শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে শ্রীরঘুনাথ দাস গোস্বামী আবির্ভূত হন। তাঁহার পিতার নাম শ্রীগোবর্দ্ধন মজুমদার। মাতৃ দেবীর নাম জানা যায় না। শ্রীগোবর্দ্ধন মজুমদারের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শ্রীহিরণ্য মজুমদার অপুত্রক ছিলেন। চাঁদপুরে শ্রীল রঘুনাথের কুল পুরোহিত শ্রীবলরাম আচার্য্যের ও কুলগুরু শ্রীযদুনন্দন আচার্য্যের নিবাস ছিল। নামাচার্য্য শ্রীল হরিদাস ঠাকুর বলরাম আচার্য্যের গৃহেই অবস্থান করিতেন। সেই সময় শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামীর বাল্যবস্থায় হরিদাস ঠাকুরের দর্শনলাভের সুযোগ হইয়াছিল। মহাভাগবত হরিদাস ঠাকুরের দর্শন ও কৃপাই শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামীর শ্রীমন্মহাপ্রভুর সান্নিধ্য লাভের কারণ হইয়া ছিল।

 

শ্রীহিরণ্য ও শ্রীগোবর্দ্ধন মজুমদারের বার্ষিক আয় ছিল আট লক্ষ মুদ্রা। এইরূপ শোনা যায় তৎকালে এক মুদ্রায় বা এক টাকায় আট মণ চাউল পাওয়া যাইত। শ্রীরঘুনাথ দাস গোস্বামী উক্ত বিপুল সম্পদের একমাত্র উত্তরাধিকারী হইয়াও বাল্যকাল হইতেই বিষয়েতে উদাসীন ও বিরক্ত ছিলেন। শ্রীমন্মহাপ্রভু সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়া যে সময়ে শান্তিপুরে আসিয়াছিলেন, সেই সময়ে রঘুনাথের শ্রীমন্মহাপ্রভুর দর্শন লাভের প্রথম সৌভাগ্য হয়। পিতৃসম্বন্ধে অদ্বৈতাচার্য্য প্রভুর রঘুনাথের প্রতি যথেষ্ট স্নেহ ছিল। যতদিন রঘুনাথ শান্তিপুরে ছিলেন, তাঁহাকে মহাপ্রভুর অবশেষ প্রসাদ তিনি দিতেন। শ্রীমন্মহাপ্রভু শান্তিপুর হইতে নীলাচল যাত্রা করিলে রঘুনাথ গৃহে আসিয়া মহাপ্রভুর বিরহে উন্মত্ত হইয়া পড়িলেন।

 

রঘুনাথের প্রেমোন্মত্ত অবস্থা দেখিয়া তাঁহার পিতা এগারজন প্রহরীর (৫ পাইক,৪ সেবক ও ২ ব্রাহ্মণ)সাহায্যে তাঁহাকে কড়া পাহারার মধ্যে রাখিলেন I শ্রীমন্মহাপ্রভু বৃন্দাবন যাত্রাকালে কানাই এর নাটশালা হইতে প্রত্যাবর্ত্তন করতঃ পুনঃ শান্তিপুরে আসিয়াছেন, এই সংবাদ পাইয়া রঘুনাথ মহাপ্রভুর নিকট যাইতে পিতার নিকট আদেশ প্রার্থনা করিলেন। পুত্রকে ব্যাকুল দেখিয়া পিতা অনেক লোক ও দ্রব্য সহ পুত্রকে মহাপ্রভুর নিকট প্রেরণ করিলেন । রঘুনাথ শান্তিপুরে মহাপ্রভুর দর্শন লাভ করিয়া প্রাণ ফিরিয়া পাইলেন। মহাপ্রভুর নিকট নিজের দুঃখের কথা নিবেদন করিলেন এবং কি উপায়ে সংসার - বন্ধন হইতে মুক্তি হইবে তাহার জন্য প্রার্থনা জানাইলেন। সর্ব্বজ্ঞ গৌরাঙ্গমহাপ্রভু  তাঁহার হৃদ্গত ভাব বুঝিয়া শিক্ষা প্রদানের জন্য বলিলেন…

 

''স্থির হঞা ঘরে যাও,না হও বাতুল।

ক্রমে ক্রমে পায় লোক ভবসিন্ধুকূল।।

মর্কট - বৈরাগ্য না কর লোক দেখাঞা।

যথাযোগ্য বিষয় ভুঞ্জ' অনাসক্ত হঞা।।

অন্তরে নিষ্ঠা কর,বাহ্যে লোক ব্যবহার।

অচিরাৎ কৃষ্ণ তোমায় করিবে উদ্ধার ।।''

 

শ্রীমন্মহাপ্রভুর উপদেশক্রমে রঘুনাথ দাস গোস্বামী গৃহে আসিয়া বাহ্য বৈরাগ্য বাতুলতা পরিত্যাগ পূর্ব্বক অনাসক্ত হইয়া বিষয় কার্য্য সমূহে নিয়োজিত হইলেন। রঘুনাথের পিতা রঘুনাথকে সংসারে আবদ্ধ করিবার জন্য এক পরমা সুন্দরী কন্যার সহিত রঘুনাথের বিবাহ সম্পাদন করিলেন। এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার পর শ্রীরঘুনাথ দাস গোস্বামী শ্রীমন্মহাপ্রভুকে দর্শনের জন্য পুনঃ ব্যাকুল হইয়া বারবার গৃহে হইতে পালাইতে থাকিলে তাঁহার পিতা যাইয়া ধরিয়া আনিতে লাগিলেন। রঘুনাথ, কি করিয়া সংসার হইতে মুক্ত হইবেন চিন্তা করিতে লাগিলেন। এমন সময় সংবাদ পাইলেন, শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু পানিহাটিতে শুভ বিজয় করিয়াছেন।

 

পতিত - পাবন নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপা হইলেই সংসার - মুক্তি সম্ভব বিচার করিয়া রঘুনাথ দাস পানিহাটিতে গঙ্গাতীরে বৃক্ষমূলে পিণ্ডার উপরে ভক্তগণ পরিবেষ্টিত হইয়া উপবিষ্ট শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুকে দর্শন করতঃ দূর হইতে দণ্ডবৎ প্রণতি জ্ঞাপন করিলেন। শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু  কৃপার্দ্রচিত্ত হইয়া তাঁহাকে নিজসমীপে আকর্ষণ করতঃ তাঁহার মস্তকে পাদপদ্ম স্থাপন করিলেন এবং রঘুনাথের মনোগত ভাব বুঝিয়া তাঁহার অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য তাঁহার পার্ষদ বৈষ্ণবগণের সেবার ব্যবস্থা দিলেন।

 

''নিকটে না আইস, চোরা, ভাগ দূরে দূরে।

আজি লাগ্ পাঞাছি, দণ্ডিমু তোমারে।।

দধি, চিড়া ভক্ষণ করাহ মোর গণে।

শুনিয়া আনন্দ হইল রঘুনাথের মনে।।''

 

শ্রীরঘুনাথ দাস গোস্বামী শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপানির্দ্দেশ ক্রমে পানিহাটিতে যে মহোৎসব করিয়াছিলেন তাহা আজও 'পানিহাটি চিড়াদধি মহোৎসব’ নামে খ্যাত। উক্ত মহোৎসবে স্বয়ং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং তাঁহারই অভিন্ন প্রকাশমূর্ত্তি শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু তাঁহার পার্ষদগণসহ গঙ্গাতীরে যমুনাপুলিন জ্ঞানে ভোজনলীলা করিয়াছিলেন। শ্রীরঘুনাথ দাস গোস্বামী পরদিবস রাঘব পণ্ডিতের মাধ্যমে শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর পাদপদ্মে, কি করিয়া শীঘ্র সংসারবন্ধন হইতে মুক্তি এবং শ্রীচৈতন্য পাদপদ্ম লাভ হইবে, অত্যন্ত কাতরভাবে নিবেদন করিলেন। কৃপার সমুদ্র শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু  রঘুনাথের মস্তকে পাদপদ্ম স্থাপন করতঃ বলিলেন…

 

''তুমি যে করাইলা এই পুলিন ভোজন।

তোমায় কৃপা করি, গৌর কইলা আগমন ।।

কৃপাকরি কইলা চিড়া - দুগ্ধ ভোজন।

নৃত্যদেখি রাত্র্যে কইলা প্রসাদ ভক্ষণ ।।

তোমা উদ্ধারিতে গৌর আইলা আপনে।

ছুটিল তোমার যত বিঘ্নাদি বন্ধনে ।।

স্বরূপের স্থানে তোমা করিবে সমর্পণে।

অন্তরঙ্গ ভৃত্য বলি রাখিবে চরণে ।।

নিশ্চিন্ত  হঞা  যাহ আপন ভবন।

অচিরে নির্ব্বিঘ্নে পাবে চৈতন্যচরণ ।।''

 

শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপা লাভ করিয়া শ্রীরঘুনাথ কৃতার্থ হইলেন। গৌড়দেশের ভক্তগণ শ্রীমন্মহাপ্রভুর দর্শনের জন্য নীলাচলে যাইতেছেন শুনিয়াও শ্রীরঘুনাথ যাইতে পারিলেন না ধরা পড়িবার ভয়ে। একদিন শেষ রাত্রিতে শ্রীযদুনন্দন আচার্য্য রঘুনাথের নিকট আসিয়া বলিলেন, তাঁহার শিষ্য সেবকটি ঠাকুরের সেবা ছাড়িয়াছে। তাঁহাকে বুঝাইয়া সেবায় নিয়োজিত করিতে হইবে । শ্রীরঘুনাথ,  শ্রীগুরুদেবের সঙ্গে চলিলেন, শেষরাত্রে প্রহরীগণ তখন সকলেই নিদ্রাভিভূতছিল। শ্রীল রঘুনাথ অর্দ্ধেক রাস্তা চলিয়া শ্রীগুরুদেবকে বলিলেন, তিনি নিজে বুঝাইয়া সেবককে পাঠাইয়া দিবেন তাঁহার জন্য চিন্তার প্রয়োজন নাই, তাঁহাকে ঘরে ফিরিয়া যাইতে নিবেদন করিলেন এবং তাঁহার নিকট বিদায় আজ্ঞা গ্রহণ করিলেন।

 

সেবক রক্ষক কেহ না থাকায় পালাইবার সুবর্ণসুযোগ বুঝিয়া শ্রীরঘুনাথ শ্রীচৈতন্য - নিত্যানন্দ চরণ চিন্তা করিতে করিতে ধরা পড়িবার ভয়ে সদর রাস্তা ছাড়িয়া উপপথে পূর্ব্বমুখে ধাইয়া চলিলেন, এমনকি গ্রামের পথ ছাড়িয়া দিয়া বনের পথে চলিতে লাগিলেন। একদিনে ৩০ মাইল পথ অতিক্রম করিলেন। সন্ধ্যাকালে এক গোপের বাথানে অবস্থান করিলেন ও দুগ্ধ পান করে ক্ষুধা নিবারণ করিলেন। প্রভুপ্রেমে আত্মহারা হইয়া শ্রীরঘুনাথ অনাহারে অনিদ্রায় পথ চলিতে চলিতে ১২ দিনে পুরুষোত্তম ধামে আসিয়া পৌঁছিলেন, পথে তিন দিন মাত্র ভোজন করিয়াছিলেন। শ্রীস্বরূপ দামোদর সহ শ্রীমন্মহাপ্রভু উপবিষ্ট আছেন, এমন  সময়ে শ্রীরঘুনাথ আসিয়া দূর হইতে প্রণাম করিলেন। মহাপ্রভু কৃপার্দ্রচিত্ত হইয়া তাঁহাকে আলিঙ্গন করিয়া বলিলেন …

''কৃষ্ণকৃপা বলিষ্ট সবা হইতে।

তোমারে কাড়িল বিষয় বিষ্ঠাগর্ত্ত হইতে।।''

 

শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীরঘুনাথকে  ক্ষীণ দুর্বল দেখিয়া রঘুনাথকে পুত্র ও ভৃত্যরূপে অঙ্গীকার করতঃ তাঁহার  সর্ব্বপ্রকার মঙ্গলের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করিতে স্বরূপদামোদরকে বলিলেন ও তাঁহার হস্তে সমর্পণ করিলেন। ভক্তবৎসল শ্রীমন্মহাপ্রভু রঘুনাথকে আদর ও যত্ন করিবার জন্য সেবক গোবিন্দকে নির্দ্দেশ করিলেন। বিশেষতঃ মহাপ্রভুর ভক্তগণের মধ্যে বৈরাগ্যের প্রাধান্য দেখা যায়…

''মহাপ্রভুর ভক্তগণের বৈরাগ্য প্রধান।

যাহা দেখি প্রীত হন গৌর ভগবান।।‘’

 

একদিন শ্রীরঘুনাথ নিজ কর্ত্তব্য সম্বন্ধে শ্রীমন্মহাপ্রভুর শ্রীমুখে উপদেশ শুনিবার জন্য স্বরূপ দামোদরের নিকট নিবেদন করিলেন I স্বরূপ দামোদর মহাপ্রভুকে উহা জানাইলে মহাপ্রভু রঘুনাথকে বলিলেন যতটা তিনি জানেন তদপেক্ষা অধিক জানেন স্বরূপ দামোদর I সাধ্যসাধন তত্ত্ব সম্বন্ধে তাঁহার নিকটে উপদেশ গ্রহণ করিতে বলিলেন I শ্রীরঘুনাথের, শ্রীমন্মহাপ্রভুর শ্রীমুখে উপদেশ শ্রবণ করিবার অত্যাগ্রহ দেখিয়া পরে মহাপ্রভু তাঁহাকে বলিলেন,- ''যদি আমার বাক্যে তাঁহার শ্রদ্ধা হয় তাহা হইতে তিনি যেন এই উপদেশ গ্রহণ করেন'',-

''গ্রাম্যকথা না শুনিবে, গ্রাম্যবার্ত্তা না কহিবে I

ভাল না খাইবে আর ভাল না পরিবে II

অমানী মানদ হঞা কৃষ্ণনাম সদা লবে I

ব্রজে রাধাকৃষ্ণ সেবা মানসে করিবে II''

 

শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামীর বৈরাগ্য যেন পাষাণের রেখা I সাড়ে সাত প্রহর সময় তাঁহার কৃষ্ণকীর্ত্তন - স্মরণে অতিবাহিত হইত, আহার নিদ্রার জন্য চারি দণ্ড সময় থাকিত I তিনি কেবলমাত্র প্রাণরক্ষার জন্য আহার করিতেন I আজন্ম জিহ্বাতে রসের স্পর্শ হয় নাই এবং পরিধানে ছিল ছেঁড়া কাঁথা I জগন্নাথের মহাপ্রসাদ বিক্রেতাগণ দুই তিনদিনের পুর্য্যসিত কর্দ্দমাক্ত প্রসাদ সিংহদ্বারে ফেলিয়া দিলে পর্য্যুষিত হওয়ার দরূণ পচাগন্ধ হওয়ায় তৈলঙ্গী গাভীগণ পর্য্যন্ত উহা খাইতে পারিত না, কিন্তু রঘুনাথ দাস গোস্বামী রাত্রিতে উক্ত সড়ান্নগুলি ঘরে আনিয়া জল দিয়া ধুইয়া তাহার ভিতরে অসিদ্ধ চাউলের কঠিন অংশ 'দড়ভাতমাজি' লবণ দিয়া গ্রহণ করিতেন I শ্রীস্বরূপ দামোদর রঘুনাথকে একদিন ঐরূপ  করিতে দেখিয়া উহাকে অমৃতসমজ্ঞানে পরমানন্দে মাগিয়া খাইলেন I শ্রীমন্মহাপ্রভুও গোবিন্দের নিকট উহা শুনিয়া রঘুনাথের নিকট যাইয়া উহার একগ্রাস গ্রহণ করিলেন, দ্বিতীয় গ্রাস গ্রহণ করিতে গেলে স্বরূপ দামোদর বাধা দিলেন I

 

'' খাসা বস্তু খাও সবে, মোরে না দেহ' কেনে ?

এত বলি' একগ্রাস করিলা ভক্ষণে II

আর গ্রাস লইতে স্বরূপ হাতেতে ধরিলা I

'তব যোগ্য নহে' বলি  'বলে কাড়ি' নিলা II       (চৈঃ চঃ অন্ত্য ৬ / ৩২২ -৩২৩) 

 

শ্রীরঘুনাথ দাস গোস্বামী তাঁহার স্বচরিত স্তবাবলী - চৈতন্যস্থবকল্পবৃক্ষস্তবে শ্রীমন্মহাপ্রভুর করুণা এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেন I

''মহাসম্পদ্দাবাদপি পতিত মুদৃত্য কৃপায়া I

স্বরূপে যঃ স্বীয়ে কুজনমপি মাং ন্যস্য মুদিতঃ I

উরো গুঞ্জাহারং প্রিয়মপি চ গোবর্দ্ধন শিলাং

দদৌ মে গৌরাঙ্গো হৃদয় উদযন্মাং মদয়তি II''

অর্থাৎ,- আমি মহাকুজন হইলেও কৃপাপূর্ব্বক যিনি আমাকে পতিত দেখিয়া সম্পদ ও দারা (পাঠান্তরে বিষয়রূপ দাবাগ্নি ) হইতে উদ্ধার করতঃ শ্রীস্বরূপে অর্পণ করিয়া আনন্দ লাভ করিয়াছিলেন, যিনি আমাকে স্বীয় বক্ষের গুঞ্জামালা ও গোবর্দ্ধন শিলা দান করিয়াছিলেন; সেই গৌরাঙ্গ আমার হৃদয়ে উদিত হইয়া আমাকে মত্ত করিতেছেন I

 

শ্রীস্বরূপদামোদরের আনুগত্যে থাকিয়া পুরুষোত্তমধামে শ্রীরঘুনাথ দাস গোস্বামী শ্রীমন্মহাপ্রভুর অন্তরঙ্গসেবা করিয়াছিলেন I ষোল বৎসর বাদে শ্রীমন্মহাপ্রভু ও স্বরূপ দামোদর অপ্রকট পরে শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামী বিরহ সন্তপ্ত হইয়া গোবর্দ্ধনে ভৃগুপাত করতঃ দেহত্যাগ করিবেন, এই সংকল্প লইয়া বৃন্দাবনে পৌঁছিলেন। শ্রীরূপ গোস্বামী ও শ্রীসনাতন গোস্বামী তাঁহাকে অনেক প্রবোধ দিয়া দেহত্যাগ সংকল্প হইতে নিবৃত করিলেন এবং তৃতীয় ভ্রাতারূপে নিকটে রাখিলেন। শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামী শ্রীধাম বৃন্দাবনে রাধাকুণ্ড তটে বাস করতঃ, ‘’প্রত্যহ সহস্র দণ্ডবৎ, লক্ষ হরিনাম, রাত্রিদিন রাধাকৃষ্ণের অষ্টকালীন সেবা, মহাপ্রভুর চরিত্রকথন, তিনসন্ধ্যা রাধাকুণ্ডে অপতিত স্নান, এইভাবে নিরন্তর রাধাকৃষ্ণের ভজনে তিনি  সাড়ে সাত প্রহর কাল (ঘ২২/৩০ মিঃ) অতিবাহিত করতেন।‘’ কোনদিন চারিদণ্ড নিদ্রা,কোনদিন তাহাও হইত না। ব্ৰজধামে শ্রীরঘুনাথকে পেয়ে বৈষ্ণব স্মৃতিতে এক সুবৰ্ণ- যুগের উদয় হল।

 

শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামী আশ্বিন শুক্লা দ্বাদশী তিথিতে অপ্রকট হইয়াছিলেন।