🌸শ্রীল মুরারি গুপ্ত 🌸

💐🌷🌹🌻🌸🌻🌹🌷💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I হরে কৃষ্ণ, আগামী ১৪ই কার্ত্তিক, ৩১অক্টোবর ইং রোজ - শনিবার পরম বৈষ্ণব পরম ভাগবত  শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর পূর্ণ কৃপাপাত্র শ্রীল মুরারি গুপ্তের শুভ তিরোভাব তিথি I

শ্রীল মুরারি গুপ্তের পৈতৃক নিবাস ও জন্মস্থান সিলেট, কিন্তু পরে তিনি নবদ্বীপে বসবাস করেন। মুরারি জাতিতে ছিলেন বৈদ্য এবং পেশায় চিকিৎসক। নবদ্বীপে গঙ্গাদাসের টোলে তিনি চৈতন্যদেবের সহপাঠী ছিলেন । অধ্যয়নকালে প্ৰভু মুরারির সঙ্গে অনেক বাদবিতণ্ডা করতেন। পরে চৈতন্যদেবের ভগবৎপ্রেম ও ভক্তিবাদে আকৃষ্ট হয়ে তাঁর শিষ্য হন। মুরারি ছিলেন শ্ৰী রামচন্দ্রের ভক্ত । শ্ৰীগৌরাঙ্গেও তাঁর অনন্য মমতা ছিল । শ্ৰী রামচন্দ্রের ভক্ত হওয়ার জন্য প্ৰভু তাঁকে রামদাস বলে ডাকতেন।

মুরারি একদিন শ্ৰীবাস পণ্ডিতের গৃহে এসে প্রথমে শ্রীপ্ৰভুকে পরে শ্ৰী নিত্যানন্দকে প্ৰণাম করলেন। প্ৰভু তা দেখে হাসতে হাসতে বললেন,- ‘’মুরারি, তুমি আগে  শ্ৰীপাদকে প্ৰণাম না করে আমাকে প্ৰণাম করলে কেন ?’’

মুরারি বললেন, “প্রভু ! আপনি আমার হৃদয়ে অবস্থান করে আমাকে দিয়ে যেমন করালেন, আমি তেমনি করলাম।”

প্ৰভু বললেন,- ‘’ভাল, আজ তুমি ঘরে যাও, কালকে আবার দেখা হবে।‘’

রাত্রে মুরারি স্বপ্নে দেখলেন,- ‘’স্বয়ং বলরাম নিত্যানন্দ আগে আগে যাচ্ছেন এবং প্রভু  শ্রীপাদকে অনুসরণ করছেন । প্ৰভু বললেন,- ‘’মুরারি, শ্রীপাদ নিত্যানন্দ বড়, আমি তাঁর ছোট।” জেগে উঠে স্বপ্নের কথা স্মরণ করে মুরারি কাঁদতে লাগলেন। এবার শ্ৰীবাস পণ্ডিতের বাড়ি গিয়ে তিনি আগে নিত্যানন্দ প্ৰভুকে প্ৰণাম করলেন , পরে মহাপ্ৰভুকে প্ৰণাম করলেন।

প্ৰভু জিজ্ঞাসা করলেন,- ‘’মুরারি, আজ কেন আগে আমাকে প্ৰণাম করলে না ? ”

মুরারি উত্তর দিলেন,- ‘’প্রভু ! আপনি আমাকে আজ যেমন বুদ্ধি দিলেন, আমি তেমনই করলাম।‘’ প্ৰভু সন্তুষ্ট হয়ে মুরারিকে চর্ব্বিত তাম্বুল প্ৰদান করলেন। ঐ তাম্বুল ভক্ষণ করে মুরারি আনন্দে আত্মহারা হয়ে বাড়িতে ফিরলেন । মুরারি আহার করতে বসলে তাঁর স্ত্রী ঘৃত সহযোগে অন্ন পরিবেশন করলেন । মুরারি প্রেমাবিষ্ট অবস্থায় “খাও খাও খাও কৃষ্ণ” বলে ঘূতযুক্ত অন্ন মাটিতে ফেলতে লাগলেন । মুরারির পত্নী স্বামীর এরূপ ব্যবহার দর্শন করে বিস্মিত হলেও বার বার অন্ন এনে দিতে লাগলেন । মুরারিও ঐ অন্ন মাটিতে নিক্ষেপ করতে লাগলেন। সেদিন এভাবেই কাটল ।

পরদিন সকালে মুরারি কৃষ্ণপ্ৰেমানন্দে বিহ্বল হয়ে বসে আছেন , এমন সময়ে প্ৰভু এসে উপস্থিত হলেন । প্রভুকে দেখেই মুরারি প্রভুর পাদ বন্দনা করে প্ৰভুকে বসার আসন দিলেন । প্ৰভু বললেন,- ‘’মুরারি ! আমার অজীর্ণ হয়েছে , চিকিৎসার জন্য তোমার কাছে এসেছি ।” একথা শুনে মুরারি জিজ্ঞাসা করলেন,- কাল প্রভুর কি ভোজন হয়েছিল ?

প্ৰভু বললেন,- তুমি যে ঘৃতমিশ্ৰিত অন্ন প্ৰদান করেছিলে, তাই ভোজন করে আমার বদহজম হয়েছে। এই কথা বলে প্ৰভু মুরারির জলপাত্ৰ নিয়ে জলপান করতে লাগলেন। পান শেষ হলে, বললেন,- ‘’তোমার অন্ন ভোজনে উৎপন্ন অজীর্ণ তোমার জল পান ছাড়া আরোগ্য হবে না বলেই তোমার জল পান করলাম।‘’ মুরারি প্রভুর অসাধারণ করুণা দেখে প্ৰেমভরে কাঁদতে লাগলেন ।

আর একদিন প্ৰভু শ্ৰীবাসগৃহে মুরারির কাঁধে চেপে “গরুড় গরুড় ” বলে হুঙ্কার করতে লাগলেন । মুরারি বললেন,- ‘’প্রভু ! তুমি আমার কাঁধে এই প্রথম আরোহন করনি । তুমি আমার কাঁধে চড়ে স্বৰ্গ থেকে পারিজাত এনেছিলে, বাণরাজার সঙ্গে ও রাবণ রাজার সাথে যুদ্ধ করেছিলে ।” এই কথা বলে মুরারি প্রভুকে কাঁধে নিয়েই ইতস্ততঃ ভ্ৰমণ ও নৃত্য করতে লাগলেন। উপস্থিত ভক্তবৃন্দ প্ৰভুকে শঙ্খচক্ৰ- গদাপদ্মধারী চতুর্ভূজ রূপে মুরারির কাঁধে বিরাজমান দর্শন করলেন I 

আরও একবার মুরারি মনে মনে চিন্তা করলেন, শ্রীগৌরাঙ্গ নিজ লীলা সমাপন করে অপ্রকট হলে তিনি সেই বিরহ কিভাবে সহ্য করবেন । তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে স্থির করে একখানি ছুরি সংগ্রহ করলেন । অন্তৰ্যামী শ্ৰীগৌরাঙ্গ তা জানতে পেরে অতর্কিতে মুরারির ঘরে এসে উপস্থিত হলেন। গৃহের মধ্যে প্ৰবেশ করে ঐ ছুরিখানি বের করে আনলেন এবং মুরারিকে তাঁর আত্মহত্যার সঙ্কল্প থেকে বিরত হতে বললেন । অন্তৰ্যামী প্ৰভু সমস্তই জেনে ফেলেছেন দেখে মুরারি লজ্জায় অধোবদন হয়ে কাঁদতে লাগলেন।

অন্তরাল হতে মুরারির পত্নীও এই অলৌকিক ব্যাপার প্রত্যক্ষ করে মনে মনে প্ৰভুকে অসংখ্য প্ৰণাম ও ধন্যবাদ দিতে লাগলেন, এবং অঝোর ধারায় রোদন করতে আরম্ভ করলেন । শ্ৰীগৌরাঙ্গ মুরারিকে ওই অসৎসঙ্কল্প পরিত্যাগের শপথ করিয়ে নিজগৃহে ফিরে গেলেন । সংস্কৃত ভাষায় মুরারি গুপ্ত রচিত শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য চরিতামৃত হ’ল — চৈতন্যদেবের জীবনচরিত । সাধারণভাবে এটি মুরারি গুপ্তের কড়চা নামে পরিচিত। যেহেতু তিনি চৈতন্যদেবকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, তাই চৈতন্যজীবন সম্বন্ধে রচিত এটি প্রথম প্রামাণিক গ্রন্থ I