Friday, September 4, 2020


 💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹
🌼💐 অষ্টাদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼
🍇বিশেষ পোষ্ট🍇
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’
আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।
অষ্টাদশ অধ্যায় – মোক্ষযোগ
পার্বতী দেবী বললেন,- হে প্রভু! আপনি ইতিমধ্যে শ্রীমদ্ভগবদগীতার সপ্তদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। এখন অনুগ্রহ করে অষ্টাদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা করুন। তখন দেবাদিদেব শিব বললেন,- ‘’হে হিমালয় কন্যে(পার্বতী)! শ্রীমদ্ভগবদগীতার অষ্টাদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য শ্রবণ কর যা বেদের থেকেও উচ্চাঙ্গের এবং অসীম আনন্দ প্রদানে সক্ষম।‘’ এই মাহাত্মের কথা যখন কারও কর্ণে প্রবেশ করে, তৎক্ষণাৎ তাঁর সমস্ত জড় বাসনা দূরীভূত হয়। এটা শুদ্ধ ভক্তের নিকট অমৃতের ন্যায়, ভগবান বিষ্ণুর জীবন, ইন্দ্রসহ দেবতাগণ তথা মহান যোগীদের(সনক, সনাতন আদি) হৃদয়ের সান্ত্বনা প্রদানকারী। এই মাহাত্ম্য যিনি কীর্ত্তন করেন, যমদূতেরা দূর থেকে তাঁকে নমস্কার করে পলায়ন করে। আর কোন পাঠ বা কীর্ত্তন নেই যা এত দ্রুত এই ত্রিতাপ ক্লিষ্ট জগত থেকে মুক্তি দিতে পারে ও সমস্ত পাপ বিনাশ করতে পারে।
মেরু পর্বতের সর্বোচ্চ শিখরে অমরাবতী অবস্থিত যা স্বয়ং বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেছেন। সেই স্বর্গরাজ্যের রাজধানীতে ইন্দ্র তার পত্নী শচীদেবী সহ দেবতাদের দ্বারা পূজিত হয়ে থাকেন। একদিন ইন্দ্র যখন অত্যন্ত শান্ত ভাবে বসেছিলেন, তখন তিনি দেখলেন একটি সুন্দর যুবা পুরুষ আবির্ভূত হলেন, যাঁকে বিষ্ণু দূতেরা চতুর্দিক থেকে সেবা করতে করতে সেখানে নিয়ে এলেন। হঠাৎ সেই যুবকের দিকে তাকাতেই ইন্দ্রের মাথার মুকুটটি মাটিতে পড়ে গেল। সেই সময় যে সমস্ত দেবতারা ইন্দ্রের সেবায় নিযুক্ত ছিলেন তারা রাজমুকুটটি তুলে নিয়ে নূতন আগন্তুক সুন্দর ঐ যুবকটির মাথায় পরিয়ে দিলেন। তারপর স্বর্গলোকের সমস্ত অধিবাসী দেবতারা সকলে মিলে নৃত্য-গীত সহকারে নতুন ইন্দ্রের অভিষেক আরতি করলেন। মহান ঋষিরা উপস্থিত হয়ে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ ও আশীর্বাদ করলেন এবং গন্ধর্ব ও অপ্সরারা আনন্দে নৃত্য করতে লাগল।
এইভাবে নূতন ইন্দ্র(যিনি যোগ্যতা অর্জনের জন্য কখনই একশত অশ্বমেধ যজ্ঞ করেননি) স্বর্গলোকের অধিবাসী ও দেবতাদের দ্বারা পূজিত হয়ে স্বর্গসুখ উপভোগ করতে শুরু করলেন। এই সমস্ত দেখে প্রাক্তন ইন্দ্র অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হলেন।তিনি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন,- ‘’এই ব্যক্তিটি কখনও পান্থশালা নির্মাণ, কূপ খনন, বৃক্ষ রোপন, পরোপকার আদি কোন পুণ্য কর্ম করেনি এবং অনাবৃষ্টি বা দুর্ভিক্ষের সময় দান-ধ্যান পর্যন্ত করেনি। সে কখন যজ্ঞ সম্পাদন বা তীর্থস্থানে দান, ব্রত ও সাধন করেনি। তা সত্ত্বেও কি করে আমার পদ সে প্রাপ্ত হল?’’ পূর্বের ইন্দ্র এরূপ চিন্তা করে খুবই বিচলিত বোধ করলেন এবং ক্ষীর সমুদ্রে গিয়ে ভগবান বিষ্ণুর নিকট প্রার্থনা করতে লাগলেন।
ভগবান বিষ্ণুর দর্শন লাভ করে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,- ‘’হে প্রভো! পূর্বজীবনে আমি অনেক যজ্ঞ সম্পাদন করেছিলাম এবং অনেক পুণ্যকর্মও করেছি, ফলস্বরূপ আমি স্বর্গে ইন্দ্র রূপে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এই সময় অন্য একজন ব্যক্তি এসে আমার স্থান দখল করে স্বর্গের রাজা হয়ে বসেছে। এই ব্যক্তিটি জীবনে কখন কোন বিশেষ পুণ্যকর্ম করেনি বা যজ্ঞও করেনি। তা সত্ত্বেও কিভাবে সে আমাকে পদচ্যুত করে স্বর্গরাজ্যে ইন্দ্ররূপে অভিষিক্ত হল?” সেই সময় ভগবান বিষ্ণু বললেন,- ‘’প্রিয় ইন্দ্র! ঐ মহাত্মা প্রতিদিন শ্রীমদ্ভগবদগীতার অষ্টাদশ অধ্যায় অধ্যয়ন করত। সারা জীবন ধরে সে ভগবদ্গীতার এই অধ্যায়ের পাঁচটি শ্লোক অনুশীলন করে এবং তাঁর এই প্রকার সাধনার বলে সমস্ত প্রকার পুণ্যকর্ম ও যজ্ঞের ফলস্বরূপ বহু বৎসর স্বর্গরাজ্যের সুখ ভোগ করে সে আমার ধাম প্রাপ্ত হবে।
তুমিও যদি ঐভাবে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার অষ্টাদশ অধ্যায় অনুশীলন কর, তাহলে তুমিও আমার দিব্যধাম প্রাপ্ত হতে পারবে। ভগবান বিষ্ণুর এই সমস্ত কথা শ্রবণ করে ইন্দ্র তৎক্ষণাৎ একটি ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করে গোদাবরী নদীর তীরে একটি অতি পবিত্র কালিকা গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হলেন। ঐ স্থানে পরমেশ্বর ভগবান কালেশ্বর রূপে অবস্থান করেন। নিকটবর্তী গোদাবরীর তীরেই একটি নির্জন স্থানে একজন সদাচারী ব্রাহ্মণ(যিনি জীবনের সর্বোত্তম লক্ষ্য ও বৈদিক শাস্ত্রের গুহ্য জ্ঞান সম্বন্ধে অবগত) বসে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন ঐ স্থানে বসে ভগবদগীতার অষ্টাদশ অধ্যায়ের শ্লোকসমূহ আবৃত্তি করতেন। যখন ইন্দ্র তাকে দেখলেন তখন অত্যন্ত প্রসন্নতা অনুভব করলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি সেই ব্রাহ্মণের পাদপদ্মে পতিত হয়ে অনুরোধ করলেন,- ‘’দয়া করে আমাকে ভগবদ্গীতারঅষ্টাদশ অধ্যায় শিক্ষা দিন।‘’
কিছুকাল ইন্দ্র ঐ ব্রাহ্মণের নির্দেশ মতো ভগবদ্গীতার অষ্টাদশ অধ্যায় অনুশীলন করার পর বিষ্ণুলোকের সর্বোচ্চ স্থান প্রাপ্ত হলেন। যখন ইন্দ্র এইভাবে ভগবানের ধামে উপনীত হলেন তখন উপলব্ধি করতে পারলেন যে, স্বর্গের দেবতাদের সঙ্গে দেবরাজ ইন্দ্ররূপে যে সুখ, বিষ্ণুলোকের আনন্দের তুলনায় তা কিছুই নয় I প্রিয়ে পার্বতি! এই কারণেই মহান ঋষিরা, বিশেষভাবে ভগবদগীতার এই অষ্টাদশ অধ্যায় অনুশীলন করে থাকেন এবং ফলস্বরূপ তারা ভগবান শ্রীবিষ্ণুর পাদপদ্ম লাভ করেন। যে কেউ এই গীতা মাহাত্ম্য শ্রবণ করবেন বা অধ্যয়ন করবেন, অচিরেই পূর্বকৃত সমস্ত পাপ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং যে ব্যক্তি এই আলোচনা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবেন তিনি সমস্ত যজ্ঞ ও পুণ্যকর্মের ফল ভোগ করার পর ভগবান বিষ্ণুর ধাম প্রাপ্ত হবে।
‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I
কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)
কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।
‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।
প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’
যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি। পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!"
!! জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় !! !! জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় !!

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...