🌷শ্রীমন্দির প্রদক্ষিণ🌷

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

যৎকীর্ত্তনং যৎস্মরণং যদীক্ষণং 

যদ্বন্দনং যচ্ছ্রবনং যদর্হণম্ ।  

লোকস্য সদ্যো বিধুনোতি কল্মষং 

তস্মৈ সুভদ্রশ্রবসে নমো নমঃ ।।  (ভাগবত ২/৪/১৫) 

অর্থাৎ,- আমি সেই সর্ব মঙ্গলময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করি; যাঁর যশগাথা কীর্ত্তন, স্মরণ, দর্শন, বন্দন, শ্রবণ ও পূজনের ফলে সমস্ত পাপরাশি অচিরেই ধৌত হয়। 

প্রদক্ষিণার অর্থ কি ? শ্রীগৌড়ীয় মঠের ভক্তগণ চারবার শ্রীমন্দির প্রদক্ষিণ বা পরিক্রমা করার কারণ কি ?

ভক্ত জানতে চেয়েছেনঃ-- "আচ্ছা প্রভু,  আপনারা মন্দিরে গিয়ে প্রণাম করে প্রদক্ষিণ করেন কেনো? আবার কেউ কেউ তিনবার আবার কেউ কেউ চারবার মন্দির প্রদক্ষিণ করে কেনো!

আলোচনাঃ- প্রভুপাদ শ্রীশ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শ্রীচৈতন্য মঠ ও তৎ শাখা গৌড়ীয় মঠ সমূহে এবং তদ্ আশ্রিত ভক্তগণ শাস্ত্র বিধি উপেক্ষা করে না। যথাযথ শাস্ত্রানুসারে তারা চারবার প্রদক্ষিণ করে। এই বিষয়ে হরিভক্তি বিলাস গ্রন্থের শ্লোক গুলো পাঠ করলে আপনার সংশয় দূর হবে বলে আশা করি।

প্রদক্ষিণ কেনো করা হয় ?

"প্রদক্ষিণাং যে কুর্ব্বন্তি ভক্তিযুক্তেন চেতসা।

ন তে যমপুরং যান্তি যান্তি পূণ্যকৃতাং গতিম্।।"     (হরিভক্তি বিলাস ৮।৩৯৫) 

বরাহপুরাপুরাণে বলা হইয়াছে,- শ্রীহরিকে ভক্তিযুক্ত হৃদয়ে যাহারা প্রদক্ষিণা করেন, তাহারা ভক্তজনোচিত গতি লাভ করেন। তাহারা যমপুরগামী হন না।

"প্রদক্ষিণস্তু যঃ কূ্র্য্যাৎ হরিং ভক্ত্যা সমন্বিতঃ। 

হংসযুক্তবিমানেন বিষ্ণুলোকং স গচ্ছতি।।"     (হরিভক্তি বিলাস৮/ ৩৯৯)

স্কন্দপুরাণে বলা হইয়াছে,- শ্রীহরিকে ভক্তিভরে প্রদক্ষিণকারী ব্যক্তি হংসযুক্ত বিমানারোহণ করে বিষ্ণুলোকে গমন করেন।

শ্রীগৌড়ীয় মঠের ভক্তগণ কেনো চারবার প্রদক্ষিণ করেন ?

"একাং চন্ড্যাং রবৌ সপ্ত তিস্রো দদ্যাদ্বিনায়কেো।

চতস্রঃ কেশবে দদ্যাৎ শিবে ত্বর্ধ প্রদক্ষিণাম।।''     (হরিভক্তিবিলাস ৮/৩৯৪)

নৃসিংহপুরাণ মতে-- সূর্যকে সাতবার,  শ্রীবিষ্ণুকে চারবার, গনেশকে তিনবার, চন্ডীকে একবার এবং মহাদেবকে অর্ধবার প্রদক্ষিণ করতে হবে।

 

"চতুর্বারং ভ্রমিভিস্তু জগৎ সর্ব্বং চরাচরম্।

ক্রান্তং ভবতি বিপ্রাগ্র্য তত্তীর্থগমনাধিকম্।"

স্কন্দপুরাণে চাতুর্স্মাস্য মাহাত্ম্যে-প্রসঙ্গে যথা,- হে দ্বিজবর! শ্রীভগবানকে চারিবার প্রদক্ষিণ করা হইলে চরাচর সকল বিশ্ব প্রদক্ষিণ করা হয় এবং এই প্রদক্ষিণ দ্বারা তীর্থভ্রমণ হইতেও অধিক ফল লাভ করা।

 

"ভক্ত্যা কুর্ব্বন্তি যে বিষ্ণোঃ প্রদক্ষিণচতুষ্টয়ম্।

তেহপি যান্তি পরং স্থানং সর্ব্বলোকাত্তমোত্তমম্।     (হরিভক্তিবিলাস ৮/৪০৪)

বৃহন্নারদীয় প্রদক্ষিণ মহাত্ম্যে সুধর্ম্মার উপখ্যান আরম্ভে কথিত হইয়াছে,- ভক্তিসহকারে শ্রীবিষ্ণুকে যাঁহারা চারিবার প্রদক্ষিণ করেন, তাহারাও সর্ব্বলোকের উত্তম স্থান হইতেও পরম উত্তম স্থানে অর্থাৎ ভগবৎলোকে গমন করেন।

 

অতএব হরিভক্তি বিলাস গ্রন্থের সিদ্ধান্তানুসারেই শ্রীগৌড়ীয় মঠের ভক্তগণ চারবার মন্দির পরিক্রমা করেন। যারা তিন বার পরিক্রমা করেন তারা তাদের নিজস্ব মতেই করেন এতে আমার কোন কিছু বলার নাই।

 

(প্রভু হে !)

এমন দুর্ম্মতি            সংসার-ভিতরে

পড়িয়া আছিনু আমি।

তব নিজ-জন            কোন মহাজনে

পাঠাইয়া দিলে তুমি।।

দয়া করি মোরে          পতিত দেখিয়া

কহিল আমারে গিয়া।

ওহে দীন জন           শুন ভাল কথা

উল্লসিত হ'বে হিয়া।।

তোমারে তারিতে   শ্রীকৃষ্ণ-চৈতন্য

নবদ্বীপে অবতার।

তোমা হেন কত          দীন হীন জনে

করিলেন ভব-পার।।

বেদের প্রতিজ্ঞা          রাখিবার তরে

রুক্মবর্ণ-বিপ্রসুত।

মহাপ্রভু নামে          নদীয়া মাতায়

সঙ্গে ভাই অবধুত।।

নন্দসুত যিনি           চৈতন্য গোঁসাঞি

নিজ-নাম করি' দান।

তারিল জগৎ                 তুমিও যাইয়া

লহ নিজ-পরিত্রাণ।।

সে কথা শুনিয়া           আসিয়াছি নাথ

তোমার চরণ-তলে।

ভকতি-বিনোদ           কাঁদিয়া কাঁদিয়া

আপন কাহিনী বলে।।

 

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I

কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’   (শ্রীমদ্ভাগবত)

কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।

‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।

প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’

যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি। পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!"

!! জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় !! !! জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় !!