💐শ্রীপুরুষোত্তম ব্রত - মাহাত্ম্য💐

🌻🍁🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🍁🌻

🍇খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

হরে কৃষ্ণ, আজ ১ আশ্বিন, ১৮ সেপ্টেম্বর ইং রোজ - শুক্রবার শ্রীপুরুষোত্তম মাস ব্রতারম্ভ। সকলকে জানাই কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা। যাঁহারা রাধাকৃষ্ণের কৃপা ও কৃষ্ণভক্তি লাভ করতে চান - তাঁহারা অবশ্যই এই ব্রত পালন করিবেন।

স্মার্তগণ পুরুষোত্তম মাস বা অধিমাসকে 'মলমাস' বলে এই মাসে সমস্ত শুভকার্য পরিত্যাগ করে থাকেন। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই মাসকে পারমার্থিক মঙ্গলের জন্য অন্য সকল মাস থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে নির্ণয় করেছেন। তিনি নিজের নাম অনুসারে এই মাসের নাম ‘’পুরুষোত্তম’’  মাস রেখেছেন। শ্রীবাল্মিকী-দৃঢ়ধন্বা সংবাদে উক্ত আছে,- পুরুষোত্তম মাসস্য দৈবতং পুরুষোত্তমঃ।

তস্মাৎ সম্পজয়েদ্ভক্ত্যা শ্রদ্ধয়া পুরুষোত্তমম্ ।।

অর্থাৎ,- হে দৃঢ়ধন্বা! পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণই পুরুষোত্তম মাসের অধিদেবতা। অতএব সেই মাসে প্রতিদিন ভক্তি-শ্রদ্ধাপূর্বক পুরুষোত্তম কৃষ্ণকে ষোড়শোপচারে পূজা করবে।

 নৈমিষারণ্যক্ষেত্রে শ্রীসূত গোস্বামী সমবেত ঋষিদের বললেন,- ‘’ভারতভূমিতে জন্মলাভ করে যে গৃহাসক্ত নরাধমগণ শ্রীপুরুষোত্তম ব্রতকথা শ্রবণ ও ব্রত পালন করে না, সেই দুর্ভাগাগণ জন্ম -মরণ এবং পুত্র-মিত্র, কলত্র ও নিজজন বিয়োগ জনিত দুঃখভাগী হয়। হে দ্বিজবরগণ, এই পুরুষোত্তম মাসে বৃথা কাব্যালংকারাদি আলোচনা করবে না, পরশয্যায় শয়ন এবং অনিত্য বিষয়ালাপ  করবে না I পরনিন্দা, পরান্নভোজন ও পরকার্য করবে না, বিত্তশাঠ্য পরিত্যাগপূর্বক ব্রাহ্মণকে দান করবে। ধন থাকার পরেও বিত্তশাঠ্য করলে রৌরব গমনের কারণ হয়। প্রতিদিন বৈষ্ণব ব্রাহ্মণদিগকে উত্তম ভোজন দিবে। ব্রতী নিজে দিবসের অষ্টম ভাগে ভোজন করবে। ইন্দ্রদ্যুম্ন, যৌবনাশ্ব ও ভগীরথ প্রমুখ রাজাগণ শ্রীপুরুষোত্তমকে আরাধনা করে ভগবৎসামীপ্য লাভ করেছিলেন। সর্বপ্রকার যত্নের সাথে পুরুষোত্তমের সেবা করবে। এই সেবা সকল সাধন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং সর্বার্থ ফলপ্রদ।‘’

‘’গোবর্দ্ধনধরং বন্দে গোপাল গোপরূপিণম্।

গোকুলৎসবমীশানং গোবিন্দং গোপীকাপ্রিয়ম।।‘’

এই মন্ত্র জপ করে কৌণ্ডীন্য মুনি পুরুষোত্তমকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। নবঘন-দ্বিভুজ মুরলীধর, পীতাম্বর শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীরাধার সাথে নিয়ত ধ্যান করতে হবে। যিনি পুরুষোত্তম মাসে ভক্তিপূর্বক এরূপ করেন তিনি সর্বাভীষ্ট লাভ করেন।''

 

পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টির জন্য প্রতি সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রদান করা কর্তব্য। সামর্থ্য থাকলে ঘৃত প্রদীপ নতুবা তিল-তৈল প্রদীপ দেওয়া উচিত। প্রতিদিন শ্রীমদ্ভাগবত ও অন্যান্য সদ্গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করা উচিত। বিশেষ করে শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্দে বর্ণিত ব্রহ্মস্তুতি ও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার পঞ্চদশ অধ্যায়।

শ্রীমদ্ভাগবতং ভক্ত্যা শ্রোতব্যং পুরুষোত্তমে।

তৎপুণ্যং বচসা বক্তুং বিধাতা হি ন শক্নুয়াৎ॥

অর্থাৎ,- পুরুষোত্তম মাসে ভক্তিপূর্বক শ্রীমদ্ভাগবত গ্রন্থ শ্রবণ করবে। ভাগবত শ্রবণের পুণ্য, বিধাতাও বলতে পারে না।

প্রতিদিন চৌরাগ্রগণ্য পুরুষাষ্টকম, জগন্নাথাষ্টকম্, নন্দনন্দনাষ্টকম্, রাধা-কৃষ্ণ কৃপাকটাক্ষ স্তোত্রম প্রভৃতি নিজাভীষ্ট স্তোত্রাবলি পাঠও পূর্বতন আচার্যকৃত ভজন কীর্ত্তন করা উচিত।

🍁শ্রীজগন্নাথাষ্টকম্🍁

কদাচিৎ কালিন্দীতট - বিপিন - সঙ্গীত - তরলো,

মুদাভীরীনারী - বদনকমলাস্বাদ মধুপঃ।

রমা - শম্ভু - ব্ৰহ্মাসুরপতি গণেশার্চ্চিত পদো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥১॥

অর্থাৎ,- যিনি কখনও কখনও যমুনা তীরস্থ বন মধ্যে, সঙ্গীত করিতে করিতে ভ্রমরের ন্যায় আনন্দে ব্রজগোপাঙ্গণাদের মুখারবিন্দের মধু পান করেন এবং লক্ষ্মী, শিব, ব্ৰহ্মা, ইন্দ্র ও গণেশ প্রভৃতি দেবদেবীগণ যাঁহার পদযুগল অৰ্চনা করিয়া থাকেন সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়ন পথের পথিক হউন। 

 

ভুজে সব্যে বেণুং শিরসি শিখিপিচ্ছং কটিতটে,

দুকূলং নেত্ৰান্তে সহচরি কটাক্ষং বিদধতে।

সদা শ্ৰীমদ্বৃন্দাবন - বসতি লীলা পরিচয়ো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥২॥

অর্থাৎ,- যিনি বামহস্তে বেণু, মস্তকে ময়ুরপুচ্ছ এবং কটিতটে পীতাম্বর ও নয়ন প্ৰান্তে সহচরী গোপালাদিগের প্রতি কটাক্ষপাত করে সর্ব্বদা শ্রীবৃন্দাবন ধামে বাস ও লীলা করিতেছেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়ন পথের পথিক হউন॥২।।

 

মহাম্ভোধেস্তীরে কনকরুচিরে নীলশিখরে,

বসন্ প্রাসাদান্তঃ সহজ বলভদ্ৰেণ বলিনা।

সুভদ্ৰামধ্যস্থঃ সকলসুর সেবাবসরদো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৩॥

অর্থাৎ,- যিনি মহাসমুদ্রের তীরদেশে, কনকোজ্জ্বল নীলাদ্রির শিখরে প্রাসাদাভ্যন্তরে বলশালী সহোদর শ্রীবলদেব ও সুভদ্রার মধ্যভাগে বাস করছেন, যিনি সমস্ত দেবগণকে সেবা করার নিমিত্ত সুযোগ  প্রদান করিয়াছেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথ দেব আমার নয়ন পথের পথিক হউন॥৩।।

 

কৃপা - পারাবারঃ সজল - জলদ - শ্রেণিরুচিরো,

রমাবাণীরামঃ স্ফুরদমল পদ্মেক্ষণমুখৈঃ।

সুরেন্দ্রৈরারাধ্যঃ শ্রুতিগণশিখা - গীতচরিতো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে।।৪।।

অর্থাৎ,- যিনি কৃপাসিন্ধু তুল্য, যিনি সজল- জলধারা- রুচির কান্তি, লক্ষ্মীসরস্বতী যাঁর বামভাগে অবস্থিতা, যাঁর মুখমণ্ডল অমল কমলের ন্যায় শোভমান, যিনি সমস্ত দেবগণের আরাধ্য - ধন এবং বেদপুরাণ ও শ্রুতি শাস্ত্রসমূহ যাঁহার চরিত্র গান করিতেছেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথদেব আমার নয়ন পথের পথিক হউন।।৪।।

 

রথারূঢ়া গচ্ছন পথি মিলিত - ভূদেব - পটলৈঃ

স্তুতিপ্ৰাদুৰ্ভাবং প্রতিপদমুপাকর্ণ্য সদয়ঃ।

দয়াসিন্ধুর্বন্ধুঃ সকলজগতাং সিন্ধু সুতয়া,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৫॥

অর্থাৎ,- রথে আরোহণ করিয়া গমন করিতে থাকিলে পথিমধ্যে ব্ৰাহ্মণগণ মিলিত হয়ে যাঁর স্তব করিতে  থাকেন, সেই স্তব শ্রবণ করিয়া যিনি পদে পদে প্ৰসন্ন হন, যিনি দয়ার সাগর, যিনি নিখিল  জগতের বন্ধু, এবং যিনি সমুদ্রের প্রতি সদয় হইয়া তদুপকূলে বিরাজ করিতেছেন, সেই প্রভু জগন্নাথদেব  আমার নয়ন পথের পথিক হউন॥ ৫।।

পরব্রহ্মাপীড়ঃ কুবলয় - দলোৎফুল্ল - নয়নো,

নিবাসী নীলাদ্রৌ নিহিতচরণোহনন্তশিরসি।

রসানন্দী রাধা সরসবপুরালিঙ্গনসুখো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৬॥

অর্থাৎ,- যিনি পরমার্চ্চনীয় পরব্রহ্ম, যাঁহার নেত্রযুগল নীল - কমল - দলের ন্যায় উৎফুল্ল, যিনি নীলাচলে অবস্থান করিতেছেন, যিনি অনন্তের শিরে পদার্পণ করিয়া রহিয়াছেন, যিনি শ্ৰীরাধিকার রসময় দেহ আলিঙ্গন সুখে সুখী, সেই প্ৰভু জগন্নাথদেব আমার নয়ন পথের পথিক হউন॥৬॥

ন বৈ যাচে রাজ্যং ন চ কণক - মাণীক্য - বিভবং,

ন যাচেহহং রম্যাং সকলজন - কাম্যাং বরবধূম্।

সদা কালে কালে প্ৰমথপতিনা গীতচরিতো,

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৭॥

অর্থাৎ,- আমি রাজ্য চাহি না, স্বর্ণ মাণীক্যাদি বিভবও প্রার্থনা করি না এবং সকল লোক কমনীয়া মনোহারিণী কামিনীও চাই না, আমি সর্ব্বদা একান্ত মনে প্রার্থনা করি যেন ভূতনাথ যাঁর চরিত্র সর্ব্বক্ষণ কীৰ্ত্তন করেন সেই প্ৰভু জগন্নাথ আমার নয়ন পথের পথিক হউন॥৭॥

হর ত্বং সংসারং দ্রুততরমসারং সুরপতে,

হর ত্বং পাপানাং বিততিমপরাং যাদবপতে।

অহো দীনেহনাথে নিহিতচরণো  নিশ্চিতমিদং

জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে॥৮॥

অর্থাৎ,- হে সুরপতে ! শীঘ্র আমাকে এ অসার সংসার হইতে উদ্ধার কর। হে যাদব পতে ! আমার অশেষ পাপভারও হরণ কর। দীন ও অনাথগণকে যিনি শ্রীচরণে সমৰ্পণ করিয়া থাকেন, সেই প্ৰভু জগন্নাথদেব আমার নয়ন পথের পথিক হউন ৷৷ ৮।। 

জগন্নাথাষ্টকং পুণ্যং যঃ পঠেৎ প্ৰযতঃ শুচি।

সৰ্ব্বপাপ - বিশুদ্ধাত্মা বিষ্ণুলোকং স গচ্ছতি॥৯॥

অর্থাৎ,- যিনি সংযত ও শুদ্ধচিত্তে এই পরম পবিত্র জগন্নাথাষ্টক পাঠ করেন, তিনি সৰ্ব্বপাপ হইতে বিমুক্ত হইয়া বিষ্ণুলোকে গমন করেন॥ ৯।। 

💐শ্রীনন্দ নন্দনাষ্টকম্💐

সুচারুবক্ত্রমণ্ডলং সুকর্ণরত্নকুণ্ডলম্।

সুচর্চিতাঙ্গচন্দনং নমামি নন্দনন্দনম্ ॥ ১॥

সুদীর্ঘনেত্রপঙ্কজং শিখীশিখণ্ডমূর্ধজম্।

অনন্তকোটিমোহনং নমামি নন্দনন্দনম্ ॥ ২॥

সুনাসিকাগ্রমৌক্তিকং স্বচ্ছদন্তপঙ্ক্তিকম্।

নবাম্বুদাঙ্গচিক্কণং নমামি নন্দনন্দনম্ ॥ ৩॥

করেণবেণুরঞ্জিতং গতিঃ করীন্দ্রগঞ্জিতম্।

দুকূলপীতশোভনং নমামি নন্দনন্দনম্ ॥ ৪॥

ত্রিভঙ্গদেহসুন্দরং নখদ্যুতিঃ সুধাকরম্।

অমূল্যরত্নভূষণং নমামি নন্দনন্দনম্ ॥ ৫॥

সুগন্ধ অঙ্গসৌরভং উরো বিরাজি কৌস্তুভম্।

স্ফুরৎ শ্রীবৎসলাঞ্ছনং নমামি নন্দনন্দনম্ ॥ ৬॥

বৃন্দাবনসুনাগরং বিলাসানুগবাসসম্।

সুরেন্দ্রগর্বমোচনং নমামি নন্দনন্দনম্ ॥ ৭॥

ব্রজাঙ্গনাসুনায়কং সদা সুখপ্রদায়কম্।

জগন্মনঃপ্রলোভনং নমামি নন্দনন্দনম্ ॥ ৮॥

শ্রীনন্দনন্দনাষ্টকং পঠেদ্যঃ শ্রদ্ধয়ান্বিতঃ।

তরেদ্ভবাব্ধিদুস্তরং লভেত্তদঙ্ঘ্রিয়ুক্তকম্।।

 

ইতি শ্রীনন্দনন্দনাষ্টকং সম্পূর্ণম্।