💐মহাপ্রভুর ভগবদ্ যোগ💐

🍁🦚💐🏵️🌺🌹🌺🏵️💐🦚🍁

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,

সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,

বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

নিষ্কাম কর্ম্ম, স্বধর্মপালন, সর্বভূতে ভগবদ্ভাব, ভগবানে আত্মসমর্পণ ইত্যাদি গীতোক্ত-ধর্মের যা সারকথা, ভাগবতেও সে সমস্তই আছে। কিন্তু এ সকল ব্যতীত ভাগবতে আরো কিছু বেশী আছে, যা গীতায় নাই, সেটি হচ্ছে ব্রজলীলা এবং তার মধ্যমণি রাসপঞ্চাধ্যায়।

(i)শান্ত,

(ii)দাস্য,

(iii)সখ্য,

(iv)বাৎসল্য ও

(v)মাধুর্য্য

এই পাঁচটি মুখ্য স্থায়ী ভাবের মধ্যে শান্ত ও দাস্য ভাব মহাভারত, গীতা ও সমস্ত ভক্তিশাস্ত্রেরই অভিধেয়; কিন্ত সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর ভাব, ব্রজলীলা ব্যতীত আর কোথাও নাই। তন্মধ্যে

মধুরভাব বা কান্তাপ্রেম ‘সাধ্য শিরোমণি’,

‘সেই মহাভাব-স্বরূপিণী রাধাঠাকুরাণী।’

শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই রাধাভাব অঙ্গীকার করতঃ জীবকে এই

মহাভাবের আদর্শ প্রদর্শন করেছেন। গম্ভীরা-লীলায় দ্বাদশবর্ষ দিবারাত্রি ‘কৃষ্ণ’ ‘কৃষ্ণ’  বলে আর্তি-দৈন্য-হাসি-কান্নায় তপ্ত ইক্ষুবসবৎ অন্তঃস্নিগ্ধ বহির্জ্বালাময় কৃষ্ণবিরহের সুখ-দুঃখে অতিবাহিত করেছেন । বস্তুত শ্রীচৈতন্যলীলাতেই এই ভাবটি বিশেষরূপে জাগ্রত হয়েছে, নচেৎ পুরাণের কাহিনী পুরাণেই থাকত, জগতের কেউ তা জানতে বা বুঝত না।

‘রাধার মহিমা প্রেমরস সীমা জগতে জানাত কে? – যদি গৌর না হতো।’ শ্রীচৈতন্যদেবের প্রসাদেই শিক্ষা ও শক্তি লাভ করে গৌড়ীয় গোস্বামিপাদগণ এই ভাব অবলম্বন করে অপূর্ব রসশাস্ত্রের সৃষ্টি করেছেন। ইহা বাঙালীর গৌরবের বস্তু– জগতের ধর্ম। সাহিত্যে এক অনুপম অপ্রাকৃত তত্ত্ব–মানবীয় ভাষায় ভগবৎপ্রেমের উজ্জ্বল চিত্র।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এইভাবে অনুপ্রাণিত হইয়া এবং এই ভাবের উৎকর্ষ স্থাপনার্থই গীতোক্ত ও ভাগবতোক্ত জ্ঞানমিশ্র-ভক্তিমার্গাদিকে ‘বাহ্য’ বলিয়াছেন [চৈঃচঃ, মধ্য ৮]; গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম এই ব্রজের ভাবেরই প্রাধান্য, এই হেতু গোস্বামিগ্রন্থে জ্ঞান-কর্ম্ম-বিবর্জিত ভক্তিকেই 'উত্তমা ভক্তি' বলা হইয়াছে। এই মতে বিশুদ্ধ ভক্তি জ্ঞান-কর্ম্ম-বিবর্জিত, কারণ ব্রজের ভাবে জ্ঞান-কর্মের সমাবেশ হয় না।

‘কর্ম্ম’  শব্দে বোঝায় স্মৃত্যুক্ত নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম্ম, দেবদেবীর পূজার্চনাদি; আর জ্ঞান শব্দের অর্থ - কেহ বলেন অভেদ ব্রহ্মজ্ঞান, কেহ বলেন জীবেশ্বরের ভেদজ্ঞান, কেহ বলেন ভেদাভেদ-জ্ঞান। সে যাহাই হউক, ব্রজের ভাবে ঈশ্বরের কোনো জ্ঞানই নাই, পূজার্চনাদিও নাই। ‘গোকুলে কেবলা রতি ঐশ্বর্যজ্ঞানহীন’ [চৈঃচঃ], কেননা ঐশ্বর্য-জ্ঞান থাকিলে বাৎসল্যাদি-ভাবের বিকাশ হইতে পারে না; ইহা ‘বাৎসল্য সখ্য মধুরেরে করে সঙ্কোচন’। ব্রজের কৃষ্ণ মা-যশোদার স্নেহের পুতুল, গোপিকার হৃদয়বল্লভ, রাখালের খেলার সাথী; ‘কান্ধে চড়ে কান্ধে চড়ায় করে ক্রীড়ারণ।‘  তিনি কাহারও ঈশ্বর নন, সেভাবে তাঁহার পূজার্চনাও নাই। সুতরাং ব্রজের প্রেম ‘জ্ঞান-কর্ম্মাদি - অসংবৃত’। কিন্তু গীতার কৃষ্ণ সর্বলোক - মহেশ্বর, সর্বভূতাধিবাস, সর্বকর্ম্মের নিয়ন্তা। সুতরাং সর্বভূতে ভগবদ্ভাবরূপ জ্ঞানই তাঁহার জ্ঞান এবং লোকসংগ্রহার্থ নিষ্কাম কর্ম্ম তাঁহারই কর্ম্ম, অনাসক্তভাবে স্বধর্ম পালন তাঁহারই অর্চনা; এই হেতু গীতোক্ত ভক্তি জ্ঞান-কর্ম্মমিশ্র।

পরম ভাগ্যবান উচ্চাধিকারী ভিন্ন, ব্রজের ভাব সকলে গ্রহণ করিতে পারেন না, ইহার  কোনো সাধনও নাই। এই হেতু শ্রীচৈতন্য-ধর্মে দাস্যভাব, নাম-যজ্ঞ ও জীবে দয়া  সর্বসাধারণের জন্য এই সকলের ব্যবস্থা, ইহাই বৈধী মার্গ। ইহা জ্ঞানকর্ম্মবর্জিত হইতে পারে না, ইহাতে যে জ্ঞান-কর্ম্মের নিষেধ তাহা গীতোক্ত জ্ঞানকর্ম্ম নয়, তাহা ভক্তিহীন শুষ্কজ্ঞান ও কাম্য-কর্ম্মাদি। উহা নিষেধের জন্যই শ্রীচৈতন্যাবতার। 

শ্রীমন্মহাপ্রভুর অমৃতবাণী।

১। একমাত্র ভগবৎ প্রেমের মধ্যে দিয়েই আসলে মানুষের মুক্তি। মানুষ তখন ভুলে যাবে তার দুঃখ, দারিদ্র ও জ্বালাযন্ত্রণা।

২। ক্ষমাই পরম ধর্ম।

৩। মিথ্যা মোর মোর করে কেন অনুতাপ কর ? তুমি কি জান কে তোমার ?  তুমি কার ? শ্রী কৃষ্ণের চরণ ছাড়া জীবের গতি নাই।

৪। তৃণ থেকেও অবনত এবং বৃক্ষের মতো সহিষ্ণু হও।

৫। অগ্নি যেমন ধুম্রাছন্ন থাকে, মানুষের জ্ঞানও সেইরূপ রাগ দ্বেষ হিংসারূপ ধুম্রজালে সমাছন্ন।

৬। যারা ঈশ্বরকে ভালবেসেন কায় মন বাক্যে শ্রীভগবানের শ্রীচরণে নিজেকে আত্মসমর্পণ করেন, তিনি তাহাদিগকে এই মধুর রূপে দেখা দেন।

৭। সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীর পক্ষে রাজদর্শন ও স্ত্রী দর্শন বিষ খাওয়ার মতই  ক্ষতিকারক ।

৮। ঘোরতর পাপীও যদি আমাকে আপনজন ভেবে প্রাণ মন উৎসর্গ করে ভালবেসে আমাকেই চায়, আমি তাকে সকল পাপ হইতে মুক্ত করে থাকি।

৯। নির্লিপ্ত হও, কর্মবন্ধনে আবদ্ধ হয়ও না।

১০। নিজের অভিমান ত্যাগ করে অপরকে সম্মান প্রদর্শন করে শ্রীহরির সংকীর্তন করো।

 

রাধিকা - চরণরেণু,             ভূষণ করিয়া তনু,

অনায়াসে পাবে গিরিধারী।

রাধিকা - চরণাশ্রয়,            যে করে সে মহাশয়,

তাঁ'রে মুঞি যাঁও বলিহারী।।

জয় জয় 'রাধা' নাম,           বৃন্দাবন যাঁর ধাম,

কৃষ্ণসুখ - বিলাসের নিধি।

হেন রাধা - গুণগান,           না শুনিল মোর কান,

বঞ্চিত করিল মোরে বিধি।।

তাঁ'র ভক্ত - সঙ্গে সদা,        রসলীলা প্রেমকথা,

যে করে সে পায় ঘনশ্যাম।

ইহাতে বিমুখ  যেই,             তা'র কভু সিদ্ধি নাই,

নাহি যেন শুনি তা'র নাম।।

কৃষ্ণনাম - গানে ভাই,         রাধিকা - চরণ পাই,

রাধানাম - গানে কৃষ্ণচন্দ্র।

সংক্ষেপে কহিনু কথা,        ঘুচাও মনের ব্যথা,

দুঃখময় অন্য কথা - দ্বন্দ্ব।  

🦚💐জয়  শ্রীগৌরহরির  জয়💐🦚💐জয়  সকল  ভক্তবৃন্দের  জয়💐🦚