💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌼💐পঞ্চদশ  অধ্যায়ের সারাংশ💐🌼

🍇বিশেষ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

 

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,

সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,

বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

পঞ্চদশ-অধ্যায়-পুরুষোত্তম-যোগ

এই অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আত্মতত্ত্বের বিশদ ব্যাখ্যা করলেন এবং এই অনাদি সংসারকে অশ্বত্থ বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করলেন। এই সংসারবৃক্ষ ঊর্ধ্বমূল, কেননা পুরুষোত্তম বা পরমাত্মা হইতেই এই বৃক্ষ উৎপন্ন হইয়াছে । এই হেতু ইহাকে ব্রহ্মবৃক্ষও বলা হয় । [কঠ ৬|১, মভাঃ অশ্ব ৩৫|৪৭] । এই বৃক্ষের শাখাস্থানীয় মহত্তত্ত্ব, অহঙ্কার প্রভৃতি পরিণামগুলি ক্রমশঃ অধোগামী, এই হেতু ইহা অধঃশাখ । পুরুষোত্তম বা পরব্রহ্ম হইতে কিরূপে প্রকৃতির বিস্তার হইয়াছে তাহা জ্ঞান-বিজ্ঞান-যোগে বংশবৃক্ষে দ্রষ্টব্য । এই সংসারবৃক্ষ অব্যয়, কারণ ইহা অনাদি কাল হইতে প্রবৃত্ত । বেদত্রয় এই সংসারবৃক্ষের পত্র, কারণ পত্রসমূহ যেমন বৃক্ষের আচ্ছাদনহেতু রক্ষার কারণ, সেইরূপ বেদত্রয়ও ধর্মাধর্ম প্রতিপাদন দ্বারা ছায়ার ন্যায় সর্বজীবের রক্ষক ও আশ্রয়স্বরূপ । এই সংসারবৃক্ষকে যিনি জানেন তিনি বেদজ্ঞ, কারণ সমূল সংসারবৃক্ষকে জানিলে জীব, জগৎ, ব্রহ্ম এই তিনেরই জ্ঞান হয়, আর জানিবার কিছু অবশিষ্ট থাকে না ।

তিনি অর্জুনকে শিক্ষা দিলেন যে এই সংসাররূপ অশ্বত্থ বৃক্ষকে তীব্র বৈরাগ্যরূপ শানিত অস্ত্র দ্বারা ছেদন করে সেই পরম শক্তির অন্বেষণ করতে হয়: কেননা সেই পরমশক্তিকে জানলেই এই সংসারে আর পুনরাগমন হয় না| অহংকাররহিত, অবিবেকশুন্য, আসক্তিদোষজয়ী, পরমার্থজ্ঞাননিষ্ঠ, বাসনাবর্জিত, সুখ-দুঃখরূপ দ্বন্ধ হতে বিমুক্ত, অজ্ঞানশূন্য বিবেকী ব্যক্তিই সেই পরম ব্রহ্ম প্রাপ্ত হন| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জানালেন তিনিই পরম ব্রহ্ম|

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শিক্ষা দিলেন যে জীবের মৃত্যু হলে জীবাত্মা জীব শরীর হতে বের হয়ে শরীরান্তর গ্রহণকালে পূর্ব দেহ হতে মন ও ইন্দ্রিয়াদি সংস্কার সঙ্গে নিয়ে যায় অর্থাৎ পূর্ব দেহের ইন্দ্রিয়াদি নূতন দেহে প্রবেশ করে| দেহস্থিত জীবাত্মা চক্ষু, কর্ণ, ত্বক, জিহ্বা ও নাসিকা আশ্রয় করে রূপ, রস, শব্দ, স্পর্শ ও গন্ধ এই পাঁচ বিষয়কে মনের সাহায্যে উপভোগ করে| যিনি দেহান্তরে গমন করেন, যিনি শরীরে অবস্থান পূর্বক বিষয় ভোগ করেন বা যিনি ত্রিগুণের পরিণাম সুখ-দুঃখ ও মোহের সঙ্গে সংযুক্ত হন তিনি বিমূঢ় এবং জীবাত্মাকে জানতে পারেন না| কারণ তাদের মন বিষয় আকর্ষণের জন্য বর্হিমুখী| কিন্তু অর্ন্তমুখী জ্ঞানী ব্যক্তিই শাস্ত্রজ্ঞানরূপ চক্ষু দ্বারা সেই জীবাত্মাকে অবগত হন|

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন – যে জ্যোতিঃ সূর্য, চন্দ্র ও অগ্নিতে আছে এবং যা সমগ্র জগৎকে প্রকাশ করে, সেই জ্যোতি আমারই| আমি অন্তর্যামীরূপে সকল প্রাণীর হৃদয়ে অবস্থিত আছি| ইহলোকে ক্ষর ও অক্ষর নামে দুই পুরুষ আছেন| ক্ষর পুরুষ জগতের বিনাশকারক কর্ম আর মায়াশক্তি হল অক্ষর পুরুষ| এই উভয় পুরুষ হতে অত্যন্ত ভিন্ন হল পুরুষোত্তম পরমাত্মা| ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে জানালেন – আমিই সেই পুরুষোত্তম পরমাত্মা| তিনি বললেন যে স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ দেহে অভিমানশুন্য হয়ে সর্বতোভাবে তাঁকে ভজনা করলেই তিনি সেই ভক্তের কাছে পুরুষোত্তম রূপে জ্ঞাত হন|

আত্মনিবেদন,                 তুয়া পদে করি’,

হইনু পরম সুখী।

দুঃখ দূরে গেল,       চিন্তা না রহিল,

চৌদিকে আনন্দ দেখি ॥১॥

অশোক-অভয়,              অমৃত-আধার,

তোমার চরণদ্বয়।

তাহাতে এখন,                বিশ্রাম লভিয়া,

ছাড়িনু ভবের ভয় ॥২॥

তোমার সংসারে,    করিব সেবন,

নহিব ফলের ভাগী।

তব সুখ যাহে,                করিব যতন,

হ’য়ে পদে অনুরাগী ॥৩॥

তোমার সেবায়,      দুঃখ হয় যত,

সেও ত’পরম সুখ।

সেবা-সুখ-দুঃখ,             পরম সম্পদ,

নাশয়ে অবিদ্যা-দুঃখ ॥৪॥

পূর্ব্ব ইতিহাস,               ভুলিনু সকল,

সেবা-সুখ পে’য়ে মনে।

আমি ত’  তোমার,  তুমি ত’   আমার,

কি কাজ অপর ধনে ॥৫॥

ভকতিবিনোদ,             আনন্দে ডুবিয়া,

তোমার সেবার তরে ।

সব চেষ্টা করে,            তব ইচ্ছা-মত,

থাকিয়া তোমার ঘরে ॥৬॥