Friday, September 11, 2020


 🌷বৈষ্ণব অপরাধ🌷

🍁🌺🌷🌻🍁🌻🌷🌺🍁
🌞খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট🌞
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

বৈষ্ণব অপরাধ কি???
পারমার্থিক জীবনে অধঃপতনের জন্য একমাত্র বৈষ্ণব অপরাধই যথেষ্ট। বৈষ্ণব অপরাধই ভক্তি জীবনের একমাত্র প্রতিবন্ধক। ভক্তদের চরণে অপরাধের চেয়ে জীবনের সব কিছু হারানো ভালো।
ভক্তের স্বভাব হচ্ছে মর্যাদা রক্ষা করা। মর্যাদা পালন সাধুর অঙ্গের ভূষণ।
আয়ুঃ শ্রিয়ং যশো ধর্মং লোকানাশিষ এব চ।
হন্তি শ্রেয়াংসি সর্বানি পুংসো মহদতিক্রমঃ।। (ভাঃ ১০/৪/৪৬)
অর্থাৎ শুকদেব গোস্বামী পরীক্ষিত মহারাজকে বলছেন,- হে রাজন, কেউ যখন মহাত্মাদের উৎপীড়ণ করে, তখন তার আয়ু, সৌন্দর্য, ধর্ম্ম, আশীর্বাদ এবং স্বর্গলোকে উন্নতি আদি সমস্ত মঙ্গল ও সর্ব্ববিধ শুভ বিনষ্ট হয়ে যায়।
কৃষ্ণভাবনায় প্রত্যেক ব্যক্তিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ কৃষ্ণভক্তের সমস্ত কার্যকলাপ মানব সমাজের পরম মঙ্গলজনক। সামগ্রীক প্রলয়ের সময় বিষ্ণুভক্তের পতন হয় না। সেই কারণে শ্রীহরি সর্বত্র অচ্যুত, সর্বব্যাপ্ত, অপ্রতিরোধ্য, তাই ভক্তের ভয় পাবার কোন কারণ নেই। ভক্ত কখনও কাউকে কষ্ট প্রদান করে না। (বৈষ্ণব মাহাত্ম্য হরিভক্তিবিলাস ১০.১০১-১০৫)
হে অর্জুন! যারা আমার ভক্ত, তারা প্রকৃত ভক্ত বলিয়া গণনীয় নহে। মদীয় ভক্তগণের ভক্তরাই মদীয় সর্বোত্তম ভক্ত বলিয়া পরিকীর্ত্তিত (মদীয়=আমার ভক্তের ভক্ত)।(হরিভক্তিবিলাস ১০/১৩৩)
হে রাজেন্দ্র! ভগবদ্ভক্তের প্রতি উপহাস করলে ধর্ম্ম, অর্থ, কীর্তি ও মতি বিনাশ প্রাপ্ত হয়। যে শ্রীবিষ্ণু এবং তার ভক্তের নিন্দা করেন, তার শতজন্মার্জিত পূণ্য বিনষ্ট হয়, সে কুম্ভীপাক নামক ভয়ঙ্কর নরকে পচতে থাকে এবং যতদিন পর্যন্ত সূর্য এবং চন্দ্র বিরাজমান ততদিন তাকে কীটেরা খেতে থাকে। তাই যে বিষ্ণু ও বৈষ্ণবের নিন্দা করে তার মুখ দর্শন করা উচিত নহে। কোন অবস্থাতে এই প্রকার মানুষের সঙ্গ করা উচিত নয়। (হরিভক্তিবিলাস ১০/৩১০)
চার প্রকারের বৈষ্ণব নিন্দা,-
১/নীচকুলোদ্ভুত বলে নিন্দা করা।
২/পূর্বের দোষের দরুণ নিন্দা করা।
৩/আকস্মিক দোষের জন্য নিন্দা করা।
৪/প্রায় দোষমুক্ত অবস্থায় নিন্দা করা।
এসব গুরুতর বৈষ্ণব অপরাধ (শ্রীহরিনাম চিন্তামণি)
প্রতিটি ভক্তের উচিত অন্য ভক্তের প্রশংসা করা, এটাই ভক্তদের প্রকৃত কর্তব্য। কারো প্রতি উপহাস করবে না। কোন ভক্তের প্রতি যাতে কোন অপরাধ না হয় তুমি সদা সচেতন আছো, এটি অত্যন্ত সুন্দর গুণ। আমরা যখন পরমেশ্বর ভগবানের এবং তার প্রতিনিধি শ্রীগুরুদেবের সেবা সম্পাদন করব তখন এই ধরণের সম্ভ্রম থাকা প্রয়োজন। এটি মনোযোগ সহকারে সেবা করার লক্ষণ। এই ধরণের মনোভাব কৃষ্ণ ভক্তির পথে উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। মদগৃহে আপনাদের শুভাগমনে অদ্য আমি ধন্য ও কৃতকৃত্য হইলাম। বৈষ্ণবদর্শন হরিদর্শনবৎ পাপরাশিকে যে নষ্ট করে কোন সন্দেহ নাই। আমি মেরুমন্দর সদৃশ রাশিরাশি পুণ্য সঞ্চয় করিয়াছি সন্দেহ নাই, সেই হেতুই মহাত্মা বৈষ্ণবের দর্শন লাভ হইল। (হরিভক্তিবিলাস ১০/৩৩৭-৩৩৮)
বৈষ্ণব অপরাধ হলে কর্তব্য
যদি বৈষ্ণব অপরাধ হয়ে যায়, তবে অপরাধীকে অবশ্যই যার নিকট অপরাধ হয়েছে তার শ্রীচরণ ধরে অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা ভিক্ষা করতে হবে। বৈষ্ণব সাধারণতঃ খুবই কৃপালু,তাই তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে আলিঙ্গন করে সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। (শ্রীহরিনাম চিন্তামণি)
🍁🌷প্রায়শ্চিত্ত🌷🍁
🌺🌷💞🌻🍁🌻💞🌷🌺
এক ব্রাহ্মণ শ্রীমন্মহাপ্রভুকে বৈষ্ণব অপরাধের প্রায়শ্চিত্তের কথা জিজ্ঞাসা করিলে মহাপ্রভু তদুত্তরে বলিয়াছিলেন,-
''শুন দ্বিজ, বিষ করি যে মুখে ভক্ষণ।
সেই মুখে করি যবে অমৃত গ্রহণ।।
বিষ হয় জীর্ণ, দেহ হয়ত অমর।
অমৃত - প্রভাবে, এবে শুন সে উত্তর।।
না জানিয়া তুমি যত করিলা নিন্দন।
সে কেবল বিষ তুমি করিলা ভোজন।।
পরম - অমৃত এবে কৃষ্ণ - গুণ - নাম।
নিরবধি সেই মুখে কর' তুমি পান।।
যে মুখে করিলা তুমি বৈষ্ণব - নিন্দন।
সেই মুখে কর' তুমি বৈষ্ণব বন্দন।।
সবা' হইতে ভক্তের মহিমা বাড়াইয়া।
সঙ্গীত কবিত্ব বিপ্র কর' তুমি গিয়া।।
কৃষ্ণ - যশ - পরমানন্দ - অমৃতে তোমার।
নিন্দা - বিষ যত সব করিব সংহার।।
এই সত্য কহি, তোমা সবারে কেবল।
না জানিয়া নিন্দা যেবা করিল সকল।।
আর যদি নিন্দ্য - কর্ম্ম কভু না আচরে।
নিরন্তর বিষ্ণু - বৈষ্ণবের স্তুতি করে।।
এই সকল পাপ ঘুচে এই সে উপায়।
কোটি প্রায়শ্চিত্তেও অন্যথা নাহি যায়।।'' (চৈতন্য ভাগবত অন্ত্য ৩। ৪৪৯-৪৫৮)
অর্থাৎ,- অপরাধী ব্যক্তি যে মুখে বৈষ্ণবনিন্দা করে, সেই মুখে অনুতপ্ত হইয়া নিজাপরাধ স্বীকার পূর্ব্বক বৈষ্ণব বন্দনা করিলে তাহার মঙ্গললাভ হয় । যেরূপ বিষ ভক্ষণ করিলে বিষের ক্রিয়ায় শরীর জরজর হয়, আবার বিষনাশক অমৃত পান করিলে ঐ বিষ নষ্ট হইয়া শরীর পুনরায় সবল হয়,তদ্রুপ বৈষ্ণবনিন্দা পুনরায় না করিলে কোটি প্রায়শ্চিত্তেও বৈষ্ণবনিন্দাজনিত যে পাপ দূর হয় না, সেই পাপ বৈষ্ণবের স্তুতির দ্বারাই দূরীভূত হয়।
'সুতরাং বৈষ্ণব অপরাধ হচ্ছে একটি ভয়ংকর অপরাধ। আমাদের খুব সাবধান হয়ে বৈষ্ণব অপরাধ থেকে এড়িয়ে চলা উচিৎ। আর একটি মহাঅপরাধ এই যে,সাধু গুরু বৈষ্ণব আচার্য গুরুমহারাজ ও শিক্ষা গুরুবরকে সাধারণ মানুষ হিসাবে মনে করা, ও বিগ্রহকে ধাতু,পাথর দিয়ে তৈরি বলে মনে করা; এটাও মহাঅপরাধ। আমাদের খুব সর্তক হইতে হবে। নিয়ম নীতি সম্বন্ধে এবং সাধুশাস্ত্র,গুরুবাক‍্য,ও বৈষ্ণবাচার্যদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে এবং পূর্ব মহাজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে,ভজন সাধনে উন্নীত হইতে হবে।
কিভাবে আমরা আধ্যাত্মিক ও ভগবানের সেবায় নিযুক্ত হয়ে, পারমার্থিক জীবনের উন্নতি সাধন করতে পারি, সেই ভাবে পূর্ব মহাজনদের পদাঙ্ক অণুসরণ করাই শ্রেয়।
🍁🌻জয় শচীনন্দন গৌরহরির জয়🍁🌻🍁জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয়🌻🍁

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...