Wednesday, September 30, 2020


 

🌷প্রেম জগতের সার🌷

💐💞🏵🌺🌷🌺🏵💞💐

 (জীবনে একটিবার অন্ততঃ অনুভব করুন)

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ । I’’

 

এমন উৎকর্ষতা পূর্ণ ভক্তির সন্ধান যদি না বুঝিলেন,তবে বিফল মানব জনম। আধ্যাত্মিক সাধন জগতে জ্ঞান,যোগ, ভক্তিতে মানব দেহের সাধনার কথা তাঁর সর্বোচ্চ প্রাপ্তির বিচার বারংবার বিচার্য হয়েছে। মানব দেহের সর্বোচ্চ লাভ বা প্রাপ্তি কি সেটা জানা দরকার।কেবল জাগতিক সুখ ভোগের জন্য মানব জনম নয়। শাস্ত্র বলছে -

‘’কৃষ্ণ ভক্তি বিনা মিছা মানব জনম’’   ---( চৈ.চ)

এটাই সত্যি -"কৃষ্ণ প্রেমধন যে জন পায়।

পরশ রতন সে জনে পাশরিয়া যায়"।।

মূল কথা হরি ভজনই মানব জীবনের সার। আবার ভক্তির অনেক স্তর। কিন্তু ব্রজ নারীদের দুর্লভ ভক্তির বিচার সকলের কাছেই অগম্য। কারণ ভগবান স্বয়ং তাঁদের প্রেমা - ভক্তির কাছে ঋণী। সাধকের ভাবের উপর নির্ভর করে ভক্তিরস আস্বাদন। মহাপ্রভু "আত্মারামস্য মুনয়" শ্লোকের অসংখ্য প্রকারের ব্যাখ্যা দিলেন। একজন সাধক ব্রহ্ম চিন্তন করে, কঠিন তপস্যা করে, মহৎযোগী হয়ে তবে তিনি মুক্ত হন।

স্বর্গলোক, ব্রহ্মলোক, বৈকুণ্ঠ আদি কত দিব্যলোকে সাধকগণ আছেন। কিন্তু কেহ সেই পরম মধুরাতি মধুর গোলক বৃন্দাবনের মধুর রাধাকৃষ্ণের মধুর যুগলরস মাধুর্য্য আস্বাদন করতে পারছেন না। কিন্তু গোপীগণের কাছে এই দুর্লভ প্রেমভক্তি স্বপ্রকাশিত। নারদজী, উদ্ধব, অর্জুন, বড়ো বড়ো যোগী মুনীর কাছেও এই প্রেমা ভক্তি পরম বিস্ময়ের যা শ্রীমদ্ভাগবতে ১০ম স্কন্ধে উদ্ধবজী নিজে বারংবার স্বীকার করেছেন এবং গোপীগণের চরণ ধূলি প্রার্থনা করেছেন,-

‘’বন্দে নন্দ ব্রজস্ত্রীণাং পাদরেণুমভীক্ষশঃ।

যাসাং হরিকথোদগীতং পুনাতি ভুবনত্রয়ম।।‘’

ত্রিজগৎ পবিত্র করে যাঁহাদের কণ্ঠোদ্গীর্ণ হরিকথাগীতি,আমার মাথার ভূষণ করি তাঁহাদের পাদরেণু। শিরে তুলিয়া এদের পদধূলি সার্থক করি আমি আমার জ্ঞানশুষ্ক এই জীবন। গোপীগণের এই নির্ম্মল প্রেম ভক্তিকে জগতে জানাতেই গৌরহরি এসেছেন এই কলিযুগে। মহাপ্রভু তাই নিজের বদান্যতা প্রকাশ করলেন। এযুগের সবাই অধম প্রায়। এরা তপস্যা করে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে তবে ব্রজের ভজন করবে,তা সম্ভব নয়। তাই তিনি যুগধর্ম শ্রীহরিনাম মহামন্ত্র প্রচার করলেন,-

‘’হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে I

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে I I’’

শ্রীমন্মহাপ্রভু এই নামের স্বরূপ, ব্রজ প্রেমরসে মত্ত হয়ে নিজে গোপীভাব আস্বাদন করলেন এবং মহৎ কৃপাপূর্বক রূপ সনাতন আদি গোস্বামীগণের মাধ্যমে তিনি প্রত্যেক সাধকের আত্মায় মানস ভজনযোগ্য একটি দিব্য সিদ্ধদেহ মঞ্জরী স্বরূপ দান করলেন; যাতে সাধকগণ এই জন্মেই সর্বোচ্চ ভজন করে গোলোকে রাধাদাসী ভাবকান্তি গ্রহণ করে গোপী দেহে রাধাকৃষ্ণের যুগল সেবা পেতে পারে। ইহাই তো পরম প্রাপ্তি।

কিন্তু মঞ্জরী/গোপী দেহ কেন?

কারণ জড় শরীরের অভিমানে রাধারাণী তথা যুগল রাধাকৃষ্ণ কুঞ্জ/নিত্য সেবা সম্ভব নয় তাই মঞ্জরী অর্থাৎ সেবাযোগ্য গোপীদেহ। যুগল সেবার মাধ্যমে মধুর রসাস্বাদন। তাই তো সাধক গণের প্রার্থনা,-

‘’রাধাদাস্যয়তে মম রসস্তু রসস্তু নিত্যম’’

রূপ,সনাতন,রঘুনাথ,নরোত্তম সবার মঞ্জরী স্বরূপের ভজন আমরা গ্রন্থে পাই। রঘুনাথ দাস গোস্বামীর - "বিলাপকুসুমঞ্জলি",রূপ গোস্বামীর -"উৎকলিকাবল্লরি",প্রবধানন্দজীর- "রাধরসসুধানিধি", বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুরের -"রূপ চিন্তামনি"। এই সব রসগ্রন্থে গৌরহরির কৃপায় আজ সাধকগণ কৃষ্ণমন্ত্র, কামগায়ত্রি, রাধামন্ত্র, রাধাগায়ত্রি প্রাপ্ত হয়ে নিজ গুরু প্রাপ্ত সিদ্ধ গোপী দেহ চিন্তনে ব্রহ্মারও দুর্লভ সেই ব্রজের ভজন করছেন, মানসে সিদ্ধ দেহের ভজন। 'সেইজন্য এটা দুর্লভ, অতি দুর্লভ, মহাদুর্লভ, দুর্লভাতিদুর্লভ প্রাপ্তি।' তাই গৌড়ীয় ধারায় প্রত্যেক সাধকের গুরু পরম্পরায় আগত মহাপ্রভুর সেই মহাকৃপা গ্রহণ করা উচিত।

সঠিক গুরুপরম্পরা ধারায় স্থিত সৎত্যাগী ভজনানন্দি গুরুদেবের থেকে সিদ্ধপ্রণালী সহ নিজ ভজনযোগ্য মঞ্জরী স্বরূপ প্রাপ্ত হইয়ে রাধামন্ত্র সহ কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষা নীয়ে নিষ্ঠাসহকারে ভজন করা উচিত। সাধকজীবনে সৎ ভজনানন্দি, রূপ সনাতনের আদর্শে ভজনকারী গুরুদেব পাওয়াটাও বিরাট বড়ো কৃপাসাপেক্ষ ব্যাপার। তাই ঠিক তত্ত্ব বুঝে সবাই সেই দুর্লভ ভজন করে গোলোকে ফিরে আসুন। এটাই মহাপ্রভুর ইচ্ছা

গীতা ভাগবতের পাশাপাশি আপনিও রাধারসসুধানিধি, বিলাপকুসুমঞ্জলি, উৎকলিকাবল্লরি, চৈতন্যচরিতামৃত - এইসব রসগ্রন্থ পাঠ করুন। মনে রাখা প্রয়োজন,-

"মহাজনের যেই মত, তাতে হবে অনুরত, পূর্বাপর করিয়া বিচার।

সাধন স্মরণ লীলা, ইহাতে না করো হেলা, কায় মনে করিয়া সুসার।।''  (প্রে.ভ.চন্দ্রিকা)

 

রাধা- ভজনে যদি      মতি  নাহি ভেলা I

কৃষ্ণভজন তব       অকারণে গেলা I I

 

আতপ - রহিত        সুরয় নাহি জানি I

রাধাবিরহিত      মাধব নাহি মানি I I

 

কেবল মাধব পূজয়ে,       সো অজ্ঞানী I

রাধা - অনাদর        করই অভিমানী I I

 

কবহি নাহি করবি      তাঁকর সঙ্গ I

চিত্তে ইচ্ছাসি যদি       ব্রজরসরঙ্গ I I

 

রাধিকা - দাসী যদি      হোয় অভিমান I

শীঘ্রহি  মিলই তব       গোকুল - কান I I

 

ব্রহ্মা, শিব, নারদ,       শ্রুতি, নারায়ণী I

রাধিকা - পদরজ        পূজয়ে মানি I I

 

উমা, রমা, সত্যা,        শচি, চন্দ্রা, রুক্মিণী I

রাধা - অবতার সবে,       আম্নায় - বাণী I I

 

হেন রাধা - পরিচর্য্যা       জাঁকর ধন I

ভকতিবিনোদ তাঁর       মাগয়ে চরণ I I

হে আমার প্রাণোধন কৃষ্ণ তুমি আমাদের হৃদয়ে ভক্তির ভাব জাগিয়ে দাও। সবাই একমনে তন্ময় হয়ে শ্রীহরিনাম জপ করুন,-

‘’হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।‘’

💐জয় শ্রীরাধেশ্যাম🌺🌷🌺জয় বৃন্দাবন ধাম💐

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...