Saturday, September 12, 2020


 💐 ইন্দিরা একাদশী 💐

♥♥শুভ একাদশী 💐💐 শুভ একাদশী♥♥
হরে কৃষ্ণ, আগামী ১৩/০৯/২০২০ ইং রোজ - রবিবার ইন্দিরা একাদশী I
(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯। ৩১ মিঃ মধ্যে একাদশীর পারণ)
আপনি নিজে একাদশী ব্রত পালন করুন ও অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।
''কৃষ্ণ ভুলি যেই জীব অনাদি বহির্মুখ ।
অতএব মায়া তারে দেয় সংসার দুঃখ।।'' চৈতন্যচরিতামৃত( মধ্য ২০/১১৭)
শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে জীব অনাদিকাল ধরে জড় প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট রয়েছে। তাই মায়া তাকে এ জড় জগতে নানা প্রকার দুঃখ প্রদান করছে। পরম করুণাময় ভগবান, কৃষ্ণস্মৃতি জাগরিত করতে মায়াগ্রস্ত জীবের কল্যাণে বেদপুরাণে আদি শাস্ত্রগ্রন্থাবলী দান করেছেন।
ভক্তি হচ্ছে ভগবানকে জানার ও ভগবৎ প্রীতি সাধনের একমাত্র সহজ উপায়। শাস্ত্রে যে চৌষট্টি প্রকার ভক্ত্যাঙ্গের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে একাদশী ব্রত সর্বত্তোম। শ্রবণ, কীর্ত্তন, স্মরণ আদি নবধা ভক্তির পরই দশম ভক্ত্যাঙ্গরূপে একাদশীর স্থান। এই তিথিকে হরিবাসর বলা হয়। তাই ভক্তি লাভেচ্ছু সকলেরই একাদশী ব্রত পালনের পরম উপযোগিতার কথা বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত হয়েছে। একাদশী তিথি সকলের অভীষ্ট প্রদানকারী। এই ব্রত পালনে সমস্ত প্রকার পাপ বিনষ্ট, সর্বসৌভাগ্য ও শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি বিধান হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আট থেকে আশি বছর বয়স পর্যন্ত যে কোন ব্যক্তিরই ভক্তিসহকারে পবিত্র একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য।
একাদশী ব্রত পালনের নিয়ম :- সামর্থ্য অনুযায়ী দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার, দ্বাদশীতে একাহার। এতে অসমর্থ হলে শুধু একাদশীতে অনাহার। যদি এতেও অসমর্থ হয়, একাদশী তে পঞ্চশস্য বর্জনীয়, ফলমূল ও কিছু সবজি গ্রহণের বিধান আছে। যেমন-গোল আলু, মিষ্টি আলু, কুমড়ো,চাল কুমড়ো, বাদাম তেল/সূর্য্যমুখী তেল/ঘি দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করা যেতে পারে। এছাড়া দুধ, কলা,আপেল, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, শসা, নারিকেল, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ফল আহার করা যাবে। একাদশীর পারণের সময় পঞ্জিকা তে দেওয়া থাকে, এর মাঝে ভগবান কে অন্ন নিবেদন করে উপবাস ভঙ্গ করতে হবে। নতুবা একাদশীর ফল লাভ হয়না।
বর্জনীয় পঞ্চ শস্য:- ধান জাতীয় খাদ্য- ভাত,খিচুড়ি,মুড়ি, চিঁড়া,খই, সুজি, চালের গুঁড়ো, চালের পিঠে, পায়েস। গম জাতীয় খাদ্য- আটা, ময়দা,সুজি,রুটি,বিস্কুট, কেক, নুডলস। যব বা ভুট্টা জাতীয় খাদ্য- ছাতু, খই, রুটি। ডাল জাতীয় খাদ্য- মুগ, মশুর, মটর, মাসকলাই, ছোলা, অড়হর, বরবটি, শিম, বুট। সরিষা, তিলের তেল।( সয়াবিন এর কথা বিতর্কিত) I চা, বিড়ি, সিগারেট, পান, যেকোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য বর্জনীয়। একাদশী তে সহবাস সম্পূর্ণ বর্জন। আমিষ ( পিঁয়াজ, রসুন, ডিম, মাছ, মাংস ) ভক্ষন নিষেধ।
ইন্দিরা একাদশী মাহাত্ম্য:- আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম 'ইন্দিরা'। যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে এই তিথির মাহাত্ম্য বর্ণিত রয়েছে।
মহারাজ যুধিষ্ঠির, শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, হে মধুসুদন ! আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম কি তা কৃপা করে বলুন ? শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে রাজন ! আশ্বিন মাসের একাদশীর নাম “ইন্দিরা একাদশী” এই ব্রত পালনে মহাপাপ বিনষ্ট হয়, এমনকি কর্মফলে যারা নিন্মযোনিতে জন্ম লাভ করেছেন সেই পূর্বপুরুষগণের উত্তম গতি লাভ হয়। এই একাদশীর মাহাত্ম্য শ্রবণ করলেও সামবেদীয় যজ্ঞফল প্রাপ্ত হওয়া যায়।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন,- হে রাজন ! সত্যযুগে মাহিস্মতি নামক নগরে প্রতাপশালী ইন্দ্রসেন নামে এক রাজা ছিলেন। ধর্মবিধি অনুসারে রাজ্য শাসনে তিনি বিশেষ খ্যাতিসম্পন্ন রাজা ছিলেন। তিনি বিপুল ধনসম্পত্তির অধিকারী ছিলেন। পৌত্র-পুত্র সমন্বিত বিশাল রাজ্যের প্রজাদের নিয়ে সুখে আনন্দে রাজত্ব পরিচালনা করতেন। বিষ্ণুভক্তি পরায়ন রাজা সর্বদা শ্রীহরি সেবা, হরি পূজন, শ্রীগোবিন্দ নাম গুণগানে মগ্ন থাকতেন।
একদিন রাজা সুখে শয্যায় ঘুমাচ্ছেন এমন সময় দেবর্ষি নারদ স্বর্গ থেকে আকাশমার্গে ভ্রমণ করতে করতে রাজার রাজ সভায় প্রবেশ করলেন। রাজা সঙ্গে সঙ্গে শয্যা পরিত্যাগ করে দেবর্ষিকে দর্শন করে করজোড়ে দণ্ডবৎ প্রণাম করে আসনে বসিয়ে যথাবিহিত পাদ্য-অর্ঘ্যাদি দ্বারা ষোড়শোপচারে পূজা নিবেদন করলেন। তারপর রাজা করজোরে বললেন,- হে মুনিবর ! আপনার দর্শনমাত্র আমার যাবতীয় যজ্ঞফল লাভ হয়েছে, এখন আপনার আসার কারণ জানিয়ে আমাকে কৃতার্থ করুন।
দেবর্ষি নারদ বললেন,- হে রাজন ! আপনার রাজ্যের সকলে কুশলে আছেন তো? বিষ্ণু ভক্তিতে তৎপর হয়ে চলছেন তো ? রাজা বললেন হে দেবর্ষে ! আপনার অনুগ্রহে আমার সর্বত্রই কুশল, আপনার দর্শনে আমি সর্বত্রই কৃতার্থ, আমার জীবন ধন্য হলো, আমার সকল যাগ-যজ্ঞও সফল হয়েছে। আপনি কৃপাপূর্বক কি নিমিত্তে এসেছেন আমার জানতে বড় ইচ্ছে হয়। রাজার এই বিনয় বাক্য শ্রবণ করে দেবর্ষি নারদ বললেন,- হে মহারাজ ! আমি এক আশ্চর্যজনক কথা বলছি, তা মনদিয়ে শ্রবণ করুন। আমি ব্রহ্মলোক থেকে কৃষ্ণগুণগান করতে করতে যমলোকে গিয়েছিলাম। যমরাজ আমাকে দেখে ভক্তিযুক্তভাবে আমার পূজা বিধান করলেন। সেখানে আমি যমপুরীটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম এবং বহু পুণ্য অর্জনকারী আপনার পিতাকে দেখলাম। ব্রতভঙ্গ পাপে তাঁকে সেখানে থাকতে হয়েছে।
হে মহারাজ ! আপনার পিতা যে সংবাদ পাঠিয়েছেন আমি এখন তা আপনাকে বলছি। তিনি আমায় বললেন হে দেবর্ষে ! মাহিস্মতিপুরের ধর্মপরায়ণ রাজা ইন্দ্রসেন আমার পুত্র, পুত্রকে বলবেন-আপনার পিতা বহু পুণ্য অর্জন করলেও ব্রতভঙ্গ অপরাধের জন্য যমালয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে । সেখান অনেক কষ্ট পাচ্ছেন। সে যেন আমার উর্দ্ধগতির জন্য সর্বপাপনাশক ‘’ইন্দিরা একাদশী’’ ব্রত পালন করে; তাহলে সেই ব্রত প্রভাবে আমি নিষ্পাপ হয়ে পরমধাম স্বর্গলোকে যেতে পারব। অন্যথায় আমি এই যমপুরী থেকে কোনকালে মুক্তি পাবনা। এই সংবাদ জানাবার জন্য আপনার নিকট আমার আগমন। হে মহারাজ ! আপনার পিতার মঙ্গলকামনায় আপনি যথাবিধি ‘’ইন্দিরা একাদশী’’ ব্রত পালন করুন।
রাজা বললেন,- হে মহর্ষে ! কৃপাপূর্বক আপনি আমাকে এই ব্রত মহিমা বলুন। এই ব্রতের বিধি কি, কোন তিথি বা কোন পক্ষে এই একাদশী ব্রত পালন করা হয়, তা কৃপা করে আমাকে বলুন। দেবর্ষি বললেন,- হে মহারাজ ! আশ্বিন মাসে কৃষ্ণ পক্ষের দশমী দিন প্রাতঃস্নান করবেন, মধ্যাহ্নে ভক্তিভাবাপন্ন হয়ে পুনরায় স্নান করবেন এবং রাত্রিতে ভূমিতে শয়ন করবেন। পরদিন একাদশীতে প্রাতঃস্নান সমাপন করে নিরাহার থাকবেন, ভগবান শ্রীহরির পূজা, সাধুসঙ্গে ভগবৎ গুণাখ্যানাদি শ্রবণ কীর্ত্তন করবেন। সম্পূর্ণরূপে আত্মেন্দ্রিয় প্রীতিবাঞ্ছা পরিত্যাগ পূর্বক উপবাস করবেন। হে পুণ্ডরীকাক্ষ ! হে অচ্যুত ! এ শরণাগতের প্রতি কৃপা করুন। এইভাবে শ্রদ্ধা সহকারে শালগ্রাম পূজা করে পিতার উদ্দেশ্যে ব্রতের ফল অর্পণ করবেন। সন্ধ্যাকালে শ্রীহরির শ্রবণ কীর্ত্তন স্মরণ মুখে রাত্রি জাগরণ করবেন। দ্বাদশী দিবসে শ্রী হরির পূজা, ভোগরাগ নৈবেদ্য সমর্পণপূর্বক ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে অবশেষে নিজে মহাপ্রসাদ গ্রহণ করবেন । এইরূপ ব্রত পালন করলে আপনার পিতাও শ্রী বিষ্ণুলোকে গমন করবেন।
রাজাকে উপদেশ প্রদান করে দেবর্ষি নারদ প্রস্থান করলেন। রাজা ইন্দ্রসেন দেবর্ষির উপদেশ অনুসারে পুত্রপরিজনসহ ভক্তিসহকারে এই “ইন্দিরা একাদশী” ব্রত পালন করলেন। তখন দেবলোক থেকে পুষ্পবৃষ্টি হতে লাগল এবং তাঁর পিতার বিষ্ণুলোক প্রাপ্তি হল। তারপর ইন্দ্রসেন পরম আনন্দে রাজত্ব করে অন্তকালে পুত্রহস্তে রাজ্যভার সমর্পণ করে স্বয়ং ভগবদ্ধাম ফিরে গেলেন। এই “ইন্দিরা একাদশী” ব্রত মাহাত্ম্য শ্রবণে ও কীর্ত্তনে সর্বপাপ মুক্ত হয় এবং শ্রীবিষ্ণু সান্নিধ্য লাভ ঘটে।
★★★সবাইকে অনুরোধ রইল অবশ্যই মনে রাখবেন যে, একাদশী ব্রত বা কোন উপবাস মানেই কিন্তু শুধু না খেয়ে থাকা নয়,বরং শুদ্ধ/পবিত্র দেহ,মন নিয়ে ব্রত/উপবাস রেখে নিরন্তর "ভগবানের নাম জপ" হরিকথা শ্রবণ, কীর্ত্তন,গীতাপাঠ করে "ভগবান কে প্রসন্ন/খুশি করাই ব্রত/উপবাসের মূল উদ্দেশ্য"★★★
‘’একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।‘’
এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পারণ করতে হয়। গীতার মাহাত্ম্যে উল্লেখ আছে…
‘’যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে।
স্বপন জাগ্রৎ চলন তিষ্ঠন শত্রুভির্ন স হীয়তে।।‘’
অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণুর উৎসবের দিনে, একাদশী ও জন্মাষ্টমীতে যিনি গীতা পাঠ করেন , তিনি চলুন বা দাড়িয়ে থাকুন, ঘুমিয়ে বা জেগে থাকুন,(যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন) শত্রু কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারেনা।
♥জয় শ্রীকৃষ্ণের জয়♥জয় শ্রীএকাদশী মহাব্রতের জয়♥

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...