Wednesday, November 4, 2020

🌷ধ্রুব চরিত🌷

💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐

 🌷খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়🌷

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

- ভৃত্যায় -পুত্রায় - কলত্রায় তে নমঃ।।

ধ্রুব চরিত্র ছোট বালকের মধ্যেও দৃঢ় সংকল্প থাকলে গুরু কৃপায় সেও ব্রহ্মাণ্ডকে জয় করতে পারে। তারই আদর্শ দৃষ্টান্ত ধ্রুব চরিত।

"অনেক অনেককাল আগের কথা। উত্তানপাদ নামে এক রাজা ছিলেন। তার ছিলো দুই রাণী। বড় রাণী সুনীতি ছোট রাণী সুরুচি। সুনীতির ছেলে ধ্রুব আর সুরুচির ছেলে উত্তম। সুরুচিকে রাজা বেশি ভালোবাসতেন তাই সুরুচির ছেলে বলে উত্তম খুব আদর পেত কিন্তু ধ্রুব তেমন আদর পেত না। রাজপুরীর একপাশে ছেলেকে নিয়ে থাকতেন সুনীতি। দুঃখে কষ্টে দিন কাটত তাঁর।

একদিন উত্তম বাবার কোলে বসে আছে। তখন ধ্রুব সেখানে এসে উপস্থিত হল। ভাইকে বাবার কোলে দেখতে পেয়ে সেও বাবার কোলে উঠতে চাইল। সুরুচি দূর থেকে তা দেখে এক দৌড়ে সেখানে চলে এসে বাধা দিল তাকে। ধ্রুবের খুব দুঃখ হলো। সে মনের দুঃখে মায়ের কাছে ছুটে গেল। মাকে বলল সব কথা। সুনীতি ছেলেকে আদর করে বললেন,- বাবা,তুমি এক মনে হরিকে ডাক। ডাকার মতো ডাকলে, তিনি সাড়া দেবেন। তিনিই তোমার দুঃখ দূর করে দেবেন। শান্ত হলো ধ্রুব। তারপর রাজপুরী ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ল হরির সন্ধানে। একমনে হরিকে ডেকে চলেছে ধ্রুব। ঘুরতে ঘুরতে সে এক গভীর বনে এসে দাঁড়াল। যাকে দেখে তাকেই হরি মনে করে। হরির নামের এমন মহিমা, বনের পশুও তাতে হিংসা ভুলে যায়। ধ্রুবের আকুল প্রার্থনায় শ্রীহরি সন্তুষ্ট হলেন, তিনি দেবর্ষি নারদকে পাঠিয়ে দিলেন। নারদ ধ্রুবের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,- তুমি কে? তোমার কী চাই? ধ্রুব নারদ মুনিকে প্রণাম করলেন এবং বলিলেন,- আমার নাম ধ্রুব, আমি রাজা উত্তানপাদের পুত্র। আমি পৃথিবীর কিছুই চাই না, চাই শ্রীহরির শ্রীচরণ। কী করলে শ্রীহরির দেখা পাব,আমাকে তা দয়াকরে বলুন প্রভু।

নারদ বললেন,- "পুত্র তোমার বয়স এখন - বছর। তোমার পিতা এই পৃথিবীর অধীশ্বর, তোমার শরীরে কোন রোগও দেখা যায় না, তা সত্ত্বেও তোমার এমন বৈরাগ্য হল কেন?" ধ্রুব তখন নিজের সমস্ত দুঃখ খুলে বললেন। ধ্রুব নারদের কাছে তার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করলে ঋষি নারদ বললেন" গোবিন্দের আরাধনা করলে তুমি শ্রেষ্ঠ স্থান পাবে। ধ্রুব বললেন- আপনি দয়া করে আমাকে ভগবান বিষ্ণুকে তুষ্ট করার উপায় বলুন। তখন নারদ বললেন,- তোমার মন সমস্ত বাহ্য বস্তু থেকে নিবৃত করে একমাত্র ভগবান বিষ্ণুতে নিমগ্ন কর। নারদ বললেন,- একমনে "ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়" এই মন্ত্র জপ করে তাঁকে প্রসন্ন করার চেষ্টা কর। এই মন্ত্রে তোমার পিতামহ সায়ম্ভুব মনু বিষ্ণুকে প্রণাম করে অভিলাষিত ঐশ্বর্য পান। নারদ তাকে হরির আরাধনার বিষয়ে অনেক কিছু শিখিয়ে দিলেন। কালিন্দী নদীর তীরে বসে ধ্রুব শ্রীহরির সাধনা করতে লাগল। ধ্রুবের কঠোর সাধনায় শ্রীহরি সন্তুষ্ট হলেন। তিনি এসে ধ্রুবকে বললেন- আমি এসেছি ধ্রুব। পদ্মপলাশলোচন শ্রীহরি এসেছন,দেখে ধ্রুব ভক্তিভরে শ্রীহরির শ্রীপাদপদ্মে প্রণাম করল।

ভগবান বিষ্ণু ধ্রুবকে বর প্রার্থনা করতে বললে ধ্রুব বললেন,- ''হে ভগবান! ব্রহ্মাদি আদি দেবগণ যেখানে তোমার তত্ত্ব জানতে পারেনি আমি সেখানে কিভাবে তোমার স্তব করব! হে জগদীশ্বর আমাকে জ্ঞান প্রদান করুন" ভগবান বিষ্ণু তখন তার শঙ্খ দ্বারা ধ্রবকে স্পর্শ করলেন এবং ধ্রুবের মুখ থেকে তখন ভগবান বিষ্ণুর স্তুতি কীর্তন ১২ টি শক্তিশালী মন্ত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত হল। ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে ধ্রুব সর্বোচ্চ লোক ধ্রুবলোকে স্থান পেলেন।

🌷💐 ভক্তরাজ ধ্রুব মহারাজের দিব্য চরিতাবলী 💐🌷

) মনের সুপ্ত ইচ্ছাকে লাভ করার জন্য দৃঢ়সংকল্প হইতে হবে।

) ভবিষ্যৎ উদ্দেশ্যের প্রতি অটল থাকতে হবে।

) মায়ার লোভনীয় প্রলোভনকে, প্রতিরোধ করতে হবে।

) ঈপ্সিত লক্ষ্য লাভের জন্য, কঠোর ব্রত তপশ্চর্যা অনুশীলন করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

) তাৎক্ষণিক জড় জাগতিক বিষয় - সম্পদের মোহ, পরিত্যাগ করতে হবে।

) জড় জগতের সমস্ত জড় অনিত্য সম্পর্ক, পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে।

) ভগবানের শুদ্ধভক্তের চরণে, পূর্ণরূপে আত্ম-সমর্পণ করতে হবে।

) ভগবানের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে।

) ভগবানের শ্রীপাদপদ্মে সম্পূর্ণ রূপে আত্ম-সমর্পণ করতে হবে।

১০) ইন্দ্রিয় সুখ-ভোগের সমস্ত প্রকারের ইচ্ছাকে দমন করতে হবে।

১১) জড়-জাগতিক বিষয় লাভের জন্য ভগবানের ভজনা করা উচিত নয়।

১২) ভগবদ্ প্রেম লাভ করতে হলে অনিত্য জড় সম্পদ ভোগের বাসনা ত্যাগ করতে হবে।

১৩) দুর্লভ মনুষ্য জীবন লাভ করে ভগবানের কাছে কি প্রার্থনা করা উচিত, তা ভালোভাবে অবগত হওয়া উচিত।

১৪) মৃত্যুময় সংসার থেকে মুক্তি লাভ করার একমাত্র উত্তম উপায় হচ্ছে ভগবদ্ ভজন করা।

১৫) ভগবদ্ ভজনের ফলে মৃত্যুকেও জয় করা সম্ভব।


হরি হরি আর কি এমন দশা হব।

হরি হরি আর কি এমন দশা হব।

ভব সংসার ত্যজি, পরম আনন্দে মজি,

আর কবে ব্রজভূমে যাব।।

সুখময় বৃন্দাবন, কবে হবে দরশন,

সে ধূলি লাগিবে কবে গায়।

প্রেমে গদগদ হৈঞা, রাধাকৃষ্ণ-নাম লৈয়া

কান্দিয়া বেড়াব উভরায়।।

নিভৃত নিকুঞ্জে যাঞা, অষ্টাঙ্গে প্রণাম হৈঞা,

ডাকিব 'হা রাধানাথ' বলি।

কবে যমুনার তীরে, পরশ করিব নীরে,

কবে পিব করপুটে তুলি।।

আর কবে এমন হব, শ্রীরাসমণ্ডলে যাব,

কবে গড়াগড়ি দিব তায়।

বংশীবট-ছায়া পাঞা, পরম আনন্দ হৈঞা,

পড়িয়া রহিব তা' ছায়।।

কবে গোবর্দ্ধন গিরি, দেখিব নয়ন ভরি,

কবে হবে রাধাকুণ্ডে বাস।।

ভ্রমিতে ভ্রমিতে কবে, দেহ পতন হবে,

কহে দীন নরোত্তমদাস।।

বৃষভানুসুতা, চরণ সেবনে, হইব যে পাল্যদাসী।

শ্রীরাধার সুখ, সতত সাধনে, রহিব আমি প্রয়াসী।।

শ্রীরাধার সুখে, কৃষ্ণের যে সুখ,জানিব মনেতে আমি।

রাধাপদ ছাড়ি, শ্রীকৃষ্ণ সঙ্গমে,কভু না হইব কামী।।

সখীগণ মম,পরম সুহৃদ, যুগল প্রেমের গুরু।

তদনুগা হয়ে, সেবিব রাধার, চরণ কল্পতরু ।।

💞💞জয় শ্রীরাধেকৃষ্ণ💞💞জয় ব্রজধাম💞💞

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I

কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)

কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।

‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।

প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’

যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি। পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে !

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে !!"

!! জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় !! !! জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় !!

 

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...