🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚
🌷🍁শ্রীশ্রী শিক্ষাষ্টকম🍁🌷
🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚
খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।
স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।‘’
শ্রীশ্রী
শিক্ষাষ্টকম দ্বিতীয় পর্ব্ব
পাতঞ্জলি বলিয়াছেন,- “ঈশ্বর প্রণিধানাদ্বা" অর্থাৎ
ঈশ্বর চিন্তাদ্বারাও চিত্তবৃত্তি সংযত হয়। আর
আমাদের প্রাণ গৌরাঙ্গ বলিতেছেন,- “ শ্ৰীকৃষ্ণ সঙ্কীৰ্ত্তন- দ্বারা
মলিন চিত্ত-দর্পণ
মার্জ্জিত হয়
।" চিত্তের মলিন
ভাব দূর হইলেই
নিৰ্ম্মল চিত্তে
স্বরূপ অবস্থা দর্শন
হইয়া থাকে। এখন
বুঝা যাইতেছে যে,
নাম জপ, নাম
ধ্যান ও নামাদি গান দ্বারা
ক্রমে
ক্রমে
চিত্তের বিক্ষেপাদি দূরীভূত হইয়া
চিত্ত
নিৰ্ম্মল হইলেই
অভীষ্টদেবের প্রকাশ
হইয়া
সাধকের
প্রাণে
শান্তি
লাভ
হইয়া
থাকে
।
পূৰ্ব্বে আলোচিত
হইয়াছে যে,
চিত্ত
দর্পণের মালিন্যতার হেতু
হয়
অবিদ্যামল নতুবা
অপরা
বিদ্যার বাহ্যিক চাকচিক্য ।
এই
বাহ্য
ব্যাপারে আসক্তি
হইতেই
এই
দুই
প্রকার
মালিন্যের উৎপত্তি হয়
।
কিন্তু
শ্রীকৃষ্ণের নামসঙ্কীৰ্ত্তন দ্বারা
ক্রমে
ক্রমে
নামে
আসক্তি
ও
পরে
নাম
করিতে
করিতে
নামীতে
প্রেমোদয় হইয়া
থাকে।
অন্য
বাহ্যিক ব্যাপারে যতই
আসক্তির অভাব
ঘটে
ততই
শ্ৰীভগবানের দিকে
আসক্তি
বৃদ্ধি
পেতে
থাকে
।
শ্ৰীমদ্ভাগবতে শ্ৰীশুকদেব গোস্বামী বলিয়াছেন,-
যৎকীৰ্ত্তনং যৎস্মরণং যদীক্ষণং
যদ্বন্দনং যচ্ছ্রবণং যদর্হণম্।
লোকস্য
সদ্যো
বিধুনোতি কল্মষং
তস্মৈ
সুভদ্রশ্ৰবসে নমোনমঃ
I I
সুতরাং
যাঁর
নাম
কীৰ্ত্তনে, যাঁর
নাম
স্মরণে, জীবের
যাবতীয় কল্মষ
সদ্যই
বিনষ্ট
হয়,
সেই
নামের
আশ্রয়
লইতে
পারিলে
আর
ভাবনা
কি
? চিত্তের মালিন্যই যদি
দূর
হইয়া
গেল,
চিত্ত
যদি
তাঁর
অভয়
চরণে
সংলগ্নই হইয়া
রহিল,
তাহা
হইলে
আর
জীবের
দুঃখ
কোথায় ? তাই
বলিয়াছেন,- “ভব
মহাদাবাগ্নি নির্বাপনং” অর্থাং
নামের
এমনই
গুণ
যে
নাম
লইলে
সংসার
দুঃখ রূপ মহা
দাবাগ্নিও অচিরে
নির্ব্বাণ হয়
।
দাবাগ্নি অরণ্যেই জ্বলে
।
এ
ভবাররণ্যও বড়
সহজ
অরণ্য
নয়
।
যাঁহারা শ্রীমদ্ভাগবতের পঞ্চম
স্কন্ধে ভব-অটবী বর্ণন পাঠ
করিয়াছেন তাঁহারা সহজেই
এই
সংসার
অরণ্যের এবং
তদুত্থিত দাবাগ্নির ভীষণত্ত্ব কিয়ৎ
পরিমাণে অনুভব
করিয়াছেন সন্দেহ
নাই
।
আর
যাঁহারা পাঠ
করেন
নাই
তাঁহারা একবার
এই
বিষয়টি আলোচনা
করিয়া
এই
ঘোর
দাবাগ্নি নিৰ্ব্বাপিত করিবার
জন্য
একটু
চেষ্টা
করিবেন
।
“শ্রীভগবানের নামামৃত ধারাই
দাবানল
নির্ব্বাণের একমাত্র উপায়”
।
একটু
ভাবিলেই বেশ
বুঝিতে
পারা
যায়
যে,
অনিত্য
বিষয়
বাসনাই
এই
প্রচণ্ড দাবানল
।
এই
বাসনা,
ভোগের
দ্বারা
কখনই
নষ্ট
হয়
না,
কেবল
"হবিষা
কৃষ্ণবর্ত্মেব ভূয়ো
এবাভি
বৰ্দ্ধতে ।
” ভোগের
দ্বারা
ভোগ
তৃষ্ণা
নষ্ট
হওয়া
দূরে
থাকুক
অনলে
ঘৃতাহুতির ন্যায়ই কাজ
করে।
মহাপুরুষরা বলিয়াছিলেন “ভোগে
সুখ
নাই,
সুখ
সংযমে”
।
সুতরাং
সংসারে
জড়
কামনার
বস্তু
যতগুলি
আছে
সকল
গুলি
ভোগ
করিলেও
কামনার শান্তি
না
হইয়া
বরং
উত্তরোত্তর বৃদ্ধিই হইতে
থাকে।
কাজেই
যত
দিন
ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য
বাসনা,
তত
দিনই
জ্বালা। তবে
এই
বাসনার
স্রোত
সদগুরুর কৃপাবলে অন্যদিকে ফিরাইয়া দিতে
পারিলেই পরম
শান্তি
। সেটি আর
কিছুই
নয়,
মনঃপ্রাণ তাঁহার
পদে
সমর্পণ
করিয়া
কেবল
নাম
গান,
উচ্চৈঃস্বরে বলিতে
হইবে
—
“হরে কৃষ্ণ হরে
কৃষ্ণ
কৃষ্ণ
কৃষ্ণ
হরে
হরে।
হরে
রাম
হরে
রাম
রাম
রাম
হরে
হরে
I I"
উচ্চৈঃস্বরে বলিলে
একসঙ্গে নাম
বলা
ও
শোণা
দুইটাই
হইবে
।
“উচ্চেঃ
শতগুণন্তবেৎ।" একবারে দুইটী
পথ
দিয়৷
নাম
হৃদয়ে
প্রবেশ
করিয়া
সকল
আবর্জনা, সকল
মালিন্য ক্ষালন
করিয়া
দিয়া
হৃদয়ে
নাম
সাধনের
চরম
ফল
নবকৈশোর নটবর
মূৰ্ত্তি দেখাইয়া দিবেন।
নামীকে
হৃদয়ে
উদয়
করাইয়া দিতে
নামই
ত্রকমাত্র সাধন
।
শাস্ত্র ও
মহাজন
গণের
ইহাই
মত
। নাম ও
নামী যে অভেদ
এই তত্ত্ব লইয়া
পদ্মপুরাণে উক্ত
হইয়াছে,-
“নামঃ চিন্তামনিঃ কৃষ্ণঃ
চৈতন্য
রসবিগ্ৰহঃ ।
পূর্ণঃশুদ্ধো নিত্যমুক্তোহভিন্নাত্মা নাম
নামিনোঃ I I’’
সুতরাং
‘’শ্ৰীশ্ৰীকৃষ্ণচন্দ্র’’ ও
‘’নাম
চন্দ্র’’ একই
।
এই
নাম
চন্দ্রের চন্দ্রিকায়ই জীবের
হৃদয়ে
শ্ৰেয়ঃ কুমুদ
বিকসিত
হয়
।
তাই
বলিয়াছেন,- “শ্রেয়ঃ কৈরব
চন্দ্রিকা বিতরণং”
সকলেই
নিজ
নিজ
জীবনে
এই
কথার
নিশ্চয়তা পরীক্ষা করিয়া
দেখিতে
পারেন
।
নামাভাসেই যখন
অশেষ
মঙ্গলের উদয়
হয়
তখন
পূর্ণ
নামের
শক্তিতে যে
পরম
শ্রেয়ঃ
লাভ
হইবে
তাহাতে
আর
আশ্চৰ্য্য কি
?
শাস্ত্রে পুনঃ
পুনঃ
বলিতেছেন,-
ন
নাম
সদৃশং
জ্ঞানং,
ন
নাম
সদৃশং
ব্রতম্
।
ন
নাম
সদৃশং
ধ্যানং,
ন
নাম
সদৃশং
ফলম্
I I
ন
নাম
সদৃশস্তাগো, ন
নাম
সদৃশঃ
শমঃ।
ন
নাম
সদৃশং
পুন্যং,
ন
নাম
সদৃশ
গতিঃ
I I
এই
সকল
যাঁহার
শ্রীমুখের বাক্য,
তিনিই
লীলান্তরাশ্রয় পূর্বক
আমাদিগের ন্যায়
ঘোর
অবিশ্বাসীকে উদ্ধার
মানসে
এই
সকল
বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করিয়াছেন I শুধু
তাহা
নহে
নিজ
জীবনে
আচরণ
করিয়া
জীবের
দ্বারে
দ্বারে
বলিয়া
বেড়াইয়াছেন । নাম গাহিতে
গাহিতে
শুনিতে
শুনিতেই শ্ৰেয়ঃ কুমুদ
প্রস্ফুটিত হয়
।
ক্রমে
ক্রমে
পরাবিদ্যার বিকাশ
হইয়া
এই
নামামৃতই যে
পরাবিদ্যার জীবন
তাহা
বুঝাইয়া দেয়,
তাই
বলিয়াছেন,- “বিদ্যাবধূজীবনম্” অর্থাৎ
শ্রীকৃষ্ণ নামই
বিদ্যাবধূর জীবন
স্বরূপ।
এস্থলে
বিদ্যা
শব্দে
কৃষ্ণ
ভক্তিই
বুঝিতে
হইবে
।
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে প্রভুর
সহিত
রায়
রামানন্দের যে
কথোপকথন হয়
তাহতে
উক্ত
হইয়াছে,-
"প্রভু কহে কোন
বিদ্যা
বিদ্যা
মধ্যে
সার
।
রায়
কহে
‘কৃষ্ণভক্তি’ বিনা
বিদ্যা
নাহি
আর"
I I
নাম
কীৰ্ত্তন করিতে
করিতেই
সেই
পরাবিদ্যা -রূপ
কৃষ্ণভক্তিকে প্রাপ্ত হওয়া
যায়
।
গরুড়
পুরাণে
উক্ত
হইয়াছে,-
যদিচ্ছসি পরং
জ্ঞানং
জ্ঞানাৎ যৎপরমং
পদম।
তদাদরেন রাজেন্দ্র ! কুরু
গোবিন্দ- কীৰ্ত্তনম্ ।
অর্থাৎ
হে
রাজেন্দ্র ! যে
জ্ঞান
লাভ
করিয়া
জগতে
নরগণ
শ্রেষ্ঠতম পদ
প্রাপ্ত হয়
যদি
সেই
পরম
জ্ঞান
লাভ
করিবার
তোমার
বাসনা
থাকে
তবে
আদরের
সহিত
শ্রীগোবিন্দ নামকীৰ্ত্তন কর,
তোমার
সকল
জঞ্জাল
দূর
হইয়া
মনোবাসনা পূর্ণ
হইবে
।
যাহার
অন্তরে
সর্বদা
হরিভক্তিরূপ পরাবিদ্যা বিরাজিতা, তিনি
সততই
আনন্দাম্বুধি -নীরে
সুখে
সন্তরণ
করিয়া
থাকেন
।
তাই
প্রাণ গৌরাঙ্গ বলিয়াছেন,- “আনন্দাম্বুধি বৰ্দ্ধনং” অর্থাৎ
শ্রীকৃষ্ণ নাম
সঙ্কীৰ্ত্তনই আনন্দ
রূপ
অম্বুধির বর্দ্ধক। আনন্দ-
সমুদ্র
নামানুকীৰ্ত্তনের দ্বারাই নিরন্তর বৰ্দ্ধিত হইয়া
থাকে।
পুর্ণচন্দ্রোদয়ের সঙ্গে
সঙ্গে
যেমন অম্বুধি- নীর
পরিবর্দ্ধিত হয়
অর্থাৎ
পূর্ণিমায় যেমন
সমুদ্রের বারি
উচ্ছ্বসিত হয়,
শ্রীনাম-রূপ
চন্দোদয়ে সেইরূপ
আনন্দ
সাগরও
উচ্ছ্বসিত হইয়া
থাকে
।
তবে
নীর-সমুদ্র নীরে মগ্ন
হইলে
প্রাণ
রক্ষা
হওয়া
কঠিন
কিন্তু
এই
আনন্দ
সমুদ্রে একবার
মগ্ন
হইতে
পারিলে
আর
কোন
ভয়ই
থাকেনা
।
লবণাম্বুধিতে মগ্ন
হইয়া
যদিও
কোন
প্রকারে প্রাণ
রক্ষা
হয়
বটে
কিন্তু
লবণ
মিশ্রিত জল
পান
করিয়া
পরিণামে রোগযন্ত্রণায় ছটফট
করিতে
হয়,
কিন্তু
এ
আনন্দ
সমুদ্রে মগ্ন
হইয়া
ইহার
জল
আকণ্ঠ
পান
করিলেও
কোন
প্রকার
ব্যাধি
হইবার
সস্তাবনা নাই
বরং
পরমানন্দের সহিত
অমৃতের
অধিকারীই হইয়া
মহান্
ভব
ব্যাধি
নিবারিত হইয়া
থাকে।
শ্ৰীমন্মহাপ্ৰভু বলিয়াছেন “প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনম” অর্থাৎ
শ্রীকৃষ্ণ নামের
বর্ণে
বর্ণেই
সুধাসিন্ধু উথলিয়া পড়ে,
নামের
প্রত্যেক পদই
পূর্ণামৃতের আস্বাদ
পাওয়া
যায়।
এইভাবে
নামামৃত ধারা
আস্বাদনেরই ফল
সৰ্ব্বাত্ম স্নপনং
অর্থাৎ
এই
ভাবে
নাম
সঙ্কীৰ্ত্তন দ্বারা
সকলের
হৃদয়ই
রসভাবে
স্নান
করাইয়া অন্তর
বাহির
সুনিৰ্ম্মল করে
ও
নাম
গ্রহণকারীকে পরমানন্দ প্রদান
করে
।
এমন
যে
সৰ্ব্বশক্তিমান সুধা-মধুর শ্রীকৃষ্ণ নামসঙ্কীৰ্ত্তন তাহার
বিজয়
ঘোষণা
করিয়া
শ্ৰীমন্মহাপ্ৰভু সংক্ষেপে কলিযুগের সাধন
পথ
কীৰ্ত্তন করিতেছেন ।
ক্রমশঃ…
No comments:
Post a Comment