🍁শ্রীরাধাকুণ্ড প্রাকট্য🍁

💐🦚🏵️🌺🌷🌺🏵️🦚💐

শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গজয়তঃ

সকলসাধু,গুরু,বৈষ্ণবওগৌরভক্তবৃন্দেরশ্রীচরণেআমারদণ্ডবৎপ্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণবতিনিহেঁস্মরণ।

তিনেহেঁস্মরণহইতেবিঘ্নবিনাশন।।

অনায়াসেহয়নিজবাঞ্ছিতপূরণ।।‘’

গুরবেগৌরচন্দ্রায়রাধিকায়ৈতদালয়ে।

কৃষ্ণায়কৃষ্ণভক্তায়তদ্ভক্তায়নমোনমঃ।।

যিনিবৃন্দাবননবনিকুঞ্জস্বামিনী
যিনিগোবর্ধনকুঞ্জবিলাসভামিনী।
যিনিরাধাকুণ্ডকুঞ্জকেলিপুরন্দরী
তিনিমোরপ্রাণেশ্বরীকীর্তিদাকিশোরী।।

আজ শ্রীরাধাকুণ্ডের প্রাকট্য তিথি, সকলকে জানাই কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা।  ( প্রাকট্য অর্দ্ধরাত্রে )

শ্রীরাধাকুণ্ড ও শ্রীশ্যামকুণ্ডের উৎপত্তির কথা

আজ রাধা রাধাকুণ্ড ও শ্যামকুণ্ডে মধ্যরাত্রে স্নান। আজকের এই দিনে বহুলাষ্টমী বা অহৈয়া অষ্টমীতে রাধাকুণ্ড ও শ্রীশ্যামকুণ্ডের উৎপত্তি হয়েছিল। রাধাকুণ্ড ও শ্যামকুণ্ড সম্বন্ধে আলোচনা করতে হলে প্রথমে অরিষ্ঠাসুর সম্বন্ধে কিছু জানা প্রয়োজন। সেইজন্য শ্রীগর্গ সংহিতা গ্রন্থে বর্ণিত আছে, অরিষ্ঠাসুরের পূর্ব্বনাম দ্বিজসত্তমবরতন্ত্ত। তিনি গুরু বৃহস্পতির নিকট বিদ্যা গ্রহণ করেন। একদিন পড়তে গিয়ে গুরুর সামনে পা প্রসারিত করলে গুরু তা দেখে রেগে বললেন, হে দুষ্ট, তুমি বৃষের মত আমার সামনে অবস্থান করছ, অতএব বৃষ হও। এই অভিশাপে বৃষরূপে অরিষ্ঠাসুর হয়ে অসুরত্ব প্রাপ্ত হয় ।

কোন একসময় বৃষরূপ ধারী অরিষ্ঠাসুর কংসের নির্দেশে ব্রজে গমন করে সখা ও গোগণের মধ্যে গোচারণ লীলায় প্রবেশ করে। তার নিষ্ঠুর নিনাদে গোপ গোপীগণ ভয়ে ত্রস্ত হয়ে “হা কৃষ্ণ, হা কৃষ্ণ, রক্ষা কর’’ বলে চিৎকার করতে লাগল। ব্রজবাসীগণের আর্তনাদ শুনে কৃষ্ণ ছুটে আসলেন। আরিট গ্রামের কাছে এসে দেখা হলো সেই ষাঁড়ের সঙ্গে । কৃষ্ণকে দেখেই সেই ষাঁড় মারমুখী হয়ে ছুটে আসলো, কৃষ্ণ তার শিং দুটি ধরে পিছনে ধাক্কা দিলেন। বারবার পড়ে যায়, আবার উঠে কৃষ্ণকে মারতে আসে, এইভাবে কৃষ্ণ এবং সেই ষাঁড়ের যুদ্ধ শুরু হল। কিছুক্ষণ পরে কৃষ্ণ ষাঁড়ের  পিছনের পা দুটো ধরে ঘুরিয়ে এমন আছাড় মারলেন সঙ্গে সঙ্গে সে পঞ্চতত্ত্ব ক প্রাপ্ত হল। সকল ব্রজবাসী ও গোপবালকগণ আনন্দে নাচতে লাগল। সবাই আনন্দ করতে করতে নিজে নিজ গৃহে গমন করল।

সেইদিন রাতে শ্রীকৃষ্ণ ব্রজপোপীগণের কাছে রাসস্থলীতে রাসলীলাতে প্রার্থনা করলে গোপীগণ মৃদু হেসে বললেন,- ''হে বৃষাসুর মর্দ্দন, আজ আমাদের স্পর্শ করিও না, আজ তুমি বৃষকে হত্যা করে তোমার গোবিন্দ নাম কালিমা করেছ। কারণ তুমি গোবধের পাপে লিপ্ত হয়েছ।‘’ শ্রীকৃষ্ণ বললেন,- হে সুন্দরীগণ, সে তো বৃষ না, ভয়ঙ্কর অসুর ছিল। গোপীগণ বললেন,- শোন, বৃত্রাসুরের ব্রাহ্মণ শরীর হওয়ায় তাকে বধ করে ইন্দ্রেকে ব্রহ্মহত্যার পাপ স্পর্শ করেছিল। সেরকম এ বৃষরূপে ছিল। গোপীগণের যুক্তিপূর্ণ কথা শুনে গোবিন্দ বলল,-হে প্রিয়ে, তাহলে বল আমি এই পাপ থেকে এখন কি করে মুক্তি লাভ করতে পারব ?

রাধারাণী বললেন পৃথিবীতে যত তীর্থ আছে সমস্ত তীর্থে স্নান করে আসতে হবে। তবে তোমার এই গোবধ পাপ থেকে নিষ্কৃতি হবে। শ্রীকৃষ্ণ বললেন,- ‘’আমি এই ব্রজভূমি ত্যাগ করে এখন ত্রিভুবনের তীর্থস্নানের জন্য কোথায় যাব ? এখনই আমি সকল তীর্থকে আহ্বান করে তোমাদের সামনে তাতে স্নান করব।‘’ এই বলে গোবিন্দ ঐ স্থানে সজোরে চরণের আঘাত করলে সঙ্গে সঙ্গে পাতাল হতে ভগবতী গঙ্গা, এবং সকল তীর্থ আসলে শ্রীকৃষ্ণ বললেন,- তোমরা আমার কুণ্ডে বিরাজমান হও।” শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে সমস্ত তীর্থ কুণ্ডের মধ্যে উপস্থিত হলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ গোপীকে বললেন,- ‘’প্রিয়ে, দেখ সমস্ত তীর্থ এখানে উপস্থিত হয়েছে। গোপীগণ বললেন, ” আহ, তোমার কথা আমরা বিশ্বাস করব না।‘’ তখন সমস্ত তীর্থ নিজ মূর্তি ধারণ করে নিজেদের পরিচয় দিতে লাগলেন আর নিজেদের নাম উচ্চারণ করছেন, আমি লবণ সমুদ্র, আমি ক্ষীর সমুদ্র, আমি অমর দীর্ঘিকা, আমি শোন নদী, আমি ভাদ্রপর্ণী,আমি পুষ্কররাজ, আমি সরস্বতী, আমি গোদাবরী, আমি গঙ্গা, আমি যমুনা, আমি সরযু, আমি প্রয়াগরাজ, আমি রেবাতীর্থ ইত্যাদি সমস্ত তীর্থের জল পৃথক দর্শন করুন আর আমাদের বিশ্বাস কর।‘’  তখন শ্যাম সকল তীর্থের জলে কুণ্ড তৈরি করে সর্বতীর্থকে এখানে স্থাপন করলেন।

কৃষ্ণ সেই জলাশয়ে নেমে স্নান করে আসলেন এবং বললেন এবার তো আমি পাপমুক্ত হয়েছি? এবার তোমরাও ওখানে স্নান কর। রাধারাণী বললেন,- না! তোমার যে গোহত্যা পাপ এই জলে ধুয়ে গেছে, তা এই জলের ভিতর রয়েছে । আমরা কেউ তোমার এই পাপময় জলে স্নান করবো না। আমরা আলাদা কুণ্ড তৈরি করব তারপর সেখানে স্নান করব।এই বলে রাধারাণী যেখানে অরিষ্টাসুর ও কৃষ্ণের যুদ্ধ হয়েছিল সেখানে অসুরের পায়ের আঘাতে সে জায়গাটা কিছু গর্ত হয়ে ছিল সেই স্থানে রাধারাণী নিজের কঙ্কন দিয়ে মাটি উঠানো শুরু করলেন, আর উনার সমস্ত সখীগণ (অনন্ত সখী) অল্প সময়ের ভিতর একটি সুন্দর চতুষ্কোণ আকৃতি কুণ্ড তৈরী করে ফেললেন।

কুণ্ড তো হলো কিন্তু জল নেই । কৃষ্ণ বলছেন যে দেখো প্রিয়াজূ! কুণ্ডের শোভা জল, তাই যদি না থাকে তাহলে এ কুণ্ডে কি লাভ? তাই আমার কুণ্ড থেকে জল নিয়ে তোমার কুণ্ড পূর্ণ কর। রাধারাণী বলছেন যে, কি ! তোমার ওই পাপ ধোয়া জল আমি নেব? তাতে আমার কুণ্ড পূর্ণ করব? না আমরা মানসী গঙ্গা থেকে জল নিয়ে এসে কুণ্ড পূর্ণ করব। এই বলে সব সখীগণকে আদেশ দিলেন। মানসী গঙ্গা থেকে সখীগণ জল আনতে আনতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন । এক কোনও ভর্তি হল না। তখন কৃষ্ণ তীর্থগণকে ইঙ্গিত করলেন যে তোমরা রাধারাণীর স্তুতি কর, তাঁর কৃপা কটাক্ষ হলে তোমরা ধন্য হবে। তীর্থগণ সব মিলে শ্রীকুন্ডেশ্বরী রাধারাণীর কৃপা কটাক্ষ স্তোত্র পাঠ করতে লাগলেন।

তাঁদের স্তুতিতে প্রসন্না হয়ে রাধারাণীর স্মিত হাসলেন ও কৃষ্ণের দিকে একটি বিলোল কটাক্ষ করলেন। কটাক্ষের অর্থ এই যে দেখো তুমি তো সব তীর্থ আনয়ন করলে, কিন্তু তোমার কাছে কেউ থাকতে চায় না। সবাই আমার কাছে আসতে চায়। কৃষ্ণের ইঙ্গিতে মাঝের ভিত্তি ভেদন করে সমস্ত তীর্থগণ শ্রীরাধাকুণ্ডে প্রবেশ করলেন। রাধাকুণ্ডের শোভা দর্শন করে কৃষ্ণ বিমুগ্ধ হলেন ও বললেন- যে একবার এই কুণ্ডে স্নান করবে তাকে তোমার সমতুল্য প্রেম আমি দান করব। তুমি কি চাও বল? রাধারাণী বললেন যে প্রিয়তম শ্যামসুন্দর! তুমি যদি আমাকে বরদান দিতে চাও তো এই বর দাও যেন আমার নামে এই স্থানের নাম হয়। কৃষ্ণ বললেন - *তথাস্তু*। সেই হতে আজ ও এই জায়গাটাকে রাধাকুণ্ড বলা হয়,পাশে শ্যাম কুণ্ড আছে। কিন্তু জায়গাটাকে শ্যাম কুণ্ড বলা হয় না। কোথায় যাচ্ছেন? জিজ্ঞেস করলে সকলেই একবাক্যে বলেন - রাধাকুণ্ডে।

সেই দিন ছিল কার্ত্তিক মাসের অহৈয়াঅষ্টমী বা বহুলাষ্ঠমী তিথি। শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতি রাধাকে বললেন, ''হে প্রিয়ে, জগতে আমার কুণ্ডের থেকে তোমার কুণ্ডের মহিমা খ্যাতি লাভ করবে। আমিও তোমার কুণ্ডে প্রত্যহ স্নান ও জলবিহার করিব।

"কুণ্ডের মহিমা যেন রাধার মহিমা।😍

কুণ্ডের মাধুরী যেন রাধা মধুরিমা।।

এই কুণ্ডে যে একবার করে স্নান।

তারে রাধাসম প্রেম কৃষ্ণ করে দান।।"

শ্রীশ্রীরাধাকুণ্ডাদি তীর্থ আহ্বান মন্ত্র--

শ্রীশ্রীরাধাকুণ্ড শ্যামকুণ্ড পাবন সরোবর।

স্নান কালে ইহাগচ্ছ মানস জাহ্নবি তথা।।

গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি! সরস্বতী।

নর্মদে সিন্ধো কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু।।

কুরুক্ষেত্র গয়া গঙ্গা প্রভাস পুষ্করাণী চ।

তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি স্নানকালে ভবন্তিহ।।

 

এ মন্ত্রে স্নানীয় জলে রাধাকুণ্ডাদিতীর্থ আহ্বান করে *জয় নিতাই জয় গৌর* নাম উচ্চারণ করে "শ্রীশ্রীরাধাকুণ্ড ও শ্রীশ্রীশ্যামকুণ্ডের" স্নান মন্ত্র বলে স্নান করবেন সকলে....

শ্রীশ্রীরাধাকুণ্ড স্নান মন্ত্র:-

"রাধিকাসম-সৌভাগ্যং সর্ব্বতীর্থ প্রবন্দিতম।

প্রসীদ রাধিকাকুণ্ড!স্নামি তে সলিলে শুভে।।"

শ্রীশ্রীশ্যামকুণ্ড স্নান মন্ত্র:-

"উদ্ভূতং কৃষ্ণপাদাব্জাদরিষ্ট-বধতশ্ছলাৎ।

পাহি মাং পামরং স্নামি শ্যামকূণ্ড! জলে তব।।"

এই মংত্র বলে ও হরিনাম সহিত রাধাকুণ্ড ও শ্যামকুণ্ড, বা বাড়িতে স্নানীয় জলে সকলে মিলে স্নান করবেন।

💐জয় রাধাকুণ্ড💐জয় শ্যামকুণ্ড💐জয় শ্রীকুণ্ডেস্বরী💐রাধারাণীর জয়💐