Wednesday, November 11, 2020

🌷শ্রীমন্নিত্যানন্দপ্রভু🌷

🍁💞🌷🌺🌸🌻🌸🌺🌷💞🍁

বিশেষপোষ্ট

শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গজয়তঃ

সকলসাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌরভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরুবৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন ।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ।।‘’

 

নমস্ত্রিকালসত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

ভৃত্যায় সপুত্রায় সকলত্রায় তেনমঃ ।।

 

 💐নিতাই  লীলা 💐  প্রথম পর্ব্ব
রাঢ়দেশে কালনা হতে ক্রোশ দক্ষিণে প্রাচীন একচাকা গ্রামে নিত্যানন্দ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাড়াই পণ্ডিত মাতার নাম পদ্মাবতী। তাঁর আদি নাম কুবের , এই কুবেরই নিত্যানন্দ নামে সুপরিচিত অদ্বৈতপ্রকাশের মতে
‘’
তেরশত পঁচানব্বই শকে মাঘ মাসে। 
শুক্ল ত্রয়োদশীতে রামের পরকাশে ‘’    (অদ্বৈত ৪র্থ ” ) 
(
মতান্তরে ১৩৯৮ শকে জন্ম হয় )
চৈতন্য সম্প্রদায়ী বৈষ্ণবেরা বলেন, নিত্যানন্দ বলরামের অবতার

 

চৈতন্য -ভাগবতকার বলেন,—
‘’
মাঘমাসে শুক্লপক্ষ ত্রয়োদশী শুভ দিনে  
পদ্মাবতী গর্ভে একচাকা নামে গ্রামে ।৷ 
হাড়াই পণ্ডিত নামে শুদ্ধ বিপ্ররাজ  
মূলে পিতামাতা তানে করি পিতা ব্যাজ
কৃপাসিন্ধু ভক্তি দাতা প্রভু বলরাম। 
অবতীর্ণ হৈলা ধরি নিত্যানন্দ নাম ‘’
নিত্যানন্দ শশীকলার ন্যায় বৃদ্ধি পেতে লাগলেন নিত্যানন্দের অদ্ভুত বাল্যলীলার বিবরণ চৈতন্যভাগবতে আছে, সে অপুৰ্ব্ব খেলার আভাস এইরকম,-

‘’
কোন শিশু সাজায়েন পুতনার রূপে  
কেহ স্তন পান করে উঠি তার বুকে  
কোন দিন শিশু সঙ্গে নল খড়ি দিয়া  
শকট গড়িয়া তাহা ফেলেন ভাঙ্গিয়া ‘’ 
কোন দিন শিশু সঙ্গে তালবনে যাইয়া
শিশু সঙ্গে তাল খায় ধেনুকে মারিয়া
কোন দিন নিত্যানন্দ সেতুবন্ধ করে। 
বানরের রূপ সব শিশুগণে ধরে  
ভেরেণ্ডার গাছ কাটি ফেলায়েন জলে  
শিশুগণ মেলি জয় রঘুনাথ বলে।       ( চৈতন্য ভাগবত )

 
নিতাই ভগবানের লীলানুরূপ খেলা খেলতেন। প্রবীণ লোকেরা এই বালকের খেলা দেখে বিস্মিত হতেন, — এই বালক কার কাছে খেলা শিক্ষা করে ? স্বয়ং হাড়াই পণ্ডিত পর্যন্ত ভেবে বিস্মিত হতেন আবার যখন যে খেলা খেলতেন, নিতাই তখন সেই ভাবে আবিষ্ট হয়ে যেতেন, — এমন কি, সেই আদর্শ তাঁতে তখন ভেদ থাকত না যে দিন লক্ষ্মণের শক্তিশেল খেলা হয়, সেদিন ভারি বিপদ ঘটে । নিতাই ভেরেণ্ডার ডাল-রূপ শেলের আঘাতে মূর্চ্ছিত সে মূর্চ্ছা খেলার মূর্চ্ছা নয়, ভাবের মূর্চ্ছা, যথার্থই মূর্চ্ছা নিতাইর মূর্চ্ছা দর্শনে, কি করতে হবে বালকেরা তা ভুলে গেল। ক্রমে বালকদের ছুটাছুটিতে কথা জানাজানি হল।
 
প্রবীণ ব্যক্তিরা আসলেন নিতাইর মা বাপ পাগলের মতো ক্রীড়াস্থানে উপস্থিত হলেন, কতশত চেষ্টা করা গেল, কত ঔষধ প্রয়োগ করা হল , নিতাইয়ের মূর্চ্ছা আর ভাঙ্গেনা ঘোর কান্নাকাটি পড়ে গেল কোন এক ব্যক্তি তখন একটি শিশুকে ডেকে এনে অভয় দিয়ে পূৰ্ব্বাপর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। সে বালক বলতে লাগল বলতে বলতে নিতাইর শিক্ষা তার স্মরণ হল, সে আনন্দে বলে উঠল, এখনই নিতাইকে জীয়াব । তখন সেই শিশু হনুমান হয়ে গন্ধমাদন আনতে চলল। খেলার গন্ধমাদন আনা হল, তখন অন্য এক শিশু (পূৰ্ব্ব শিক্ষানুসারে ) বৈদ্যরূপ ধারণ করে ঔষধ এনে নিত্যানন্দের নাসারন্ধ্রে ধরল আর বহু চেষ্টায় যে মূর্চ্ছা ভাঙ্গেনি , সামান্য খেলায় নিতাইয়ের সেই মূর্চ্ছা ভেঙ্গে গেল  

নিত্যানন্দ গ্রামের নয়নস্বরূপ। গ্রামবাসীরা তাঁকে না দেখলে চতুর্দিক শূন্য দেখত পিতামাতার কথা আর কি বলব
‘’
তিলমাত্র নিত্যানন্দ না দেখিলে মাতা  
যুগপ্রায় হেন বাসে ততোধিক পিতা  
তিলমাত্র নিত্যানন্দ পুত্রেরে ছাড়িয়া  
কোথাও হাড়াই ওঝা না যায় চলিয়া ।। 
কিবা কৃষিকার্য্যে কিবা যজমান ঘরে  
কিবা ঘাটে কিবা বাটে যত কৰ্ম্ম করে  
পাছে যদি নিত্যানন্দচন্দ্র চলি যায়। 
তিলার্দ্ধে শতেক বার উলটিয়া চায়।‘’    ( চৈতন্য ভাগবত )

কুবের বা নিত্যানন্দের খেলা যেমন অপরূপ, বিদ্যাশিক্ষাও তেমনই অদ্ভুত। এমন প্রতিভা কেউ কোনকালে দেখেনি , এরূপ প্রতিভা , এরূপ শক্তি মানুষের হতে পারে, লোকের জ্ঞান ছিল না। দর্শন মাত্রই সৰ্ব্বশাস্ত্র নিতাইর আয়ত্ত্ব হয়ে যেত সুতরাং ভক্তি -রত্নাকর বলেন ,— 
‘’
অল্প দিবসেই কৈল বিদ্যা উপার্জন  
ব্যাকরণ আদিশাস্ত্রে হইলা বিচক্ষণ ‘’

নিতাইর বয়স যেমন, তা থেকেও আরও বেশী বয়স্ক বলে তাঁকে বোধ হত। বার বৎসরের বালককে ষোলবছরের মত দেখাত সেই বয়সেই নিতাইর বিবাহের কথা উঠল অনেকেই নিজ নিজ কন্যা নিতাইকে অর্পণ করতে ইচ্ছা করলেন । নিতাইর মাতা পদ্মাবতী আনন্দে আটখানা হয়ে গেলেন । 
ভক্তি-রত্নাকরে লিখিত আছে ,-
‘’
নিতাইর বয়স হইল দ্বাদশ বৎসর  
ষোড়শ বর্ষের প্রায় দেখিতে সুন্দর ।। 
বহুজনে জানাইয়া হাড়াই পণ্ডিত  
পুত্রের বিবাহ দিতে হইল উৎকণ্ঠিত ।। 
একচক্রাবাসী যত ব্ৰাহ্মণ সজ্জন
বিবাহ প্রসঙ্গে হর্ষ হৈল সৰ্ব্বজন।‘’

কিন্তু এই আনন্দ অচিরেই নিরানন্দে পরিণত হল। তখন ১৪১০ শকাব্দ অগ্রহায়ণ মাসের শেষে একটা উদাসীন, অতি তেজস্কর আকৃতি, হাড়াই পণ্ডিতের গৃহে অতিথি হলেন এই অতিথি একচক্রার সর্বস্বধন হরণ করে নিয়ে গেলেন। বিদায়কালে অতিথি হাড়াই পণ্ডিতের কাছে নিতাইকে ভিক্ষা চাইলেন। হাড়াই অম্লানবদনে অতিথিকে পুত্র দিলেন, অতিথি বিমুখ করলেন না পুত্রকে ভিক্ষা? যে পুত্র আবার প্রাণ থেকেও প্রিয়তর, যে পুত্রকে তিলমাত্র চক্ষুর অন্তরাল করা যায় না, তাঁকে পিতা হয়ে বিলিয়ে দিলেন, ধারণা বর্তমান কালের লোকেদের না হতে পারে, কিন্তু হাড়াই প্রাণাধিক পুত্রকে যথার্থই বিলালেন। তিনি ধৰ্ম্মশঙ্কটে যেন বিপথগামী না হন, এইজন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেন

‘’
ধৰ্ম্মসঙ্কটে কৃষ্ণ রক্ষা কর মোরে।‘’ ( ভক্তি রত্নাকর ) পদ্মাবতীকে একথা বলা হল। যেমন পতি, তেমনই পত্নী তিনি বললেন,- 
‘’
তোমার যে কথা প্ৰভু সেই কথা মোর।‘’

এরূপ পিতামাতা না হলে নিতাইর মত পুত্র জন্মায় না পিতামাতার হৃদয়পিণ্ড ছিন্ন -বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আর কত সইবেন। যে মুহূর্তে নিতাই ঘরের বাহির হলেন, পদ্মাবতী হাড়াই সেই মুহূর্তেই যেখানে ছিলেন, সেখানেই মূর্চ্ছিত হলেন। যথা ভক্তিরত্নাকরে,-
‘’
নিত্যানন্দ লইয়া ন্যাসী চলিলা তুরিতে। 
মূর্চ্ছিত হইয়া হাড়াই পড়িলা ভূমিতে  
প্রাণহীন প্রায় ভূমে পড়ে পদ্মাবতী  
হৈল যে দোঁহার দশা কহি কি শকতি  
কি নারী পুরুষ যত একচক্রায়  
একথা শ্রবণমাত্র হৈল মৃতপ্রায়
ক্রমশঃ…


🌹নিতাই গৌরাঙ্গ বল, জনম যাইবে ভাল, কলিযুগে আর গতি নাই।
যেদিল শব্দজ্ঞান, করতার গুগান, বিদ্যা শিখনা কেনভাই।।
 
🌹চৌরাশিলক্ষ যোনি, কতনা ভ্রমিলে তুমি,
ক্রিমি কীট নানা দেহধরি।
অনেক সুকৃতি ফলে, ভারতে জনম নিলে,
নরদেহ অঙ্গীকার করি।।

🌹শত সন্ধি জরজর, পেয়ে এই কলেবর,
এতগর্ব করিছ কিআশে।
ত্র য়াত্মিকাব্যাধিযত, বেড়িয়া আছয়ে কত, কিজানি কখন কেবা নাশে।।

🌹 যেদেহ আপন জ্ঞানে, যত্নকর রাত্রি দিনে,
বসন ভূষণ কতবেশে।
পরমাত্মা  ভগবান, যবে হবে অন্তর্ধান,
ভস্ম বিটক্রিমি অবশেষে।।

🌹পায়েধরি ছাড় ভ্রম, কিছু নাহি পরিশ্রম,
হরি হরি বল অবিরাম।
কহলক্ষ কথা আন, তাহে না আলি সজ্ঞান,
কি ভার কিবোঝা কৃষ্ণনাম।।

🌹কর জোড়ি ভিক্ষাচাই, হরি হরি বলো ভাই,
সুখে তোর যাবে পরিনাম।
না লাগিবে টাকা কড়ি, না ছাড়িবে ঘরবাড়ি, মুখে মাত্র বল হরিনাম।।


️🌼জয়নিতাই 🙏 জয়গৌর 🌼️🌼জয়নিতাই 🙏 জয়গৌর 
🌼️ 


 

No comments:

Post a Comment

🌳🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🌳 💐 পক্ষবর্দ্ধিনী মহাদ্বাদশী 💐 🌳🦚💐🏵️🌷🏵️💐🦚🌳 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু , গুরু , বৈষ্ণব ...