🌷শ্রীমন্নিত্যানন্দপ্রভু🌷
🍁💞🌷🌺🌸🌻🌸🌺🌷💞🍁
বিশেষপোষ্ট
শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গজয়তঃ
সকলসাধু, গুরু, বৈষ্ণব
ও গৌরভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু – বৈষ্ণব
তিনিহেঁ স্মরণ ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন ।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ।।‘’
নমস্ত্রিকাল – সত্যায়
জগন্নাথ সুতায় চ।
স – ভৃত্যায় স –পুত্রায়
স – কলত্রায়
তেনমঃ ।।
💐নিতাই লীলা 💐 প্রথম পর্ব্ব
রাঢ়দেশে কালনা হতে ২ ক্রোশ দক্ষিণে প্রাচীন একচাকা গ্রামে নিত্যানন্দ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হাড়াই পণ্ডিত ও মাতার নাম পদ্মাবতী। তাঁর আদি নাম কুবের , এই কুবেরই নিত্যানন্দ নামে সুপরিচিত । অদ্বৈতপ্রকাশের মতে—
‘’তেরশত পঁচানব্বই শকে ৯ মাঘ মাসে।
শুক্ল ত্রয়োদশীতে রামের পরকাশে ॥‘’ (অদ্বৈত ৪র্থ অ” )
(মতান্তরে ১৩৯৮ শকে জন্ম হয় ।)
চৈতন্য সম্প্রদায়ী বৈষ্ণবেরা বলেন, নিত্যানন্দ বলরামের অবতার ।
চৈতন্য -ভাগবতকার বলেন,—
‘’মাঘমাসে শুক্লপক্ষ ত্রয়োদশী শুভ দিনে ।
পদ্মাবতী গর্ভে একচাকা নামে গ্রামে ।৷
হাড়াই পণ্ডিত নামে শুদ্ধ বিপ্ররাজ ।
মূলে পিতামাতা তানে করি পিতা ব্যাজ ॥
কৃপাসিন্ধু ভক্তি দাতা প্রভু বলরাম।
অবতীর্ণ হৈলা ধরি নিত্যানন্দ নাম ॥‘’
নিত্যানন্দ শশীকলার ন্যায় বৃদ্ধি পেতে লাগলেন । নিত্যানন্দের অদ্ভুত বাল্যলীলার বিবরণ চৈতন্যভাগবতে আছে, সে অপুৰ্ব্ব খেলার আভাস এইরকম,-
‘’কোন শিশু সাজায়েন পুতনার রূপে ।
কেহ স্তন পান করে উঠি তার বুকে ॥
কোন দিন শিশু সঙ্গে নল খড়ি দিয়া ।
শকট গড়িয়া তাহা ফেলেন ভাঙ্গিয়া ॥‘’
কোন দিন শিশু সঙ্গে তালবনে যাইয়া ।
শিশু সঙ্গে তাল খায় ধেনুকে মারিয়া ॥
কোন দিন নিত্যানন্দ সেতুবন্ধ করে।
বানরের রূপ সব শিশুগণে ধরে ॥
ভেরেণ্ডার গাছ কাটি ফেলায়েন জলে ।
শিশুগণ মেলি জয় রঘুনাথ বলে। ( চৈতন্য ভাগবত )
নিতাই ভগবানের লীলানুরূপ খেলা খেলতেন। প্রবীণ লোকেরা এই বালকের খেলা দেখে বিস্মিত হতেন, — এই বালক কার কাছে এ খেলা শিক্ষা করে ? স্বয়ং হাড়াই পণ্ডিত পর্যন্ত ভেবে বিস্মিত হতেন । আবার যখন যে খেলা খেলতেন, নিতাই তখন সেই ভাবে আবিষ্ট হয়ে যেতেন, — এমন কি, সেই আদর্শ ও তাঁতে তখন ভেদ থাকত না । যে দিন লক্ষ্মণের শক্তিশেল খেলা হয়, সেদিন ভারি বিপদ ঘটে । নিতাই ভেরেণ্ডার ডাল-রূপ শেলের আঘাতে মূর্চ্ছিত । সে মূর্চ্ছা খেলার মূর্চ্ছা নয়, ভাবের মূর্চ্ছা, যথার্থই মূর্চ্ছা । নিতাইর মূর্চ্ছা দর্শনে, কি করতে হবে বালকেরা তা ভুলে গেল। ক্রমে বালকদের ছুটাছুটিতে কথা জানাজানি হল।
প্রবীণ ব্যক্তিরা আসলেন । নিতাইর মা বাপ পাগলের মতো ক্রীড়াস্থানে উপস্থিত হলেন, কতশত চেষ্টা করা গেল, কত ঔষধ প্রয়োগ করা হল , নিতাইয়ের মূর্চ্ছা আর ভাঙ্গেনা । ঘোর কান্নাকাটি পড়ে গেল । কোন এক ব্যক্তি তখন একটি শিশুকে ডেকে এনে অভয় দিয়ে পূৰ্ব্বাপর কথা জিজ্ঞাসা করলেন। সে বালক বলতে লাগল । বলতে বলতে নিতাইর শিক্ষা তার স্মরণ হল, সে আনন্দে বলে উঠল, এখনই নিতাইকে জীয়াব । তখন সেই শিশু হনুমান হয়ে গন্ধমাদন আনতে চলল। খেলার গন্ধমাদন আনা হল, তখন অন্য এক শিশু (পূৰ্ব্ব শিক্ষানুসারে ) বৈদ্যরূপ ধারণ করে ঔষধ এনে নিত্যানন্দের নাসারন্ধ্রে ধরল । আর বহু চেষ্টায় যে মূর্চ্ছা ভাঙ্গেনি , সামান্য খেলায় নিতাইয়ের সেই মূর্চ্ছা ভেঙ্গে গেল ।
নিত্যানন্দ গ্রামের নয়নস্বরূপ। গ্রামবাসীরা তাঁকে না দেখলে চতুর্দিক শূন্য দেখত । পিতামাতার কথা আর কি বলব ?
‘’তিলমাত্র নিত্যানন্দ না দেখিলে মাতা ।
যুগপ্রায় হেন বাসে ততোধিক পিতা ॥
তিলমাত্র নিত্যানন্দ পুত্রেরে ছাড়িয়া ।
কোথাও হাড়াই ওঝা না যায় চলিয়া ।।
কিবা কৃষিকার্য্যে কিবা যজমান ঘরে ।
কিবা ঘাটে কিবা বাটে যত কৰ্ম্ম করে ॥
পাছে যদি নিত্যানন্দচন্দ্র চলি যায়।
তিলার্দ্ধে শতেক বার উলটিয়া চায়।‘’ ( চৈতন্য ভাগবত )
কুবের বা নিত্যানন্দের খেলা যেমন অপরূপ, বিদ্যাশিক্ষাও তেমনই অদ্ভুত। এমন প্রতিভা কেউ কোনকালে দেখেনি , এরূপ প্রতিভা , এরূপ শক্তি মানুষের হতে পারে, লোকের জ্ঞান ছিল না। দর্শন মাত্রই সৰ্ব্বশাস্ত্র নিতাইর আয়ত্ত্ব হয়ে যেত । সুতরাং ভক্তি -রত্নাকর বলেন ,—
‘’অল্প দিবসেই কৈল বিদ্যা উপার্জন ।
ব্যাকরণ আদিশাস্ত্রে হইলা বিচক্ষণ ॥‘’
নিতাইর বয়স যেমন, তা থেকেও আরও বেশী বয়স্ক বলে তাঁকে বোধ হত। বার বৎসরের বালককে ষোলবছরের মত দেখাত । সেই বয়সেই নিতাইর বিবাহের কথা উঠল । অনেকেই নিজ নিজ কন্যা নিতাইকে অর্পণ করতে ইচ্ছা করলেন । নিতাইর মাতা পদ্মাবতী আনন্দে আটখানা হয়ে গেলেন ।
ভক্তি-রত্নাকরে লিখিত আছে ,-
‘’নিতাইর বয়স হইল দ্বাদশ বৎসর ।
ষোড়শ বর্ষের প্রায় দেখিতে সুন্দর ।।
বহুজনে জানাইয়া হাড়াই পণ্ডিত ।
পুত্রের বিবাহ দিতে হইল উৎকণ্ঠিত ।।
একচক্রাবাসী যত ব্ৰাহ্মণ সজ্জন ।
বিবাহ প্রসঙ্গে হর্ষ হৈল সৰ্ব্বজন।‘’
কিন্তু এই আনন্দ অচিরেই নিরানন্দে পরিণত হল। তখন ১৪১০ শকাব্দ । অগ্রহায়ণ মাসের শেষে একটা উদাসীন, অতি তেজস্কর আকৃতি, হাড়াই পণ্ডিতের গৃহে অতিথি হলেন । এই অতিথি একচক্রার সর্বস্বধন হরণ করে নিয়ে গেলেন। বিদায়কালে অতিথি হাড়াই পণ্ডিতের কাছে নিতাইকে ভিক্ষা চাইলেন। হাড়াই অম্লানবদনে অতিথিকে পুত্র দিলেন, অতিথি বিমুখ করলেন না । পুত্রকে ভিক্ষা? যে পুত্র আবার প্রাণ থেকেও প্রিয়তর, যে পুত্রকে তিলমাত্র চক্ষুর অন্তরাল করা যায় না, তাঁকে পিতা হয়ে বিলিয়ে দিলেন, এ ধারণা বর্তমান কালের লোকেদের না হতে পারে, কিন্তু হাড়াই প্রাণাধিক পুত্রকে যথার্থই বিলালেন। তিনি এ ধৰ্ম্মশঙ্কটে যেন বিপথগামী না হন, এইজন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেন ।
‘’ধৰ্ম্মসঙ্কটে কৃষ্ণ রক্ষা কর মোরে।‘’ ( ভক্তি রত্নাকর ) পদ্মাবতীকে একথা বলা হল। যেমন পতি, তেমনই পত্নী । তিনি বললেন,-
‘’তোমার যে কথা প্ৰভু সেই কথা মোর।‘’
এরূপ পিতামাতা না হলে নিতাইর মত পুত্র জন্মায় না । পিতামাতার হৃদয়পিণ্ড ছিন্ন -বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আর কত সইবেন। যে মুহূর্তে নিতাই ঘরের বাহির হলেন, পদ্মাবতী ও হাড়াই সেই মুহূর্তেই যেখানে ছিলেন, সেখানেই মূর্চ্ছিত হলেন। যথা ভক্তিরত্নাকরে,-
‘’নিত্যানন্দ লইয়া ন্যাসী চলিলা তুরিতে।
মূর্চ্ছিত হইয়া হাড়াই পড়িলা ভূমিতে ॥
প্রাণহীন প্রায় ভূমে পড়ে পদ্মাবতী ।
হৈল যে দোঁহার দশা কহি কি শকতি ॥
কি নারী পুরুষ যত এ একচক্রায় ।
একথা শ্রবণমাত্র হৈল মৃতপ্রায় ॥"
ক্রমশঃ…
🌹নিতাই গৌরাঙ্গ বল, জনম যাইবে ভাল, কলিযুগে আর গতি নাই।
যেদিল এ শব্দজ্ঞান, করতার গুণগান, এ বিদ্যা শিখনা কেনভাই।।
🌹চৌরাশিলক্ষ যোনি, কতনা ভ্রমিলে তুমি,
ক্রিমি কীট নানা দেহধরি।
অনেক সুকৃতি ফলে, ভারতে জনম নিলে,
নরদেহ অঙ্গীকার করি।।
🌹শত সন্ধি জরজর, পেয়ে এই কলেবর,
এতগর্ব করিছ কিআশে।
ত্র য়াত্মিকাব্যাধিযত, বেড়িয়া আছয়ে কত, কিজানি কখন কেবা নাশে।।
🌹 যেদেহ আপন জ্ঞানে, যত্নকর রাত্রি দিনে,
বসন ভূষণ কতবেশে।
পরমাত্মা ভগবান, যবে হবে অন্তর্ধান,
ভস্ম বিটক্রিমি অবশেষে।।
🌹পায়েধরি ছাড় ভ্রম, কিছু নাহি পরিশ্রম,
হরি হরি বল অবিরাম।
কহলক্ষ কথা আন, তাহে না আলি সজ্ঞান,
কি ভার কিবোঝা কৃষ্ণনাম।।
🌹কর জোড়ি ভিক্ষাচাই, হরি হরি বলো ভাই,
সুখে তোর যাবে পরিনাম।
না লাগিবে টাকা কড়ি, না ছাড়িবে ঘরবাড়ি, মুখে মাত্র বল হরিনাম।।
❤️🌼জয়নিতাই 🙏 জয়গৌর 🌼❤️❤️🌼জয়নিতাই 🙏 জয়গৌর 🌼❤️



No comments:
Post a Comment