💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐

🌷🦚শ্রীগোপাষ্টমী🦚🌷

💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐

বিশেষপোষ্ট

শ্রীশ্রীগুরুগৌরাঙ্গজয়তঃ

সকলসাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌরভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম। আজ বিশেষ শুভদা তিথি, শ্রীগোপাষ্টমী ও গোষ্ঠাষ্টমী । সকলকে জানাই কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা। 

‘’নমো ব্রহ্মাণ্ড দেবায়, গো-ব্রাহ্মণ হিতায় চঃ ।

জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমঃ ।।

আকাশ পতিত-ত্বয়ং যথা গছতি সাগরং ।

সর্ব্বদেব নমস্কারং কেশব প্রতি গছতিং ।।‘’ 

কার্ত্তিক মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে শ্রীবলরাম ও পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৌগণ্ড(৫-১০) বয়স প্রাপ্ত হন । কৃষ্ণ নিজে গোচারণ করার জন্য বারবার নন্দ মহারাজের নিকট প্রার্থনা করছিলেন, কিন্তু মাতা যশোমতী এতে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করতেন । অবশেষে গোপাষ্টমীর দিনে নন্দমহারাজ, গ্রামবাসীদের ডেকে একটি উৎসব আয়োজন করেন । তখন একসাথে কৃষ্ণ-বলরামাদি গোপবালকদের শৃঙ্গ, বেত্র, বিষাণ, বাঁশী ও গো-বন্ধন রজ্জু প্রদান করেন ও পুরোহিতদের দ্বারা গাভীদের পূজা করেন । মাতা যশোদা কৃষ্ণের কপালে তিলক শোভিত করে দেন এবং কৃষ্ণকে গোষ্ঠে যেতে অনুমতি প্রদান করেন । এর আগে তাঁরা কেবল গো-বৎস চরাতেন, এই দিনে ভক্তগণ গো-পূজা করেন এবং গো-সেবা করেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এদিন গোপ সেজেছিলেন তাই এদিনকে বলা হয় গোপাষ্টমী আর গোষ্ঠে গিয়েছিলেন বলে বলা হয় গোষ্ঠাষ্টমী।

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে যে সকল ভক্তবৃন্দ সখা-ভেবে আরাধনা করেন তাঁদের কাছে গোপাষ্টমী, পৌগন্ড লীলা বা গোষ্ঠ লীলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ । একই দিনে অপর একটি লীলাও স্মরণ করা হয় । সেটি হলো - মেয়েদের গোষ্ঠে যেতে নেই । কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্র এদিন প্রথম গোষ্ঠে বেরিয়েছেন, তাই শ্রীমতি রাধারাণীও সুযোগ খুঁজছেন কিভাবে বের হওয়া যায় । গোপীকারা দেখলেন যে শ্রীমতি রাধারাণীকে দেখতে অনেকটা সুবলের মতো, তাই তাঁরা রাধারাণীকে সুবলের মতো ধুতি-পোশাক পরিয়ে এবং নিজেরাও গোপবালকদের মতো সজ্জিত হয়ে কৃষ্ণের সাথে মিলিত হলেন । এদিন শ্রীমতি রাধা ঠাকুরাণী ও অন্যান্য সখীরা তাদের শ্রীচরণ দর্শন দান করেন । পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে তাঁকে চিনতে পারেন নি । পরে চিনতে পেরে ভীষণ হ্লাদিত হন।

ভক্তদের উচিত এদিনে গাভীদের শিং গুলো হলুদ দিয়ে রং করা, কপালে সিঁদুরের ফোঁটা দেওয়া ও গায়ে - হাতের ছাপ দেওয়া । এদিন গাভীদের উত্তম ঘাস ও ফলমুল সেবন করিয়ে, তাঁদের পরিক্রমা এবং গোশালা মার্জন করা উচিত । শ্রীমদ্ভাগবত এর ১০/১৫/১ শ্লোকে- ‘’শ্রীল শুকদেব গোস্বামী বললেন,-  বৃন্দাবনে বসবাসকালে শ্রীবলরাম ও কৃষ্ণ যখন পৌগণ্ড বয়স ( ৬ থেকে ১০ বয়স ) প্রাপ্ত হলেন, তখন গোপগণ তাঁদের সখাদের সঙ্গে এভাবেই নিয়োজিত হয়ে বৃন্দাবনের ভূমিকে পাদপদ্ম চিহ্নের দ্বারা অতীব পবিত্র করে তুললেন ।‘’ পদ্মপুরাণে কার্ত্তিক-মাহাত্ম্যে বর্ণনা করা হয়েছে,-

‘’শুক্লাষ্টমী কার্ত্তিকে তু স্মৃতা গোপাষ্টমী বুধৈঃ।

তদ্দিনাদ্বাসুদেবোহভুদ্ গোপঃ পূ্র্বংতু বৎসপঃ ।।‘’

অর্থাৎ,- কার্ত্তিক মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিটিকে মহাজনেরা গোপাষ্টমী নামে জানেন । ঐদিন থেকে ভগবান বাসুদেব গোপরূপে কার্য শুরু করেছিলেন, যদিও ইতিপূর্বে তিনি গোবৎসদের প্রতিপালন করতেন । এই দিন শ্রীমতি রাধারাণীর চরণ দর্শন হয় । কেননা শ্রীদামের মতো গোপবেশে রাধারাণী কৃষ্ণকে গোচারণরত অবস্থায় দেখতে এসেছিলেন । ভগবানের শ্রীচরণে শরণাগতই প্রকৃত সুখ ।

রাধিকা - চরণরেণু,             ভূষণকরিয়াতনু,

অনায়াসেপাবেগিরিধারী।

রাধিকা - চরণাশ্রয়,            যেকরেসেমহাশয়,

তাঁ'রেমুঞিযাঁওবলিহারী।।

জয়জয় 'রাধা' নাম,           বৃন্দাবনযাঁরধাম,

কৃষ্ণসুখ - বিলাসেরনিধি।

হেনরাধা - গুণগান,           নাশুনিলমোরকান,

বঞ্চিতকরিলমোরেবিধি।।

তাঁ'রভক্ত - সঙ্গেসদা,        রসলীলাপ্রেমকথা,

যেকরেসেপায়ঘনশ্যাম।

ইহাতেবিমুখযেই,             তা'রকভুসিদ্ধিনাই,

নাহিযেনশুনিতা'রনাম।।

কৃষ্ণনাম - গানেভাই,         রাধিকা - চরণপাই,

রাধানাম - গানেকৃষ্ণচন্দ্র।

সংক্ষেপেকহিনুকথা,        ঘুচাওমনেরব্যথা,

দুঃখময়অন্যকথা - দ্বন্দ্ব।          ( নরোত্তমদাসঠাকুর )