🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

🌷🦜🍁শ্রীশ্রী গিরিরাজ গোবর্দ্ধন🍁🦜🌷

🌳🌴🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚🌴🌳

খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট 

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।‘’

সপ্তাহমেবাচ্যুত-হস্ত-পঙ্কজে ভৃঙ্গায়মানং ফলমূল-কন্দরৈঃ।

সংসেব্যমানং হরিমাত্মবৃন্দকৈ- র্গোবর্ধনাদ্রিং শিরসা নমামি।।

নমস্তে গিরিরাজায় শ্রীগোবর্দ্ধন নামিনে।

অশেষ ক্লেষ নাশায় পরমানন্দ দায়ীনে।।

পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছেন জীবের প্রকৃত বন্ধু বা সুহৃদ । আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোকুল বৃন্দাবনে লীলাবিলাস করেছেন । আজও ভগবানের সেই লীলাক্ষেত্র গুলি বর্ত্তমান রয়েছে । মথুরা জেলার শ্রীধাম বৃন্দাবনে তার পরম সাক্ষীরূপে বিরাজমান যমুনা নদী সহ লীলাস্থলী , আর সাক্ষাৎ ভগবানরূপী শ্রীগোবর্দ্ধন গিরি । কালের প্রভাবে এই স্থান গুলির নাম ও বৈচিত্র্য কিছুটা হ্রাস পেলেও এখনো বহু স্থান ভগবানের লীলার স্মৃতি বহন করে চলেছে । সমস্ত পর্বতের রাজা এই গোবর্দ্ধনকে বলা হয় গিরিরাজ । অভিন্ন ভগবৎ কলেবর গিরিরাজ সতত আনন্দ ও ভক্তিবর্দ্ধন করেন ।

রাধাভাবে ভাবিত গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু তাই কখনও গোবর্দ্ধনে পদস্পর্শ করেননি । তাঁর অনুগামী ষড় গোস্বামীরা সেই নিয়ম পালন করে গোবর্দ্ধন পরিক্রমা করতেন, কখনও গোবর্দ্ধন পর্বতের উপর বিচরণ করতেন না। শ্রীল সনাতন গোস্বামীপাদ বৃদ্ধাবস্থায়ও রোজ গোবর্দ্ধন পরিক্রমা করতেন । তাঁর কষ্ট দেখে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ সনাতন গোস্বামীকে তাঁর পদচিহ্নযুক্ত একটি শীলাখণ্ড দিয়ে সেটিকে পরিক্রমা করতে বলেন । বৃন্দাবনে শ্রীশ্রী রাধা- দামোদর মন্দিরে এখনও সেই শীলাখণ্ডটি রক্ষিত আছে।

গোবর্দ্ধন কথাটি গাভী- গোবৎসদের পালন পোষনের অর্থসূচক । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রিয়তমা রাধিকার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার জন্য গোলোক বৃন্দাবনে তাঁর হৃদয় থেকে গোবর্দ্ধনকে প্রকট করে যমুনার তীরে রাসস্থলীতে তাঁকে স্থাপন করেন । ক্ষণকালের মধ্যে গোবর্দ্ধন পর্বত উর্দ্ধে, নিম্নে, পার্শ্বে - সমস্তদিকে অপূর্ব শোভাসহ বিস্তার লাভ করেন । এই ভৌমলীলা প্রকাশের জন্য গোবর্দ্ধন হিমালয়ে দ্রোণাচলের পুত্ররূপে আবির্ভূত হন । গোবর্দ্ধনের জন্মকালে দেবতারা পুষ্পবর্ষণ করেন ।

একবার মহামুনি পুলস্ত্য তীর্থ করতে এসে দ্রোণাচলের আতিথ্য স্বীকার করলেন । শান্ত সৌম্য অপূর্ব সুন্দর গোবর্দ্ধনকে দেখে তিনি মুগ্ধ হন, এবং গোবর্দ্ধনকে সঙ্গে করে কাশীতে নিয়ে যেতে মনস্থ করে দ্রোনাচলের কাছে তাঁর মনোভাব ব্যক্ত করেন। দ্রোণাচল মনে মনে দুঃখিত হয়ে ইতস্ততঃ করছেন , এমন সময়ে গোবর্দ্ধন বললেন,- ‘’মুনিবর ! আপনি এত দূরে আমাকে কিভাবে বহন করে নিয়ে যাবেন ?” পুলস্ত্য বললেন,- ‘’তুমি আমার হস্তের উপর অবস্থান কর, আমি যোগবলে তোমাকে বহন করে নিয়ে যাব ।‘’

গোবর্ধন বললেন,- হে মুনিবর ! একটি শর্ত্তে আমি আপনার সাথে যেতে রাজি আছি । যাবার সময় পথের মাঝে আমাকে আর কোথাও নামাবেন না । যদি আমাকে মাটিতে নামান, তবে আমি সেই স্থানেই রয়ে যাব, আর স্থানত্যাগ করব না। মুনিও বললেন,- ঠিক আছে , প্রতিজ্ঞা করছি, পথিমধ্যে আমি তোমাকে কোথাও নামাব না । তখন গোবর্দ্ধন পিতা দ্রোণাচলকে নমস্কার করে মুনির সাথে যাত্রা শুরু করলেন । এইভাবে এক সময়ে তাঁরা ব্রজমণ্ডলে এসে উপস্থিত হলেন ।

ব্রজমণ্ডলের রূপ দেখে গোবর্দ্ধন চিন্তা করলেন,-  ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে অবতীর্ণ হবেন, গোপ-গোপী সখা সহ এখানে লীলা -বিলাস করবেন, অতএব আমি এই স্থান ছেড়ে অন্য কোথাও যাব না । এইরূপ চিন্তা করে গোবর্দ্ধন এত ভারী হতে লাগলেন যে মুনি পরিশ্রান্ত হয়ে তাঁকে নামাতে বাধ্য হলেন । মুনি শৌচাদি স্নান করে এসে পুনরায় গোবর্দ্ধনকে তুলতে গেলে গোবর্দ্ধন তাঁকে প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিলেন । মুনি তেজবলে অনেক চেষ্টা করেও গোবর্দ্ধনকে তিলমাত্র সরাতে না পেরে বললেন,- হে গোবর্দ্ধন ! তুমি ছলনা করে আমার মনের অভিলাষ পূর্ণ হতে দিলে না । আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি,- এখন থেকে তুমি প্রতিদিন সরিষা প্রমাণে ক্ষয় প্রাপ্ত হবে। এই বলে পুলস্ত্য মুনি কাশী চলে গেলেন ।

গিরিরাজ গোবর্দ্ধন প্রতিদিন একতিল করে ক্ষীণ হতে লাগলেন । দ্বাপরের প্রারম্ভে গোবর্দ্ধন কয়েক সহস্র যোজন বিস্তৃত ছিলেন । বর্তমানে দেখা যায় কোথাও অতি ক্ষীণরূপে তিনি অবস্থান করছেন। গোবর্দ্ধন পর্বতের সর্ব্বোচ্চ উচ্চতা এখন ৫৪ হাত । তবে যতদিন ভাগীরথী গঙ্গা ও গোবর্দ্ধন ভূতলে অবস্থান করবেন, ততদিন মায়াবদ্ধ জীব কলির প্রভাব হতে মুক্ত হয়ে ভগবদ্ভক্তি লাভের সুযোগ পাবে । গোবর্দ্ধনের উৎপত্তি তথা মহিমা শ্রবণ মাত্রই জীব-হৃদয়ে ভগবদ্ভক্তির সঞ্চার হয় । গোবর্দ্ধন পরিক্রমা করার ফলে ভগবত- ধাম ও কৃষ্ণপ্রেম প্রাপ্তি হয় ।

জয় শ্রীশ্রী গিরিরাজ গোবর্দ্ধন ।