💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐
🌷🍁যুক্ত বৈরাগ্য🍁🌷
💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐
খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।
স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।‘’
বৈরাগ্য কি আর কত প্রকার ? ভক্তি রাজ্যে বৈরাগ্যের আবশ্যকতা কি ?
বৈরাগ্য দুই প্রকার— ফল্গুবৈরাগ্য ও যুক্তবৈরগ্য
একদিন জিজ্ঞাসিলেন গোসাঞি সনাতন ।
“যুক্ত বৈরাগ্য’ কারে বলে প্রভু করুন বর্ণন ॥
মায়াবাদী বলে, ‘সব কাকবিষ্ঠাসম ।
বিষয় জানিলে ন্যাসী হয় সর্ব্বোত্তম’ ॥
বৈষ্ণবের কি কর্ত্তব্য জানিতে ইচ্ছা করি ।
কৃপা করি’ আজ্ঞা কর আজ্ঞা শিরে ধরি” ॥
প্রভু বলে, “বৈরাগ্য হয় দুই ত প্রকার ।
‘ফল্গু’-‘যুক্ত’ ভেদে আমি শিখাইনু বার বার ॥
ফল্গুবৈরাগ্য
কর্ম্মী জ্ঞানী যবে করে নির্ব্বেদ আশ্রয় ।
তার চিত্তে ফল্গুবৈরাগ্য পায় দুষ্টাশয় ॥
সংসারেতে তুচ্ছবুদ্ধি আসিয়া তখন ।
জড়-বিপরীত ধর্ম্মে করে প্রবর্ত্তন ॥
কৃষ্ণসেবা সাধুসেবা আত্মরসাস্বাদ ।
জড়-বিপরীত ধর্ম্মে পায় নিতান্ত অবসাদ ॥
ফল্গুবৈরাগীর মন সদা শুষ্ক রসহীন ।
নামরূপ গুণলীলা না হয় সমীচীন ॥
যুক্তবৈরাগ্য
যুক্তবৈরাগীর ভক্তি হয় ত’ সুলভ ।
কৃষ্ণভক্তি-পূত বিষয় তার ঘটে সব ॥
প্রকৃতির জড়ধর্ম্ম তার চিত্ত ছাড়ে অনায়াসে ।
চিৎ-আশ্রয়ে মজে শীঘ্র অপ্রাকৃত ভক্তিরসে ॥
ভক্তিযোগে শ্রীকৃষ্ণের প্রসন্নতা পায় ।
‘ন মে ভক্তঃ প্রণশ্যতি’, প্রতিজ্ঞা জানায় ॥
প্রসন্ন হইয়া কৃষ্ণ যারে কৃপা করে ।
সেই জন ধন্য এই সংসার-ভিতরে ॥
গোলোকের পরম ভাব তার চিত্তে স্ফুরে ।
গোকুলে গোলোক পায় মায়া পড়ে দূরে ॥
শুষ্কবৈরাগ্য অসম্ভব
ওরে ভাই শুষ্কবৈরাগ্য এবে দূর কর ।
যুক্তবৈরাগ্য আনি’ সদা হৃদয়েতে ধর ॥
বিষয় ছাড়িয়া ভাই কোথা যাবে বল ।
বনে যাবে, সেখানে বিষয়-জঞ্জাল ॥
পেট তোমার সঙ্গে যাবে, দেহের রক্ষণে ।
কত লেঠা হবে তাহা ভেবে দেখ মনে ॥
অকারণে জীবনের শীঘ্র হবে ক্ষয় ।
মরিলে কেমনে আর মায়া করবে জয় ॥
যদিও না মর তবু হইবে দুর্ব্বল ।
জ্ঞাননাশ হৈলে কোথা জ্ঞানের সম্বল ॥
সুতরাং যুক্তবৈরাগ্য কর্ত্তব্য
ঘরে বসি’ সদা কাল কৃষ্ণনাম লঞা ।
যথাযোগ্য-বিষয় ভুঞ্জ, অনাসক্ত হঞা ॥
'যথাযোগ্য' এই শব্দ দুটীর মর্ম্মার্থ বুঝে লহ ।
কপটার্থ লঞা যেন দেহারামী না হ ॥
শুদ্ধভক্তির অনুকূল কর অঙ্গীকার ।
শুদ্ধভক্তির প্রতিকূল কর অস্বীকার ॥
মর্ম্মার্থ ছাড়িয়া যেবা শব্দ অর্থ করে ।
রসের বশে দেহারামী কপট মার্গ ধরে ॥
ভাল খায়, ভাল পরে, করে বহু ধনার্জ্জন ।
যোষিৎসঙ্গে রত হঞা ফিরে রাত্রদিন ।
ভাল শয্যা অট্টালিকা খোঁজে অর্ব্বাচীন ॥
দেহযাত্রার উপযোগী নিতান্ত প্রয়োজন ।
বিষয় স্বীকার করি’ কর দেহের রক্ষণ ॥
সাত্ত্বিক সেবন কর আসব বর্জ্জন ।
সর্ব্বভূতে দয়া করি’ কর উচ্চ সঙ্কীর্ত্তন ॥
দেবসেবা ছল করি’ বিষয় নাহি কর ।
বিষয়েতে রাগ-দ্বেষ সদা পরিহর ॥
পরহিংসা কপটতা অন্য সনে বৈর ।
কভু নাহি কর ভাই যদি মোর বাক্য ধর ॥
নির্জ্জন সুদৃঢ় ভক্তি কর আলোচন ।
কৃষ্ণসেবার সম্বন্ধে দিন করহ যাপন ॥
মঠ মন্দির দালান বাড়ীর না কর প্রয়াস ।
অর্থ থাকে কর ভাই যেমন অভিলাষ ॥
অর্থ নাই তবে মাত্র সাত্ত্বিক সেবা কর ।
জল-তুলসী দিয়া গিরিধারীকে বক্ষে ধর ॥
ভাবেতে কাঁদিয়া বল, 'আমি ত’ তোমার ।
তব পাদপদ্ম চিত্তে রহুক আমার' ॥
বৈষ্ণবে আদর কর প্রসাদাদি দিয়া ।
অর্থ নাই দৈন্যবাক্যে তোষ মিনতি করিয়া ॥
পরিজন পরিকর কৃষ্ণদাস-দাসী ।
আত্মসম পালনে হইবে মিষ্টভাষী ॥
স্মরণ-কীর্ত্তন-সেবা সর্ব্বভূতে দয়া ।
এই ত’ করিবে যুক্ত বৈরাগী হইয়া ॥
কৃষ্ণ যদি নাহি দেয় পরিজন-পরিকর ।
অথবা দিয়া ত লয় সর্ব্ব সুখের আকর ॥
শোক-মোহ ছাড় ভাই নাম কর নিরন্তর” ।
জগাই বলে,- “এভাব গৌরের সনে মোর কোঁদল বিস্তর” ॥
( শ্রীশ্রীপ্রেমবিবর্ত্ত — শ্রীল জগদানন্দ পণ্ডিত )
বৈরাগ্যকে সাধন অঙ্গ বলা যায়। অপর পক্ষে বৈরাগ্য দ্বারা চিত্ত কঠিন হয়, এরূপ সাধন হেয় বলেই অনাদৃত। কিন্তু এতে যেন কেউ এমন না মনে করেন যে বৈষ্ণবের জন্য বিষয়ভোগই বিহিত হয়েছে। বৈষ্ণবের পক্ষে বিষয়-ভোগে রত থাকা একান্ত বিরুদ্ধ। যাঁর চিত্ত বিষয়াসক্ত, তিনি ভগবৎ বিমুখ।
বিষয়াবিষ্টচিত্তস্য কৃষ্ণাবেশঃ সুদূরতঃ।
বারুণীদিগগতং বস্তু ব্ৰজেন্নৈন্দ্রীং কিমাপ্নুয়াৎ ॥
অর্থাৎ বিষয়াবিষ্ট চিত্তে শ্রীকৃষ্ণের আবেশ অসম্ভব । যে বস্তু পশ্চিমদিকে আছে, পূর্ব্বদিকে খুঁজিলে তাহা পাওয়া যায় কি ? ধ্যান ভিন্ন আবেশ হয়না, বিষয়ের ধ্যানে বিষয়ের আবেশ হয় , কৃষ্ণাবেশ হয়না । কিন্তু যাঁরা বিষয়ের মধ্যে বাস করেও বিষয়ে নির্লিপ্ত, তাঁদের চিত্ত ভগবৎ চিন্তায় নিরত, তাঁদের পক্ষে বিষয়ও অবিষয় । কেননা তাঁরা বিষয়ে থেকেও বিষয়ের ধ্যান করেননা । কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ ভজনে যাঁর একবার রুচি জন্মেছে তাঁর কি আর বিষয়ে রুচি থাকতে পারে ?
পূজ্যপাদ শ্ৰীরূপ গোস্বামী লিখেছেন,-
রুচিমদ্বহতস্তত্র জনস্য ভজনে হরেঃ ।
বিষয়েষু গরিষ্ঠোহপি রাগঃ প্ৰায়ো বিলীয়তে ॥
অর্থাৎ শ্ৰীকৃষ্ণ-ভজনে যাঁর রুচি জন্মেছে, বিষয়ে তাঁর গরিষ্ঠ রাগ থাকলেও ভজন-প্রভাবে তা তিরোহিত হয়ে যায়। সুতরাং স্বভাবতই বৈরাগ্যের উদয় হয় । শ্ৰীমদ্ভাগবত বলেন,-
বাসুদেবে ভগবতি ভক্তিযোগঃ প্ৰযোজিতঃ ।
জনয়ত্যাশু বৈরাগ্যং জ্ঞানঞ্চ যদহৈতুকম ।।
শ্ৰীমন্মহাপ্ৰভু শ্ৰীমদ রঘুনাথ দাস গোস্বামি মহোদয়কে লক্ষ্য করে এ বিষয়ে প্ৰথম যে উপদেশ দিয়েছিলেন , সেইটি আমাদের স্মরণ রাখা কৰ্ত্তব্য । সেই উপদেশ এই যে,-
‘’স্থির হয়ে ঘরে যাও, না হও বাতুল।
ক্ৰমে ক্ৰমে পায় লোক ভবসিন্ধু কুল।।
মৰ্কট বৈরাগ্য না কর লোক দেখাইয়া ।
যথাযোগ্য বিষয় ভুঞ্জ অনাসক্ত হৈয়া ॥
অন্তরে নিষ্ঠা কর, বাহ্যে লোক ব্যবহার।
অচিরাতে কৃষ্ণ- তোমার করিবেন উদ্ধার ॥
বৃন্দাবন দেখি যবে আসি নীলাচলে।
তবে তুমি আম পাশ আসিও কোন ছলে ৷।
সে ছলে সেকালে কৃষ্ণ স্ফুরাবে তোমারে ।
কৃষ্ণ কৃপা যারে, তারে কে রাখিতে পারে ৷।
এত কহি মহাপ্ৰভু তাঁরে বিদায় দিল ।
ঘরে আসি তিঁহ প্রভুর শিক্ষা আচরিল ।৷"
এই উপদেশের সার গ্ৰহণ করেই যেন শ্ৰীপাদ শ্ৰীরূপ গোস্বামী লিখেছেন,-
অনাসক্তস্য বিষয়ান যথাৰ্হমুপযুঞ্জতঃ।
নিৰ্ব্বন্ধঃ কৃষ্ণসম্বন্ধে যুক্তং বৈরাগ্যমুচ্যতে।।
অর্থাৎ অনাসক্ত হয়ে যাঁরা বিহিত বিষয়ভোগ করেন, সেই রকম ব্যক্তিদের শ্ৰীকৃষ্ণ সম্বন্ধীয় আগ্রহই যুক্তবৈরাগ্য নামে অভিহিত। আর এক প্রকারও বৈরাগ্য আছে, যা ফল্গু বৈরাগ্য নামে অভিহিত। শ্ৰীকৃষ্ণের প্রসাদ, প্রসাদী মালা, চরণামৃত প্রভৃতিও কোন কোন মুমুক্ষু ব্যক্তি প্ৰাকৃত পদার্থ মনে করে পরিত্যাগ করেন; একেই ফল্গু বৈরাগ্য বলে । এই ফল্গু বৈরাগ্য দুই প্রকার ।
এক প্রকার বৈরাগ্য, ভগবৎ প্রসাদাদির প্রার্থনা না করা । আর এক প্রকার, — প্ৰাপ্ত প্ৰসাদ আদির উপেক্ষা করা । এই দ্বিতীয় প্রকারটি সেবা -অপরাধের মধ্যে গণ্য । ভগবানের সেবায় যাঁদের চিত্ত উন্মুখ হয়, তাঁদের হৃদয়ে যম নিয়ম প্ৰভৃতি স্বতঃই উপস্থিত হয়ে থাকে। শ্ৰীপাদ ভক্তি- রসামৃত- সিন্ধুকার লিখেছেন,-
কৃষ্ণোন্মুখং স্বয়ং যান্তি যমঃ শৌচাদয়স্তথা ।
ইত্যেষাঞ্চ ন যুক্তা স্যাদ্ ভক্ত্যাঙ্গান্তর পাতিত ৷।
অর্থাৎ শ্ৰীকৃষ্ণভজনাধীন ব্যক্তিদের যম নিয়মাদি স্বয়ং প্ৰবৰ্ত্তিত হয়, তার জন্য তাঁদেরকে স্বতন্ত্র সাধনা করতে হয় না । এই জন্য এই সকল ভক্তির অঙ্গ বলে পরিকীৰ্ত্তিত নয় যাঁরা হরিসেবা অভিকামী, অন্তঃশুদ্ধি, বহিঃশুদ্ধি, তপস্যাশক্তি প্ৰভৃতি তাঁদের অনিমন্ত্রিত সহচর। ভক্তির কোন এক মুখ্যাঙ্গই অনুষ্ঠিত হোক, অথবা অনেক অঙ্গই অনুষ্ঠিত হোক, নিষ্ঠাপূর্বক আচরিত হলেই তা সিদ্ধি প্ৰদান করে ।
অর্থাৎ-
এক অঙ্গ সাধে কিম্বা সাধে বহু অঙ্গ ।
নিষ্ঠা হৈলে বহে সদা প্ৰেমে তরঙ্গ ৷
No comments:
Post a Comment