Sunday, November 1, 2020

 

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

🌷🍁শ্রীশ্রী শিক্ষাষ্টকম🍁🌷

🦚💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🦚

খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট 

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

- ভৃত্যায় -পুত্রায় - কলত্রায় তে নমঃ।।‘’


🌷মঙ্গলাচরণম্🌷

জয় জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ  
জয় অদ্বৈতচন্দ্র জয় গৌর ভক্ত-বৃন্দ॥

বর্ণসমুজ্জ্বল গৌর-বর দেহং   বিলসতি নিরবধি ভাব বিদেহম্। 
ত্রিভুবন পাবন কৃপয়া লেশং   তং প্রণমামি শ্রীশচীতনয়ম্ ৷।

গদগদ অন্তর ভাব বিকারং    দুর্জ্জন তর্জ্জন নাদ বিশালং। 
ভব-ভয়- ভঞ্জন কারণ করণং    তং প্রণমামি শ্রীশচীতনয়ম্  

অরুণাম্বর-ধর চারু কপোলং   ইন্দু-বিনিন্দিত নখচয় রুচিরং
জল্পিত নিজগুণ নাম বিনোদং   তং প্রণমামি শ্রীশচীতনয়ম্ ।।

বিগলিত নয়ন কমল-জলধারং   ভূষণ নব রস ভাব বিকারম  
গতি অতি মন্থর নৃত্য-বিলাসং   তং প্রণমামি শ্রীশচীতনয়ম্  

চঞ্চল চারু চরণ গতি রুচিরং    মঞ্জির-রঞ্জিত -পাদযুগ- মধুরম  
চন্দ্র বিনিন্দিত শীতল বদনং   তং প্রণমামি শ্রীশচীতনয়ম্

ধৃত কটি ডোর কমণ্ডলু দণ্ডং,   দিব্য কলেবর মুণ্ডিত মুণ্ডম
দুর্জ্জন কল্মষ খণ্ডন দণ্ডং,    তং প্রণমামি শ্রীশচীতনয়ম্  

ভূষণ ভূরজ অলকা বলিতং,   কম্পিত বিম্বাধর- বর রুচিরম। 
মলয়জ বিরচিত উজ্জল তিলকং,   তং প্রণমামি শ্রীশচীতনয়ম্  

নিন্দিত অরুণ কমলদল নয়নং,   আজানুলম্বিত শ্রীভুজ যুগলম। 
কলেবর কৈশোর নৰ্ত্তক বেশং,    তং প্রণমামি শ্রীশচীতনয়ম্  

নবগৌর বরং নবপুষ্পশরং,    নবভাবধরং নবেল্লাস্যপরম্। 
নবহাস্য করং, নব হেমবরং,     প্রণমামি শচীসুত গৌরবরম্  

নবপ্ৰেমযুতং নবনীত শুচং,    নববেশকৃতং নব প্রেমরসম্। 
নবধাবিলাসং সদা প্রেমময়ং,    প্রণমামি শচীসুত গৌরবরম্  

হরিভক্তিপরং হরিনাম ধরং   করজপ্যকরং হরিনাম পরম্। 
নয়নে সততং প্রেম সংবিশতং,    প্ৰণমামি শচীসুত গৌরবরং  

নিজ ভক্তিকরং প্রিয়চারুতরং,    নট নৰ্ত্তন নাগরী রাজকুলম্  
কুলকামিনী মানসোল্লাস্য করং,    প্রণমামি শচীসুত গৌরবরম্  

করতাল বলং নীলকণ্ঠ করং,    মৃদঙ্গ রবার সুবীণা মধুরম্। 
নিজভক্তি গুণাবৃত নাট্ট করং,    প্রণমামি শচীসুত গৌরবরম্  

যুগধৰ্ম্মযুতং পুনঃ নন্দ সুতং,    ধরণী সুচিত্ৰং ভব ভাবোচিতম্  
তনুধ্যান চিত্ৰং নিজবাসযুতং,    প্রণমামি শচীসুত গৌরবরম্  

অরুণনয়নং চরণ বসনং,    বদনে স্থলিতং স্বনাম মধুরম্। 
কুরুতে সুরসং জগতো জীবনং,    প্রণমামি শচীসুত গৌরবরম্  

ইতি মঙ্গলাচরণম

আনন্দ লীলা- রস- বিগ্রহায় হেমাভ দিব্যচ্ছবি সুন্দরায়  
তস্মৈ মহাপ্রেম- রসপ্রদায় চৈতন্যচন্দ্রায় নমোনমস্তে  

কলি পাবনাবতার শ্ৰীমন্মহাপ্রভূ, কলিকলুষ মলিন চিত্ত মানবগণের শ্রদ্ধাকর্ষণ মানসে সন্ন্যাসাশ্রম গ্রহণ পূৰ্ব্বক, কলিযুগোচিত সহজ ‘’সাধ্য সাধন’’ পদ্ধতি শিক্ষা দিবার জন্য যখন শ্রীনীলাচল ধামে অবস্থান করিতেছিলেন, সেই সময় নাম-প্রবাহে চতুর্দ্দিক প্লাবিত হইয়াছিল তিনি শেষ সময়ে শ্রীল স্বরূপদামোদর শ্রীল রায় রামানন্দের সহিত শ্ৰীকৃষ্ণলীলা -রস আস্বাদনে বিভোর থাকিতেন অবশ্য এই আস্বাদনের মুখ্য কারণজীবশিক্ষা তিনজনে লীলাকথা- প্রসঙ্গে এমন ভাবেই প্ৰমত্ত হইতেন যে, সমস্ত রাত্রিই অতিবাহিত হইত, নিদ্রার কথা তিনজনেই ভুলিয়া যাইতেন নাম-প্রসঙ্গ যখনই উঠিত তখনই তিনজনে বিহ্বল হইয়া নাম তরঙ্গে একেবারে ডুবিয়া যাইতেন।

এক এক সময় এমন হইত যে, ব্রজলাল-প্রেমরস আস্বাদন করিতে করিতে তিনজনেই বিশেষতঃ স্বয়ং প্রভু আমার একেবারেই বাহ্য জ্ঞান শূন্য হইতেন একদিন এইভাবে শ্লোকাস্বাদন করিতে করিতে শ্রীমদ্ভাগবদোক্ত একটি শ্লোক প্রভুর শ্ৰীমুখে প্রকাশ পাইল তিনি স্বরূপ দামোদর এবং রামরায়কে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন,-

‘’কৃষ্ণবৰ্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্র পার্ষদম্  
যজ্ঞৈঃ সঙ্কীৰ্ত্তন প্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ

শ্লোকটি আবৃত্তি করিয়া আর বিশেষ কিছু না বলিয়া হাসিতে হাসিতে বলিলেন,-
‘’
হর্ষে প্রভু কহে শুন, স্বরূপ রামরায়  
নাম সঙ্কীৰ্ত্তন কলৌ পরম উপায় ।। 
সঙ্কীৰ্ত্তনযজ্ঞে কলৌ কৃষ্ণ আরাধন  
সেইত সুমেধা পায় কৃষ্ণের চরণ  
নাম সঙ্কীৰ্ত্তনে হয় সৰ্ব্বানর্থ নাশ  
সৰ্ব্ব-শুভোদয় কৃষ্ণে পরম উল্লাস  
সংকীৰ্ত্তন হৈতে পাপ সংসার নাশন  
চিত্তশুদ্ধি সৰ্ব্বভক্তি সাধন উদ্গম ৷। 

কৃষ্ণ প্রেমোদগম প্রেমামৃত আস্বাদন  
কৃষ্ণ প্রাপ্তি সেবামৃত সমুদ্রে মজ্জন ‘’     (শ্ৰী চরিতামৃত অন্ত্যলীল। ২০শ পঃ

এই কথা বলিয়া একে একে ‘’চেতদর্পণ মার্জনং" ইত্যাদি আটটি শ্লোক পাঠ করিলেন। এই শ্লোক আটটিই আমাদিগের আলোচ্যভক্তের কণ্ঠহার ‘’শ্ৰীশ্রীশিক্ষাষ্টকম ‘’! প্রভূর মুখোদ্গীর্ণ এই শ্লোকাষ্টক বৈষ্ণবের হৃদয়ের ধন;  নিত্য আস্বাদনীয় পরমাদৃত উজ্জ্বলতম রত্নাষ্টক  

 

এই আটটি রত্নের প্রথমটি শ্ৰীশ্ৰীকৃষ্ণ নামসঙ্কীর্ত্তনের শক্তি দ্যুতি প্রকাশক নাম সঙ্কীর্ত্তনের মহান শক্তি, নামকীৰ্ত্তন পরায়ণ বৈষ্ণবগণ নিত্য প্রত্যক্ষ করিতেছেন। বহির্মুখ জনগণও যে কিছু কিছু অনুভব না করেন তাহা নহে তবে যাঁহাদের চিত্ত জড়চিন্তায় একান্ত মলিন, ভুল ক্রমেও যাঁহারা নাম কীৰ্ত্তন করেন না বা শ্রবণবিবরে স্থানদান করেন না, তাঁহাদের কথা স্বতন্ত্র মহারাজ পরীক্ষিত ভগবৎ নাম সম্বন্ধে বলিয়াছেন,-
‘’
নিবৃত্ত তর্সৈর -উপগিয় -মানাদ্ ভবৌষধাচ- ছোত্র মনো- ’ভিরামাৎ  
উত্তমশ্লোক -গুণানুবাদাৎ পুমান্ বিরজ্যেত বিনা -পশুঘ্নাৎ ।৷’’  
অর্থাৎ,- ‘’নিবৃত্ত তর্ষমুক্ত পুরুষগণও যে উত্তমশ্লোক শ্রীহরির গুণগানে আনন্দ লাভ করেন, যে নাম শ্রবণ মনের অভিরাম এবং যাহা ভব ব্যাধির একমাত্র মহৌষধ , সেই সুধাময় হরিকথায় নিতান্ত পশু-প্রকৃতি আত্মঘাতী ব্যতিত আর কে বিরত থাকিতে পারে ?’’    (শ্ৰীমদ্ভাগবত ১০ম স্কন্ধ ১ম )
 
পূৰ্ব্বেই আভাস দেওয়া হইয়াছে যে, শ্ৰীকৃষ্ণ নাম সঙ্গীৰ্ত্তন শক্তির প্রত্যক্ষ প্রমাণ সুধী বৈষ্ণবগণ শাস্ত্রবাক্য, তদ্ভিন্ন অন্য প্রমাণ দিবার ক্ষমতা আমাদের নাই । তবে  এইটুকু বলা যায় যে, এই সকল শাস্ত্র-বাক্যে প্রত্যক্ষ প্রমাণ দর্শনেও যাঁহাদের বিশ্বাস না হয় তাঁহারা নিৰ্জ্জনে বসিয়া অন্যের অলক্ষিত ভাবে প্রত্যহ কিছুক্ষণের জন্য কয়েকদিন এই সুধাময় নাম গ্রহণ করিয়া দেখুন । উচ্চৈঃস্বরে বলিতে সঙ্কোচ বা ভয় হইলে মনে মনে জপ করিয়া দেখুন, তাহা হইলেই বুঝিতে পারিবেন নামের শক্তি আছে কি না ? নাম গ্রহণ করিতে করিতে নিশ্চয়ই সৰ্ব্ব অনর্থকারী অশ্রদ্ধা দূর হইবে । কারণ শাস্ত্রে দেখা যায়,-
‘’
মধুর মধুর-মেতন্মঙ্গলং মঙ্গলানাং 
সকল নিগমবল্লী সৎফলং চিৎস্বরূপম্  
সকুদপি পরিগীতং শ্রদ্ধয়া হেলয়া বা 
ভৃগুবর নরমাত্রং তারয়েৎ কৃষ্ণনাম ।।‘’

জীবের যাহা প্রয়োজন, যাহা লাভ করিবার জন্য জীব সর্বদা লালায়িত, যে অমূল্য নিধি পাইলে আর কিছু পাইবার আকাঙ্খা থাকে না বা পাইতে বাকি থাকে না, সে সমস্তই একমাত্র নামাশ্রয়ে লাভ করা যায়। ইহার ভুরি ভূরি দৃষ্টান্ত শাস্ত্রে পাওয়া যায়। উদ্ধৃত করিয়া গ্রন্থের কলেবর বৃদ্ধি করিবার প্রয়োজন নাই এক্ষণে নাম গ্রহণ করিয়া চিত্ত কিরূপভাবে শুদ্ধ হইয়া ভগবদ্মুখী হয়, নাম গ্রহণ করিয়া কিভাবে প্রেমময় শ্রীভগবানকে লাভ করা যায় তাহাই আমাদের আলোচ্য নামের কত শক্তি তাহা বুঝাইবার জন্যই শ্ৰীগৌরচন্দ্রের শ্ৰীমুখ হইতে জীবের পরম কল্যাণকর শিক্ষাষ্টকের প্রকাশ, প্রথমেই নামের শক্তি প্রকাশ করিয়া বলিতেছেন,-

‘’
চেতোদর্পণ- মার্জনং ভবমহাদাবাগ্নি -নিৰ্ব্বাপণং 
শ্ৰেয়ঃ- কৈরব- চন্দ্রিক- বিতরণং বিদ্যাবধু -জীবনম্। 
আনন্দাম্বুধি- বৰ্দ্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনং 
সৰ্ব্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্ৰীকৃষ্ণ-সঙ্কীৰ্ত্তনম্। ॥১॥” 
অর্থাৎ,- (সৰ্ব্বমঙ্গল স্বরূপং) শ্রীকৃষ্ণ সঙ্কীৰ্ত্তনম্ (শ্রীকৃষ্ণ-নাম গুণলীলাদি কীৰ্ত্তনং) পরং বিজয়তে (সৰ্ব্বোৎকর্ষেণ বৰ্ত্ততে) [কথম্ভুতং শ্ৰীকৃষ্ণ সঙ্কীৰ্ত্তনং ?] চেতোদর্পণ মার্জ্জনং (অবিদ্যাদিমল দূষিত চিত্তদর্পণস্য মলাপকর্ষণং) ভব মহাদাবাগ্নি নিৰ্ব্বাপনং (ভব-সংসার দুঃখ এবং মহাদাবাগ্নি সুন্নির্ব্বাণ করণং) শ্রেয়ঃ কৈরব-চন্দ্রিকা বিতরণং (শ্রেয়ঃ শ্ৰীকৃষ্ণ সেবানুরাগ এব কৈরবং কুমুদং তৎ- প্রকাশয়তি যা চন্দ্রিকা কৌমুদী তাং বিস্তারয় তীতি) আনন্দাম্বুধি বৰ্দ্ধনং হ্লাদিনী সারবৃত্তি বর্দ্ধনং) প্রতিপদং (পদে পদে, শ্রীকৃষ্ণেতিনাম্ন প্রত্যক্ষরাত্মকং পদমিতি বা) পূর্ণামৃতাস্বাদনং (নিত্য নিৰ্ম্মল প্রেমামৃতাস্বাদন কারণং [তথা] সর্ব্বত্ম-স্বপনং জড়াজড়াত্ম জড়ং মন আদি ইন্দ্রিয়বর্গং অজড়ং আত্মাতয়োঃতৃপ্তিজনক শীলং) ॥১ 

শ্ৰীকৃষ্ণনাম সঙ্গীৰ্ত্তন ফলে চিত্তদর্পণ মার্জ্জিত হয় মানবের চিত্তরূপ দৰ্পণ হয় অবিদ্যা -মল- লিপ্ত না হয় অপরা বিদ্যার বাহ্য চাক্চিক্য ময় সৌন্দর্য্য সাহচর্য্যে রঞ্জিত থাকে। এরূপ মলিন দর্পণে কোনরকমেই স্বরূপ উপলব্ধি হয় না। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণনাম সঙ্কীৰ্ত্তন দ্বারা চিত্তের যাবতীয় মালিন্যই দূর হইয়া যায়। 
ক্রমশঃ


No comments:

Post a Comment

💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 🌷বৈষ্ণবের ব্যাস পূজা🌷 💐🏵️💞🌺🌷🌺💞🏵️💐 শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ সকল সাধু, গুরু, বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দ...