শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর উপদেশ
“কলিযুগ-ধর্ম হয় নাম-সঙ্কীর্তন
চারিযুগে চারি ধর্ম-জীবের কারণ॥
চারিযুগে চারি ধর্ম-জীবের কারণ॥
অতএব কলিযুগে নামযজ্ঞ সার।
আর কোন ধর্ম কৈলে নাহি হয় পার॥
দিনরাত্রি নাম লয় খাইতে শুইতে।
তাঁহার মহিমা বেদে নাহি পারে দিতে॥
শুন, মিশ্র, কলিযুগে নাহি তপ-যজ্ঞ।
যেই জন ভজে কৃষ্ণ, তাঁ’র মহাভাগ্য II
অতএব গৃহে তুমি কৃষ্ণভজ গিয়া।
কুটিনাটি পরিহরি’ একান্ত হইয়া॥
সাধ্য-সাধন-তত্ত্ব যে-কিছু সকল।
হরিনাম-সংকীর্তনে মিলিবে সকল॥
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
এই শ্লোক নাম বলি’ লয় মহামন্ত্র।
ষোল নাম বত্রিশ-অক্ষর এই তন্ত্র॥
সাধিতে সাধিতে যবে প্রেমাঙ্কুর হবে।
সাধ্যসাধন-তত্ত্ব জানিবা সে তবে॥”
(চৈঃ ভাঃ আঃ ১৪ অধ্যায়)
হরিনাম বিনা জীবের গতি নাই
হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরণ্যথা॥
(বৃহন্নারদীয় পুরাণ)
কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার।
নাম হৈতে হয় সর্বজগৎ-নিস্তার॥
দার্ঢ্য লাগি ‘হরে র্নাম-উক্তি তিনবার।
জড় লোক বুঝাইতে পুনঃ ‘এব’-কার॥
‘কেবল’ শব্দে পুনরপি নিশ্চয়-করণ।
জ্ঞান-যোগ-তপ-কর্ম-আদি নিবারণ॥
অন্যথা যে মানে, তার নাহিক নিস্তার।
নাহি, নাহি, নাহি-তিন উক্ত ‘এব’-কার॥
(চৈঃ চঃ আ ১৭/২১-২৫)
এই মহামন্ত্র জপ্য ও কীর্তনীয়
আপনে সবারে প্রভু করে উপদেশে।
কৃষ্ণ-নাম মহা-মন্ত্র শুনহ হরিষে-॥
‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
প্রভু বলে, - “কহিলাম এই মহামন্ত্র।
ইহা জপ’ গিয়া সবে করিয়া নির্বন্ধ॥
ইহা হৈতে সর্ব-সিদ্ধি হইবে সবার।
সর্বক্ষণ বল’ ইথে বিধি নাহি আর॥
কি ভোজনে, কি শয়নে, কিবা জাগরণে।
অহর্নিশি চিন্ত কৃষ্ণ বলহ বদনে॥
দশ-পাঁচ মিলি’ নিজে দ্বারেতে বসিয়া।
কীর্তন করহ সবে হাতে তালি দিয়া॥
সন্ধ্যা হৈলে আপনার দ্বারে সবে মিলি’।
কীর্তন করেন সবে দিয়া করতালি॥
এই মত নগরে নগরে সংকীর্তন।
করাইতে লাগিলেন শচীর নন্দন॥
(চৈঃ ভাঃ ম ২৩)
সর্বদা শ্রীমুখে ‘হরে কৃষ্ণ হরে হরে’।
বলিতে আনন্দ-ধারা নিরবধি ঝরে॥
(চৈঃ ভাঃ আ ১/১৯৯)
কৃষ্ণনাম-মহামন্ত্রের এই ত’ স্বভাব।
যেই জপে, তার কৃষ্ণে উপজয়ে ভাব॥
(চৈঃ চঃ আ ৭/৮৩)
গৌর যে শিখাল নাম সেই নাম গাও।
অন্য সব নাম-মাহাত্ম্য সেই নামে পাও॥
No comments:
Post a Comment