Wednesday, December 4, 2019


নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদন্ডী স্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীল ভক্তিকমল মধুসূদন গোস্বামী মহারাজ
(আবির্ভাব)

দীর্ঘাং সৌম্যব্পূর্ণ অরুন  বহির্বাসস্ত্রীদন্ডান্বিতাঃ
দিব্যং শ্রীগুরু গৌর কীর্ত্তন রসানন্দেন মত্তং. সদা II
শ্রী গৌড়ীয় যতীন্দ্র ভক্তিকমলং     স্নিগ্দহং     সেবাবিগ্রহং I
বন্দে শ্রীমধুসূদনং গুরুবরং বেদান্ত বিদ্যাস্বধিম II

বিশ্বব্যাপী শ্রী ব্রহ্মমাধ্যব - গৌড়ীয়মঠ সমূহের প্রতিষ্ঠাতা   নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরমহংসকুল- চূড়ামণি পরিব্রাজকাচার্য্য - বর্য্য ত্রিদন্ডী স্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীগোস্বামী ঠাকুরের প্রিয়তম পার্ষদ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমিশনের প্রতিষ্ঠাতা নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদন্ডী স্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীল ভক্তিকমল মধুসূদন গোস্বামী মহারাজ ১৩০৮ বঙ্গাব্দের ৪ঠা পৌষ,১৯০১ খ্রী: ১৯ শে ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার শ্রীগৌরনবমী তিথিতে প্রাতঃ -১৫ মিঃ,পূর্ববঙ্গের  ফরিদপুর  জেলার অন্তর্গত বাজিতপুর গ্রামে ব্রাহ্মণকুলে আবির্ভূত হন I পিতৃদেব শ্রীযুক্ত পার্বতীনাথ সান্ন্যাল মাতৃদেবী ভক্তিমতি স্বর্ণময়ী দেবী I পিতা নবাবী আমলে বাদশা হইতে মজুমদার পদবী প্রাপ্ত হন I মহারাজ জন্মসূত্রে ঝগ্বেদীয় শ্রেষ্ঠ বারেন্দ্র শ্রেণীর ব্রাহ্মণ ছিলেন I ২২টি ব্রাহ্মণ পরিবার একত্রিত ভাবে বাজিতপুর গ্রামে বাস করিতেন I শ্রীল মহারাজের পিতৃ প্রদত্ত নাম ছিল শ্রীনৃপেন্দ্র সান্ন্যাল I তিনি বাল্যকাল হইতে খুব গম্ভীর প্রকৃতির,বিষয়ের প্রতি বৈরাগ্য,অকৃত্রিম ভগবদ্ভক্তি প্রভৃতি অসাধারণ গুণাবলী তাঁহার মধ্যে প্রকাশিত ছিল I তাঁহার কনক - কান্তি - উজ্জ্বল বর্ণ সৌম্য মূর্ত্তি সবার চিত্তকে আকর্ষণ করিত I বাল্যকালে স্থানীয় বাজিতপুর গ্রাম্য স্কুলে পড়াশুনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯২১ সালে অমৃত বাজার পত্রিকার সহ সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন I

শ্রীমন্মহাপ্রভুর প্রাচরিত ধৰ্ম,- ''জীবের একমাত্র সাধ্যবস্তু শ্রীকৃষ্ণপ্রেমে'' - যাহা অজ্ঞ - মায়ামূঢ় ব্যক্তিদের কপটতা জালে আবদ্ধ হইয়া কাম - কলুষিত আচরণে শিক্ষিত সমাজের নিকট নিন্দনীয় ও হাস্যপদ হইয়া উঠিয়াছিল I বৈষ্ণবধর্মের নাম শুনিলে সভ্য ব্যক্তিগণ নাসিকা কুঞ্জিত করিত I কারণ শুদ্ধবৈষ্ণব ধৰ্ম বোষ্টুম - বোষ্টুমীর ধর্মে পরিণত হইয়াছিল  I ঠিক সেই সময় ভগবানের ইচ্ছায় তাঁহার নিত্যসিদ্ধ পার্ষদ ওঁ  বিষ্ণুপাদ ১০৮ শ্রী - শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীগোস্বামী ঠাকুর কলিকাতায় বাগবাজারস্থিত শ্রী গৌড়ীয়মঠ প্রকাশ করত: সারা বিশ্বে তাঁহার নিজ - জনদের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমহাপ্রভুর বিমল প্রেমভক্তিধর্মের বাণী এবং তদ্পার্ষদবৃন্দ গোস্বামীগণের বিশুদ্ধ বৈষ্ণবধর্মের শ্রীকৃষ্ণভজন আদর্শ,শুদ্ধ বৈরাগ্য আচরণ,কঠোর ত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা বিপুল ভাবে প্রচারের আয়োজন করিয়াছিলেন  I ১৯২৫ খ্রী: অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক বিভাগে নিযুক্ত অবস্থায় একদিন কয়েকজন সমশীল ব্যক্তির সহিত কলিকাতায় বাগবাজার গৌড়ীয়মঠে প্রদর্শনী দর্শন করিবার জন্য উপস্তিত হন I শ্রীমঠের নাট্যমন্দির তথা 'শ্রবণ সদনে' নিত্য বৈকুণ্ঠপুরুষ শ্রীল প্রভুপাদের শ্রীমুখ বিগলিত হরিকথামৃত শ্রবনের ফলে নিত্য আরাধ্য গুরুদেবের পরিচয় পাইতে অসুবিধা হয় নাই I শ্রীলপ্রভুপাদের জ্যোতির্ময় দিব্যরূপ দর্শন ও তাঁহার অমৃতময়ী বাণী শ্রবনের প্রভাবে শ্রীযুক্ত নৃপেন্দ্র বাবুর (শ্রীল ভক্তিকমল মধুসূদন গোস্বামী মহারাজ) দিব্যভাবের প্রকাশ পাইল I শ্রীল প্রভুপাদের হরিকথামৃত খুবই আদরের সহিত পান করিলেন I ১৯২৯ সালে তিনি শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের শ্রীচরণ কমলে চিরদিনের মত আশ্রয় গ্রহণ করিলেন I শ্রীল প্রভুপাদ তাঁহার হরিদাস্য সূচক দিব্যনাম দিলেন 'শ্রীপাদ নরোত্তমানন্দ দাস ব্রহ্মচারী' I ব্রহ্মচারী জীর শ্রীহরি - গুরু - বৈষ্ণব সেবার ও বিশেষতঃ শ্রীহরিকথা শ্রবণ - কীর্ত্তনের সবিশেষ অনুরাগ দেখিয়া উনাকে ত্রিদন্ডী সন্ন্যাসীগণের সহিত ভারতের বিভিন্ন স্থানে শ্রীমন্মহাপ্রভুর শ্রীমুখনিঃসৃত শুদ্ধভক্তিসিদ্ধান্ত বাণী প্রচার রূপ সেবায় নিযুক্ত করেন  I ১৯৩২ সালে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদের হার্দিক ইচ্ছায় বস্বে শ্রীগৌড়ীয়মঠে অবস্থান করে ইংরাজী ভাষায় শাস্ত্র ব্যাখ্যা ও প্রচার কার্য্যাদি শুরু করেন I বস্বে শ্রীমঠে অবস্থানকালে শ্রীল প্রভুপাদ উনার জন্য শ্রী নরোত্তমানন্দ দাস ব্রহ্মচারী নাম সম্মিলিত সম্পূর্ণ দ্বাদশ - স্কন্দ শ্রীমদ্ভাগবত প্রেরণ করিয়া শ্রীভাগবত ধর্ম্ম প্রচারে নির্দেশ ও উদ্বুদ্ধ করেন I সেই সময় হইতে শ্রীমদ্ভাগবত কথা প্রচার উনার প্রধান সেবা হইয়াছিল I তাঁহার সুসিদ্ধান্ত পূর্ণ সারগর্ভ হরিকথা পরিবেশনের দক্ষতা সকল গুরুভ্রাতাদের চিত্ত আকৃষ্ট করিয়াছিল .ব্রহ্মচারী জীর বিভিন্ন স্থানে বহু বিদ্বনমন্ডলীর সভায় পাঠ - কীর্ত্তন - বক্ত্রতায়,মঠ- মন্দির প্রতিষ্টা ও নানাবিধ সেবাকার্য্যে পরম উৎসাহ,দক্ষতা ও প্রসন্ন চিত্তে সু সম্পাদন করিবার নিরলস প্রয়াসে সন্তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে শ্রীনবদ্বীপ ধাম প্রচারিনী সভার পক্ষ হইতে 'ভক্তি কমল' এই ভক্তি সূচক উপাধি ভূষণে ভূষিত করতঃ প্রচুর স্নেহাশীর্বাদ দান করেন I

 ১৯৫২ সালে বাং ১৩৫৮ সনে,জেষ্ট গুরুভ্রাতা শ্রীল ভক্তি রক্ষক শ্রীধরদেব গোস্বামী মহারাজের নিকট হইতে ত্রিদণ্ড সন্ন্যাস মন্ত্র গ্রহণ করিয়া তিনি  'ত্রিদন্ডী ভিক্ষু শ্রীমদ্ভক্তিকমল মধুসূদন গোস্বামী মহারাজ' দিব্য নামে সুপরিচিত হন. শ্রীল ভক্তি রক্ষক শ্রীধরদেব গোস্বামী মহারাজের মঠ হইতে প্রকাশিত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার তাৎপর্যা পূর্ণ অনুবাদ শ্রীল মহারাজের খুবই প্রিয় ছিল Iপরবর্ত্তী  কালে শ্রীল মহারাজ বর্ধমানের জমিদার পরিবারের প্রচেষ্টায় চাঁন্দাইপুরে মঠ করিবার সকল আয়োজন হওয়া সত্ত্বেও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে তথা হইতে সমস্ত ব্যবস্থাপনা লঙ্কর দীঘিতে স্থানান্তরিত করা হয়,তাহাও ব্যর্থ হইলে পরবর্তী কালে ''বর্ধমানের মিঠাপুকুর মোহল্লায় শ্রী মন্দির,নাট্য মন্দির,সেবকখণ্ড নির্মাণ করিয়া ১৯৬২ সালে শ্রী নৃসিংহ চাতুর্দ্দশী দিবসে শ্রী শ্রী গুরু - গৌরাঙ্গ - রাধাগোবিন্দ জীউ প্রতিষ্ঠিত করিয়া শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমঠ স্থাপিত হয় I

শ্রীভগবান তদ্ভক্তের জন্ম,কর্ম সবই অপ্রাকৃত অতিমর্ত্ত্য হয় I শ্রীল মহারাজের সম্বন্ধেও তাই ছিল I বস্তুতঃ ''মূঢ়রেবেদ্যং প্রণতাভিগমং'' অর্থাৎ মূঢ় গনের অজ্ঞাত হইলেও প্রণতজনের তাহা পরিজ্ঞাত I তাঁহার চরণাবিন্দে নিষ্কপটে শরণাগত স্নিগ্ধ ভক্তের নিকট তিনি আত্ম প্রকাশ করতঃ তাঁহার দুরধিগম্য লীলারহস্যে প্রবেশিকার প্রদান করেন I

ইহার রচিত গ্রন্থাবলী মধ্যে 'প্রবন্ধাবলী' 'যুক্তবৈরাগ্য' 'ভক্তিবিঘাতা' 'সাধুমার্গানুগমন ইত্যাদি গ্রন্থসমূহ ভক্তগণের নিকট বিশেষভাবে সমাদৃত প্রসিদ্ধ I

শ্রীল মহারাজ সর্বদা হরিভজন করিয়া সকলকে হরিভজনের উপদেশ দিয়া শেষ বয়সে সামান্য অসুস্থ লীলার অভিনয় করিয়া ১৯৯১ সালের  ২০শে জুলাই, গৌরদশমী তিথিতে অপরাহ্ন -৩৫ মিঃ,সমস্ত আশ্রিত ভক্তগণকে বিরহ সাগরে নিমজ্জিত করিয়া তাঁহার আরাধ্যদেবের শ্রীচরণ হৃদয়ে স্মরণ করিতে সাক্ষাৎ ব্রজধাম শ্রীমায়াপুরে শ্রীরাধাবনে শ্রীরাধাভাব - কান্তি সুবলিত শ্রীরাধামাধব মিলিত তনু শ্রীগৌরসুন্দরের সপার্ষদ মাধ্যাহ্নিক সংকীর্ত্তন লীলা বিহার স্থলে শ্রীরাধাগোবিন্দের নিত্য লীলার প্রবেশ করেন I


No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...