Sunday, December 22, 2019

শ্রীল দেবানন্দ পণ্ডিত
(তিরোভাব)
''পুরাণসকলের  অর্থবেত্তা  যিনি  শ্রীদেবানন্দ পণ্ডিত, তিনি পূর্ব্বে নন্দের সভাপণ্ডিত   ভাণ্ডরীমুনি   ছিলেন I''
''সার্ব্বভৌম পিতা বিশারদ মহেশ্বর I
তাঁহার জাঙযালে গেলা প্রভু বিশ্বম্ভর I I

সেইখানে দেবানন্দ পণ্ডিতের বাস I
পরম সুশান্ত বিপ্র মোক্ষ অভিলাষ I I''

''কুলিয়া গ্রামে কৈল দেবানন্দের প্রসাদ I''

''এই বিশারদের জাঙ্গাল---এইখানে I
দেখা হৈল দেবানন্দ পণ্ডিতের সনে I I

যেঁহ শ্রীবাসের স্থানে অপরাধ কৈলা I
প্রভু - বাক্যদণ্ডে তেঁহ দুঃখিত হইলা I I’’
                                                ---ভক্তিরত্নাকর ১২/২৯৭৬-৭৭

উপরিলিখিত শ্রীচৈতন্যভাগবত,শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত শ্রীভক্তিরত্নাকর গ্রন্থ সমূহের বর্ণনানুযায়ী জানা যায় ---শ্রীদেবানন্দ পণ্ডিতের বাসস্থান সার্ব্বভৌম ভট্টাচার্য্যের পিতা মহেশ্বর বিশারদের গৃহের নিকটবর্ত্তী কোনও স্থানে ছিল I তাঁহার টোলবাড়িটি কুলিয়া গ্রামে I তাহা স্পষ্টরূপে নির্দ্দেশিত হইয়াছে I

শ্রীদেবানন্দ পণ্ডিত জ্ঞানী,তপস্বী,আজন্ম উদাসীন এবং সাধারণ্যে মহাপণ্ডিতরূপে খ্যাত হইলেও ভগবৎ সেবোন্মুখতার অভাবহেতু ভাগবতের প্রকৃত অর্থ যে 'শুদ্ধাভক্তি', তাহা হৃদয়ঙ্গম করিতে সমর্থ হন নাই I তিনি মূমুক্ষু হইয়া তপস্যা,শুস্ক বৈরাগ্যের বহুমানন করিতেন, ভাগবত পাঠ করিয়াওভক্তি’ - ব্যাখ্যা করিতেন না I একদিন দেবানন্দ পণ্ডিতের ভাগবত পাঠকালে শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর পার্ষদ শ্রীল শ্রীবাস পণ্ডিত ভাগবত শ্রবণের জন্য তথায় আসিয়া বসিয়াছিলেন I তিনি ভাগবত শ্রবণ করিতে করিতে ভাবাবিষ্ট হইয়া ক্রন্দন করিতে থাকিলে দেবানন্দ পণ্ডিতের পাষণ্ড ছাত্রগণ তাঁহাকে সভা হইতে বহিষ্কৃত করিয়াছিলেন I ছাত্রগনের উক্ত গর্হিতকার্য্যে দেবানন্দ পণ্ডিত বাধা প্রদান না করায় তাঁহার বৈষ্ণব - অপরাধ হইয়াছিল I শ্রীমন্মহাপ্রভু তজ্জন্য তাঁহার প্রতি ক্রূদ্ধ হইয়া ছিলেন I

শ্রীবাস পণ্ডিতের চরণে দেবানন্দ পণ্ডিত অপরাধ করার বহু পরে মহাপ্রভু একদিন পথ দিয়া যাইবার সময় দেবানন্দ পণ্ডিতকে ভাগবত ব্যাখ্যা করিতে দেখিয়া ক্রোধাবেশে বৈষ্ণবে শ্রদ্ধাহীন  দেবানন্দকে তীব্র ভর্ৎসনা করিয়াছিলেন I বৈষ্ণবনিন্দার দ্বারা যে প্রকার ভগবৎকৃপা  হইতে বঞ্চিত হইতে দুর্গতিলাভ করিতে হয়, তদ্রুপ বৈষ্ণব মহিমা কীর্ত্তনের বৈষ্ণব সেবার দ্বারা ভগবৎকৃপা লাভের দুষ্কৃতী হইতে নিষ্কৃতি পাইবার সুযোগ উপস্থিত হয় I

''শুন দ্বিজ,বিষ করি যে মুখে ভক্ষণ I
সেই মুখে করি যবে অমৃত - গ্রহণ I I

বিষ হয় জীর্ণ,দেহ হয় ত’ অমর I
অমৃতপ্রভাবে, এবে শুন সে উত্তর I I''

বহু সৌভাগ্যক্রমে মহাপ্রভুর প্রিয় পার্ষদ শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিত  দেবানন্দ পণ্ডিতের গৃহে অবস্থান করিয়াছিলেন I দেবানন্দ পণ্ডিত বক্রেশ্বর পণ্ডিতের সর্ব্বতোভাবে সেবা বিধান করিয়া মহাপ্রভুর কৃপার ভাজন হইলেন I মহাপ্রভুর প্রতি দেবানন্দ পণ্ডিতের বিশ্বাস ছিল না I বক্রেশ্বর পণ্ডিতের নিকট মহাপ্রভুর মহিমা শ্রবণ করিয়া তাঁহার চিত্তের পরিবর্ত্তন ঘটে I বক্রেশ্বর পণ্ডিতের সঙ্গপ্রভাবে তিনি শুদ্ধ ভক্তিতে অনুরাগ বিশিষ্ট হন I    

'বৈষ্ণবসেবার ফলে কুলিয়ার দেবানন্দ পণ্ডিত মহাপ্রভুর চরণে বিশ্বাসী হইয়াছিলেন I শ্রীবক্রেশ্বর পণ্ডিত দেবানন্দের গৃহে অবস্থান করায় তাঁহার মঙ্গলের কারণ হইয়াছিলেন I দেবানন্দ পণ্ডিত স্মার্ত্ত ধর্ম্মে প্রবিষ্ট হইলেও মহাজ্ঞানী সংযত ছিলেন I শ্রীমদ্ভাগবত ব্যতীত অন্য কোন গ্রন্থ তাঁহার পাঠ্য ছিল না I তিনি ঈশ্বরনিষ্ঠ,ইন্দ্রিয়াদির অবশীভূত ছিলেন,কিন্তু শ্রীগৌরসুন্দরের প্রতি বিশ্বাসের অভাব ছিল I শ্রীবক্রেশ্বরের অনুগ্রহে তাঁহার সেই দুর্বুদ্ধি দূর হইয়া তিনি ভগবানে শ্রদ্ধালু হইলেন I' 
''ভাগবতী দেবানন্দ বক্রেশ্বর - কৃপাতে I
ভাগবতের ভক্তি - অর্থ পাইল প্রভু হইতে I I''

শ্রীমন্মহাপ্রভু দেবানন্দকে ভাগবতের ভক্তি - ব্যাখ্যা করিতে বলিলেন I দেবানন্দ পণ্ডিতের বিশেষ সৌভাগ্য যে,তিনি মহাপ্রভুর দণ্ডরূপ কৃপা লাভ করিয়াছিলেন I

''তথাপিহ দেবানন্দ বড় পুন্যবন্ত I
বচনেও প্রভু যারে করিলেন দণ্ড I I

চৈতন্যের দণ্ড মহা সুকৃতি সে পায় I
যার দণ্ডে মরিলে বৈকুন্ঠে লোক যায় I I''

কোলদ্বীপ বা কুলিয়া অপরাধভঞ্জন পাট বলিয়া দেবানন্দ পণ্ডিতের অপরাধ ভঞ্জন হইল I গোপাল চাপালের অপরাধকেও শ্রীমন্মহাপ্রভু এখানে ক্ষমা করিয়াছিলেন I

পৌষী কৃষ্ণা - একাদশী তিথিতে শ্রীদেবানন্দ পণ্ডিতের তিরোভাব হয়

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...