Wednesday, December 25, 2019

নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদন্ডী স্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীল ভক্তিসৌরভ ভক্তিসার গোস্বামী মহারাজ
(আবির্ভাব)
১৯০২ খ্রীষ্টাব্দে,পূর্ববঙ্গের খুলনা জেলার চন্দনী মহল গ্রামে পিতা শ্রীযুক্ত শশধর বন্দোপাধ্যায় মাতা শ্রীমতী শৈলবালাদেবীর পুত্র রূপে জন্মগ্রহণ করেন I পিতা - মাতা নাম রাখেন 'শ্রীনন্দগোপাল' I শ্রীনন্দগোপাল মহৎ আচরণ,মৌন - প্রশান্ত - ধীর - মধুর ব্যবহার,সৌম্যদর্শন সুধাঝরা কথার দ্বারা সকলকে অত্যন্ত মুগ্ধ করিয়াছিলেন I শিশুকাল হইতেই তাঁহার জীবনের সমস্ত দিক থেকে এক অস্বাভাবিক অধ্যাত্মচেতনার বিকাশ পরিলক্ষিত হয় I

প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে সম্মানের সহিত উত্তীর্ন হইলে পর তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন I ম্যাট্রিক পরীক্ষার তিনটি বিষয়ের উপর 'লেটার মার্ক্স্' অর্জ্জন করিয়া তিনি খুলনার দৌলতপুর কলেজে 'সাইন্স 'লইয়া পড়িতে শুরু করিলেন  I দৌলতপুর কলেজ হইতে শ্রীল মহারাজ আই.এস.সি. পরীক্ষার প্রথম বিভাগে পাশ করিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িবার জন্য কটক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্ত্তি হইলেন I কলেজের পড়াশুনার সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাত্ম বিষয়ে চিন্তা ভাবনা ধৰ্ম আলোচনার সাথে সাথে বিভিন্ন ধৰ্ম গ্রন্থাদি অনুশীলন করিতেন I পড়াশুনা অপেক্ষা হরিকথা,ধর্মকথা শ্রবণে তিনি বেশী আনন্দ লাভ করিতেন I পিতা শ্রীযুক্ত শশধর বন্দোপাধ্যায় মহাশয় বিশেষরূপে বুঝিতে পারিতেছিলেন যে পুত্র নন্দগোপাল বোধ হয় আর বেশীদিন গৃহে থাকিবে না I তাই একদিন পিতৃদেব শ্রীনন্দগোপালকে জিজ্ঞাসা করিলেন,- ''তুমি কি করতে চাও ? যদি বল পড়াশুনা করবো তবে পড়াশুনায় মন দাও,আর যদি বল মঠবাস করে শ্রীহরিভজন করবো তবে চল আমি নিজে গিয়ে সব ব্যবস্থা করে তোমাকে শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রীচৈতন্য মঠে রেখে আসবো'' I  পিতাঠাকুরের এইরকম স্বচ্ছ - পবিত্র বাণী নিজ পুত্রের সুকল্যাণ কামনায় নিমিত্ত সুদৃঢ় বিশ্বাস দেখে শ্রীল মহারাজ অত্যন্ত প্রীত হইয়াছিলেন I

একদিন পিতৃদেব হঠাৎই  বাজার হইতে এক বাক্স কাপড়,জামা,গেঞ্জি আরো অনেক প্রয়োজনীয় বস্তু সঙ্গে আনিয়া বলিলেন,- আজই সত্ত্বর তোমাকে তোমার মাতৃদেবীকে সঙ্গে লইয়া আমি নিজে শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রীচৈতন্য মঠে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর প্রভুপাদের শ্রীচরণে তোমাকে চিরদিনের জন্য রাখিয়া আসিব I শ্রীল মহারাজ বলিতেন,- এমন পিতা ত্রিজগৎ - এ দুর্ল্লভ I তিনি আমার পরমপূজ্য,চির বন্দনীয়,আরাধ্য প্রসংশনীয় I কিছুদিন পরে কটক হইতে শ্রীধাম মায়াপুরে দোল পূর্ণিমায় শ্রীচৈতন্য মঠে আমরা তিনজন আসিয়া উপস্থিত হইলাম I অনুমতি ক্রমে শ্রীলপ্রভুপাদের দর্শন সষ্টাঙ্গে দণ্ডবৎ প্রণাম করিলাম I পিতাঠাকুর সংক্ষিপ্তরূপে সমস্ত বক্তব্য শ্রীলপ্রভুপাদের শ্রীচরণে জ্ঞাপন করিলেন I শ্রীলপ্রভুপাদের মুখোদ্গীর্ণ পবিত্র হরিকথা শ্রবণ পূর্বক আমরা তিনজনই অত্যন্ত মুগ্ধ হইলাম I শ্রীলপ্রভুপাদের মহতী হার্দিক ইচ্ছায় শ্রীহরিনাম দীক্ষার দিন ধার্য্য হইলে আমরা তিনজনই একই  সঙ্গে শ্রীহরিনাম দীক্ষার সহিত শ্রীলপ্রভুপাদের শ্রীচরণের কৃপা আশ্রয় লাভ করিয়া জীবন জন্মকে ধন্যাতিধন্য করিলাম I দীক্ষার পর শ্রীলপ্রভুপাদ আমার নামকে কিঞ্চিৎ পরিবর্ত্তন করিয়া নাম রাখিলেন,- 'শ্রীনন্দদুলাল দাস ব্রহ্মচারী I একদিন পিতৃদেব আমাকে বলিলেন,- ''বাবা নন্দদুলাল ! আমরা কাল কটক ফিরে যাই I অনেকদিন হল এসেছি,অধিক বিলম্ব করে লাভ কি ? তখন আমি বাবাকে বলিলাম,- না বাবা ! আমি আর সংসারে ফিরে যাব না I সারাজীবন শ্রীলপ্রভুপাদের শ্রীচরণরজঃ আশ্রয় পূর্ব্বক তাঁহারই নির্দ্দেশে মঠে বাস করিব আর সাধন ভজন করিব I আপনি আমাকে ক্ষমা করুন,আর আশীর্বাদ করুন আমি যেন এই সঙ্কল্প পূর্ণ করিতে পারি I পিতৃদেব আমার উপর খুবই সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন,- ''আমি তোমার বাক্যে,কার্য্যে ব্যবহারে খুবই খুশী I তুমি সুখে শান্তিতে ভক্তি পূর্বক শ্রীলগুরুদেবের শ্রীচরণ সেবা করে চিরসুখী হও,জীবনকে সফল কর I’’

শ্রীলগুরুদেবের আদেশানুসারে শ্রীচৈতন্য মঠে অন্যান্য মঠের সেবাদিতে উৎসর্গীকৃত শ্রীনন্দদুলালের বিভিন্ন সেবায় নির্ভুল মনসংযোগ,পরিপাট্য,উৎসাহ,উদ্যম,আনুগত্য দেখিয়া শ্রীলপ্রভুপাদ দোলপূর্ণিমা তিথি বাসরে শ্রীচৈতন্য প্রচারিনী সভাতে শ্রীপাদ নন্দদুলাল ব্রহ্মচারীকে 'ভক্তিতুল' উপাধিতে ভূষিত করেন I শ্রীলপ্রভুপাদ তাঁহার পারমার্থিক গুণসমৃদ্ধির রহস্য অন্তরে বিলক্ষণ উপলব্ধি করিয়া তাঁহাকে শ্রীভক্তিবিনোদ ইন্সটিটিউট- শিক্ষকতার কার্য্যে নিযুক্ত করেন I দৈনিক নদীয়া প্রকাশ পত্রিকার কার্য্য ভার প্রাপ্ত হইয়া শ্রীলমহারাজ সুখীমনে নিষ্ঠা সহকারে সেকার্য্য সম্পাদনে প্রাণাধিক চেষ্টা করিতেন I

শ্রীলপ্রভুপাদের অপ্রকট পরে শ্রীলভক্তিসারঙ্গ গোস্বামী মহারাজের আনুগত্যে শ্রীধাম বৃন্দাবনে ইমলিতলায় বেশ গভীর মনোনিবেশ পূর্বক ভজন - সাধনে ব্রতী হন I কিছুদিন পর শ্রীলভক্তিসারঙ্গ গোস্বামী মহারাজের নিকট ত্রিদণ্ড সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়া 'শ্রীলভক্তিসৌরভ ভক্তিসার গোস্বামী মহারাজ' নামে সুপরিচিত হন I  কিছুদিন পর শ্রীল গোস্বামী মহারাজ অপ্রকট লীলায় প্রবেশ করিলে তারপরে শ্রীলভক্তিসৌরভ  ভক্তিসার গোস্বামী মহারাজ উক্ত মঠের সর্বোচ্চ আচার্য্য পদে অধিষ্ঠিত হন I কয়েক বৎসর উক্ত পদে আসীন থাকিয়া ঐ মঠের শিষ্যগণ এবং তাঁহারই নিকট সন্ন্যাস প্রাপ্ত এক সন্ন্যাসী শিষ্য শ্রীলমহারাজকে আচার্য্য পদ পরিত্যাগ করিতে বাধ্য করিবার ষড়যন্ত্র মূলক আলোচনা জানিতে পারিয়া 'আচার্য্যপদ পদত্যাগ পত্র' মঠবাসীদের হাতে তুলিয়া দিয়া চিরমুক্ত হইলেন I

পরে শ্রীলভক্তিময়ুখ ভাগবত গোস্বামী মহারাজের প্রীত্যস্পদ সাদর আহ্বানে বীরভূম জেলায় সদর শহর শিউড়ি চাঁদনী পাড়ায় প্রথম একটি মঠ নির্মাণ করিয়া অপূর্ব অনুপম শ্রীশ্রীগৌরনিতাই শ্রীবিগ্রহ প্রকাশ পূর্বক শাস্ত্রবিধানানুসারে শ্রীমন্দির প্রতিষ্ঠিত করিলেন I শ্রীমঠের নাম দিলেন 'শ্রীনিত্যানন্দ গৌড়ীয় মঠ' I আজও শ্রীবিগ্রহ সেবা যথাযথ পারিপাট্য সহকারে সম্পাদিত হইয়া আসিতেছে I  

শ্রীধাম মায়াপুরে শ্রাবণ মাসের কৃষ্ণ দ্বিতীয়া তিথি ১৯৯৫ সাল ভোর - ১০ মিঃ, ভক্তগণের  সমক্ষে হরিসংকীর্ত্তন মুখরিত অবস্থাতে নিজ ভজন কুটিরে শ্রীলমহারাজ দিব্য অপ্রকট লীলা আবিষ্কার করিলেন I শ্রীলভক্তিসৌরভ ভক্তিসার মহারাজের সুদিব্য কলেবর শ্রীগৌরাঙ্গ গৌড়ীয় মঠেই সমাধিস্থ করা হয় I


No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...