Thursday, December 19, 2019

সফলা একাদশী
🌼 একাদশী 🌼 একাদশী 🌼একাদশী 🌼

হরে কৃষ্ণ, আগামী ২২/১২/১৯ ইং রোজ -রবিবার সফলা একাদশী I
(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯.৫১ মিঃ মধ্যে একাদশীর পারণ)

আপনি নিজে একাদশী ব্রত পালন করুন অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।

পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম 'সফলা' ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে এই তিথির মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।

যুধিষ্ঠির বললেন  হে প্রভু! পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম, বিধি এবং পূজ্যদেবতা বিষয়ে আমার কৌতুহল নিবারণ করুন।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন  হে মহারাজ! আপনার প্রতি স্নেহবশত সেই ব্রত কথা বিষয়ে বলছি। এই ব্রত আমাকে যেরকম সন্তুষ্ট করে, বহু দান-দক্ষিণাযুক্ত
যজ্ঞাদি দ্বারা আমি সেরকম সন্তুষ্ট হই না। তাই যত্নসহকারে এই ব্রত পালন করা কর্তব্য।

পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম 'সফলা' নাগদের মধ্যে যেমন শেষনাগ, পক্ষীদের মধ্যে গরুড়, মানুষের মধ্যে ব্রাহ্মণ, দেবতাদের মধ্যে নারায়ণ সর্বশ্রেষ্ঠ; তেমনই সকল ব্রতের মধ্যে একাদশী ব্রতই সর্বশ্রেষ্ঠ। হে মহারাজ, যারা এই ব্রত পালন করেন, তারা আমার অত্যন্ত প্রিয়। তাদের এ জগতে ধনলাভ পরজগতে মুক্তি লাভ হয়। নারিকেল,সুপারি,নিম্বু,আনার,আমলকী,লবঙ্গ,বের,আম ইত্যাদি ফল এবং ধূপ দীপ দ্বারা দেবাদিদেব শ্রীবিষ্ণুর পূজা করা কর্তব্য। হাজার হাজার বছর তপস্যায় যে ফল লাভ হয় না, একমাত্র সফলা একাদশীতে রাত্রি জাগরণের ফলে তা অনায়াসে প্রাপ্ত হওয়া যায়।

মাহিষ্মতী নামে এক রাজা প্রসিদ্ধ চম্পাবতী নগরে বাস করতেন। রাজার পাঞ্চজন পুত্র ছিল। কিন্তু তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র লুম্ভক সর্বদা পরস্ত্রীগমন, মদ্যপান প্রভৃতি অসৎ কার্যে রত ছিল। সে সর্বক্ষণ ব্রাহ্মণ, বৈষ্ণব দেবতাদের নিন্দা করত। পুত্রের এই আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে রাজা তাকে রাজ্য থেকে বের করে দিলেন। স্ত্রী-পুত্র, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন পরিত্যক্ত হয়ে সে এক গভীর বনে প্রবেশ করল। সেখানে কখনও জীবহত্যা আবার কখনও চুরি করে জীবন ধারণ করতে লাগল। কিছুদিন পরে একদিন সে নগরে প্রহরীদের কাছে ধরা পড়ল। কিন্তু রাজপুত্র বলে সেই অপরাধ থেকে সে মুক্তি পেল। পুনরায় সে বনে ফিরে গিয়ে জীবহত্যা ফলমূল আহার করে দিন যাপন করতে লাগল।
বনে বহু বছরের পুরানো একটি বিশাল অশ্বত্থ বৃক্ষ ছিল। সেখানে ভগবান শ্রীবাসুদেব বিরাজমান বলে বৃক্ষটি দেবত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। সেই বৃক্ষতলে পাপবুদ্ধি লুম্ভক বাস করত। বহুদিন পর তার পূর্বজন্মের কোন পুণ্য ফলে সে পৌষ মাসের দশমী দিনে কেবল ফল আহারে দিন অতিবাহিত করল। কিন্তু রাত্রিতে অসহ্য শীতের প্রকোপে সে মৃতপ্রায় হয়ে রাত্রি যাপন করল। পরদিন সূর্যোদয় হলেও সে অচেতন হয়েই পড়ে রইল। দুপুরের দিকে তার চেতনা ফিরল। ক্ষুধা নিবারণের জন্য সে অতিকষ্টে কিছু ফল সংগ্রহ করল। এরপর সেই বৃক্ষতলে এসে পুনরায় বিশ্রাম করতে থাকল।

রাত্রিতে খাদ্যাভাবে সে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ল। সে প্রাণরক্ষার্থে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ফলগুলি নিয়ে 'হে ভগবান! আমার কি গতি হবে' বলে অশ্রুপাত করতে করতে সেই বৃক্ষমূলে, 'হে লক্ষ্মীপতি নারায়ণ! আপনি প্রসন্ন হোন' বলে নিবেদন করল। এইভাবে সে অনাহারে অনিদ্রায় সেই রাত্রি যাপন করল।

ভগবান নারায়ণ সেই পাপী লুম্ভকের রাত্রি জাগরণকে একাদশীর জাগরণ এবং ফল অর্পণকে পূজা বলে গ্রহণ করলেন। এইভাবে অজ্ঞাতসারে লুম্ভকের
সফলা একাদশী ব্রত পালন হয়ে গেল। প্রাতঃকালে আকাশে দৈববাণী হল হে পুত্র, তুমি সফলা ব্রতের পুণ্য প্রভাবে রাজ্য প্রাপ্ত হবে। সেই দৈববাণী শোনামাত্র লুম্ভক দিব্যরূপ লাভ করল। তার পাপবুদ্ধি দূর হল। সে পুনরায় নিষ্কণ্টক রাজ্য লাভ করল। স্ত্রী পুত্রসহ কিছুকাল রাজ্যসুখ ভোগের পর পুত্রের ওপর রাজ্যের ভার দিয়ে সে সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণ করল। অবশেষে মৃত্যুকালে সে অশোক অভয় ভগবানের কাছে ফিরে গেল।
হে মহারাজ! এভাবে সফলা একাদশী যিনি পালন করেন, তিনি জাগতিক সুখ পরে মুক্তি লাভ করেন। এই ব্রতে যারা শ্রদ্ধাশীল, তাঁরাই ধন্য। তাঁদের জন্ম সার্থক, এতে কোন সন্দেহ নেই। এই ব্রত পাঠ শ্রবণে মানুষের রাজসূয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
অতএব, আমাদের প্রত্যেকেরই পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষ তিথিতে ভক্তি ভরে এই সফলা একাদশী ব্রত পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

‘’একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।

এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পারণ করতে হয়।

গীতা মাহাত্ম্যে উল্লেখ আছে-

যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে।

স্বপন জাগ্রৎ চলন তিষ্ঠন শত্রুভির্ন হীয়তে।।

অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণুর উৎসবের দিনে, একাদশী জন্মাষ্টমীতে যিনি গীতা পাঠ করেন , তিনি চলুন বা দাড়িয়ে থাকুন, ঘুমিয়ে বা জেগে থাকুন,(যে অবস্থায়ই থাকুন না কেন) শত্রু কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারেনা।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...