Friday, December 6, 2019


উন্মীলনী মহাদ্বাদশী
                                        ০৮.১২.২০১৯(রবিবার)

ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে বর্ণিত অষ্ট মহাদ্বাদশী---

একাদশী ব্রত প্রসঙ্গে আটটি মহাদ্বাদশী ব্রত সম্পর্কেও আমাদের বিশেষভাবে জানা প্রয়োজন। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে শ্রীসূত-শৌনক সংবাদে অষ্ট মহাদ্বাদশীর কথা বলা হয়েছে---

উন্মীলনী  ব্যঞ্জুলী  ত্রিস্পৃশা  পক্ষবর্দ্ধিনী।
জয়া  বিজয়া  চৈব  জয়ন্তী  পাপনাশিনী
দ্বাদশ্যোহষ্টৌ  মহাপুণ্যাঃ  সর্ব্বপাপহরা  দ্বিজ।
তিথিযোগেন জায়ন্তে  চতস্ররশ্চাপরাস্তথা।
নক্ষত্রযোগাচ্চ  বলাৎ পাপং প্রশময়ন্তি তাঃ
                                                                      (হঃ ভঃ বিঃ ১৩/১০৬-১০৭)
হে ব্রাহ্মণ! উন্মীলনী, ব্যঞ্জুলী, ত্রিস্পৃশা, পক্ষবর্দ্ধিনী, জয়া, বিজয়া, জয়ন্তী পাপনাশিনী- এই আটটি দ্বাদশী পরম পবিত্রা সর্বপাপহারিনী। এর মধ্যে চারটি দ্বাদশী তিথিযোগে এবং অবশিষ্ট চারটি নক্ষত্রযোগে আবির্ভূত হয়। সকল দ্বাদশী সর্বপাপ বিনাশ করে। ধর্মস্বরূপ সাক্ষাৎ শ্রীহরি একাদশী রূপে বিরাজ করেন। ব্যঞ্জুলী উন্মীলনী ব্রত তাঁর শরীরের মতো বলা হয়। পদ্মপুরাণ মার্কণ্ডেয়পুরাণে বলা হয়েছে যে, যারা এই দ্বাদশী ব্রতের অনুষ্ঠান করে না, দেহান্তে তারা যমপুরীতে বাস করে। তাই আত্মকল্যাণ লাভের জন্য প্রত্যেকের কর্তব্য একাদশী তথা মহাদ্বাদশী তিথিগুলি যত্নসহকারে পালন করা। এর ফলে অবাঞ্ছিত দুঃখ-দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ আত্যন্তিক মঙ্গল লাভ হয়। এছাড়াও হরিভক্তিবিলাসে শ্রাবণ দ্বাদশী এবং গোবিন্দ দ্বাদশী নামে আরও দুইটি দ্বাদশী ব্রতের উল্লেখ রয়েছে।
উন্মীলনী মহাদ্বাদশী
একাদশী সম্পূর্ণ হয়ে পরের দিন দ্বাদশীতে কলামাত্র বৃদ্ধি পেলে অথচ দ্বাদশীর পরের দিন বৃদ্ধি না পেলে তাকে উন্মীলনী দ্বাদশী বলা হয়। এরকম হলে দ্বাদশী তিথিতে উপবাস করে ত্রয়োদশীতে পারণ করতে হবে। পদ্মপুরাণে এই মহাদ্বাদশীর মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।
একসময় অম্বরীশ মহারাজের রাজভবনে গৌতম মুনি উপস্থিত হলে, রাজা প্রফুল্ল চিত্তে তাকে জিজ্ঞেস করলেন- হে ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ! কর্মবন্ধন মোচন বৈকুণ্ঠ গতি লাভ হয়, এমন কোনো বৈষ্ণব ব্রতের কথা কৃপা করে আমাকে উপদেশ করুন।
উত্তরে গৌতম ঋষি বললেন- হে রাজন! পূর্বে ভগবান শ্রীবিষ্ণু আমার ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং উন্মীলনী ব্রতের উপদেশ করেছিলেন। সেই ব্রত কথা আমি এখন আপনার কাছে বলছি। ত্রিভুবনের সকল তীর্থ, যজ্ঞ, বেদ তপস্যা এই ব্রতের কোটি অংশের এক অংশের সমান নয়। যে মাসে উন্মীলনী তিথির আবির্ভাব হয়, সেই মাসে ভগবানের নাম উচ্চারণ করে যথাবিধি মধুসূদনের পূজা করতে হবে।

হে দেবেশ! হে মহাদেব!হে মহাপুরুষ!হে পূর্বজ,হে সুব্রাহ্মণ্য!হে পুণ্যকীর্তি আপনাকে প্রণাম। আমাকে শোকমোহ মহাপাপরূপ সংসার সাগর থেকে উদ্ধার করুন। আমি শতজন্মে কিঞ্চিৎ পুণ্যও করিনি। তবুও হে জগন্নাথ! আমাকে ভবসাগর থেকে উদ্ধার করুন। আপনার প্রতি অহৈতুকী ভক্তি প্রদান করুন। কৃপা করে আমার নিবেদিত এই অর্ঘ্য গ্রহণ করুন। এইভাবে অর্ঘ্য প্রদান করে নৈবেদ্য, স্তব-স্তুতি, আরতি-কীর্তনে ভগবানের প্রীতিসাধন করতে হয়। রাত্রি শেষে ব্রত - কৃত্য, শ্রীল গুরুদেবের  শ্রী চরণকমলে অর্পণ করতে হয়। এই ভাবে ব্রত করলে ব্রত পূর্ণ হয়ে  থাকে Iএভাবে অনুষ্ঠিত ব্রতের প্রভাবে ব্রতকারী ধনবান, বিদ্বান, দীর্ঘায়ু পুত্রবান হন। ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে বলা হয়েছে যে, ব্রতে দান, হোম প্রভৃতি সবই অক্ষয় হয়ে থাকে। ব্রত অনুষ্ঠান না করা হলে মানুষকে যমযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...