Saturday, December 28, 2019


শ্রীল শ্রীজীব গোস্বামী 

(তিরোভাব)
হরে কৃষ্ণ, আগামী ২৯/১২/১৯ ইং রোজ - রবিবার শ্রীল শ্রীজীব গোস্বামী প্রভুর তিরোভাব I

শ্রীকবিকর্ণপুর তাঁর গৌরগণোদ্দেশ দীপিকায় লিখেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণলীলায় যিনি বিলাসমঞ্জরী, গৌরলীলায় উপশাখারূপে তিনিই শ্রীল জীব গোস্বামীরূপে আবির্ভূত হন। তাঁর আবির্ভাব সম্বন্ধে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর সজ্জনতোষণী পত্রিকায় উল্লেখ করেছেন যে, তিনি ১৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে রামকেলি গ্রামের মালদহে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শ্রীরূপ, শ্রীসনাতন এবং শ্রীবল্লভ (অনুপম)-- তিন ভাইয়ের মধ্যে শ্রীঅনুপমের একমাত্র পুত্র হলেন শ্রীল জীব গোস্বামী। 'লঘুবৈষ্ণবতোষণী' গ্রন্থে তিনি নিজেই তাঁর বংশ পরিচয় উল্লেখ করেছেন। শ্রীল রূপ গোস্বামীপাদের জীবনীতে তা উল্লেখ করা হয়েছে। রূপ-সনাতনের মতো অনুপম মল্লিকও হোসেন শাহের রাজকর্মচারী ছিলেন। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতের অনুভাষ্যে লিখেছেন--শ্রীজীব গোস্বামীর পিতার নাম শ্রীবল্লভ (মহাপ্রভুর প্রদত্ত নাম অনুপম) 'অনুপম মল্লিক, তাঁর নাম--'শ্রীবল্লভ' শ্রীরূপ গোঁসাঞির ছোট ভাই,--পরম বৈষ্ণব।'শ্রীমন্মহাপ্রভু যেকালে রামকেলিতে গিয়েছিলেন সেই সময় অনুপমের সহিত তাহার প্রথম সাক্ষাৎ হয় I

শ্রীমন্মহাপ্রভুর ইচ্ছাক্রমে শ্রীরূপ গোস্বামী ও শ্রীসনাতন গোস্বামী বিষয় কার্য্য সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতঃ শ্রীমন্মহাপ্রভুর সহিত মিলিত হইবার জন্য যে সময় বৃন্দাবনে যাত্রা করিলেন,সেই সময় শ্রীজীব গোস্বামীর হৃদয়েও তীব্র বৈরাগ্যভাবের উদয় হল I শ্রীল শ্রীজীব গোস্বামী স্বপ্নে সংকীর্ত্তনের  মধ্যে নৃত্যরত শ্রীমন্মহাপ্রভুকে দর্শন করে প্রেমে উন্মত্ত হয়ে পড়লেন,পরে গৃহত্যাগ করতঃ বাকলা চন্দ্রদ্বীপ থেকে শ্রীনবদ্বীপে পৌঁছে শ্রীবাস অঙ্গনে শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর দর্শন ও কৃপালাভ করলেন I তিনি তৎকালে ব্রজে যাইবার জন্য শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর নির্দ্দেশ প্রাপ্ত হইলেন,-

''নিত্যানন্দ প্রভু মহাবাৎসল্যে বিহ্বল I
ধরিল শ্রীজীব - মাথে চরণ - যুগল II

শ্রীজীবেরে অনুগ্রহে - সীমা প্রকাশিলা I
ভূমি হইতে তুলি দৃঢ় আলিঙ্গন কইলা II

প্রভু কহে - শীঘ্র ব্রজে করহ প্রয়াণ I
তোমার বংশে প্রভু দিয়াছেন সেই স্থান II''

শ্রীভক্তিরত্নাকর গ্রন্থে লেখা আছে যে শ্রীমন্মহাপ্রভু যখন রামকেলিগ্রামে আসিয়াছিলেন,তখন শ্রীজীব গোস্বামীকে শিশু অবস্থায় দেখিয়া ছিলেন I শ্রীজীব গোস্বামীতে বাল্যকাল হইতেই ভগবদনুরাগ দৃষ্ট হয় I তাঁর শৈশব সম্পর্কে ভক্তিরত্নাকরে উল্লিখিত আছে-

শ্রীজীব বালক-কালে বালকের সনে।
শ্রীকৃষ্ণ-সম্বন্ধ বিনা খেলা নাহি জানে

কৃষ্ণবলরাম মূর্তি নির্মাণ করিয়া।
করিতেন পূজা পুষ্প চন্দনাদি দিয়া

শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপায় শ্রীজীবগোস্বামী শ্রীনবদ্বীপ ধাম দর্শন পরিক্রমান্তে প্রথমে কাশিতে পৌঁছিয়া শ্রীমধুসূদন বাচস্পতির নিকট সর্ব্বশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন I পরে বৃন্দাবন পৌঁছিয়া শ্রীরূপ - সনাতন গোস্বামীর শ্রীচরণাশ্রিত হন I

শ্রীগৌড়ীয়-বৈষ্ণব-সম্প্রদায়ের আচার্য:-
শ্রীল রূপ-সনাতন গোস্বামীগণের অপ্রকটের পর শ্রীজীব গোস্বামী  সোৎকল - গৌড় - মাথুরমণ্ডলের গৌড়ীয় বৈষ্ণবসম্প্রদায়ের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ আচার্য্যপদে অধিষ্ঠিত থাকিয়া সকলকে শ্রীগৌরসুন্দর প্রচারিত সত্য কীর্ত্তন করিয়া হরিভজন করাইতেন I মধ্যে মধ্যে ইনি ভক্তগণসহ ব্রজধাম পরিক্রমা করিতেন মথুরায় বিঠ্ঠলদেব দর্শন করিতে যাইতেন I শ্রীল কবিরাজ গোস্বামী ইহার প্রকটকালেই শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত রচনা করেন I ইনি কিছুকাল পরে গৌড়দেশ হইতে আগত শ্রীনিবাস,নরোত্তম দুঃখীকৃষ্ণদাসকে যথাক্রমে  আচার্য্য,ঠাকুর শ্যামানন্দ নাম প্রদান করিয়া তদ্ রচিত যাবতীয় গোস্বামী - শাস্ত্রাদিসহ গোঁড়দেশে নামপ্রেমে প্রচারার্থ প্রেরণ করেন I প্রথমে গ্রন্থাপহরণ সংবাদ পরে তদুদ্ধারত সংবাদ শ্রবণ করেন I  ইনি শ্রীনিবাসশিষ্য রামচন্দ্র সেনকে তদনুজ গোবিন্দকে কবিরাজ নাম প্রদান করেন I ইনি প্রকট থাকিতে শ্রীমতী জাহ্নবা দেবী কতিপয় ভক্তসহ বৃন্দাবনে আগমন করিয়াছিলেন I গৌড়দেশ হইতে ভক্তগণ আসিলে ইনি তাঁহাদের প্রসাদ সেবা বাসস্থান নির্দ্দিষ্ট করিয়া দিতেন I

 শ্রীভক্তিরত্নাকরে শ্রীজীব গোস্বামীর লিখিত ২৫ টি গ্রন্থের নাম উল্লিখিত হয়েছে:-
১। হরিনামামৃত ব্যাকরণ ২। সূত্রমালিকা ৩। ধাতুসংগ্রহ ৪। কৃষ্ণার্চনদীপিকা ৫। গোপালবিরুদাবলী ৬। রসামৃত শেষ ৭। শ্রীমাধব-মহোৎসব ৮। শ্রীসঙ্কল্পকল্পবৃক্ষ ৯। ভাবার্থসূচক চম্পু ১০। গোপালতাপনী টীকা ১১। ব্রহ্মসংহিতার টীকা ১২। রসামৃত টীকা ১৩। উজ্জ্বল টীকা ১৪। যোগসার স্তবকের টীকা ১৫। অগ্নিপুরাণস্থ শ্রীগায়ত্রীভাষ্য ১৬। পদ্মপুরাণোক্ত শ্রীকৃষ্ণের পদচিহ্ন ১৭। শ্রীরাধিকা কর-পদস্থিত চিহ্ন ১৮। গোপালচম্পু-পূর্ব উত্তর বিভাগ ১৯। ক্রমসন্দর্ভ, ২০। তত্ত্বসন্দর্ভ, ২১। ভগবৎসন্দর্ভ ২২। পরমাত্মাসন্দর্ভ ২৩। কৃষ্ণসন্দর্ভ ২৪। ভক্তিসন্দর্ভ ২৫। প্রীতিসন্দর্ভ I

একদিন গ্রীষ্মকালে শ্রীল রূপ গোস্বামী বৃন্দাবনে নির্জনে গ্রন্থ লেখার সময় ঘর্মাক্ত কলেবর হলে শ্রীজীব গোস্বামী তাঁকে ব্যজন করছিলেন। তখন বল্লভভট্ট সেখানে এসে রূপ গোস্বামীর সাথে মিলিত হইলেন এবং তাঁকে বললেন ভক্তিরসামৃতসিন্ধু গ্রন্থের মঙ্গলাচরণ সংশোধন করে দিবেন। এই বলে বল্লভভট্ট যমুনায় স্নান করতে গেলেন। বল্লভ ভট্টের এমন গর্বিত বচন সহন করতে না পেরে জল আনার ছলে তিনিও যমুনায় গেলেন এবং বল্লভ ভট্টকে শ্রীল রূপগোস্বামীর লেখায় কোথায় ভুল আছে তা জিজ্ঞেস করলেন। বল্লভ ভট্ট সে বিষয়ে তাঁর অভিমত জ্ঞান করলে শ্রীজীব গোস্বামী শাস্ত্রবিচার দ্বারা তাঁর প্রতিটি বাক্য খণ্ডন করলেন। বল্লভ ভট্ট তাঁর অদ্ভূত পণ্ডিত্য দেখে আশ্চর্য হলেন এবং সমস্ত কথা রূপ গোস্বামীকে এসে বললেন। শ্রীরূপ গোস্বামী তজ্জন্য শ্রীজীবকে মৃদু ভর্ৎসনা করিলেন এবং পূর্ব্বদেশে শীঘ্র চলিয়া যাইতে,মনস্থির হইলে পুনঃ বৃন্দাবনে আসিতে বলিলেন I শ্রীজীব গোস্বামী কিছুদূর গমন করতঃ নন্দঘাটে আসিয়া অর্দ্ধাহারে অনাহারে থাকিয়া তীব্র ভজন করিতে লাগিলেন I শ্রীসনাতন গোস্বামীর  কৃপাতে শ্রীল জীব গোস্বামী পুনঃ শ্রীরূপ গোস্বামীর স্নেহ ও কৃপা লাভ করিলেন I

শ্রীল শ্রীজীব গোস্বামী ভাদ্র-শুক্লা-দ্বাদশী তিথিতে আবির্ভূত হন এবং পৌষী শুক্লা-তৃতীয়া তিথিতে তিরোধান লীলা করেন। শ্রীল শ্রীজীব গোস্বামীর সেবিত বিগ্রহ শ্রীরাধাদামোদর জিউ বৃন্দাবনে শ্রীরাধাদামোদর মন্দিরে সেবিত হচ্ছেন। শ্রীরাধাদামোদর মন্দিরের পাশে শ্রীজীব গোস্বামীর সমাধিস্থান এবং শ্রীরাধাকুণ্ডের তীরে (ললিতা কুণ্ডের নিকটে) ভজন কুটির বিদ্যমান।



No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...