নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদন্ডী স্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীমদ ভক্তিপ্রকাশ অরণ্য গোস্বামী মহারাজ
নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ ১০৮ শ্রী - শ্রীমদ ভক্তিপ্রকাশ অরণ্য গোস্বামী মহারাজ
পূর্ব্ববঙ্গের যশোহর জেলার অন্তর্গত গঙ্গারামপুর
নামক গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন I গার্হস্থ্য আশ্রমে থাকা অবস্থাতেই তিনি শ্রীগৌড়ীয়মঠ
সমূহের অধিষ্ঠাতা জগদ্গুরু শ্রীলপ্রভুপাদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুরের
চরণে আকৃষ্ট হইয়া ''জহৌ জুবৈব মলবদুত্তমশ্লোক
লালসাঃ'' -
এই ভাগবতীয় বাক্যের অনুশরনাদর্শ প্রদর্শন করিয়াছিলেন Iপরমরাধ্যতম শ্রীল গুরুপাদপদ্মের সঞ্চারিত
শক্তি প্রভাবে শ্রীল প্রভুপাদের শ্রীচৈতন্য বাণী সংকীর্ত্তন যজ্ঞের তিনি ছিলেন একজন
অন্যতম প্রধান সহায়ক ও জীবন্ত মৃদঙ্গ স্বরূপ I জাগতিক বিদ্যা বওৃতাদিতে তাঁহার অধিক নিপুনতা না থাকিলেও পরাবিদ্যাবধূ
জীবন শ্রীকৃষ্ণ কীর্ত্তন - নিষ্ঠারূপ শুদ্ধ বিদ্যোৎসাহিত্য জীবনের শেষ মুহুর্ত্ত পর্যন্ত্য
প্রদর্শিত হইয়া তাঁহাকে বিদ্বৎ সমাজে চির বরেণ্য করিয়াছে I
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ব্বোচ্চ
শিক্ষায় শিক্ষিতাভিমানী বহু স্নাতক অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ তাঁহার শ্রীমুখে জ্ঞান কর্ম্মাদি
নিরপেক্ষ শুদ্ধ ভক্তির অপূর্ব্ব বিচার বৈশিষ্ট্য শ্রবণে স্তম্ভিত হইয়াছেন I বহু সদবংশ
সম্ভূত ধনী - মানী - জ্ঞানী অথবা সাধারণ দরিদ্র অজ্ঞ ব্যক্তি ও তাঁহার নিকট ভগবৎ কথা
শ্রবণ করিয়া জগদ্গুরু পরমারাধ্য শ্রীল প্রভুপাদের শ্রীচরণাশ্রয় লাভের সু - দুর্ল্লভ
সৌভাগ্য বরণ করিয়াছেন I অর্থাদি ভিক্ষা দ্বারা ও শ্রীল প্রভুপাদের শ্রীধামের উজ্জ্বল্য
সম্পাদন,মঠ মন্দিরাদির সেবা এবং ভক্তিগ্রন্থ ও পত্রিকাদি পরিচালনার কার্য্যে তিনি বহুল
পরিমানে সহায়তা করিয়া শ্রীলপ্রভুপাদের পরম করুণা ভাজন হইয়াছিলেন I তিনি তাঁহার হরিকথা
কীর্ত্তনকালে শ্রীলপ্রভুপাদের ব্যবহৃত শব্দাদি প্রচুর পরিমানে ব্যবহার করিয়া শুদ্ধভক্তি
পদাশ্রিত সকলেরই বিস্ময় ও সুখ উৎপাদন করিতেন I ভক্তি বিরুদ্ধ বিচার খণ্ড - বিখন্ড করিয়া
শুদ্ধভক্তি সিদ্ধান্ত স্থাপনে তিনি ছিলেন একজন নির্ভীক ও নিরপেক্ষ বক্তা,শুদ্ধভক্তি
সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধ নিরসনে কৃতান্ত মহাকাল স্বরূপ I জীবনের শেষ মুহুর্ত্ত্য পর্য্যন্ত
তাঁহার অপূর্ব্ব স্মৃতিশক্তি সকলেরই বিস্ময় উৎপাদন করিয়াছে I
শ্রীমদ অরণ্যমহারাজ সগোষ্ঠী শ্রীচৈতন্যগৌড়ীয়মঠাচার্য্য
শ্রীমদ্ভক্তিদয়িত মাধব গোস্বামী মহারাজের প্রতি অত্যন্ত প্রীত্যাকৃষ্ট ছিলেন I তাঁহার দক্ষিণ কলিকাতা,শ্রীধামমায়াপুর ও
শ্রীধাম বৃন্দাবনস্থ মঠে প্রায়শই অবস্থান করিতেন I তিনি প্রতি বৎসর সতীর্থ গুরুভ্রাতাদের
ও অন্যান্য ভক্তদের সহিত পদব্রজে ঔদ্দাত্ত কন্ঠে পাঠ কীর্ত্তন হরিকথাদি সহ শ্রীধাম
নবদ্বীপ ও শ্রীধাম বৃন্দাবন ৮৪ ক্রোশ ব্রজমণ্ডল পরিক্রমা করিতেন I তিনি অপ্রকটের কিছুদিন পূর্বেও অসুস্থাভিনয়ে প্রায় দুইমাস
শ্রীধামবৃন্দাবনস্থ শ্রীচৈতন্যগৌড়ীয়মঠে অবস্থান পূর্ব্বক সুস্থ হইয়া বঙ্গদেশে প্রত্যাবর্ত্তন
করেন I শ্রীমদ্ভক্তিদয়িত মাধব গোস্বামী মহারাজের এবং অন্যান্য গুরু - ভ্রাতাগণের সুসিদ্বান্তপূর্ণ
বওৃতা ও হরিকথা শ্রবণে এবং তাঁহার বিশ্বব্যাপী শ্রীচৈতন্যবাণী বিতরণের বিপুল উদ্দ্যম
দর্শনে তিনি অত্যন্ত উল্লাসিত হইতেন I
শ্রীল মহারাজ আশি বর্ষ বয়সে ২১শে পৌষ,১৩৩৭ (ইং -৬ই জানুয়ারী,১৯৬৭
)শুক্রবার একাদশী তিথিতে সন্ধ্যা ৬ - ৩০ ঘটিকায় সম্পূর্ণ সজ্ঞানে 'অন্তে নারায়ণ স্মৃতিঃ'--বিশেষতঃ অন্তিম সময়ে পরম
পরাৎপর তত্ত্ব শ্রীকৃষ্ণ বিরহবিহ্বলা গোপীমুখোদগীত 'তবকথামৃতং'
শ্লোকরত্নরসপান করিতে করিতে শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দের নিত্যগোলকবৃন্দাবনীয় স্বায়ংকালীন
লীলায় চিরকালের জন্য প্রবেশ করিলেন I
No comments:
Post a Comment