Friday, August 14, 2020

 💐 অন্নদা একাদশী 💐

♥♥শুভ একাদশী 💐💐 শুভ একাদশী♥♥
হরে কৃষ্ণ, আগামী ১৫/০৮/২০২০ ইং রোজ - শনিবার অন্নদা একাদশী I
(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৯। ৩৩ মিঃ মধ্যে একাদশীর পারণ)
আপনি নিজে একাদশী ব্রত পালন করুন ও অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।
''কৃষ্ণ ভুলি যেই জীব অনাদি বহির্মুখ ।
অতএব মায়া তারে দেয় সংসার দুঃখ।।'' চৈতন্যচরিতামৃত( মধ্য ২০/১১৭)
শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে জীব অনাদিকাল ধরে জড় প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট রয়েছে। তাই মায়া তাকে এ জড় জগতে নানা প্রকার দুঃখ প্রদান করছে। পরম করুণাময় ভগবান, কৃষ্ণস্মৃতি জাগরিত করতে মায়াগ্রস্ত জীবের কল্যাণে বেদপুরাণে আদি শাস্ত্রগ্রন্থাবলী দান করেছেন।
ভক্তি হচ্ছে ভগবানকে জানার ও ভগবৎ প্রীতি সাধনের একমাত্র সহজ উপায়। শাস্ত্রে যে চৌষট্টি প্রকার ভক্ত্যাঙ্গের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে একাদশী ব্রত সর্বত্তোম। শ্রবণ, কীর্ত্তন, স্মরণ আদি নবধা ভক্তির পরই দশম ভক্ত্যাঙ্গরূপে একাদশীর স্থান। এই তিথিকে হরিবাসর বলা হয়। তাই ভক্তি লাভেচ্ছু সকলেরই একাদশী ব্রত পালনের পরম উপযোগিতার কথা বিভিন্ন পুরাণে বর্ণিত হয়েছে। একাদশী তিথি সকলের অভীষ্ট প্রদানকারী। এই ব্রত পালনে সমস্ত প্রকার পাপ বিনষ্ট, সর্বসৌভাগ্য ও শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি বিধান হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আট থেকে আশি বছর বয়স পর্যন্ত যে কোন ব্যক্তিরই ভক্তিসহকারে পবিত্র একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য।
একাদশী ব্রত পালনের নিয়ম :- সামর্থ্য অনুযায়ী দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার, দ্বাদশীতে একাহার। এতে অসমর্থ হলে শুধু একাদশীতে অনাহার। যদি এতেও অসমর্থ হয়, একাদশী তে পঞ্চশস্য বর্জনীয়, ফলমূল ও কিছু সবজি গ্রহণের বিধান আছে। যেমন-গোল আলু, মিষ্টি আলু, কুমড়ো,চাল কুমড়ো, বাদাম তেল/সূর্য্যমুখী তেল/ঘি দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করা যেতে পারে। এছাড়া দুধ, কলা,আপেল, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা, শসা, নারিকেল, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ফল আহার করা যাবে। একাদশীর পারণের সময় পঞ্জিকা তে দেওয়া থাকে, এর মাঝে ভগবান কে অন্ন নিবেদন করে উপবাস ভঙ্গ করতে হবে। নতুবা একাদশীর ফল লাভ হয়না।
বর্জনীয় পঞ্চ শস্য:- ধান জাতীয় খাদ্য- ভাত,খিচুড়ি,মুড়ি, চিঁড়া,খই, সুজি, চালের গুঁড়ো, চালের পিঠে, পায়েস। গম জাতীয় খাদ্য- আটা, ময়দা, সুজি, রুটি, বিস্কুট ,কেক, নুডলস। যব বা ভুট্টা জাতীয় খাদ্য- ছাতু, খই, রুটি। ডাল জাতীয় খাদ্য- মুগ, মশুর, মটর, মাসকলাই, ছোলা, অড়হর, বরবটি, শিম, বুট। সরিষা, তিলের তেল।( সয়াবিন এর কথা বিতর্কিত) I চা, বিড়ি, সিগারেট,পান, যেকোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য বর্জনীয়। একাদশী তে সহবাস সম্পূর্ণ বর্জন। আমিষ ( পিঁয়াজ, রসুন, ডিম, মাছ, মাংস ) ভক্ষন নিষেধ।
অন্নদা একাদশী মাহাত্ম্য:- ভাদ্রপদ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম ' অন্নদা’। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে এই তিথির মাহাত্ম্য বর্ণিত রয়েছে।
মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন,-হে কৃষ্ণ! ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি তা শুনতে আমি অত্যন্ত আগ্রহী। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে রাজন! আমি সবিস্তারে এই একাদশীর কথা বর্ণনা করছি। আপনি একাগ্র চিত্তে শ্রবণ করুন।
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম অন্নদা। এই তিথি সর্বপাপ বিনাশিনী। যিনি শ্রী হরির অর্চনে এই ব্রত পালন করেন তিনি সর্বপাপ মুক্ত হন। এমনকি এই ব্রতের নাম শ্রবণেই রাশি রাশি পাপ বিদূরিত হয়ে যায়। এই ব্রত প্রসঙ্গে একটি পৌরাণিক ইতিহাস আছে।
প্রাচীন কালে হরিশচন্দ্র নামে এক নিষ্ঠাপরায়ন সত্যবাদী, চক্রবর্তী রাজা ছিলেন। পূর্ব কর্মফল ও প্রতিজ্ঞার সত্যতা রক্ষায় তিনি রাজ্য ভ্রষ্ট হন। অবস্থা এমন হল যে, তিনি নিজের স্ত্রী পুত্র ও অবশেষে নিজেকেও পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হলেন। হে রাজেন্দ্র! এই পুণ্যবান রাজা চণ্ডালের দাসত্ব স্বীকার করেও সত্য রক্ষার্থে দৃঢ়নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি শ্মশানে মৃত ব্যক্তির বস্ত্রও কর রূপে গ্রহণ করতেন। এই ভাবে বহু বছর কেটে গেল। দুঃখসাগরে নিমজ্জিত হয়ে ‘কি করি, কোথায় যাই, কিভাবে এই দুর্দশা থেকে উদ্ধার পাই’ এই চিন্তায় দিন রাত্রি তিনি বিভোর হলেন। এমন সময় দৈবক্রমে পরদুঃখদুঃখী গৌতম ঋষি রাজার কাছে এলেন। রাজা মুনিকে দর্শন করে ভক্তি সহকারে প্রণাম করলেন। করজোড়ে তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে একে একে নিজের সমস্ত কথা জানালেন। রাজার দুঃখের কথা শুনে মুনিবর বিস্ময়াপন্ন হলেন।
অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে তিনি বললেন,- হে রাজন! ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী অন্নদা নামে জগতে প্রসিদ্ধ। আপনি এই ব্রত পালন করুন। এই ব্রত প্রভাবে আপনার সমস্ত পাপ বিনষ্ট হবে। আপনার ভাগ্যবশত আগামী সাত দিন পর এই তিথির আবির্ভাব হবে। ঐ দিন উপবাস থেকে রাত্রি জাগরণ করবেন। এই ব্রত পালনে আপনার সমস্ত পাপ ক্ষয় হবে। হে রাজন! আপনার পুণ্য প্রভাবে আমি এখানে এসেছি জানবেন। এই কথা বলে গৌতম ঋষি অন্তর্হিত হলেন। ঋষিবরের উপদেশ মতো তিনি শ্রদ্ধা সহকারে সেই ব্রত পালন করলেন। তার ফলে তার সমস্ত পাপ দূর হল।
হে মহারাজ! এই ব্রতের প্রভাব শ্রবণ করুন। যথাবিধি এই ব্রত পালনে বহু বছরের দুঃখ ভোগের অবসান হয়। ব্রতের প্রভাবে রাজা হরিশচন্দ্রের সকল দুঃখ সমাপ্ত হল। পুনরায় তিনি স্ত্রীকে ফিরে পেলেন এবং তার মৃত পুত্রও জীবিত হল। আকাশ থেকে দেবগণ দুন্দুভিবাদ্য ও পুষ্পবর্ষণ করতে লাগলেন। নিষ্কন্টক রাজ্য সুখ ভোগ করে অবশেষে আত্মীয় স্বজন ও নগরবাসী সহ স্বর্গে গমন করলেন। যে মানুষ নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালন করেন, তিনি শ্রী হরি চরণে ভক্তি লাভ করে অবশেষে দিব্য ধামে গমন করেন। এই ব্রতের মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয় I
★★★সবাইকে অনুরোধ রইল অবশ্যই মনে রাখবেন যে, একাদশী ব্রত বা কোন উপবাস মানেই কিন্তু শুধু না খেয়ে থাকা নয়,বরং শুদ্ধ/পবিত্র দেহ,মন নিয়ে ব্রত/উপবাস রেখে নিরন্তর "ভগবানের নাম জপ" হরিকথা শ্রবণ, কীর্ত্তন,গীতাপাঠ করে "ভগবান কে প্রসন্ন/খুশি করাই ব্রত/উপবাসের মূল উদ্দেশ্য"★★★
‘’একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।‘’
এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পারণ করতে হয়। গীতার মাহাত্ম্যে উল্লেখ আছে…
‘’যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে।
স্বপন জাগ্রৎ চলন তিষ্ঠন শত্রুভির্ন স হীয়তে।।‘’
অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণুর উৎসবের দিনে, একাদশী ও জন্মাষ্টমীতে যিনি গীতা পাঠ করেন , তিনি চলুন বা দাড়িয়ে থাকুন, ঘুমিয়ে বা জেগে থাকুন,(যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন) শত্রু কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারেনা।
♥জয় শ্রীকৃষ্ণের জয়♥জয় শ্রীএকাদশী মহাব্রতের জয়♥

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...