💐সৎসঙ্গ💐
🍁💐🦚🍁💐🦚🍁💐🦚🍁

🍇বিশেষ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

 

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,

সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,

বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

 

ভ্রমর ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়ায়, আর গোবরে পোকা পড়ে থাকে গোবরের মধ্যে। তবু একদিন দু’জনে দেখা হয়ে গেল। গোবরে পোকার ইচ্ছে হল ভ্রমরের সঙ্গে সে বন্ধুত্ব পাতাবে। তাই ভ্রমরকে ডেকে সে বলল,- ‘‘ভাই, তোমারও রং কালো, আমারও রং কালো। এসো ভাই তোমাতে আমাতে বন্ধুত্ব পাতাই।’’  ভ্রমর বলল,- ‘‘বেশ তো, এ তো ভালো কথা। কিন্তু ভাই, তুমি দিনরাত এই গোবরের মধ্যে, এই দুর্গন্ধের মধ্যে পড়ে থাকো কেন? এ কী আশ্চর্যের কথা! তোমারও তো পাখা আছে। এসো না আমরা দুই বন্ধু আকাশে উড়ে বেড়াই।’’ 

বন্ধুর কথা শুনে গোবরে পোকা সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে গেল। তখন দুই বন্ধু মহা আনন্দে পাখা মেলে দিল। বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমর একটি পদ্মের উপর এসে বসল। সেই পদ্মের সুগন্ধে গোবরে পোকা এমনই মশগুল হয়ে গেল যে তার আর পদ্মফুলকে ছেড়ে চলে যেতে মন চাইল না। সে তখন একেবারে পদ্মের কোরকের মধ্যে ঢুকে গেল। ভ্রমর তো বেশিক্ষণ একটি ফুলের উপর বসে থাকে না, তাই একটু পরেই সে আবার উড়ে চলে গেল। এমন সময় সূর্যদেব অস্ত গেলেন, পদ্মের দলগুলি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল, আর গোবরে পোকাও সেইসঙ্গে পদ্মফুলের ভিতরে বন্দি হয়ে রইল।

পরদিন সকালবেলা এক ব্রাহ্মণ এলেন সেই সরোবরের তীরে। চমৎকার একটি পদ্মফুল ফুটে রয়েছে দেখে তিনি ভাবলেন ভগবান মহাদেবের পুজোয় ফুলটি নিবেদন করবেন। এই ভেবে ফুলটি তুলে নিয়ে তিনি ঘরে ফিরলেন এবং পুজোয় বসে পদ্মটিকে তিনি মহাদেবের মাথায় স্থাপন করলেন। পদ্মের সঙ্গে সঙ্গে তার ভিতরে বন্দী গোবরে পোকারও মহাদেবের মাথায় স্থান জুটে গেল। পরদিন সকালবেলা মহাদেবের সব নির্মাল্য ব্রাহ্মণ গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে এলেন। গঙ্গার স্রোতে সেগুলো ভেসে যেতে লাগল। পদ্মের সঙ্গে গোবরে পোকাও ভেসে চলল গঙ্গার জলে।

এদিকে ভ্রমর বন্ধুকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ দেখতে পেল যে তার বন্ধু গঙ্গার স্রোতে ভেসে চলেছে। ভ্রমর তখনই বন্ধুর কাছে নেমে এসে বলল: ‘‘বন্ধু, করো কী? শিগ্‌গীর উড়তে শুরু করো নইলে যে মারা পড়বে।’’ গোবরে পোকা তখন বন্ধুকে বলল: ‘‘ভাই, এখন আমাকে মরতেই দাও।’’ এই বলে সে ভ্রমরকে একটি দোঁহা শোনাল:—

সঙ্গৎ গুণ অনেক ফল, শিব মহেশকো বৈঠ।
হে মিত্র! মোয় জায় দে গঙ্গাজীকো পেট।।

এই দোঁহার মাধ্যমেই গোবরে পোকা তখন যেন বন্ধুর উদ্দেশে শেষ বিদায়বাণী জানিয়ে বলে গেল: ‘‘বন্ধু, সৎসঙ্গতে কত ফল মেলে দেখো। আমি তোমার মতো মহতের সঙ্গ লাভ করে আজ আমি কী পরম সৌভাগ্যের অধিকারী হলাম। স্বয়ং মহাদেবের মাথায় আমি স্থান পেয়েছি। তারপর যে গঙ্গা সকল কলুষ নাশ করেন, সেই মুক্তিদায়িনী মা গঙ্গার কোলে এখন আমি আশ্রয় লাভ করেছি। ধন্য হয়েছে আমার জীবন। এ তোমারই সঙ্গগুণে আমার সামনে মুক্তির প্রশস্ত পথ উন্মুক্ত হয়েছে। আমি আজ সেই পথেই চললাম।’’ 

সৎসঙ্গের এমনই অসীম প্রভাব যে তা মাটির তুচ্ছ কীটকে পর্যন্ত দেবাদিদেব শংকরের মাথায় উঠিয়ে দেয় এবং সেই মহেশ্বরের মৌলি নিঃসৃত গঙ্গার ধারাতে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে মুক্তি এনে দেয়। ভূচরকে তাই খেচরের সঙ্গে যোগসাধন করতে হবে। যাঁরা আকাশচারী, ঊর্দ্ধগমনকারী মধু সংগ্রাহক, সেইসব উচ্চচিন্তাশীল সৎপুরুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে শাস্ত্র তাই বার বার নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্গন্ধ ময়লামাটি ছেড়ে গোবরে পোকার মতো সংসারী জীব ভ্রমরের মতো দিব্য সুমিষ্ট সারসংগ্রহকারী মহাজনের সঙ্গ ও সাহচর্যে হৃদয় পদ্মের সন্ধান পায় এবং তার সৌরভে এমনই মজে যায় যে আর তা ছেড়ে উঠতে চায় না। 
সৎসঙ্গের প্রভাবে এইভাবেই মানুষ একদিন ভগবানের আশ্রয় লাভ করে এবং তার করুণার ধারায় ভেসে গিয়ে মুক্তিপেয়ে ধন্য হয়।

 

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I

কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’   (শ্রীমদ্ভাগবত)

কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।

 

‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।

প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’

যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি। পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।

 

হরি হরি আর কি এমন দশা হব।

এ ভব সংসার ত্যজি,                    পরম আনন্দে মজি,

আর কবে ব্রজভূমে যাব।।

সুখময় বৃন্দাবন,                    কবে হবে দরশন,

সে ধূলি লাগিবে কবে গায়।

প্রেমে গদগদ হৈঞা,                    রাধাকৃষ্ণ-নাম লৈয়া

কান্দিয়া বেড়াব উভরায়।।

নিভৃত নিকুঞ্জে যাঞা,                    অষ্টাঙ্গে প্রণাম হৈঞা,

ডাকিব 'হা রাধানাথ' বলি।

কবে যমুনার তীরে,                    পরশ করিব নীরে,

কবে পিব করপুটে তুলি।।

আর কবে এমন হব,                    শ্রীরাসমণ্ডলে যাব,

কবে গড়াগড়ি দিব তায়।

বংশীবট-ছায়া পাঞা,                    পরম আনন্দ হৈঞা,

পড়িয়া রহিব তা'র ছায়।।

কবে গোবর্দ্ধন গিরি,                    দেখিব নয়ন ভরি,

কবে হবে রাধাকুণ্ডে বাস।।

ভ্রমিতে ভ্রমিতে কবে,                    এ দেহ পতন হবে,

কহে দীন নরোত্তমদাস।।

 

বৃষভানুসুতা, চরণ সেবনে, হইব যে পাল্যদাসী।

শ্রীরাধার সুখ, সতত সাধনে, রহিব আমি প্রয়াসী।।

 

শ্রীরাধার সুখে, কৃষ্ণের যে সুখ,জানিব মনেতে আমি।

রাধাপদ ছাড়ি, শ্রীকৃষ্ণ সঙ্গমে,কভু না হইব কামী।।

সখীগণ মম,পরম সুহৃদ, যুগল প্রেমের গুরু।

তদনুগা হয়ে, সেবিব রাধার, চরণ কল্পতরু ।।

 

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে !

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে !!"

!! জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় !! !! জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় !!