💐💞চতুঃশ্লোকী ভাগবত💞💐
🍁🦚💐🏵️🌺💞🌹💞🌺🏵️💐🦚🍁
🍇খুব গুরুত্বপূর্ণ
পোষ্ট🍇
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’
আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,
সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।
বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,
বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।
চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং ভাগবত মাহাত্ম্য
প্রিয় ভক্তবৃন্দ এবং সুধীগণ, আজ আমরা চতুঃশ্লোকী ভাগবত এবং শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানবো। আমরা জানি মহর্ষি বেদব্যাস ১৭ টি পুরাণ এবং মহাভারত লেখা সমাপ্ত করে ফেলেছেন, কিন্তু তখনও মনের মধ্যে শান্তি পাননি, শান্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে রয়েছেন, তখন গুরুদেব দেবর্ষি নারদের পরামর্শে মহর্ষি বেদব্যাস এই পবিত্র ভাগবত শাস্ত্রটি রচনা করেন এবং আপন পুত্র মহর্ষি শুকদেবকে এই গ্রন্থের অধ্যয়ন করান।
চতুঃশ্লোকী ভাগবতঃ
দেবর্ষি নারদ শ্রীভগবানের এই তত্ত্ব, প্রথমে চারটি শ্লোকের মাধ্যমে মহর্ষি বেদব্যাসকে শ্রবণ করান। এটিই চতুঃশ্লোকী ভাগবত নামে পরিচিত। এই ৪ টি শ্লোক থেকেই পরবর্তী কালে মহর্ষি বেদব্যাস এই সুবিশাল শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রটি রচনা করেন। তাহলে চলুন আমরা সর্বপ্রথম এই দুর্লভ চতুঃশ্লোকী ভাগবত সম্পর্কে জেনে নেই,-
অহমেবাসমেবাগ্রে নান্যদ যত সদসৎ পরম।
পশ্চ্যাদহং যদেতচ্চ যোঃবশিষ্যেত সোঃস্যহম ।। ১ ।।
ঋত্যর্থ যত প্রতিযেত ন প্রতিযেত চাত্মনি।
তদ্বিধাদাত্মনো মায়া যথাঃভাসো যথা তমঃ ।। ২ ।।
যথা মহান্তি ভূতানি ভূতেষুচ্চাবচেস্বনু।
প্রবিষ্টান্যপ্রবিষ্টানি তথা তেষু ন তেস্বহম ।। ৩।।
এতাবদেব জিজ্ঞাস্যং তত্ত্বজিজ্ঞাসুনাত্মনঃ।
অন্বয় ব্যতিরেকভ্যাং যত স্যাত সর্বত্র সর্ব্বদা ।। ৪।।
এবার আমরা এই ৪ টি শ্লোকের অর্থ এক এক করে জেনে নেব ।
১) এই সমগ্র সৃষ্টির পূর্বে কেবল আমিই ছিলাম। সেই সময় আমি ভিন্ন স্থুল, সূক্ষ, এবং স্থুল-সূক্ষ্মের কারণ যে অজ্ঞান, তা কিছুই ছিল না। এই সৃষ্টি যেখানে নেই, সেখানে শুধু আমিই আছি এবং এই সৃষ্টিরূপে যা কিছু প্রতীত হচ্ছে তাও আমিই, আবার তার অতিরিক্ত অবশিষ্ট যা কিছু আছে তাও আমিই।
২) বাস্তবে যেখানে যা নেই কিন্তু কিছু একটা পদার্থের জ্ঞান হচ্ছে, যেমন দুটি সূর্য, চন্দ্র না থাকা স্বত্তেও গগনে এবং জলে প্রতিবিম্ব রূপে দুটি সূর্য,চন্দ্র দেখা যায় ( যদিও সেটি মিথ্যা ); অথবা যা বিদ্যমান কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না , যেমন আকাশে রাহু,কেতু নামে দুটি গ্রহ আছে (কিন্তু রাহু,কেতুর দর্শন হচ্ছে না ) - এই দুই অবস্থাই অভাবনীয় ব্যাপার, একে আমার মায়া বলে জানবে।
৩) ক্ষিতি, অপ, তেজ ইত্যাদি মহাভুত যেমন ভৌতিক ঘটপটাদিতে থাকে বা মনুষ্যাদি জীবদেহে অনুপ্রবিষ্ট থাকে, আবার জীবদেহ ছাড়া অন্যত্রও আকাশাদি বর্তমান, সুতরাং তাতে অপ্রবিষ্টও বটে , সেইরকম সেইসকল জীবদেহের দিক থেকে দেখলে আমি তাদের মধ্যে আত্মারূপে (চৈতন্য শক্তিরূপে ) প্রবেশ করে রয়েছি, আবার আত্মদৃষ্টিতে (তত্বদৃষ্টিতে) আমি ছাড়া অন্য কোথাও আর কিছু নেই বলে আমি এদের মধ্যে প্রবিষ্ট না হয়েও রয়েছি।
৪) 'এটি ব্রহ্ম নয়, এটি ব্রহ্ম নয়' - এইরকম ব্যতিরেক পদ্ধতি এবং 'এটি ব্রহ্ম, এটি ব্রহ্ম' - এইরকম অন্বয় পদ্ধতির দ্বারা এই সিদ্ধান্তই উপনীত হয় যে সর্বতীত, সর্বব্যাপক,সর্বস্বরূপ ভগবানই সর্বএই সর্বদা অবস্থিত আছেন- তিনিই প্রকৃত তত্ত্ব। আত্মা বা পরমাত্মার সম্পর্কে উৎসাহীদের এই বিষয়টাই জানা প্রয়োজন।
শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্যঃ
আসুন আমরা এখন স্বয়ং শ্রীভগবান কর্তৃক ব্রহ্মাকে বর্ণিত শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য সম্পর্কে জেনে নেই,-
১) লোকবিখ্যাত শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ প্রত্যহ শ্রদ্ধাযুক্ত চিত্তে শ্রবণ করা উচিত। ইহা আমার পরম সন্তোষের কারণ হয়।
২) যে ব্যক্তি প্রতিদিন শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ পাঠ করেন, সে প্রতিটি অক্ষর উচ্চারণের সাথে সাথে কপিলা গোমাতা দানের পুন্য অর্জন করেন।
৩) যে ব্যক্তি প্রতিদিন অর্ধেক বা এক-চতুর্থাংশ শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ বা শ্লোক শ্রবণ করেন, তার এক সহস্র গোমাতা দানের ফল লাভ হয়।
৪) হে পুত্র! পবিত্রচিত্ত হয়ে যে প্রতিদিন শ্রীমদ্ভাগবতের
একটি শ্লোক পাঠ করেন তার অষ্টাদশ পুরাণ পাঠের ফলপ্রাপ্তি হয়।
৫) নিত্য যেখানে আমার কথা হয় সেখানে বিষ্ণুপার্ষদ প্রহ্লাদ প্রমুখ উপস্থিত থাকেন। আমার এই শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রের যে প্রতিদিন পূজা করেন সে কলির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকেন, তার উপর কলির কোনো অধিকার থাকে না।
৬) যে মানুষ নিজ ঘরে বৈষ্ণবশাস্ত্রের
পূজা করেন সে সর্বপ্রকার পাপ থেকে মুক্ত হয়ে দেবতাদের দ্বারাও বন্দনীয় হন।
৭) কলিযুগে যারা প্রতিদিন নিজ ঘরে শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রের পূজা করেন তারা আনন্দচিত্তে এই ভূমণ্ডলে বিচরণ করেন এবং কলির থেকে নির্ভয়ী হয়ে আস্ফালন করেন। তাদের উপর আমি সতত প্রসন্ন থাকি।
৮) হে পুত্র! মানুষ যতদিন পর্যন্ত তার ঘরে ভাগবত শাস্ত্র রক্ষা করেন, তার পিতৃপুরুষগন ততদিন পর্যন্ত দুধ, ঘি, মধু, ও সুস্বাদু পানীয় পান করেন।
৯) বিষ্ণুভক্ত মানুষকে, যে ভক্তিযুক্ত চিত্তে ভাগবত শাস্ত্র দান করেন সে সহস্রকোটি কল্প পর্যন্ত আমার বৈকুণ্ঠধামে নিবাস করেন।
১০) নিজ গৃহে শ্রীমদ্ভাগবত পূজনকারী ব্যক্তি এক কল্প পর্যন্ত সমস্ত দেবতাদের পরিতৃপ্ত করেন।
১১) নিজ গৃহে শ্রীমদ্ভাগবতের
অর্ধ বা একচতুর্থ শ্লোকও যদি থাকে তবে তার কাছে অন্যান্য শত সহস্র গ্রন্থের সংগ্রহও তুচ্ছ ।
১২) কলিযুগে যার গৃহে শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্র থাকে না, তার যমপাশ থেকে কখনো মুক্তি নেই ।
১৩) এই কলিযুগে যার গৃহে ভাগবত শাস্ত্র নেই, তাকে কি বৈষ্ণব বলা যায় ? সে তো চণ্ডালেরও অধম।
১৪) হে লোকেশ ব্রহ্মা! আমার নিত্য সন্তুষ্টির জন্য সর্বস্বের বিনিময়েও মানুষের এই বৈষ্ণবশাস্ত্র সংগ্রহ করা উচিৎ।
১৫) এই কলিযুগে যেখানে যেখানে ভাগবতশাস্ত্র রক্ষিত থাকে, দেবতাদের সাথে নিয়ে আমি সর্বদাই সেখানে উপস্থিত থাকি।
১৬) শুধু তাই নয়, সেখানে গঙ্গাদি নদী, ব্রহ্মপুত্রাদি
নদ ও মানস সরোবরাদি সকল তীর্থ বাস করেন। সম্পূর্ণ যজ্ঞ, মুক্তিদাত্রী অযোধ্যাদি সপ্তপুরী এবং পাবন পর্বতসমূহও সেখানে সতত নিবাস করেন।
১৭) হে লোকেশ! যশ, ধর্ম্ম, বিজয়প্রাপ্তির জন্য এবং পাপক্ষয় ও মোক্ষপ্রাপ্তির জন্য ধার্মিক মানুষের সর্বদাই আমার ভাগবতশাস্ত্র শ্রবণ করা উচিৎ।
১৮) এই পাবন শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ
আয়ু, আরোগ্য, ও পুষ্টিদাতা; এই শাস্ত্র পাঠ অথবা শ্রবণে মানুষ সকলপ্রকার পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
১৯) হে লোকেশ! এই পরম উত্তম ভাগবত যে শ্রবণ না করে, আর শুনলেও যে আনন্দিত হয় না, যমরাজই তাদের প্রভু - তারা সর্বদাই যমরাজের বশে থাকে - আমি এইকথা সত্য করে বলছি।
২০) হে পুত্র! যে মানুষ সর্বদাই - বিশেষতঃ একাদশী তিথিতে ভাগবত শুনতে না যায়, তার মতো পাপী আর কেউ নেই।
২১) যার ঘরে শ্রীমদ্ভাগবতের
একটি শ্লোক অথবা শ্লোকের একটি পদ লেখা থাকে, তার ঘরে আমি নিবাস করি ।
২২) মনুষ্যলোকে সমস্ত পূণ্য-আশ্রমে বা সম্পূর্ণ তীর্থসমূহে স্নানও তত পূণ্যকারক নয়, শুধুমাত্র এই শ্রীমদ্ভাগবত যতটা পূণ্যকারক ।
২৩) হে চতুর্মুখ! যেখানে যেখানে শ্রীমদ্ভাগবত কথা পাঠ হয়, বৎসপ্রিয়া গাভীর মতো আমি সেখানে সেখানে গমন করি।
২৪) যে আমার এই শ্রীমদ্ভাগবত কথা পাঠ করেন, যে সদাই ভাগবত কথা শ্রবণ করেন আর আমার এই কথা শুনে যে হার্দিক প্রীতি লাভ করে তাকে আমি কখনো ত্যাগ করি না।
২৫) হে পুত্র! যে ব্যক্তি এই পরম পুণ্যময় শ্রীমদ্ভাগবতশাস্ত্র দেখে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক নিজের আসন থেকে উঠে না দাঁড়ায়, তার এক বছরের অর্জিত ধর্ম্মকর্ম্মের সমস্ত পুণ্যই নষ্ট হয়ে যায়।
২৬) শ্রীমদ্ভাগবত গ্রন্থ দর্শনে যে প্রত্যূথান, প্রণাম ইত্যাদির দ্বারা তাকে সম্মান প্রদর্শন করেন, তাকে দেখে আমি অনুপম আনন্দ লাভ করি।
২৭) যে দূর থেকে শ্রীমদ্ভাগবত দর্শন করে তার সামনে যায়, সে প্রতি পদক্ষেপেই অশ্বমেধ যজ্ঞের পুন্য লাভ করেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
২৮) যে ব্যক্তি শ্রীমদ্ভাগবতকে
দর্শন করে দাঁড়িয়ে তাকে প্রণাম করেন, তাকে আমি ধন, স্ত্রী, পুত্র,আর আমার ভক্তি প্রদান করি।
২৯) হে পুত্র! মাহারাজোচিত সামগ্রীসমূহে যুক্ত হয়ে ভক্তিভরে যে শ্রীমদ্ভাগবতের
কথা শ্রবণ করেন, আমি তার বশীভূত হয়ে যাই।
৩০-৩১) হে সুব্রত ! যে ব্যক্তি পার্বন সম্বন্ধীয় সমস্ত উৎসবাদিতে আমার প্রসন্নতার জন্য বস্ত্র, অলংকার, পুষ্প, ধূপ, ইত্যাদি অর্পণ করে পরম উত্তম শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ ভক্তিভরে শ্রবণ করেন, পতিব্রতা রমণী যেমন সচ্চরিত্র স্বামীকে বশীভূত করে, ওই ব্যক্তি আমাকে সেইরকমই নিজের বশীভূত করে রাখে।
বিঃ দ্রঃ- স্কন্দপুরাণস্থিত বিষ্ণুখণ্ডে মার্গশীর্ষমাহাত্ম্য অধ্যায় ১৬ এ বর্ণিত শ্রীভগবান কর্তৃক ব্রহ্মাকে বর্ণিত শ্রীমদ্ভাগবত মাহাত্ম্য সমাপ্ত।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
🍁জয় শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণের জয়🍁🍁জয় সকল ভক্তগণের জয়🍁
No comments:
Post a Comment