🍁শ্রীগুরুদেব🍁

💐🏵️🌺🌹🌺🏵️💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’ 

নমস্ত্রিকাল - সত্যায় জগন্নাথ সুতায় চ।

স - ভৃত্যায় স -পুত্রায় স - কলত্রায় তে নমঃ।।

গুরুর শিষ্যের প্রতি কর্তব্য কি?

গুরু গ্রহণ করা কোন শখের বিষয় নয়। যিনি পারমার্থিক জীবন সম্পর্কে, সৎকর্ম সম্পর্কে, এবং ভগবানের সাথে তার সম্পর্ক জানতে ঐকান্তিক ভাবে আগ্রহী, তারই কেবল গুরুগ্রহণ করা উচিৎ। কারও দেখে দীক্ষা নিলাম, মন্ত্র জপও করি না। আবার অনেকে যায় পারমার্থিক বিষয়ে গুরুদেবের সাথে তর্ক করতে। এমন মনোভাব থাকলে, বা শরণাগত যদি না হতে পারি, দীক্ষা নেওয়া উচিৎ নয়, আর কিছু শিখতেও পারব না। পরমত্ত্বকে জানার জন্য আমরা গবেষণা করতে পারি না। মহাপ্রভু নিজেই বলে গেছেন,- "গুরু মোরে মূর্খ দেখি, করিল শাসন।" গুরুর সামনে নিজেকে মহামূর্খ মনে করতে হবে। তবেই শেখা যাবে। কেউ যদি ভাবে,- "আমি এতই পণ্ডিত যে, আমি গুরুর থেকেও ভাল বলতে পারি, সে একটি মহামূর্খ ।

অর্জুন যেভাবে শ্রীকৃষ্ণের কাছে শরণাগত হয়েছিলেন,-

কার্পণ্যদোষোপহতস্বভাবঃ

পৃচ্ছামি ত্বাং ধর্মসম্মুঢ়চেতাঃ।

যচ্ছ্রেয়ঃ স্যান্নিশ্চিতং ব্রুহি তন্মে

শিষ্যস্তেহহং শাধি মাং ত্বাং প্রপন্নম্।।      (গীতা - ২/৭)

অর্থাৎ,- কার্পণ্যজনিত দুর্বলতার প্রভাবে আমি এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছি এবং আমার কর্তব্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়েছি। এই অবস্থায় আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি, এখন কি করা আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর, তা আমাকে বল। এখন আমি তোমার শিষ্য এবং সর্বতোভাবে তোমার শরণাগত। দয়া করে তুমি আমাকে নির্দেশ দাও।

এইভাবে শরণাগত হলে গুরুর কৃপায় শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভ হবে। গুরু হচ্ছেন কৃষ্ণের এবং পূর্বতন আচার্যদের প্রতিনিধি। গুরুকে ভগবানের মতো সন্মান করতে হবে। সদগুরুর কাছে যেভাবে আত্মসমর্পণ করা হয়, ভগবান সেই অনুসারে আমাদের গ্রহণ করেন।গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,-

সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।

অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।।      (গীতা--১৮/৬৬

অনুবাদঃ সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব। তুমি শোক করো না। অনেকে বলে, শ্রীকৃষ্ণ কোথায় আছেন যে আমি শরণাগত হব ! সদগুরু শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি, তার কাছে সঠিকভাবে সমর্পন করলে, একসময় ভগবানও প্রাপ্ত হবে।

শ্রীকৃষ্ণ গীতায়  বলেছেন,-

তদ্ বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া।

উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ।।      (গীতা-৪/৩৪)

অনুবাদঃ সদগুরুর শরণাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর। বিনম্র চিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃত্রিম সেবার দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট কর। তা হলে সেই তত্ত্বদ্রষ্টা পুরুষেরা তোমাকে জ্ঞান উপদেশ দান করবেন। তিনিই পারেন সত্যকে দর্শন করাতে, কারন তিনি দর্শন করেছেন।

এই জগতে প্রাপ্ত পদ, প্রতিষ্ঠা, কোটি কোটি টাকা- এগুলোই কি ভালো অবস্থা ? সামান্য আমাশা বা কলেরা হলে সব ছারখার করে দেয়। যথার্থ ভাল অবস্থার কথা, (গীতা--১৪/২৬) এ বলা হয়েছে। সেটি হল ভগবানের গোলক ধাম প্রাপ্ত হওয়া।

মাং চ যোহব্যভিচারেণ ভক্তিযোগেন সেবতে।

ম গুণান্ সমতীতৈতান্ ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে।।

অনুবাদঃ যিনি ঐকান্তিক ভক্তিযোগ সহকারে আমার সেবা করেন, তিনি প্রকৃতির সমস্ত গুণকে অতিক্রম করে ব্রহ্মভূত স্তরে উন্নীত হন।

গুরুদেবের এটাই কর্তব্য-দক্ষতার সাথে তার শিষ্যকে তার প্রকৃত আলয় ভগবদ্ধামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। এমন কোন বিজ্ঞান নেই, যা কেউ দিতে পারে। কিন্তু সদগুরু পারে। তাই সকলেরই সদগুরুর শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।

💐শ্রীশ্রী গুরুবন্দনা💐

🍁💐🏵️🌺🌹🌺🏵️💐🍁

বন্দেহহং শ্রীগুরোঃ শ্রীযুত পদকমলং শ্রীগুরূন্ বৈষ্ণবাংশ্চ।

শ্রীরূপং সাগ্রজাতং সহগণ রঘুনাথান্বিতং তং সজীবং ।।

সাদ্বৈতং সাবধূতং পরিজন সহিতং কৃষ্ণচৈতন্য দেবং।

শ্রীরাধাকৃষ্ণ পাদান্ সহগণ ললিতা শ্রী বিশাখা ন্বিতাংশ্চ ।।

আশ্রয় করিয়া বন্দোঁ শ্রীগুরু চরণ ।

যাহা হইতে মিলে ভাই কৃষ্ণ প্রেমধন ।।

জীবের নিস্তার লাগি নন্দসুত হরি।

ভুবনে প্রকাশ হন গুরু রূপ ধরি।।

মহিমায় গুরু কৃষ্ণ এক করি জান।

গুরু আজ্ঞা হৃদে সব সত্য করি মান।।

সত্য জ্ঞানে গুরুবাক্যে যাহার বিশ্বাস।

অবশ্য তাহার হয় ব্রজভূমে বাস।।

যার প্রতি গুরুদেব হন পরসন্ন।

কোন বিঘ্নে সেহ নাহি হয় অবসন্ন।।

কৃষ্ণ রুষ্ট হলে গুরু রাখিবারে পারে।

গুরু রুষ্ট হলে কৃষ্ণ রাখিবারে নারে।।

গুরু মাতা গুরু পিতা গুরু হন পতি।

গুরু বিনা এ সংসারে নাহি আর গতি।।

গুরুকে মনুষ্য জ্ঞান না কর কখন।

গুরু নিন্দা কভু কর্ণে না কর শ্রবণ ।।

গুরু নিন্দুকের মুখ কভু না হেরিবে।

যথা হয় গুরু নিন্দা তথা না যাইবে।।

গুরুর বিক্রিয়া যদি দেখহ কখন।

তথাপি অবজ্ঞা নাহি কর কদাচন।।

গুরু পাদপদ্মে রহে যার নিষ্ঠা ভক্তি।

জগৎ তারিতে সেই ধরে মহাশক্তি।।

হেন গুরু- পাদপদ্ম করহ বন্দনা ।

যাহা হইতে ঘুচে ভাই সকল যন্ত্রণা ।।

গুরু- পাদপদ্ম নিত্য যে করে বন্দন ।

শিরে ধরি বন্দি আমি তাহার চরণ ।।

শ্রীগুরু- চরণপদ্ম হৃদে করি আশ ।

শ্রীগুরু বন্দনা করে এ অধম দাস ।।

ইতি শ্রীশ্রীগুরু বন্দনা সমাপ্ত ।।

🍁জয় গুরুদেব 🍁জয় গুরুদেব🍁জয় গুরুদেব🍁