🍁🦚পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ🦚🍁

💐💞🏵️💞🌺🌹🌺💞🏵️💞💐

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম। আজ বিঘ্ন বিনাশক প্রথম পূজ্য হিন্দু পঞ্চ দেবতার মধ্যে অন্যতম লম্বোদর শ্রীগণেশ চতুর্থী। সবাইকে জানাই কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা। 

পরমেশ্বর ভগবান কে?

আমাদের দুর্ভাগ্য, এখনো আমরা অনেকেই দেবতা এবং ভগবানের মধ্যে পার্থক্য বুঝিনা। এটা একটা মস্ত বড় অপরাধ। শুধু তাই নয় কিছু কিছু মানুষ মনে করেন কৃষ্ণ হচ্ছেন বিষ্ণুর অবতার। আসুন দেখি শাস্ত্র কি বলে-

শ্রীমদ্ভগবতগীতায় পরমেশ্বর ভগবান বলেছেন,-

‘’এতদযোনীনি ভূতানি সর্বাণীত্যুপধারয়।

অহং কৃৎস্নস্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয়স্তথা।।‘’      (গীতা - ৭/৬)

অর্থাৎ,- আমার এই উভয় প্রকৃতি থেকে জড় ও চেতন সব কিছু উৎপন্ন হয়েছে। অতএব নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো যে, আমিই সমস্ত জগতের উৎপত্তি ও প্রলয়ের মূল কারণ।

শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান এবং আদি পুরুষ। শ্রীকৃষ্ণের থেকেই সমস্ত স্থাবরজঙ্গম প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কোন অবতার নন, তিনি হচ্ছেন সকল অবতারের অবতারী। অর্থাৎ ভগবানের সমস্ত অবতার শ্রীকৃষ্ণের থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন ঈশ্বরেরও ঈশ্বর, তাই তিনি পরমেশ্বর। শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের ৬ প্রকারের অবতারের কথা বলা হয়েছে। পুরুষাবতার, গুণাবতার, লীলাবতার, শক্ত্যাবেশ অবতার, যুগাবতার এবং মন্বন্তর অবতার। এই সকল অবতারেরা হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের অংশ বা কলা। 

বিশেষ কোন কার্য সাধনের উদ্দেশ্যে যুগে যুগে এই অবতারেরা প্রকাশিত হন। শ্রীকৃষ্ণের অংশ অবতারেরা প্রতি যুগে যুগে অবতীর্ণ হলেও স্বয়ং কৃষ্ণ প্রতি যুগে যুগে আসেন না। তিনি সহস্ত্র চতুর্যুগে মাত্র ১ বার আসেন। অর্থাৎ সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি- এই চারটি যুগ ১০০০ বার আবর্তিত হলে (৮৬৪ কোটি বছরে) মাত্র ১ বার আসেন। আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন আসেন সাথে তাঁর ধাম এবং পার্ষদ সহ তিনি অবতীর্ণ হন,-

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু জীবে দয়া করি'।

স্বপার্ষদ স্বীয় ধাম সহ অবতরি।।

ব্রহ্মাজি ব্রহ্মসংহিতায় বলেছেন,-

‘’ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণ, সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ ।

অনাদিরঃ আদি গোবিন্দ, সর্বকারণঃ কারণম্ ।।‘’

অর্থাৎ,-  কৃষ্ণই পরম ঈশ্বর, যাঁর বিগ্রহ সর্বদা আনন্দদায়ক। তিনি সকল অবতারেরও আদি, এবং সকল কারণের  কারণ।।

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবত গীতায় বলেছেন,-

‘’স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে।

লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান্ হি তান্।।‘’       ( গীতা - ৭/২২)

অর্থাৎ,- ভক্ত শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে যে সকল দেবতাদের আরাধনা করেন, সেই সকল দেবতাদের কাছ থেকে আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু লাভ করেন। অর্থাৎ দেবতারা যে ফল প্রদান করেন তা মুলত পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ থেকেই আসে। দেবদেবতারা হচ্ছেন ভগবানের প্রতিনিধি।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন-

''একলা ঈশ্বর কৃষ্ণ, আর সব ভৃত্য।''

অর্থাৎ,- একমাত্র কৃষ্ণই পরমপ্রভু আর বাকি সব হচ্ছেন তাঁর নিত্যদাস। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন ষড়ৈশ্বর্যে পুর্ণ। অর্থাৎ একমাত্র শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে সমস্ত ঐশ্বর্য, সমস্ত বীর্য (শক্তি), সমস্ত শ্রী (সৌন্দর্য), সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত যশ এবং সমস্ত বৈরাগ্য - এই ৬টি গুণ বিদ্যমান। তাই শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন ঈশ্বরেরও ঈশ্বর পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং এবং তাঁর সমান ও উর্ধ্বে আর কেউ নেই।