Monday, August 17, 2020

 💐শ্রীমদ্ভাগবতম💐

🍁💐🌺💞🌹💞🌺💐🍁

🍇খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,

সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,

বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

যৎকীর্ত্তনং যৎস্মরণং যদীক্ষণং 
যদ্বন্দনং যচ্ছ্রবনং যদর্হণম্  
লোকস্য সদ্যো বিধুনোতি কল্মষং 
তস্মৈ সুভদ্রশ্রবসে নমো নমঃ ।।     (ভাগবত //১৫)
অর্থাৎ,- আমি সেই সর্ব মঙ্গলময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সশ্রদ্ধ প্রণাম নিবেদন করি; যাঁর যশগাথা কীর্ত্তন, স্মরণ, দর্শন, বন্দন, শ্রবণ পূজনের ফলে সমস্ত পাপরাশি অচিরেই ধৌত হয়। 

মায়ামুগ্ধ জীবের নাহি স্বতঃ কৃষ্ণজ্ঞান।

জীবেরে কৃপায় কৈলা কৃষ্ণ বেদ-পুরাণ।।      (চঃচৈ মধ্য ২০.১২২)

অর্থাৎ,- মায়ার প্রভাবে আচ্ছন্ন বদ্ধ জীব তার নিজের চেষ্টায় কৃষ্ণ স্মৃতি জাগরিত করতে পারে না। তাই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অহৈতুকী কৃপার প্রভাবে জীবকে বেদ পুরাণাদি স্বার্থ গ্রন্থাবলী দান করেছে।

"শ্রীমদ্ভাগবতম্" - এর প্রনয়ন কর্ত্তা কে ? এবং কেন তিনি এই গ্রন্থরাজকে প্রনয়ন করেন ?

শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন-ব্যাসদেব নিষ্কপট সত্যানুসন্ধিৎসু জনগণের কল্যাণের নিমিত্ত স্বয়ংই ব্রহ্মসূত্র সমূহের ভাষ্যরূপে শ্রীমদ্ভাগবতম্ গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন। উপনিষৎ সমূহের শিক্ষা শ্রেণীবদ্ধভাবে সম্বন্ধ-অভিধেয়-প্রয়োজন আকারে প্রদর্শনের জন্য শ্রীবেদব্যাস ব্রহ্মসূত্র রচনা করিয়াছেন। ইহাই  ‘’বেদান্ত-দর্শন’’ নামে খ্যাত। সূত্র সমূহের অর্থ অনেকেই হৃদয়ঙ্গম করিতে অসমর্থ। বহু মনীষী বেদান্তদর্শনের নামে স্ব স্ব মতবাদ প্রচারের জন্য নিরপেক্ষ বিচার পরিত্যাগপূর্বক স্ব স্ব কল্পানুসারে সূত্রসমূহের ব্যাখ্যার প্রকাশ পাইয়াছেন; তাহাতে বেদান্তের প্রকৃত অর্থ প্রকাশিত হইবার পরিবর্তে শুধু যে আচ্ছাদিত হইয়াছে তাহা নহে, পক্ষান্তরে সম্পূর্ণ বিপরীত রূপ ধারণ করিয়াছে। এই প্রকারের দুরবস্থা আশঙ্কা করিয়াই শ্রীব্যাসদেব নিষ্কপট সত্যানুসন্ধিৎসু জনগণের কল্যাণের নিমিত্ত স্বয়ংই ব্রহ্মসূত্রসমূহের ভাষ্যরূপে ‘’শ্রীমদ্ভাগবতম’’ গ্রন্থ প্রনয়ন করিয়াছেন।

 ‘’শ্রীমদ্ভাগবত’’ কয়টি স্কন্ধে বিবৃত কি কি বিষয় বর্ণিত আছে ?

স্বয়ংরূপ ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ প্রপন্ন ব্রহ্মার হৃদয়ে যেপরম সত্য’  প্রকাশ করিয়াছিলেন, তাহা আশীর্বাদাত্মক দুই শ্লোকের সহিত 'চতুঃশ্লোকী ভাগবত' - নামে খ্যাত তাহাই স্বীয় গুরু শ্রীনারদ হইতে প্রাপ্ত হইয়া শ্রীব্যাসদেব সর্বসাধারণের কল্যাণের নিমিত্ত অষ্টাদশ-সহস্র-শ্লোকযুক্ত দ্বাদশ-স্কন্ধে বিবৃত করিয়াছেন। বিভিন্ন অভিনব উপায়ে মুনিবর সর্গ, বিসর্গ, স্থান, পোষণ, উতি, মন্বন্তরকথা, ঈশানুকথা, নিরোধ, মুক্তি আশ্রয়এই দশটি বিষয় শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণনা করিয়াছেন

📚শ্রীমদ্ভাগবতের স্বরূপঃ

শ্রীসনাতন গোস্বামী ভাগবতের স্বরূপ বলছেন, "শ্রীকৃষ্ণঃ পরিবর্ত্তিত", পূর্ণব্রহ্ম কৃষ্ণ শব্দব্রহ্মরূপে পরিবর্তিত। শ্রীগ্রন্থ আর শ্রীগোবিন্দ অভিন্ন। শ্রীমদ্ভাগবত বস্তুতঃপক্ষে শ্রীভগবানের পূর্ণতম প্রকাশের শাব্দিক অবতার। মঙ্গলনিলয় শ্রীকৃষ্ণ সূর্য্য অন্তর্ধান-অস্তাচলে গমন করিলে নষ্টদৃশ জনগণের নিত্যকল্যাণ বিধানের নিমিত্ত পরমার্থ-গগনে এই পুরাণার্কের উদয় হইয়াছে। শ্রীগ্রন্থে দ্বাদশটি স্কন্ধ আছে। ইহার বিভিন্ন স্কন্ধ বিভিন্ন অঙ্গ, তজ্জন্য পদ্মপুরাণে বলিতেছেন,-

''পাদৌ যদীয়ৌ প্রথমদ্বিতীয়ৌ,     তৃতীয়তুযৌ কথিতৌ যদূরূ

নাভিস্তথা পঞ্চম এব ষষ্ঠো,     ভুজান্তরং দোর্যুগলং তথান্যৌ ।।

কণ্ঠস্তু রাজন্নবমো যদীয়ো,       মুখারবিন্দং দশম প্রফুল্লম্

একাদশো যস্য ললাটপট্টং,      শিরোহপি তু দ্বাদশ এব ভাতি ।।

তমাদিদেবং করুণানিধানং,      তমালবর্ণং সুহিতাবতারম্

অপারসংসার-সমুদ্র-সেতুং,      ভজামহে ভাগবত-স্বরূপম্ ।।''

অর্থাৎ,- প্রথম দ্বিতীয় স্কন্ধ শ্রীকৃষ্ণের দুই চরণ যে চরণবলি মহারাজনিজ মস্তকে ধারণ করেছিলেন। গোপীরা যা নিজ বক্ষে ধারণ করেন। তৃতীয় চর্তুথ স্কন্ধ শ্রীকৃষ্ণের দুই উরু, যে উরুদেশেপ্রহ্লাদ মহারাজকে বসিয়েছিলেন শ্রীভগবান নৃসিংহ অবতারে। পঞ্চম- ষষ্ঠ স্কন্ধ দুই পার্শ্বদেশ যে পার্শ্বদেশেমা যশোদাদামবন্ধন করেছিলেন। সপ্তম অষ্টম স্কন্ধ শ্রীকৃষ্ণের দুই বাহু। যে বাহু দিয়েশ্রীদাম, সুদাম, অর্জুনসখাদের বক্ষে ধারণ করেন। নবম স্কন্ধ ভগবানের হৃদয়, যে হৃদয়ে থাকে প্রিয় রাধারাণী একাদশস্কন্ধ ভগবানের কপাল। যে কপালে অলকা তিলকা করে শৃঙ্গার করানমা যশোদা দ্বাদশ স্কন্ধ হল ভগবানের মস্তক যা ময়ূরপুচ্ছ শোভিত হয় আর দশমস্কন্ধ হল ভগবানের শ্রীমুখের হাসি। অধরের মধুর হাসি 'মঞ্জুহাস্যতাম"

শ্রীভগবান সৃষ্টি, স্থিতি, লয়ের কর্ত্তা তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান, তিনি কৃপাময়--- এসব কথা শোনা হয়েছে।এখন ঋষিগণ জানতে চান ভগবানের মধ্যে হাসি আছে কিনা। আনন্দ আছে কিনা। রস আছে কিনা। ভাগবতের দশম স্কন্ধ এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়েছেন। শ্রীমদ্ভাগবতের পরিচয় দিতে ভাগবত নিজে বলছেন--

‘’নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং
শুকমুখাদমৃতদ্রবসংযুতম।
পিবত ভাগবতং রসমালয়ং
মুহুরহো রসিকা ভুবি ভাবুকাঃ।।‘’

অর্থাৎ,- বেদ কল্পবৃক্ষ। বেদকল্পবৃক্ষের গলিত ফল হচ্ছে শ্রীমদ্ভাগবত। গাছের আম দুই প্রকারের পেতে পারি আমরা। আঁকশি দিয়ে আহরণের ফলে বা গাছ হইতে পেকে নিজের থেকে পড়ে ভূতলে  তখন  একটি আবৃত অপরটি গলিত। আহৃত ফল কাঁচা থাকতে পারে। গলিত ফলটি সুপরিপক্ক। বেদ থেকে ধর্ম্ম, অর্থ, কাম মোক্ষ এই চারিপুরুষার্থ লাভ হয় বেদ কল্পতরু। এই কল্পতরু ফল শ্রীভগবান লীলাবর্ণন প্রধান পরমরসময় শ্রীমদ্ভাগবত। জগতে দেখা যায় ফলের আঁটি খোসা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র রস পান করা হয়, কিন্তু ফলের আঁটি বা খোসা নাই, এটার সবই রস। অর্থাৎ শ্রীমদ্ভাগবতের কিছুই পরিত্যজ্য না, সবই পরমাদরে গ্রাহ্য। যদিও শ্রীভগবানের লীলারসময় শ্রীমদ্ভাগবত জগতে অতি দুর্লভ বস্তু, তবুও শ্রীভগবানের কৃপায় অতি সুলভ হয়েছে।  

এই রস শ্রীভগবান স্বয়ং ব্রহ্মাকে দিয়েছিলেন, ব্রহ্মা নারদকে, নারদ ব্যাসকে এবং ব্যাস হইতে  শ্রীশুকদেব আস্বাদন করছেন শুকমুখ হইতে জগতে এসেছে। বৃক্ষের ফল যদি উচ্চ শাখা হইতে ভুমিতে পতিত হয়, তা হলে তা ভেঙে যায়। কিন্তু যদি শাখা প্রশাখা দিয়ে গড়িয়ে আসে আস্তে আস্তে মাটিতে পড়ে তা হলে আর সেই সম্ভাবনা থাকে না। শ্রীমদ্ভাগবত ব্রহ্মা নারদ ব্যাসাদি শিষ্যপ্রশিষ্য পরম্পরায় জগতে আসছে, কাজেই উচুঁ থেকে ফল পড়ে ভেঙে যায়নি তা অবিকৃত আছে। শুকপক্ষী যেমন মধুর ফল ছাড়া অন্য কিছুই খায় না, সেইরূপ পরমহংস চুড়ামণি আজন্ম সংসারত্যাগী  শ্রীশুকমুনি পরমমধুর শ্রীকৃষ্ণ লীলারস ছাড়া অন্য রস আস্বাদন করেন না, সুতরাং শুকমুখনিগর্লিত এই রসময় ফল পরম মধুর।

অতএব হে ভাবুক রসিকগণ সর্ব্বত্যাগ করে এই রসই আস্বাদন করুন। রসাস্বাদনের অধিকার বা আগ্রহ সকলের নেই; কেবল রসিকেরই অধিকার। যে রস বোঝে বা তার রসাস্বাদনে আগ্রহ আছে সেই রসিক। এইজন্য ব্যাসদেব এই রস আস্বাদন করবার জন্য রসিকগণকেই আহ্বান করছেন। ব্যাসদেব আবার ভাবুকদের আহ্বান করছেন, কারণ রস সকলে চায় বটে, কোনটি প্রকৃত রস, তা কেউ বোঝে না, বুঝলে শ্রীভগবানের রস ছাড়া কেহ অনিত্য বিষয়রসে মত্ত হইত না। যাঁরা ভাবুক, তাঁরা কোন রস নিত্য চিরস্থায়ী, তা ভাবনা করে রসান্বেষণ করেন, কাজেই ভাবুক রসিকগণ এই বেদকল্পতরুর পরমমধুর সময় ফল আস্বাদন করেন এই আহ্বান ব্যাসদেবের। কলিহত জীবের জন্য ভগবানের করুণা এই শ্রীমদ্ভাগবত। যার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন কলিযুগ পাবন অবতার গৌরহরি। 

যথা তরোর্মূলনিষেচনেন 
তৃপ্যন্তি তৎস্কন্ধভুজোপশাখাঃ  
প্রাণোপহারাচ্চ যথেন্দ্রিয়াণাং 
তথৈব সর্বার্হণমচ্যুতেজ্যা ।।      (ভাগবত /৩১/১৪)
অর্থাৎ,- গাছের মূলে জল সেচন করলে যেমন সেই গাছের কাণ্ড, ডাল, উপশাখা প্রভৃতি সকলেই তৃপ্তিলাভ করে এবং উদরে আহার্যদ্রব্য প্রদানের দ্বারা যেমন ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি হয়, তেমনই শ্রীকৃষ্ণের পূজা করলে সমস্ত দেবতাদের পূজা হয়ে যায়।

💐জয় শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণের জয়🍁🍁জয় সকল ভক্তগণের জয়💐

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...