Saturday, August 22, 2020

 

🍁শ্রীমতি সীতাদেবী🍁

🦚💐🏵🌺🌹🌺🏵💐🦚

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম। আজ শ্রীঅদ্বৈত পত্নী সীতাদেবীর শুভ আবির্ভাব তিথি। সবাইকে জানাই কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা।

শ্রীমতি সীতাঠাকুরানি।   ( অদ্বৈত প্রভুর সহধর্মিণী )

ভাদ্র শুক্লা পঞ্চমী সীতাদেবীর জন্মতিথি।*

মহাপ্রভুর অন্তরঙ্গ পার্ষদ শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর সহধর্মিণী হলেন সীতাদেবী। তৎকালীন সময়ে সীতা ঠাকুরানি ছিলেন বরীয়সী একজন রমণী। কানুদেব গোস্বামী রচিত অদ্বৈত স্বরূপামৃত গ্রন্থে সীতা দেবীর জন্মতিথি নিরূপিত হয়েছে।

ভাদ্র শুক্লা চতুর্থী দিবসে কলি প্রথম সন্ধ্যায়াং সীতা নাম্নি প্রকটভূতা।"

অর্থাৎ,- কলিযুগে প্রথম সন্ধ্যায় ভাদ্র মাসের শুক্লা চতুর্থী তিথিতে সীতাদেবী জন্মগ্রহণ করেন। পিতা নৃসিংহ ভাদুড়ী এবং মা নারসিংহী দেবী। যমজ বোন ছিলেন শ্রীদেবী। সীতাদেবীর তত্ত্বে বলা হয়েছে সীতাদেবী হলেন ব্রজের অঘটন ঘটন পটীয়সী পৌর্ণমাসি দেবী। তিনিই রাধারাণীর সেবাসুখে কনকসুন্দরী নাম ধারণ করে সখীস্বরূপা হয়ে নিকুঞ্জে রাধারাণীর সেবা তে নিয়োজিত আছেন।

ব্রজলক্ষ্মী হয় এহো পৌর্ণমাসী নামে।

কনকসুন্দরী নাম কুঞ্জবন ধামে।।      (অদ্বৈত মঙ্গল হরিচরণ দাস)

আদ্যা বলি রাধিকার জেষ্ঠ্যা সখি।

কনক সুন্দরী হৈয়া সেবা করে দেখি ।।

রাধার প্রকাশ মূর্তি সীতা ঠাকুরানি এবে।

কনক সুন্দরী নাম কহিলাম এবে ।।      (অদ্বৈতোদ্দেশদীপিকা- দেবকীনন্দন দাস)

যথা বিধি সময়ে অদ্বৈত প্রভুর সাথে সীতাদেবীর শুভ পরিণয় সুসম্পন্ন হয়। পরিণয়ের পরে স্বপ্নাদেশে বৈষ্ণবাচার্য্য মাধবেন্দ্রপুরী সীতা দেবীকে দীক্ষা দেন। স্বপ্নের কথা অদ্বৈত প্রভুকে জানাতেই তিনি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে সীতাদেবীর কানে মাধবেন্দ্রপুরীর দেওয়া মন্ত্রই পুনরায় প্রদান করেন।

একদিন শ্রীসীতা মাতার স্বপ্নাবেশে।

পুরীরাজ আসি কহে সুমধুর ভাষে ।।

শুন সীতাদেবী মোর নাম মাধবেন্দ্র।

মোর স্থানে মন্ত্র লৈলা শ্রীঅদ্বৈতচন্দ্র ।।

যেই নিত্যসিদ্ধ কৃষ্ণমন্ত্র দিনু তারে।

সেই কৃষ্ণাকর্ষী মন্ত্ররাজ দিমু তোরে ।।

তবে পুরী সীতারে কৃষ্ণমন্ত্র দিলা।

দেখিতে দেখিতে পুনঃ অন্তর্হিত হৈলা ।।

প্রভু সেই মন্ত্র পুনঃ বিধি অনুসারে।

শুভক্ষণে সমর্পিলা স্বভার্যা সীতারে ।।      (অদ্বৈত প্রকাশ-ঈশান নাগর)

এর কয়েক দশক পরেই নবদ্বীপে শচী জগন্নাথ মিশ্রের ঘরে মহাপ্রভু জন্মগ্রহণ করেন। সীতাদেবী নানা উপহার সামগ্রী নিয়ে নবজাত গৌরহরি আর শচীমাকে দেখতে আসেন। ছোট্ট মহাপ্রভুকে দেখেই সীতাদেবী বাৎসল্যে দ্রবীভূত হয়ে যান। এবং মহাপ্রভুর শিশুমঙ্গল নামকরণ করেন "নিমাই"

ডাকিনী শাকিনী হৈতে শঙ্কা উপজিল চিতে ডরে নাম থুইল নিমাই।

(চৈতন্য চরিতামৃত-কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী)

মহাপ্রভুও সীতাদেবীকে মাতৃজ্ঞান করতেন। সন্ন্যাস পরবর্তীতে যখন নিত্যানন্দ প্রভুর অলক্ষ্য নির্দেশে মহাপ্রভু শান্তিপুরে অদ্বৈত প্রভুর বাড়িতে যান, তখন মহাপ্রভুর সমস্ত রান্না সীতাদেবীই করতেন। সেই সব রান্না বিবিধ উপকরণের যত নাম চৈতন্য চরিতামৃতে বর্ণিত হয়েছে তাতে সহজেই অনুমান করা যায় সীতা ঠাকুরানি রন্ধন পটীয়সী ছিলেন। 

প্রথমে পাক করিয়াছেন সীতা ঠাকুরানি।

বিষ্ণু সমর্পণ কৈল আচার্য আপনি ।।

মহাপ্রভু যখন গম্ভীরাতে রাধাকৃষ্ণের লীলারস আস্বাদনে মত্ত তখন প্রতিবছর রথের সময় অদ্বৈত প্রভুর সাথে সীতাদেবীও যেতেন তাঁর নিমাই কে দেখতে।

অদ্বৈত সাথে চলে অচ্যুত জননী।

শ্রীবাস পণ্ডিত সাথে চলিলা মালিনী।।

শ্রীমন্মহাপ্রভুর শুভ অধিবাস সংকীর্ত্তনে যদি একমাত্র কোনো রমণীর নাম উল্লেখ থাকে তাহলে তিনি সীতাদেবীই।

শুনিয়া আনন্দে আসি সীতা ঠাকুরানি হাসি বলিলেন মধুর বচন।

কিছু পরেই দেখা যায়

শুন ঠাকুরানি সীতা বৈষ্ণব আনিয়া হেথা আমন্ত্রণ করিয়া যতনে।

একই প্রসঙ্গ আছে মধ্যাহ্ন ভোগারতির পদে-

অদ্বৈত গৃহিণী আর শান্তিপুর নারী

হুলু হুলু রব দেয় গোরা মুখ হেরি।।

আজ এই মহীয়সী নারী অদ্বৈত গৃহিণী সীতাদেবীর শুভ আবির্ভাব তিথি। চৈতন্য চরিতামৃতে কবিরাজ গোস্বামীর বন্দনার সাথে আজ আমরাও কন্ঠ মেলাই-

অদ্বৈত আচার্য ভার্যা,   জগৎ পূজিতা আর্যা,     নাম তাঁর সীতা ঠাকুরানি ।।


No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...