Sunday, August 23, 2020

 💐শ্রীরাধাষ্টমী ব্রত-মাহাত্ম্য💐

🌻🌺💞🍁💐🏵💐🍁💞🌺🌻

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

হরে কৃষ্ণ, আগামী ভাদ্র,২৬শে আগষ্ট ইং রোজ - বুধবার পরাৎ পরব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়া অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বরী শ্রীরাধাষ্টমী ব্রত উপবাস। যাঁহারা রাধাকৃষ্ণের কৃপা কৃষ্ণভক্তি লাভ করতে চান - তাঁহারা অবশ্যই এই ব্রত পালন করিবেন। (আবির্ভাব মধ্যাহ্নে )

শ্রীশ্রীরাধাষ্টমীর ব্রত মাহাত্ম্যঃ

পদ্মপুরাণে শ্রী নারদের প্রতি শিবঠাকুর বলেছিলেন,- হে দেবর্ষি, ব্রহ্মা প্রমুখ মহান সত্তমগনের নিত্য মহারাধ্যা যিনি, দেবতাগণ দূর থেকে যার সেবা করতে ইচ্ছা করেন, সেই শ্রীশ্রীরাধিকাদেবীকে সতত ভজনা করা উচিত। এই রাধানাম যে ব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণ নামের সঙ্গে কীর্ত্তন করেন, তার মাহাত্ম্য আমি কীর্ত্তন করতে সক্ষম নই, এমনকি শ্রী অনন্তদেবও নন।

প্রপঞ্চ লীলায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গা স্বরূপশক্তি গোলোকেশ্বরী রাধারাণী ভাদ্র মাসে শুক্লা অষ্টমী তিথিতে অনুরাধা নক্ষত্রে সোমবারে মধ্যাহ্ন কালে ব্রজমণ্ডলে শ্রীগোকুলের অনতিদূরে রাভেল নামক গ্রামে শ্রীবৃষভানু রাজা কীর্তিদা মায়ের ভবনে সকলের হৃদয়ে আনন্দ দান করে আবির্ভূত হন। শ্রীরাধারাণী প্রাননাথ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্যতীত এই রাধাষ্টমী তিথীর সম্যক মাহাত্ম্য কেউই বর্ণনা করতে পারেনা। শ্রীপদ্মপুরাণে (ব্রহ্মখণ্ড /) বলা হয়েছে,-

"একাদশ্যাঃ সহস্রেন যং ফলং লভতে নরঃ।

রাধা জন্মাষ্টমী পুণ্যং তস্মাং শত গুণাধিকম্" ।।

অর্থাৎ,- একহাজার একাদশী ব্রত পালন করলে যে ফল লাভ হয়, শ্রীরাধাষ্টমী ব্রত পালন করলে তার চেয়ে শতগুণ অধিক ফল লাভ হয়ে থাকে।

শ্রী পদ্মপুরাণে আরও বলা হয়েছে,-

) কোটি জন্মের অর্জিত পাপরাশি ভক্তিপূর্ণ রাধাষ্টমী ব্রত ফলে বিনষ্ট হয়।

) সুমেরু পর্বত প্রমাণ সোনা দান করলে যে ফল লাভ হয় একটি মাত্র রাধাষ্টমী ব্রত উৎযাপন করে তার শতগুণ অধিক ফল লাভ হয়।

) গঙ্গা ইত্যাদি সমস্ত পবিত্র তীর্থে স্নান করে যে ফল লাভ হয় একমাত্র বৃষভানুকন্যার জন্মাষ্টমী পালন করে সেই ফল লাভ হয়।

) পদ্মপুরাণে আরো বলা হয়েছে,

"রাধাষ্টমী ব্রতং তাত যো কুর্য্যাচ্চ মূঢ়ধী।

নরকান্ নিষ্কৃতি নাস্তি কোটিকল্পশতৈরপি ।।''

অর্থাৎ,- যে মূঢ় মানুষ রাধাষ্টমী ব্রত করে না, সে শতকোটি কল্পেও নরক থেকে নিস্তার পেতে পারেনা।

"স্ত্রীয়শ্চ যা না কৃবন্তি ব্রতমেতদ্ সুভপ্রদম। রাধাকৃষ্ণপ্রীতিকরং সর্বপাপপ্রনাশম্ ।।

অন্তে যমপুরীং গত্বা পতন্তি নরকে চিরম্।

কদাচিদ্ জন্মচাসাদা পৃথিব্যাং বিধবা ধ্রুবম্ ।।''

অর্থাৎ,- যে নারী শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের প্রীতিকর সর্ব পাপনাশক এই শুভপ্রদ মহাব্রত পালণ করে না, সে জীবনের অন্তকালে নরকে গিয়ে চিরকাল সেখানে যাতনা ভোগ করে। পৃথিবীতে থাকাকালীনও সে দুর্ভাগিনী হয়। এই মহাব্রত করলে শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের অভয় পাদপদ্মে অচলা অব্যভিচারিনী ভক্তি লাভ হয়ে থাকে।

রাধারাণী কে ? এই রাধা শব্দের অর্থই বা কি ?

রাধা শব্দের উৎপত্তি রাধ্ ধাতু থেকে। রাধ্ ধাতু থেকে নিস্পন্ন। রা+ধা = রাধা। রা শব্দে = ব্রহ্মাণ্ড ধা = শব্দে ধারণ করা বা আরাধনা করা। এখন এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মূল আশ্রয়ের তত্ত্ব হলেন সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ পরমব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণ। সেই শ্রীকৃষ্ণকে সর্বদা যিনি ধারণ বা আরাধনা করে থাকেন তিনিই রাধা।

"কৃষ্ণ ধয়তি ইতি রাধা "

"মমাধারা সদা তঞ্চ তবাত্মাহং পরস্পরম্

যথা তঞ্চ তথাহঞ্চ সমৌ প্রকৃতিপুরুষৌ।

হি সৃষ্টির্ভবেদ্দেবি দায়োরেকতরং বিনা "   ( ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ )

অর্থাৎ,- তুমি সদাই আমার আধার, আমি তোমারই আত্মা, যেখানে তুমি সেখানেই আমি, তুল্য প্রকৃতি পুরুষ।

অন্যদিকে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ শ্রীকৃষ্ণের তিনটি প্রধান শক্তি যথা সৎশক্তি, চিৎ শক্তি এবং আনন্দ শক্তি।"অনন্ত শক্তি মধ্যে কৃষ্ণের তিন শক্তি প্রধান ইচ্ছাশক্তি ক্রিয়াশক্তি জ্ঞানশক্তি নাম।আনন্দাংশে হলাদিনী, সদংশে সন্ধিনী চিদংশে সংবিৎ যারে করি মানি।। "   (চৈঃ চঃ)

আনন্দ ভাবে যে শক্তি ক্রিয়া করে, তার নাম হলাদিনী শক্তি। সেই হলাদিনী শক্তিই হলেন রাধারাণী এই শক্তির সাহায্যে তিনি নিজে স্বরুপানন্দ উপভোগ করেন এবং জীবজগৎকে ভক্তি রুপ আনন্দ প্রদান করেন। চৈতন্য চরিতামৃতে শ্রীল কবিরাজ গোস্বামী বলেছেন,-

"রাধা পূর্ণশক্তি কৃষ্ণ পূর্ণ শক্তিমান। দুই বস্তুর ভেদ নাহি শাস্ত্রেরপ্রমান।।"

তাহলে পূর্ণ শক্তিমানের শক্তি হলেন রাধা।যা কখনই পৃথক নয়।

"মৃগমদ গন্ধ তাহার যৈছে অবিচ্ছেদ। অগ্নি জ্বালাতে যৈছে নাহিকভু ভেদ।।''

মৃগনাভির সঙ্গে যেমন তার গন্ধ পৃথক করা যায় না, আগুনের থেকে যেমন তার দাহন ক্ষমতা পৃথক করা যায় না অনুরুপ ভাবেই রাধা কৃষ্ণ অভেদ তত্ব।

" অখিল রসামৃত সিন্ধু বারিধি শৃঙ্গার রসরাজ মুর্তিধর হলেন কৃষ্ণ। আর কৃষ্ণের মদনাক্ষ মহাভাব মুর্তিমতি হলেন রাধা।"

"রাধিকা হয়েন কৃষ্ণের প্রণয়-বিকার। স্বরুপ-শক্তি হলাদিনী নাম যাঁহার "।।[চঃচৈ]

অর্থাৎ,- কৃষ্ণ প্রেমের ঘনীভূত মূর্ত্তি। সেই হলাদিনী শক্তির মুর্তি হলেন রাধারাণী।

রাধারাণীর সৃষ্টি কিভাবে? এর উত্তর ব্রহ্মবৈবর্ত বলছেন,-

"আর্ব্বিভূব কন্যৈকা কৃষ্ণস্য বামপার্শ্বতঃ"

কৃষ্ণের বাম অঙ্গ থেকে রাধারাণীর সৃষ্টি। রাধাকৃষ্ণ কখনই পৃথক করা যায় না। রুপ পৃথক কিন্তু স্বরুপ এক।

"রাধা কৃষ্ণ ঐচ্ছে সদা একই স্বরুপ।

লীলারস আস্বাদিতে ধরে দুই রুপ।।''

তাই রাধা কৃষ্ণ এক এবং অভিন্ন।

সকলে রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে দুর্লভ মানব জীবনকে ধন্য করুন সকলে রাধারাণীর কৃপা লাভ করুন।

💐🦚হামার ধন রাধা শ্রীরাধা শ্রীরাধা💐🦚💐পরম ধন রাধা শ্রীরাধা শ্রীরাধা🦚💐

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...