💐পবিত্র রক্ষা বন্ধন 💐

🍑🍋🍌🍍🍎🍏🍐🍓🍒🍑

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I আজ পবিত্র রক্ষাবন্ধন। সবাইকে জানাই কৃষ্ণপ্রীতি শুভেচ্ছা।

এই পৃথিবীর সমস্ত কিছুই একে অপরের সঙ্গে এক নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ। মানব সংসারের এই বন্ধনের ভিত্তি হল স্নেহ,প্রেম ,মায়া। বিভিন্ন উৎসব এই বন্ধন কে আরো সজ়ীব করে তোলে। ভারত বর্ষের সব উৎসবেরই মূল মন্ত্র হল মিলনের মন্ত্র, ঐক্যের সুর। রাখী বন্ধন হল সেই রকমই একটি পারিবারিক মিলনের উৎসব। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিনে রাখী বন্ধন উৎসব পালিত হয়।এই দিনে বোন তার ভাই এর হাতে হাতে রাখী বেঁধে দেয়। এই বন্ধনের মধ্যে থাকে ভাই এর প্রতি বোনের আন্তরিক শুভকামনা, ভাই এর মনে থাকে বোনকে  রক্ষা করার দায়ীত্ববোধ।এই রাখী বন্ধন এক বন্ধন শক্তির প্রতিরূপ, যে শক্তি সকল প্রকার বাধা বিঘ্নতা, প্রতিবন্ধকতা, কাটিয়ে ভাই বোন কে জীবন যুদ্ধে জয় লাভ করার নীরব শপথ করায়।

এক কথায় রাখী যেন অনেক বেশি হৃদয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসে দুই বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিকে তাদের দায়িত্ববোধের মাধ্যমে। এই বন্ধন যেন সবার কাছেই এক আশীর্বাদ। এই বন্ধন যেন শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্কের বন্ধন নয় এই বন্ধন অনেক বেশি হয়ে ওঠে মানবতাবোধ বাঁচিয়ে রাখার বন্ধন। যার জন্য আজও অনেক জায়গায় অচেনা মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষার্থে অচেনা ভাই বা দাদারা ছুটে আসে এবং তাদের যে রক্ষা করে তাই শুধু নয় তাদের রক্ষার্থে নিজেদের প্রাণের ঝুঁকিও নিয়েছে তারা। এমনকি অনেকে শহীদ ও হচ্ছেন এই কাজে। তাই আজকের ভারতের ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক এই রাখী বন্ধনের উত্‍সব।

রাখী বন্ধনের পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা ও গুরুত্ব।

এই মাঙ্গলিক উৎসবের পিছনে আছে অনেক পৌরাণিক গল্পকথা ও ঐতিহাসিক কাহিনী। রাখী বন্ধন উত্‍সব নিয়ে ভারতীয় পুরাণে নানা রকম গল্প বা কাহিনী আছে। আসুন জেনে নি সেইসব গল্প বা কাহিনী..

পুরাণ মতে সুভদ্রা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ছোট বোন হওয়া সত্ত্বেও পঞ্চপাণ্ডবের পত্নী দ্রৌপদী কৃষ্ণকে দাদার মতো ভালোবাসত। শ্রীকৃষ্ণও দ্রৌপদীকে বোনের স্নেহ দিত। এই স্নেহ দেখে সুভদ্রার ঈর্ষা হতো। একদিন সুভদ্রা দাদা কৃষ্ণকে তার দ্রৌপদীর প্রতি এই অতি স্নেহ বত্‍সল হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তখন তাকে বলে, সঠিক সময়ে তিনি তার উত্তর পেয়ে যাবেন। তারপর একদিন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ যখন চেদী রাজ্যের রাজা শিশুপাল দ্বারা অত্যন্ত অপমানিত হন সেই সময় অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে তার বিনাশকারী অস্ত্র সুদর্শন চক্র দিয়ে শিশুপালের শির:চ্ছেদ করেন, সেই সময় তার আপন অস্ত্র সুদর্শন দিয়েই তার হাত কেটে যায় সেই মুহূর্তে দ্রৌপদী সেইখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি কৃষ্ণের এইরকম অবস্থা দেখে তার পরিহিত কাপড়ের একটা অংশ ছিঁড়ে নিয়ে ওই কাটা অংশে তৎক্ষণাৎ বেঁধে দেন রক্তপাত বন্ধ করে দেবার জন্য। এই ভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তার রক্তপাত বন্ধ করতে সাহায্য করেছিলেন দ্রৌপদী ,পরিবর্তে শ্রীকৃষ্ণ বিপদের সময় দ্রৌপদীর রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন এবং প্রতিশ্রুতি মতো যখন দ্রৌপদীর এইভাবেই পুরাণ অনুযায়ী রাখী বন্ধন উত্‍সবের প্রচলন হয়।

এছাড়া দানব রাজা বলি যখন তার শত যজ্ঞ পূর্ণ করেছিলেন তখন তিনি মনে মনে স্বর্গের অধিপতি হওয়ার বাসনা করেন, দেবরাজ ইন্দ্র এই মনোবাসনা বুঝতে পেরে ভগবান বিষ্ণুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন এবং তাকে এই ঘোরতর সমস্যা থেকে মুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেন।তখন ভগবান বিষ্ণু বামন অবতার ধারণ করে রাজা বলির কাছে বটুক ব্রাহ্মণ সেজে  আসেন এবং তার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন। রাজা বলি তখন তাকে বলেন তুমি কি চাও বলো,আমি তোমাকে তাই দেবো। সেই সময় ব্রাহ্মণ বেশধারী ভগবান শ্রীবিষ্ণু তার কাছে যজ্ঞের জন্য তিন পদ ভূমি, (জমি) চেয়ে বসেন। রাজা বলিও তা পূর্ণ করার প্রতিজ্ঞা করেন। তখন বামন রূপে ভগবান বিষ্ণু এক পায়ের দ্বারা স্বর্গরাজ্য এবং অন্য পায়ের দ্বারা সমস্ত পৃথিবী নিজের অধিকারে নিয়ে নেন এখন তার কাছে এক পদ জমি বাকি ছিল।

তখন নিরুপায় হয়ে রাজা বলি বামন রূপী ব্রাহ্মণকে তার অন্তিম পদ তার মাথায় রাখতে বলেন এবং এইভাবে এক পা রাখলে রাজা বলি তিনি সুতলপুরি বাসী হন। এইভাবে তার কথা রাখতে পারার জন্য ভগবান বিষ্ণু তার নিজরূপ ধারণ করে রাজা বলির উদ্দ্যেশ্যে বলেন, যে তিনি তার এইরূপ প্রতিজ্ঞা রাখায় সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তার যদি কিছু চাওয়ার থাকে তাহলে ভগবান বিষ্ণুর কাছে কোনরূপ সংকোচ ছাড়াই চাইতে পারেন। তখন রাজা বলি ভগবান বিষ্ণুকে সবসময় তার কাছে যেন তিনি থাকেন এইরূপ একটি বর ভিক্ষা করেন। এইভাবে বর দেওয়ার ফলে ভগবান বিষ্ণুকে রাজা বলির কক্ষের দ্বাররক্ষী হতে হয়। ভগবান বিষ্ণুর পত্নী মা লক্ষী যখন এই বিষয় জানতে পারেন তখন তিনি নারদের কাছে এই অবস্থা থেকে ভগবান বিষ্ণুর উদ্ধারের  উপায় জানতে চান। নারদ তখন মা লক্ষীকে উপদেশ দেন, তিনি যেন রাজা বলিকে রাখী বেঁধে তাকে নিজের ভাইয়ের মর্যাদা দেয় এবং বিনিময়ে যখন রাজা বলি তাকে কিছু দিতে চাইবে তখন মাতা লক্ষী যেন ভগবান বিষ্ণুকে চেয়ে নেন। এইভাবে রাখী বেঁধে নারদের উপদেশ মতো মা লক্ষী রাজা বলিকে রাখী পরিয়ে ভাই বানিয়ে তার পতি ভগবান বিষ্ণুকে উদ্ধার করেন। যেদিন তিনি রাজা বলিকে রাখী বেঁধেছিলেন সেই দিনটি শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথি ছিল,আর এই থেকে তাই শ্রাবণ  মাসের পূর্ণিমা তিথীতে রাখী বন্ধন উত্‍সব চালু হয়।

ঐতিহাসিক নানা বিবরণের মধ্যেও রাখী বন্ধন উত্‍সব পালনের সত্যতা সম্বন্ধে জানা যায়। আরও কথিত আছে ভগবান যম রাজের বোন যমুনা দাদার দীর্ঘায়ু কামনা করে তার হাতে রাখি বেঁধেছিলেন, সেই থেকেও রাখী বন্ধন উত্‍সব শুরু হয় বলে জানা যায়।