Thursday, August 13, 2020

 💐 শ্রীকৃষ্ণের অবতার সমূহ💐

🍁🦚💐🏵️🌺🌹🌺🏵️💐🦚🍁
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।
তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’
গুরবে গৌরচন্দ্রায় রাধিকায়ৈ তদালয়ে।
কৃষ্ণায় কৃষ্ণভক্তায় তদ্ভক্তায় নমো নমঃ।।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামার গৃহ থেকে বিদায় নিয়ে প্রভাতে রুক্মিণীদেবীর গৃহে এসেছেন তাঁকে কৃপা করার জন্য। রুক্মিণীদেবী পূর্ব থেকেই সুসজ্জিতা হয়েছিলেন। তাঁর সখীরা তাড়াতাড়ি সুবাসিত বারি এনে দিলেন, আর তা দিয়ে উত্তমরূপে শ্রীকৃষ্ণের পাদ প্রক্ষালন করতে করতে ভগবানের পাদপদ্ম হৃদয়ে ধারণ করে রুক্মিণীদেবী অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। রুক্মিণীদেবীকে অকস্মাৎ ক্রন্দন করতে দেখে, ভগবান কৃষ্ণ অবাক হয়ে বলতে লাগলেন, “কি কারণে তুমি কাঁদতে শুরু করেছ? আমি কি তোমার কোনও আদেশ অবজ্ঞা করেছি অথবা তোমার কাছে কোনও দোষ করেছি? পূর্বে তোমার সঙ্গে পরিহাস করে একবার আমি তোমার মনে দুঃখ দিয়েছিলাম, সেই কথা মনে পড়াতে কি তুমি এমন ক্রন্দন করছ? কিন্তু তোমাকে আমি যেভাবে প্রাণের চেয়ে ভালবাসি, সেভাবে আর কাউকে ভালবাসি না। তা হলে তোমার মনের কথা আমাকে দয়া করে বল, কি জন্য তোমার দুঃখ হল???
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট এই প্রকার উক্তি শ্রবণ করে রুক্মিণীদেবী বলতে লাগলেন, ‘’যেখানে তুমি আমার প্রাণনাথ আর তোমার পাদপদ্মের সেবা যে লাভ করতে পারে, তার আবার কিসের দুঃখ? ব্রহ্মা,শিব সকলেই তোমার পাদপদ্মের সেবা লাভের জন্য কাতর হয়ে প্রার্থনা করে। তুমি জগতের সকলের মনের কথা জান, অথচ নিজের প্রিয়ার মনের কথা জান না। যদি তুমি ‘রাধার ভাব’ হৃদয়ে ধারণ করতে, তা হলে আমার মনের কথা জানতে পারতে। রুক্মিণীদেবীর শ্রীমুখ থেকে শ্রীমতী রাধারাণীর কথা শ্রবণ করে কৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ চমকিত হয়ে রুক্মিণীদেবীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘’তুমি যা বললে, তা আবার বল, আমি ঠিক শুনতে পাইনি। তোমার কাছ থেকে আবার শোনার জন্য আমার হৃদয় ব্যাকুলিত হচ্ছে । আমার মনে হচ্ছে এই জগতে এমন কিছু দুর্লভ বস্তু রয়েছে, যা আমি এখনও জানি না। হে দেবী! দয়া করে তুমি আমাকে সেই কথা আর একবার শোনাও!
এভাবে দ্বারকায় বসে যখন শ্রীকৃষ্ণ হৃদয়ের আর্তি প্রকাশ করছিলেন, তখন রুক্মিণীদেবী করুণ স্বরে বলতে লাগলেন, ‘’তুমি জগতের নাথ, কোন কিছুই তোমার অগোচর নয়, অথচ তুমি আমার মনের দুঃখ জান না। আমার একমাত্র ভয় হয় যদি আমি তোমার চরণসেবার সুখ থেকে বঞ্চিত হই। কারণ তোমার পাদপদ্মে এমন অমৃত রয়েছে যে, সে আর এই জগতের কিছুই কামনা করে না। ব্রহ্মা, শিব, নারদ সকলেই তোমার পাদপদ্মের সেবার জন্য ধ্যান করছে, এমন কি বিষ্ণুর বক্ষবিলাসী লক্ষীদেবী পর্যন্ত তোমার চরণ-সেবার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। অথচ তুমি তোমার পাদপদ্মের মাধুরীর মহিমা জান না। তোমার পাদপদ্মের বিরহের যে কি জ্বালা, তা একমাত্র বৃন্দাবনের শ্রীমতি রাধারানীই জানেন; তাঁর ভাগ্যের সীমা নেই। রাধার প্রেমে তুমি এখনও বাঁধা, আর তাঁর কথা শোনা মাত্রই দেখছি তোমার আঁখি অশ্রুতে ছল ছল করছে। সুতরাং তুমি রাধাকে এখনও ভুলতে পারনি।
শুধু তাই নয়, তুমি দিবানিশি অন্তরে শ্রীমতী রাধার নাম জপ করছ। তাই হে প্রাণনাথ! আমি ভীত হয়ে পড়েছি, কারণ শ্রীমতী রাধারাণী বৃন্দাবনে তোমার বিরহে যেভাবে দিবানিশি অশ্রু বর্ষণ করে উন্মাদের মতো প্রলাপ বকছে, আমিও হয়ত একদিন তোমার পাদপদ্মের সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারি। রুক্মিণীদেবীর এই প্রকার হৃদয়-বিদারক বাক্য শ্রবণ করে ভগবান কৃষ্ণের অন্তর উল্লসিত হল, চক্ষু রক্তিমবর্ণ ধারণ করে জলে পূর্ণ হল এবং বলতে শুরু করলেন, ‘’শ্রীরাধিকার প্রেমের মহিমা কি রকম, ওই প্রেমের দ্বারা শ্রীরাধা আমার যে অদ্ভুত মাধুর্য আস্বাদন করেন, সেই মাধুর্যই বা কি রকম এবং আমার মাধুর্য আস্বাদন করে শ্রীরাধা যে সুখ অনুভব করেন, সেই সুখই বা কি রকম, এই সকল আমি অবশ্যই আস্বাদন করব। এভাবেই আমি প্রেমের সুখ আস্বাদন করব।
ঠিক সেই মুহূর্তে নারদ মুনি দ্বারকায় উপস্থিত হলেন। রুক্মিণীদেবী উপযুক্তভাবে অতিথি সৎকার করে নারদ মুনিকে বসতে আসন দিলেন। কৃষ্ণও নারদ মুনিকে আলিঙ্গন করে, কুশল জিজ্ঞাসা করে আগমনের হেতু জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্ত নারদ মুনি কৃষ্ণপ্রেমে বিহ্বল, চক্ষু অশ্রুতে পূর্ণ এবং কণ্ঠের স্বর গদগদ, তাই কিছু বলতে পারছিলেন না। শ্রীকৃষ্ণ বললেন,- ‘’নারদ! তুমি আমার প্রাণাধিক প্রিয় অথচ তোমার অন্তর দেখছি বিষন্ন। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার মনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পার।‘’ তখন নারদ মুনি বলতে শুরু করলেন, ‘’তুমি হচ্ছ অন্তর্যামী, সব কিছুই তুমি জান; তোমার গুণকথা শ্রবণই হচ্ছে আমার আহার। সেই লোভে সারা সংসার ঘুরে বেড়ালাম অথচ কৃষ্ণনাম কোথাও শুনতে পেলাম না। সমস্ত সংসার কৃষ্ণনামে বিমুখ, এটিই আমার শোকের কারণ। লোকের নিস্তারের কোনও উপায় আমি দেখতে পাচ্ছি না।
শ্রীকৃষ্ণ তখন নারদ মুনিকে সান্ত্বনার নিমিত্ত বলতে লাগলেন, ‘’তুমি কি ভুলে গেলে, পার্বতী শিবের কাছ থেকে মহাপ্রসাদের কণিকা না পাওয়াতে সে শিবের সামনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে,- ‘তুমি যেমন মহাপ্রসাদের কণিকা আস্বাদন করে কৃষ্ণপ্রেমে উদ্দণ্ড নৃত্য করছ, অচিরেই আমি এই মহাপ্রসাদ সকল লোকের মধ্যে বিতরণ করব, যাতে সাধারণ লোকেরাও মহাপ্রসাদের কৃপা লাভ করে কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর হয়। তা ছাড়া রুক্মিণীর কাছ থেকে আজ এক অপরূপ কথা আমি শ্রবণ করলাম। তা শুনে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, শীঘ্রই রাধার ভাব ও কান্তি নিয়ে অতি দীনহীনভাবে আমি কলিতে অবতীর্ণ হয়ে সকলকে কৃষ্ণপ্রেমে ডুবাব।‘’ সেই সম্বন্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন,- ‘’যুগধর্ম প্রবর্তাইমু নাম - সংকীর্ত্তন। চারি ভাব-ভক্তি দিয়া নাচামু ভুবন।। আপনি করিমু ভক্তভাব অঙ্গীকারে। আপনি আচরি’ ভক্তি শিখাইমু সবারে।।" (চৈঃ চঃ আদি)
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় নারদ মুনিকে আরও বললেন যে, শীঘ্রই তিনি কলিতে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত শ্রীমতী রাধারাণীর ভাব ও অঙ্গকান্তি নিয়ে এবং সুন্দর তনু, দীর্ঘ কলেবর ও আজানুলম্বিত বাহু নিয়ে নিজ ভক্তিযোগ সংকীর্ত্তন যজ্ঞ প্রবর্তন করবার জন্য নিজ অন্তরঙ্গ পার্ষদ পরিবৃত হয়ে নবদ্বীপে শচীগৃহে জন্মগ্রহণ করবেন। এই কথা প্রতিশ্রুতি দিতে দিতেই শ্রীকৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ নারদ মুনির নিকট অপূর্ব রূপমাধুরী সমন্বিত গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুরূপে প্রকাশিত হলেন। সেই দিব্যরূপ দেখে নারদ মুনি প্রেমসিন্ধুতে ভাসতে লাগলেন। তাঁর আঁখি থেকে সহস্রধারায় অশ্রুপাত হতে লাগল। সেই গৌররূপের তেজ কোটি কোটি সূর্য তেজের থেকেও ঝলমল করছিল। তখন নারদ মুনি প্রেমে মূর্ছিত হয়ে চোখ মুদ্রিত করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে কৃষ্ণ তাঁর সেই রূপ সম্বরণ করলেন। তখন নারদ মুনি গৌররূপ আর দেখতে না পেয়ে, পুনঃ দর্শনের জন্য ব্যাকুল হলেন। তখন দ্বারকায় শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে,- ‘’নারদ! তোমার উদ্বিগ্ন হবার কোন কারণ নেই, তুমি অবাধে সর্বত্র যাতায়াত করতে পারবে।
এখন গিয়ে ব্রহ্মা, শিব, আদি সকলের কাছেপ্রচার কর যে, আমি কলিযুগে সপার্ষদ অবতীর্ণ হয়ে নাম সংকীর্ত্তনের মাধ্যমে কৃষ্ণপ্রেম প্রদান করব। ভগবান কৃষ্ণের এই কথা শুনে নারদ মুনির সমস্ত দুঃখ অপসারিত হল এবং বীণা বাঁজিয়ে গৌররূপের চিন্তা করতে করতে দ্বারকা নগরী থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন। দেবর্ষি নারদ কৃষ্ণের পরম চিত্তাকর্ষক গৌররূপ দর্শনে অতীব প্রেমাপ্লুত হয়ে, সেখান থেকে গৌরমহিমা সংকীর্ত্তন করতে করতে নৈমিষারণ্যে এসে উপস্থিত হলেন। সেখানে ভক্তশ্রেষ্ঠ উদ্ধব মুনিবরকে কলিহত জীবের পরিত্রাণের উপায় জিজ্ঞাসা করলে, দেবর্ষি নারদ তাঁর নিকট পূর্বোক্ত সকল বৃত্তান্ত বর্ণনা করে সর্বযুগের সার কলিযুগ এবং তার যুগধর্ম সংকীর্ত্তনের মাহাত্ম্য কীর্তন করে, কৈলাসে বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ দেবাদিদেব শম্ভুর সমীপে উপস্থিত হলেন। কৈলাসে নারদ মুনি পার্বতীকে তাঁর পূর্ব প্রতিজ্ঞা স্মরণ করবার জন্য মহাপ্রসাদের মাহাত্ম্য জেনে, সেই লোভবশত দ্বাদশ বর্ষ লক্ষীদেবীর সেবা করে তাঁর কৃপায় যে মহাপ্রসাদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন সেই কথা জ্ঞাপন করলেন।
তারপর নারদ মুনি ব্রহ্মার নিকট উপস্থিত হয়ে কলিযুগে গৌরসুন্দর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অবতরণের কথা সংকীর্ত্তন করলে, ব্রহ্মা দেবর্ষি নারদের নিকট শ্রীমদ্ভাগবত থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে কলিযুগে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অবতরণের কথা দিব্য আনন্দে কীর্ত্তন করলেন এবং এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হবার সময় সকল দেবতা সহ তিনিও যে আসবেন, সে কথাও প্রকাশ করলেন। অতঃপর মর্তলোকে অবতীর্ণ হওয়ার সময় শ্রীমতি রাধিকার ভাবকান্তি অঙ্গীকারপূর্বক রুক্মিণী, সত্যভামা আদি নিত্য পরিকর সহ সংকীর্ত্তনরূপ অস্ত্র নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুরূপে, শ্রীবলরাম শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুরূপে, মহাবিষ্ণু অদ্বৈত প্রভুরূপে, তা ছাড়া অসংখ্য পরিকর অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং সকলেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সংকীর্ত্তন যজ্ঞে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তারপর শ্রীঅদ্বৈত আচার্য প্রভু ও নামাচার্য হরিদাস ঠাকুরের হুঙ্কারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে ধরাধামে অবতরণের কাহিনী আমরা শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী রচিত শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত ও অন্যান্য গ্রন্থ থেকে জানতে পারি। সমাপ্ত
🍁জয় শচীনন্দন গৌরহরির জয়🍁

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...