🌻🌺🍁💐🏵️💐🍁🌺🌻
শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ
সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I
হরে কৃষ্ণ, আগামী ১২/০৮/২০২০ ইং রোজ - বুধবার পরাৎ পরব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী। জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে সবাইকে জানাই অগ্রীম কৃষ্ণপ্রীতি এবং শুভেচ্ছা।
চন্দ্রমা ধরে হিন্দু শাস্ত্রে যে ক্যালেণ্ডার হয় তাতে অষ্টমী তিথিতে জন্মেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ৷ হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য দেখা যায়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি প্রতি বছর ইংরাজি ক্যালেণ্ডারে আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনও এক সময়ে পড়ে। বালগোপাল, নন্দলাল, শ্রীকৃষ্ণ, কাহ্না, আদরের গোপালকে সবাই এক একটি নামে ডাকেন ৷ বলা হয় ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রী কৃষ্ণ, কারাগারে জন্ম নিয়েছিল মাতা দেবকীর গর্ভে ৷ কৃষ্ণজন্মের শুভ তিথিটিই ঘরে ঘরে জন্মাষ্টমী রূপে পালিত হয় ৷
শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কোন দিন পালন করব? কেন আমরা ১২ তারিখে জন্মাষ্টমী উপবাস পালন করছি?
পঞ্জিকাতে অষ্টমীতিথী দুই দিন লিখেছে। ১১ তারিখ সাধারণত ১২ তারিখ গোস্বামী মতে। কিন্তু এসব পঞ্জিকা কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত দেননি। অষ্টমীতিথী ১৫ দিন পর পর আসে। তাহলে তো ১৫ দিন পর পর পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী হওয়ার কথা। কিন্তু পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জম্মের সময় কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমীতিথী+রোহিনী নক্ষত্র। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, বৈদিক শাস্ত্রে সনাতন ধর্মের আচার অনুষ্ঠানক্ষত্র গণনা করা ও পালন করার নির্দেশনা পাওয়া যায় চন্দ্র ও নক্ষত্রের মিলিত হিসাব অনুসারে। তাই জন্মাষ্টমী ব্রত করতে হলে অষ্টমীর সাথে রোহিণী নক্ষত্র যুক্ত আছে কিনা তা দেখতে হবে। তাই আগামী ১২ আগষ্ট অষ্টমীতিথীর সাথে রোহিণী নক্ষত্র যুক্ত আছে বিধায় তাই সমস্ত শুদ্ধ বৈষ্ণব সম্প্রদায় কর্তৃক (১২ / ০৮ / ২০২০ ইং) রোজ বুধবার জন্মাষ্টমী ও এর উপবাস পালিত হবে।
এই বিষয়ে সমস্ত শাস্ত্রের কী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা বিচার করলেই সঠিক সমাধানে আসা যাবে।শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী নির্ণয় করতে গিয়ে শাস্ত্রে বলা হয়েছে,-
"কৃষ্ণোপাস্যাষ্টমী ভাদ্রে রোহিণ্যাঢ্যা মহাফলা।
নিশীথেহত্রাপি কিঞ্চেন্দৌজ্ঞেবাপি নবমীযুতা।।''
অর্থাৎ, ভাদ্রমাসে কৃষ্ণাষ্টমী উপবাস যোগ্যা। রোহিণী নক্ষত্রযুক্তা হলে আরও অধিক ফলপ্রদা। আর নবমী তিথি সংযুক্তা হলে আরও অধিক ফলপ্রদা হয়।অর্থাৎ নবমী তিথি যুক্ত জন্মাষ্টমী অধিক শ্রেষ্ঠ। অন্যদিকে পূর্বতিথি সপ্তমী যা বিদ্ধা জন্মাষ্টমী সর্বদা ত্যজ্য।
★পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে,
"পঞ্চগব্যং যথা শুদ্ধং ন গ্রাহ্যং মদ্যসঙযুক্তম্।
রবিবিদ্ধা তথা ত্যজ্যা রোহিণী সহিতা যদি।।''
অর্থাৎ,- যদিও পঞ্চগব্য পবিত্র, কিন্তু এতে মদ মিশলে আর তা গ্রহণযোগ্য থাকেনা, তেমনিভাবে রোহিণী নক্ষত্র সংযুক্তা হলেও সপ্তমীবিদ্ধা অষ্টমী গ্রহণযোগ্য নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, সপ্তমী তিথি থাকার ঐ দিন অষ্টমী হলেও তা জন্মাষ্টমী নয়। এজন্য ১২ আগষ্ট জন্মাষ্টমী পালন করা কর্তব্য। এবিষয়ে শাস্ত্রের অনুমোদন রয়েছে যা প্রথম শ্লোকটিতে আলোচিত হয়েছে ।
এবছর জন্মাষ্টমীর পুজো হবে ১২ আগষ্ট বুধবার ৷ তবে ১১ আগষ্ট সূর্যোদয়ের পরই শুরু হয়ে যাচ্ছে জন্মাষ্টমী তিথি ৷ ওই দিন রাতে পুজোর শুভ মুহূর্ত শুরু হবে ২৪:০৪:৩১ থেকে ২৪:৪৭:৩৮ পর্যন্ত ৷ অর্থাৎ মোট ৪৩ মিনিট ৷ এছাড়া, ১৩ অগাষ্ট রাত ১২ টা বেজে ৪৮ মিনিট থেকে রাত ২ টো বেজে ৩৪ মিনিট পর্যন্ত থাকবে সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন পৃথিবীতে এসেছেন তিনি বলেছেন তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী শ্রীমদ্ভবদগীতা তে,-
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মনং সৃজামহ্যম্।।
পরিত্রাণায় সাধূনাং
বিনাশায়
চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি
যুগে যুগে।। (গীতা ৪ / ৭ -৮ )
অর্থাৎ,- হে ভারত! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুথান হয়, আমি নিজেকে প্রকাশ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হই। সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুষ্কৃতিকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হই।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশেষত বৈষ্ণবদের কাছে জন্মাষ্টমী একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। উত্তর ভারতে খুবই জনপ্রিয় জন্মাষ্টমী পূজো ৷ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় ধুমধাম করে পালন হয় দহিহাণ্ডি উৎসব ৷ দহিহাণ্ডি উৎসবে ছোটরা মিলে উঁচু কোনও জায়গায় বেঁধে রাখা মাখনের হাণ্ডি ভাঙতে চেষ্টা করে। বাংলাতেও জন্মাষ্টমীর দিনে ঘরে ঘরে দুধ-ঘি-মধুতে স্নান সেরে নতুন জামা, গয়না পরে, ফুল-চন্দন-আতরে সেজে ওঠেন বালগোপাল ৷
রীতি
জন্মাষ্টমী পূজোর রীতি শুরু হয় সূর্য ডোবার পর। ভজন, পুজো, মধ্যরাতে উপবাস ভাঙার পর পরদিন পালিত হয় নন্দ উৎসব। এই দিন গোপালকে ৫৬ ভোগ দেওয়ার নিয়ম। কৃষ্ণের প্রিয় মাখন, মিছরির সঙ্গে ফল, নানা রকম মেওয়া, নিমকি দেওয়া হয়। ভাদ্র মাসে জন্ম হওয়ার কারণে পাকা তাল কৃষ্ণের প্রিয়। জন্মাষ্টমীতে তাই তালের বড়া, তাল ক্ষীর, তালের লুচির মতো নানাবিধ সুস্বাদু খাবারে সাজিয়ে দেওয়া হয় থালা। এ ছাড়াও মঠরি, রাবড়ি, মোহনভোগ, ক্ষীর, জিলিপি মতো নানা রকম মিষ্টি, শাক, দই, খিচুড়ি, দুধ, কাজু, মোরব্বা সব কিছু দিয়ে তৈরি হয় ছাপ্পান্ন ভোগ।
🏵️জয় পতিত - পাবন পরম করুণাময় শ্রীভগবানের জয়🏵️
No comments:
Post a Comment