Wednesday, August 19, 2020

 

🌷🌻💐লীলাময় শ্রীকৃষ্ণ💐🌻🌷

💐🌷🌻💞🏵️💐🌺💐🏵️💞🌷🌻💐

বিশেষ পোষ্ট

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

‘’হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অসুর সংহার করেন নাকি উদ্ধার করেন?

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর আবির্ভাবের উদ্দেশ্য বিষয়ে ঘোষণা করে বলেছেন, ‘’পরিত্রাণায় সাধুনাং’’, যারা ভগবানের ভক্ত, সাধু, তাদের পরিত্রাণ করা, ‘’বিনাশায় দুষ্কৃতাম্’’,  যারা সাধু নয়, উপরন্তু সাধু এবং শাস্ত্রের উপর অত্যাচার করে, তাদের বিনাশসাধন এবংধর্ম সংস্থাপন’, জীবের যে প্রকৃত ধর্ম কৃষ্ণভক্তি তা স্থাপন করা। কিন্তু প্রশ্ন হইতে পারে, যিনি পরমেশ্বর ভগবান, তিনি কী চাইলেই অসুরদের মনোবৃত্তি পরিবর্তন করতে পারেন না? এর উত্তরে বলা হয়েছে, ভগবান সবাইকে কিছু ক্ষুদ্র স্বাধীনতা দিয়েছেন। জীব চাইলে এর ব্যবহার কৃষ্ণসেবাতেও করতে পারেন আবার কৃষ্ণের বিরুদ্ধেও করতে পারেন এবং এর ফলাফলও নিজেই ভোগ করে।

 

স্বাধীনতা যদি না থাকত, তবে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কৃষ্ণভক্তি যাজন করছেন, সেটি আর স্বতঃস্ফূর্ত হতো না, রোবট বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো হতো। যাই হোক ভগবান যখন আসেন, তিনি অসুরদের নিধন করেন, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তিনি তাদের শত্রু। বরং তিনি সকলের পিতা এবং সকলের প্রতি সমদর্শী, সমভাবাপন্ন। ভগবানের এই আচরণ শত্রুতা বা হিংসাত্মক নয়, বরং তা সমস্ত অসুরদের জন্যই কল্যাণপ্রদ। ঠিক যেমন পিতা-মাতা তাদের সন্তানকে শাসন করেন- সেটিও সন্তানের মঙ্গলের জন্য। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাল্যলীলায় অসংখ্য অসুর বধ করেন এবং কীভাবে তাঁদের মঙ্গল সাধন করেন তা এখন তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

পুতনা বধ

কংসের নির্দ্দেশে পুতনা নামক শিশুহন্তা ডাইনি ব্রজ মণ্ডলে অসংখ্য শিশু হত্যা করে পরিশেষে নন্দ মহারাজের গৃহে কৃষ্ণকে বধ করতে আসেন। পুতনা অতি সুন্দরী নারীর ছদ্মবেশ ধারণ করে নন্দ মহারাজের গৃহে প্রবেশ করেন। কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তার স্তনে মহাভয়ঙ্কর কালকূট বিষ লাগিয়ে এসেছিল। যেহেতু তার ছদ্মবেশী রূপে যশোদা মাতা প্রভৃতি সকলেই মুগ্ধ হয়েছিলেন, পুতনাকে তারা কৃষ্ণকে স্তন পান করাতে বাধা দেন নি। কিন্তু পুতনা ছয় দিনের কৃষ্ণকে হত্যা করতে এসে নিজেই নিহত হন। কৃষ্ণ পুতনার স্তন পান করার সাথে সাথে পুতনার প্রাণবায়ুও শুষে নেন। কৃষ্ণ কিন্তু পুতনার প্রতি বৈরীভাবাপন্ন ছিলেন না। পুতনা যেহেতু শ্রীকৃষ্ণকে কোলে নিয়ে তাঁকে তার বুকের দুধ পান করতে স্তন দান করেন, তাই শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে মাতারূপে গ্রহণ করেন। তিনি পুতনাকে মাতৃপদ প্রদান করেন।

পুতনার পূর্বজন্মের ইতিহাস

পুতনার পূর্বজন্মের কাহিনীটি অত্যন্ত চমকপ্রদ। প্রহ্লাদ মহারাজের পৌত্র বলী মহারাজ তার জাগতিক গুরু শুক্রাচার্যের নির্দ্দেশে স্বর্গ দখল করেন এবং ইন্দ্রত্বপদ প্রাপ্ত করা জন্য একশত অশ্বমেধ যজ্ঞ আয়োজন করেন। তখন দেবতাদের অনুরোধে ভগবান শ্রীবিষ্ণু বামন অবতার ধারণ করে বলী মহারাজের সব কিছু হরণ করেন। শ্রীমদ্ভাগবতে দেখতে পাই, যদিও দেবতারা বামনদেবের মাধ্যমে স্বর্গরাজ্য ফিরে পান, কিন্তু বলী মহারাজ তাঁর ভক্তির দ্বারা বামনদেবকে বশ করে নেন। এমনকি এখনও বলীমহারাজ বামনদেবের দ্বারা সুরক্ষিতভাবে সুতললোকে বাস করছেন।

 

এদিকে ভগবান বামনদেব যখন বলী মহারাজের নিকট আসেন তখন বামনদেবকে দর্শন করে মহারাজ বলীর ভগ্নী রত্নমালার হৃদয়ে বাৎসল্যভাব জাগ্রত হয় এবং তিনি তাকে সন্তান হিসেবে পেয়ে স্তন্যপান করাতে বাসনা করেন। কিন্তু বামনদেবের দ্বারা বলীর সবকিছু হরণ হইতে দেখে তিনি এই শিশুটিকেই বিষপানে হত্যা করার মনোবাসনা করেন। ভগবান যেহেতু তাঁর মনের ভাব জানতেন, তাই তিনি উভয়টিই গ্রহণ করলেন। কিন্তু ভগবানের কৃপা দেখুন! তিনি রত্নমালার বৈরীভাবকে গুরুত্ব না দিয়ে তার বাৎসল্যভাবকেই অধিক গুরুত্ব প্রদান করলেন। তিনি শিশুঘাতিনী পুতনা হিসেবে তাকে বধ করলেন, কিন্তু পরিশেষে তাকে 'মাতা' হিসেবেই গ্রহণ করলেন।

শকটাসুর বধ

কৃষ্ণ যখন প্রথম হামাগুড়ি দেন, নন্দ মহারাজ মা যশোদা সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে উত্থান উৎসবের আয়োজন করেন। এতে অসংখ্য ব্রাহ্মণ সমবেত হয়ে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করছিল। সর্বত্র আনন্দময় পরিস্থিতি। মা যশোদা কৃষ্ণকে স্নান করিয়ে সুন্দর বস্ত্র-অলঙ্কারে ভূষিত করে ব্রাহ্মণদের বেদপাঠ শ্রবণ করছিলেন। এসময় কৃষ্ণ ঘুমিয়ে পড়লে তিনি তাকে একটি থালা-বাসন ভর্তি শকট বা গাড়ির ছায়ায় শুইয়ে রেখে অতিথিদের যত্ন নিতে যান। কিন্তু হঠাৎ কৃষ্ণের নিদ্রাভঙ্গ হলে তিনি দেখলেন তার মা তাকে রেখে চলে গিয়েছেন, ছোট্ট কৃষ্ণ অভিমানবশত কাঁদতে কাঁদতে হাত-পা ছুড়তে থাকেন। সেই সময় কংসের নির্দ্দেশে এক ভয়ানক অসুর শকট গাড়ি রূপ ধারণ করে কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করেন আর একপর্যায়ে কৃষ্ণের পাদস্পর্শে গাড়িটি দূরে ছিটকে পরে ভেঙ্গে যায়। এই শকটটি সাধারণ ছিল না। কংসের নির্দেশে শকটাসুর, যে ছিল এক ভয়ানক অসুর, সে কৃষ্ণকে বধ করতে সেখানে গাড়িতে প্রবেশ করেন। পরিশেষে সে কৃষ্ণের পদস্পর্শে নিহত হন।

শকটাসুরের পূর্বজন্মের ইতিহাস

পূর্বজন্মে শকট ছিল হিরণ্যাক্ষের পুত্র উৎকচ। অত্যন্ত শক্তিগর্বে উদ্ধত উৎকচ লোমশ মুনির আশ্রমে গিয়ে গাছপালা প্রভৃতি ভেঙে দিয়ে সবকিছু তছনছ করে দেয়। তখন লোমশ মুনি তাকে ভূতদেহ প্রাপ্ত হওয়ার অভিশাপ দেন, কেননা ভূতেরা মানুষের বাড়িঘর তছনছ করতে পছন্দ করে। কিন্তু তখন উৎকচ অতিশয় ভীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে মুনির হৃদয়ে দয়ার উদ্রেক হয়। তিনি উৎকচকে আশীর্বাদ করেন যে, বৈবস্বত মন্বন্তরে দ্বাপর যুগে যখন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং অবতীর্ণ হবেন, তখন তাঁর পদস্পর্শে তোমার উদ্ধার হবে। ততদিন সে বায়বীয় শরীর নিয়ে বিচরণ করতে থাক।

তৃণাবর্ত বধ

একদিন নন্দ মহারাজের এক বছর বয়সের শিশুপুত্র কৃষ্ণকে হত্যা করবার উদ্দেশ্যে কংস তৃণাবর্তকে গোকুলে পাঠায়। শিশু কৃষ্ণকে মা যশোদা ভূমিতে রেখে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সেই সময় মায়াবী রাক্ষস ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় করলো। এভাবে কৃষ্ণকে ধূলিঝড়ের মধ্যে হরণ করে নিয়ে সে আকাশে উঠে গেল। তখন শিশু কৃষ্ণ তৃণাবর্তের গলা এমনভাবে চেপে ধরেছিল যে, তৃণাবর্ত কৃষ্ণের হাত ছাড়াতে পারল না, তার কাছে মনে হলো ঠিক যেন কোনো যাঁতাকল গলাটাকে চেপে রেখেছে। তৃণাবর্ত দম আটকে মারা গেল। এদিকে মা-বাবা গোকুলবাসীরা ঝড়ের মুখে কৃষ্ণকে খুঁজেই পাচ্ছিলেন না, তাঁরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তৃণাবর্ত মরে যেতেই ঝড় সম্পূর্ণ রূপে থেমে গেল। তখন তাঁরা দেখলেন একটি সুন্দর স্থানে শিশু কৃষ্ণও খেলা করছে আপন মনে। আর তার কাছাকাছি একটা রাক্ষসের মৃতদহ পড়ে আছে।

তৃণাবর্তের পূর্বজন্মের ইতিহাস

পাণ্ডুদেশে সহস্রাক্ষ নামে এক ধর্মনিষ্ঠ অতিথি সেবাপরায়ণ প্রতাপশালী রাজা ছিলেন। একদিন তিনি নর্মদা নদীর তীরে বৃক্ষলতা পরিবৃত এক সুন্দর মনোরম স্থানে বহু সুন্দরী রমণীর সঙ্গে বিহার করছিলেন। তখন সেখানে মহামুনি দুর্বাসা আগমন করলেন। দুর্বাসাকে সবাই প্রণতি নিবেদন করে থাকেন। কিন্তু রাজা সহস্রাক্ষ সেদিন রমণীদের সঙ্গে আলাপে এত মদ মত্ত ছিলেন  যে, দুর্বাসা মুনি তাঁর সামনে এসে পৌঁছালেও তিনি মুনিকে প্রণাম করেন নি। তিনি দুর্বাসার প্রভাব খেয়ালই করতে পারেননি। তখন মুনি দুর্বাসা রাজার বিষয়ে চিন্তা করলেন। তিনি সেই ধার্মিক রাজার জাগতিক আসক্তি মোচন করে পারমার্থিক উন্নতির কথা চিন্তা করলেন।

দুর্বাসা মুনি রাজাকে অভিশাপ দিলেন,-‘’রে দুমর্তি! তুমি রাক্ষস হয়ে যাও কারণ, রাক্ষস জাতি কাউকে সম্মান দিতে পারে না।''  অভিশাপ শুনে রাজা সহস্রাক্ষ চমকে উঠলেন। তিনি দুর্বাসা মুনির পাদতলে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন, হে মহর্ষি, আমার অপরাধ ক্ষমা করুন, শাপ মুক্তি দিন। দুর্বাসা বললেন,- আমার অভিশাপ কখনো মিথ্যা হবার নয়; তবে তুমি রাক্ষস জন্ম পেলেও পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পাবে। গোকুলে শ্রীকৃষ্ণের শরীর যেদিন তোমার স্পর্শ হবে, সেদিনই তোমার শাপমুক্তি হবে।‘’

ক্রমশ…

💐জয় পতিত - পাবন শ্রীগোবিন্দের জয়💐 💐জয় শ্রীরাধে💐

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...