💐💞 শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা 💞💐

🌹🌻🌺💞💞💐💐💞💞🌺🌻🌹

🌼💐 সপ্তদশ অধ্যায়ের মাহাত্ম্য💐🌼

🍇বিশেষ পোষ্ট🍇

শ্রী শ্রী গুরু গৌরাঙ্গ জয়তঃ

সকল সাধু,গুরু,বৈষ্ণব ও গৌর ভক্তবৃন্দের শ্রীচরণে আমার অনন্ত কোটি সাষ্টাঙ্গ দণ্ডবৎ প্রণাম I

''হরি - গুরু - বৈষ্ণব তিনিহেঁ স্মরণ।

তিনেহেঁ স্মরণ হইতে বিঘ্ন বিনাশন।।

অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ ।।‘’

আজানুলম্বিত - ভুজৌ কনকাবদাতৌ,

সংকীর্ত্তনৈকপিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ।

বিশ্বম্ভরৌ দ্বিজবরৌ যুগধর্ম্মপালৌ,

বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুণাবতারৌ।

সপ্তদশ-অধ্যায়-শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ

ভগবান শিব বললেন,- হে প্রিয়ে পার্বতি! শ্রীমদ্ভগবদগীতার সপ্তদশ অধ্যায়ের অমৃত তুল্য মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি শ্রবণ কর।

রাজা খড়গবাহুর পুত্রের দুঃশাসন নামে ধূর্ত ও অতি মূর্খ এক ভৃত্য ছিল। একদা দুঃশাসন হাতির পিঠে চড়ার দক্ষতা নিয়ে রাজকুমারের সঙ্গে বাজি ধরল। লাফিয়ে হাতির পিঠে চড়ে কয়েক পা যাবার পর সমবেত জনতা তাকে সেই ভয়ঙ্কর হাতিতে না চড়তে অনুরোধ করতে লাগল। কিন্তু মূর্খ দুঃশাসন হাতিটিকে অঙ্কুশের খোঁচা মারতে শুরু করল আর সেই সঙ্গে চিৎকার করে তাকে উত্তেজিত করে তুলল। তখন হঠাৎই হাতিটি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে উন্মত্তের ন্যায় এদিক ওদিক দৌড়াতে লাগল। হাতির পিঠ কোনোও ভাবে আঁকড়ে ধরতে না পেরে দুঃশাসন মাটিতে পড়ে গেল। হাতিটি তাকে পদপিষ্ট করে মেরে ফেলল। অনেক নরক ভোগের পরে সে পরবর্তী জন্মে হাতি হয়ে সিম্বলদ্বীপের রাজপ্রাসাদে দিন কাটাতে লাগল।

সিম্বলদ্বীপের রাজা, খড়গবাহুর খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। একদিন সিম্বলদ্বীপের রাজা তার বন্ধু খড়গবাহুকে হাতিটি উপঢৌকন হিসাবে পাঠালেন। তিনি কিছুদিন পরে সেটাকে এক কবির কবিতা শুনে তুষ্ট হয়ে তাকে উপহার স্বরূপ দিয়ে দিলেন। এরপর সেই কবি হাতিটিকে একশত স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে মন্ত্র দেশের রাজাকে বিক্রি করে দিলেন। কিছুকাল পর হাতিটি কঠিন রোগে আক্রান্ত হল। সে খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিল। এটা লক্ষ্য করে মাহুতটি রাজাকে সমস্ত ব্যাপার জানাল। সব চেয়ে ভাল কবিরাজদের নিয়ে রাজা হাতিটিকে দেখতে গেলেন। হাতিটি তখন রাজাকে অবাক করে দিয়ে কথা বলতে শুরু করল।

হাতিটি বলল,- হে প্রিয় রাজা! আপনি খুবই ধার্মিক এবং বেদের একনিষ্ঠ অনুসারী। আপনি সর্বদাই ভগবান বিষ্ণুর শ্রীপাদপদ্মের পূজা করেন। তাই আপনি খুব ভালই জানেন যে, আমার জীবনের এই শেষ সময়ে আর ডাক্তার কবিরাজের কোন ওষুধ কাজে আসবে না। মৃত্যু সময়ে দান-ধ্যান বা হোম-যজ্ঞেও কোন কাজ হবে না। আপনি যদি আমার যত্ন নিতে চান বা আমাকে সাহায্য করতে চান, তবে এমন কাউকে আনুন যিনি প্রতিদিন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সপ্তদশ অধ্যায় পাঠ করে আমাকে শোনাতে পারবেন। হাতিটির অনুরোধ ক্রমে রাজা এক মহান ভক্তকে নিয়ে এলেন যিনি প্রতিদিন নিয়মিত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সপ্তদশ অধ্যায় পাঠ করতে লাগলেন।

এইভাবেপাঠ করার সময় একদিন ভক্তটি হাতির গায়ে মন্ত্রপূত পবিত্র জল সিঞ্চন করলেন। আর তখনি হাতিটি দেহত্যাগ করে ভগবান বিষ্ণুর ন্যায় চতুর্ভুজ মূর্তি লাভ করল। তাকে তখন বৈকুণ্ঠলোকে নিয়ে যাবার জন্য পুষ্পক বিমান পাঠানো হল। বিমানে আরোহণ করার পর রাজা তার কাছে পূর্ব জন্মের কথা জানতে চাইলেন। দুঃশাসন রাজকে সব কথা খুলে বলে বৈকুণ্ঠে চলে গেল। এর পর থেকে নরশ্রেষ্ঠ মন্ত্ৰপতি প্রতিদিন নিয়মিত শ্রীমদ্ভগবদগীতার সপ্তদশ অধ্যায় পাঠ করতে লাগলেন। অল্পকাল পরে তিনিও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীপাদপদ্ম লাভ করলেন।

‘’কলের্দোষনিধেরাজন্ অস্তি হ্যেকো মহানগুণঃ I

কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ I I‘’ (শ্রীমদ্ভাগবত)

কলি সমস্ত দোষের বটে, তথাপি হে রাজন ! কলির একটি মহানগুণ এই যে, কৃষ্ণকীর্ত্তনে জীব মায়াবদ্ধ হইতে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণরূপ পরতত্ত্ব লাভ করেন।

‘’নাম - সংকীর্ত্তন যস্য সর্বপাপ প্রণাশনম্।

প্রণামো দুঃখশমনস্তং নমামি শ্রীহরিং পরম্।।‘’

যে হরিনাম সংকীর্ত্তন করিলে ইহকাল ও পরকালের পাপরাশি নিঃশেষে দগ্ধ হয়,আমি সেই নামরূপী পরমাত্মা স্বরূপ শ্রীহরিকে প্রণাম করি। পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী এবং সকল বৈষ্ণব ভক্ত - পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, ভক্তিময়, সুন্দরময় আর আনন্দময় হয়ে উঠুক।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে!!"

!! জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণের জয় !! !! জয় সকল ভক্তবৃন্দের জয় !!