Sunday, January 12, 2020


শ্রীল গোপালভট্ট গোস্বামীর  আবির্ভাব

হরে কৃষ্ণ, আগামী ১৩/০১/২০২০ ইং রোজ - সোমবার শ্রীল গোপাল ভট্ট গোস্বামীর শুভ আবির্ভাব তিথি I
''অনঙ্গমঞ্জরী যাসীৎ সাদ্য গোপাল ভটকঃ I
ভট্ট গোস্বামিনং কোচিত আহঃ শ্রীগুনমঞ্জরীম II''

কৃষ্ণলীলায় যিনি অনঙ্গমঞ্জরী,কাহারও মতে গুনমঞ্জরী,তিনি শ্রীগৌরলীলা পুষ্টির জন্য শ্রীগোপালভট্ট গোস্বামীরূপে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন I শ্রীল গোপাল ভট্ট গোস্বামী ১৪২২ শকাব্দে,১৫০০ খৃষ্টাব্দে দক্ষিণ ভারতের শ্রী রঙ্গমে শ্রীব্যেঙ্কট ভট্টের পুত্ররূপে আবির্ভূত হইয়াছিলেন I শ্রীরঙ্গমের নিকটে কাবেরী নদীর তীরে বেলগুন্ডি গ্রামে তাঁহাদের নিবাস ছিল I শ্রীগোপালভট্ট গোস্বামী শ্রীমন্মহাপ্রভুর কৃপায় স্বপ্নে শ্রীমন্মহাপ্রভুর নবদ্বীপলীলা সম্পূর্ণই দর্শন করিয়াছিলেন I শ্রীমন্মহাপ্রভুর সন্ন্যাসবেস গোপালভট্ট গোস্বামীর ভাল লাগে নাই I নির্জ্জনে খেদে তিনি বিস্তর ক্রন্দন করিতে থাকিলে মহাপ্রভু তাঁহাকে স্বপ্নযোগে নদীয়ালীলা সম্পূর্ণ দর্শন  করাইলেন এবং প্রেমাবিষ্ট হইয়া তাঁহাকে ক্রোড়ে করিয়া অশ্রুজলে সিক্ত করিলেন I

''এত কহি গোপালের করি প্রভু কোলে I
গোপালের অঙ্গসিক্ত কইল নেত্রজলে II

কহিল এসব কথা রাখিহ গোপনে I
হইল পরমানন্দ গোপালের মনে II''

১৪৩৩ শকাব্দে শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীরঙ্গক্ষেত্রে শুভ পদার্পন করিলে রামানুযীয় বৈষ্ণব শ্রীব্যেঙ্কট ভট্ট শ্রীমন্মহাপ্রভুকে চাতুর্ম্মাস্যকালে তাঁহার গৃহে অবস্থানের জন্য প্রার্থনা জ্ঞাপন করিয়াছিলেন I শ্রীমন্মহাপ্রভু তাঁহাকে নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব জানিয়া তাঁহার নিমন্ত্রণ স্বীকার করিলেন I শ্রীমন্মহাপ্রভুর পার্ষদ শ্রীগোপালভট্টের আবির্ভাবের কথা জানিয়া গোপালভট্টকে এবং তৎসম্বন্ধে তাঁহার পরিজনবর্গকে কৃপা করিবার জন্যই শ্রীমন্মহাপ্রভুর শ্রীরঙ্গমে শুভাগমনলীলা এবং ব্যেঙ্কট ভট্টের গৃহে অবস্থান - লীলা I

শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীব্যেঙ্কট ভট্ট এবং তাঁহার পরিজনবর্গের সেবায় সন্তুষ্ট হইলেও লক্ষ্য করিলেন  ব্যেঙ্কট ভট্টের হৃদয়ে কিছু অভিমান আছে I ব্যেঙ্কট ভট্টের মনোগত ভাব এইরূপ ছিল ''শ্রীলক্ষ্মীনারায়ণই সর্ব্বোত্তম আরাধ্য I’’শ্রীনারায়ণ অবতারী,কৃষ্ণ,রাম,নৃসিংহাদি তাঁহারই অবতার,কারণ নারায়ণের জন্ম নাই,নারায়ণ অজ I দর্পহারি মধুসূদন সকলের দম্ভ নাশ করিয়া থাকেন I

''প্রভু কহে,কৃষ্ণের এক সজীব লক্ষণ I
স্বমাধুর্য্যে সর্ব্বচিত্ত করে আকর্ষণ II

ব্রজলোকের ভাবে পাইয়ে তাঁহার চরণ I
তাঁরে ঈশ্বর করি নাহি জানে ব্রজজন II

কেহ তাঁরে পুত্রজ্ঞানে উদুখলে বান্ধে I
কেহ সখাজ্ঞানে যিনি চড়ে তাঁর কান্ধে II

ব্রজেন্দ্রনন্দন বলি তাঁরে জানে ব্রজজন I
ঐশ্বর্য্যজ্ঞানে নাহি কোন সম্বন্ধ মানন II

ব্রজলোকের ভাবে যেই করয়ে ভজন I
সেই ব্রজে পায় শুদ্ধ ব্রজেন্দ্রনন্দন II''

আমার আরাধ্য গোপীগণ কৃষ্ণ রাসলীলাকালে অন্তর্ধান করিলে ব্যাকুলভাবে কৃষ্ণের দর্শনের জন্য ক্রন্দন করিতে থাকিলে কৃষ্ণ তাঁহাদের নিকট চতুর্ভূজ নারায়ণরূপে প্রকটিত হইয়াছিলেন I গোপীগণ নারায়ণের সঙ্গ করা ' দূরের কথা,তাঁহাকে প্রণাম করিয়া চলিয়া গেলেন I কিন্তু রাধারাণী তথায় উপস্থিত হইলে কৃষ্ণের দুইভুজ শ্রীঅঙ্গে প্রবিষ্ট হইয়া গেল,দ্বিভুজ মুরলীধররূপে তিনি প্রকাশিত হইলেন I স্থানকে এইজন্য পৈসধাম বা পৈঠধাম বলে I উহা গোবর্দ্ধনের নিকটে অবস্থিত I নন্দনন্দন শ্রীকৃষ্ণই অবতারী I নারায়ণ,রাম,নৃসিংহাদি তাঁহারই অবতার I কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান !

''যাঁর ভগবত্তা হইতে অন্যের ভগবত্তা I
স্বয়ং ভগবান বলিতে তাঁহাতেই সত্তা II

এতে চাংশকলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ম I
ইন্দ্রারিব্যাকুলং লোকং মৃড়যন্তি যুগে যুগে II’’

শ্রীলগোপালভট্ট গোস্বামী তাঁহার পিতৃব্য ত্রিদণ্ডিযতি শ্রীমৎ প্রবোধানন্দ সরস্বতীপাদের নিকট দীক্ষা গ্রহণ করিয়াছিলেন I শ্রীধামবৃন্দাবন আগমনপরে শ্রীলসনাতন গোস্বামী শ্রীগোপাল ভট্ট গোস্বামীর নামে শ্রীহরিভক্তিবিলাস গ্রন্থ প্রনয়ন করিলেন I শ্রীলরূপ গোস্বামীও গোপালভট্টকে প্রাণসম প্রিয়জ্ঞানে শ্রীরাধারমণ সেবায় নিয়োজিত করিলেন I শ্রীলগোপালভট্ট গোস্বামী ষড় গোস্বামীর অন্যতম হইলেন I শ্রীলগোপালভট্ট গোস্বামী সৎক্রিয়াসার দীপিকা গ্রন্থের রচয়িতা,হরিভক্তিবিলাস গ্রন্থের সম্পাদক ষটসন্দর্ভের পূর্ব্ব লেখক I ইনি বিল্বমঙ্গলের কৃষ্ণকর্ণামৃতের টিপ্পনী লিখিয়া বৈষ্ণবগণের পরমানন্দ বর্দ্ধন করিয়াছেন I শ্রীনিবাস আচার্য্য শ্রীগোপীনাথ পূজারী ইঁহার শিষ্য I

শ্রীগোপালভট্ট গোস্বামী যখন উত্তর ভারতে তীর্থ ভ্রমণে ছিলেন তখন গণ্ডকী নদীর তীরে ১২টি শালগ্রামশীলা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন I তিনি সেই শালগ্রামশীলাকে ব্রজেন্দ্রনন্দন কৃষ্ণরূপে নিত্য আরাধনা করিতেন I একদিন তাঁহার মনে এইরূপ ইচ্ছা হইল যদি শালগ্রামশীলা শ্রীবিগ্রহরূপে প্রকটিত হইতেন তিনি উত্তমরূপে সেবা করিতে পারিতেন I অন্তর্য্যামী ভগবান তাঁহার হৃদ্গতভাব বুঝিয়া একজন শেঠের মাধ্যমে অনেক উপকরণ বস্ত্রালঙ্কার প্রেরণ করিলেন I শ্রীগোপালভট্ট গোস্বামী শালগ্রাম শ্রীবিগ্রহরূপে প্রকটিত না হইলে কিরূপে বস্ত্রের দ্বারা সজ্জিত করিবেন চিন্তা করিলেন I তিনি রাত্রিতে শালগ্রামকে শয়ন দিলে পরদিন প্রাতে উঠিয়া দেখিলেন ১২টি শালগ্রামের মধ্যে একটি শালগ্রাম শ্রীরাধারমণ বিগ্রহরূপে প্রকটিত হইয়াছেন I শ্রীকৃষ্ণের অদ্ভুত  প্রাকট্য কথা শুনিয়া শ্রীরূপ গোস্বামী শ্রীসনাতন গোস্বামী প্রভৃতি বৈষ্ণবগণ শ্রীরাধারমণ বিগ্রহ দর্শন করিতে আসিলেন এবং দর্শন করিয়া প্রেমাপ্লুত হইলেন I বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীরাধারমণের অভিষেক কার্য্য সম্পন্ন হইয়া থাকে I

১৫০৭ শকাব্দে আষাঢ়ী কৃষ্ণা - পঞ্চমী (মতান্তরে শুক্লা - পঞ্চমী,মতান্তরে ১৫৮৮ খৃষ্টাব্দ ১৫০০ শকাব্দে শ্রাবণ কৃষ্ণা - ষষ্ঠী তিথিতে শ্রীলগোপালভট্ট গোস্বামী তিরোধানলীলা করেন I শ্রীরাধারমণ মন্দিরের পশ্চাতে তাঁহার সমাধি মন্দির আছে I

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...