Friday, January 17, 2020

ষট্ তিলা একাদশী
♥♥শুভ একাদশী♥♥ ♥♥শুভ একাদশী♥♥ ♥♥শুভ একাদশী♥♥

হরে কৃষ্ণ, আগামী ২১/০১/২০২০ ইং রোজ -মঙ্গলবার ষট্ তিলা একাদশী I
(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ১০.০১ মিঃ মধ্যে একাদশীর পারণ)

আপনি নিজে একাদশী ব্রত পালন করুন ও অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।

মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম "ষট্ তিলা" I ভবিষ্যোত্তর পুরাণে যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে এই তিথির মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।

যুধিষ্ঠির মহারাজ বললেন- হে জগন্নাথ! মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথির নাম কি, বিধিই বা কি এবং তার কি ফল, সবিস্তারে বর্ণনা করুন।
তদুত্তরে ভগবান বললেন- হে রাজন! এই একাদশী 'ষট্ তিলা' নামে জড়তে বিদিত।

এক সময় দাল্ভ্য ঋষি মুনিশ্রেষ্ঠ পুলস্তকে জিজ্ঞাসা করেন - মর্ত্যলোকে মানুষেরা ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, অন্যের সম্পদ হরণ আদি পাপকর্ম দ্বারা নরকে গমন  করে। যাতে তারা নরক গতি থেকে রক্ষা পায়, তা যথাযথভাবে আমাকে উপদেশ করুন। অনায়াসে সাধন করা যায় এমন কোন ব্রত বা পূজা বিধির মাধ্যমে যদি তাদের এই পাপ থেকে উদ্ধারের কোন উপায় থাকে, তবে তা বলুন।

ঋষি পুলস্ত্য বললেন, হে মহাভাগ! তুমি একটি গোপনীয় উত্তম বিষয়াবলীর প্রশ্ন করেছ। মাঘ মাসের শুচি, জিতেন্দ্রিয়, কাম, ক্রোধ আদি শূন্য হয়ে স্নানাদির পর সর্বদেবেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এর পূজা করবে। পূজাতে কোন বিঘ্ন ঘটলে কৃষ্ণনাম স্মরণ করবে। রাত্রিকাল অর্চনান্তে যজ্ঞ করবে। তারপর চন্দন, অগুরু, কর্পূর শর্করা প্রভৃতি দ্বারা নৈবেদ্য প্রস্তুত করে ভগবানকে নিবেদন করবে। কুষ্মাণ্ড, নারকেল অথবা একশত গুবাক দিয়ে অর্ঘ্য প্রদান করবে  ‘’কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃপালুস্ত্বমগতীনাং গতির্ভব’’ ইত্যাদি মন্ত্রিত শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে হয়। 'কৃষ্ণ আমার প্রতি প্রীত হোন’  বলে যথাশক্তি ব্রাহ্মণকে জলপূর্ণ কলস, ছত্র, বস্ত্র, পাদুকা, গাভী তিলপাত্র দান করবে। স্নান, দানাদি কার্যে কালো তিল অত্যন্ত শুভ।

হে দ্বিজোত্তম! প্রদত্ত তিল থেকে পুনরায় যত সংখ্যা তিলের বৃক্ষ উৎপন্ন হয়, ততো সহস্র বৎসর ধরে দানকারী স্বর্গলোকে বাস করে। তিলদ্বারা স্নান, তিল শরীরে ধারণ, তিল জলে মিশিয়ে তা দিয়ে তর্পণ, তিল দ্বারা হোম, তিল ভোজন এবং তিল দান - এই ছয় প্রকার বিধানে সর্বপাপ বিনষ্ট হয়ে থাকে। এই জন্য এই একাদশীর নাম 'ষট্ তিলা'

হে যুধিষ্ঠির! একসময় নারদও এই ষট্ তিলা একাদশীর ফল ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাইলে যে কাহিনী আমি বলেছিলাম তা এখন তোমার কাছে বর্ণনা করছি।
পুরাকালে মর্ত্যলোকে এক ব্রাহ্মণী বাস করত। সে প্রত্যহ ব্রত আচরণ দেবপূজাপরায়ণা ছিল। উপবাস ক্রমে তার শরীর অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। সেই মহাসতী ব্রাহ্মণী অন্যের কাছ থেকে দ্রব্যাদি গ্রহণ করে দেবতা, ব্রাহ্মণ, কুমারীদের ভক্তিভরে দান করত। কিন্তু কখনও ভিক্ষুককে ভিক্ষাদান ব্রাহ্মণজাতি কে অন্নদান করেনি। এইভাবে বহু বছর অতিক্রান্ত হল। আমি চিন্তা করলাম, কষ্টসাধ্য বিভিন্ন ব্রত করার ফলে এই ব্রাহ্মণীর শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। সে যথাযথভাবে বৈষ্ণবদের অর্চনও করেছে, কিন্তু তাদের পরিতৃপ্তির জন্য কখনও অন্নদান করেনি। তাই আমি একদিন কাপালিক রূপ ধারণ করে তামার পাত্র হাতে নিয়ে তার কাছে গিয়ে ভিক্ষা প্রার্থনা করলাম। ব্রাহ্মণী বলল - হে ব্রাহ্মণ! তুমি কোথায় থেকে এসেছ, কোথায় যাবে, তা আমাকে বলো। আমি বললাম - হে সুন্দরী! আমাকে ভিক্ষা দাও। তখন সে ক্রোধে আমার পাত্রে একটি মাটির ঢিলা নিক্ষেপ করল। তারপর আমি সেখান থেকে চলে গেলাম।

বহুকাল পরে সেই ব্রাহ্মণী ব্রতের প্রভাবে  স্বশরীরে স্বর্গে গমন করল। মৃতকে পিণ্ডদান দেবার ফলস্বরূপ একটি মনোরম গৃহ সে প্রাপ্ত হল। সেখানে সমস্ত সুখের সাধন উপলব্ধ ছিল I কিন্তু হে নারদ! সেখানে ভোজনের জন্য কোন ধান চাল কিছুই ছিল না। ক্ষুধা তৃষ্ণাতে  ব্যাকুল হয়ে তিনি  আমার কাছে এসে বলল - আমি ব্রত, কৃচ্ছ্রসাধন উপবাসের মাধ্যমে নারায়ণের আরাধনা করেছি। এখন হে জনার্দন! আমার গৃহে কিছুই দেখছি না কেন?

হে নারদ! তখন আমি তাকে বললাম - তুমি নিজ গৃহে দরজা বন্ধ করে বসে থাকো। মর্ত্ত্যলোকের মানবী স্বশরীরে স্বর্গে এসেছে শুনে দেবতাদের পত্নীরা তোমাকে দেখতে আসবে। কিন্তু তুমি দরজা খুলবে না। তুমি তাদের কাছে ষট্ তিলা ব্রতের পূণ্যফল প্রার্থনা করবে। যদি তারা সেই ফল প্রদানে রাজি হয়, তবেই দরজা খুলবে।
এরপর দেবপত্নীরা সেখানে এসে তার দর্শন প্রার্থনা করল। ষট্ তিলা ব্রতের ফল পেলেই কেবল সেই মানবী দর্শন দেবেন জেনে তাদের মধ্যে এক দেবপত্নী তার ষট্ তিলা ব্রতজনীত পূণ্যফল তাকে প্রদান করল। তখন সেই ব্রাহ্মণী দিব্যকান্তি বিশিষ্টা হল এবং তার গৃহ ধনধান্যে ভরে গেল। দ্বার উদঘাটন করলে দেবপত্নীরা তাকে দর্শন করে বিস্মিত হেলেন।

হে নারদ! অতিরিক্ত বিষয়বাসনা করা উচিত নয়। বিত্ত শাঠ্যও অকর্তব্য। নিজ সাধ্য মতো তিল, বস্ত্র অন্ন দান করবে। ষট্ তিলা ব্রতের প্রভাকর দারিদ্রতা, শারীরিক কষ্ট, দুর্ভাগ্য প্রভৃতি বিনষ্ট হয়। এই বিধি অনুসারে তিলদান করলে মানুষ অনায়াসে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়।

★★★সবাইকে অনুরোধ রইল অবশ্যই মনে রাখবেন যে, একাদশী ব্রত বা কোন উপবাস মানেই কিন্তু শুধু না খেয়ে থাকা নয়,বরং শুদ্ধ/পবিত্র দেহ,মন নিয়ে ব্রত/উপবাস রেখে নিরন্তর "ভগবানের নাম জপ" হরিকথা শ্রব, কীর্ত্তন,গীতাপাঠ করে "ভগবান কে প্রসন্ন/খুশি করাই  ব্রত/উপবাসের মূল উদ্দেশ্য"★★★

‘’একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।

এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পারণ করতে হয়।
গীতার মাহাত্ম্যে উল্লেখ আছে-

যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে।
স্বপন জাগ্রৎ চলন তিষ্ঠন শত্রুভির্ন হীয়তে।।

অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণুর উৎসবের দিনে, একাদশী জন্মাষ্টমীতে যিনি গীতা পাঠ করেন , তিনি চলুন বা দাড়িয়ে থাকুন, ঘুমিয়ে বা জেগে থাকুন,(যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন) শত্রু কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারেনা।

জয় শ্রীকৃষ্ণের জয়জয় শ্রীএকাদশী মহাব্রতের জয়

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...