Tuesday, March 24, 2020


পরমাত্মা
করোনার  জন্য বিশেষ পোস্ট I
পরমাত্মা তাঁকেই বলা হয়, যিনি বর্তমানেও রয়েছেন, সর্বত্র আছেন, সবার জন্য আছেন, সর্বসমর্থ, পরমদয়ালু, এবং অদ্বিতীয় তিনি সদাই বর্তমান তাই তাঁকে প্রাপ্ত করার জন্য ভবিষ্যতের আশায় থাকতে হয় না সর্বত্র রয়েছেন, তাই তিঁনি আমার নিজের মধ্যেও অবস্থিত, অতএব তাঁকে খোঁজার জন্য অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই I সুতরাং তাঁর প্রতি স্বভাবিক ভাবেই প্রেম জাগ্রত হবে সর্বসমর্থ হওয়ায় আমাদের ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার কোন কারণ নেই পরমদয়ালু বলে আমাদের নিরাশ হতে হয় না অদ্বিতীয় হওয়ায় আমাদের তাঁকে চেনার বা তাঁর বর্ণনা করার প্রয়োজন থাকে না বরং ভগবানকে একান্ত আপনজন বলে মানলেই তাঁকে লাভ করা যায়  

ভগবান বলেছেন,-
''মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ৷
মনঃষষ্ঠানীন্দ্রিয়াণি প্রকৃতিস্থানি কর্ষতি I I’’
অর্থাৎ আমারই অংশ এই সনাতন জীব মায়াবশতঃ সদা সংসারিরুপে প্রসিদ্ধ প্রকৃতিতে অবস্থিত এবং মন পঞ্চেন্দ্রিয়কে জীবলোকে সংসারে উপভোগার্থ আকর্ষণ করে।।

ভক্ত শব্দের অর্থ কি???
-তে= ভবের বাধন ছাড়ো
-তে =কাম কামনা দমন করো
-তে=তন্ময় হয়ে শ্রীগুরুর চরণ ধরে পরমেশ্বর ভগবান কে জানার চেষ্টা করো। কাম কামনাকে ত্যাগ করে সমস্ত রকমের মোহ মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে ,একাগ্ৰ চিত্তে শ্রীগুরুর স্মরণ নেওয়া। তাহলেই আমরা ভক্ত হতে পারবো। ভক্তের একমাত্র লক্ষণ সদা সর্বদা কৃষ্ণ নামে মগ্ন থাকা চাইলে আপনিও ভক্ত হতে পারেন যদি একমনে এই হরিনাম মহামন্ত্র জপ কীর্ত্তন করেন।
হরে কৃষ্ণ।। হরে কৃষ্ণ।। কৃষ্ণ কৃষ্ণ।। হরে হরে।।
হরে রাম।। হরে রাম।। রাম রাম।। হরে হরে।।

"ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।
অনাদিরাদির্গোবিন্দঃসর্বকারণকারণম্ I I"

অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ, যিনি গোবিন্দ নামেও পরিচিত,তিনি হচ্ছেন পরম ঈশ্বর। তাঁর রূপ সচ্চিদানন্দময় (সৎ, চিৎ আনন্দ বা কর্মময়, জ্ঞানময় আনন্দময়), তিনি হচ্ছেন সব কিছুর পরম উৎস। তাঁর কোনো উৎস নেই, কেননা তিনি হচ্ছেন সর্ব কারণের পরম কারণ

পৃথিবীতে মানবজাতির আদি পিতা ব্রহ্মাসহ সব মহাজন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর জ্ঞানে ভজনা করেছেন। তাঁকে সব কারণের পরম কারণ জেনেই মানবমুক্তির জন্য তাঁকে আরাধনার কথা বলে গেছেন।মহাশূন্যে দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সব গ্রহ,নক্ষত্র এবং কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড তার থেকে সৃষ্টি এবং সবের স্থিতি প্রলয়ও তাঁর মধ্যেই সাধিত হয়। শ্রীমদ্ভাগবতমের প্রথম স্কন্ধের দ্বিতীয়
অধ্যায়ের ২৮ ২৯ নং শ্লোকে বলা হয়েছে-
"সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রে জ্ঞানের পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর প্রীতির জন্যই সকল প্রকার যজ্ঞ,তপস্যা বৈদিক কর্ম করতে হয়। তিনিই হচ্ছেন জীবনের পরম উদ্দেশ্য।

" ঈশোপনিষদের আবাহন অংশে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে বলা হয়েছে-
"তিনি সম্পূর্ণভাবেই পূর্ণ এবং তাঁর থেকে উদ্ভূত সকল কিছুই সর্বতোভাবে পূর্ণ। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমপূর্ণ, তাই তাঁর থেকে অসংখ্য অখণ্ড পূর্ণ সত্তা বিনির্গত হলেও তিনি পূর্ণরূপেই অবশিষ্ট থাকেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার দশম অধ্যায়ের অষ্টম শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
"অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে। "

অর্থাৎ আমি জড় চেতন জগতের সবকিছুর উৎস এবং সবকিছুই আমার থেকে প্রবর্তিত হয়েছে। চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যমহাপ্রভু বলেছেন, "একলে ঈশ্বর কৃষ্ণ"- একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরম ঈশ্বর। গীতায় অজুর্নও বলেছেন,-
"পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্"-

অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরম ব্রহ্ম, পরম ধাম, পরম পবিত্র পরম পুরুষ। সনাতন বৈদিক গ্রন্থের সর্বত্রই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে একমাত্র উপাস্য বলা হয়েছে এবং মুক্তির জন্য তাঁর শ্রীপাদপদ্মের ধ্যান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও সমস্ত বৈদিক পৌরাণিক শাস্ত্রগ্রন্থ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অজ অর্থাৎ জন্মরহিত বলে উল্লেখ করেছেন, সেখানে ভগবানের জন্মতিথি উৎসবের বিষয়টি অনেকের কাছেই সংশয়ের মনে হতে পারে। আসলে সনাতন ধর্মের আরেকটি পরিচয় হল এটি যুগ ধর্ম। যুগে যুগে ভগবান জীবের কল্যাণের জন্য, মুক্তির জন্য পৃথিবীতে বিভিন্ন রূপে আসেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার চতুর্থ অধ্যায়ে ভগবান নিজেই এরূপ আবির্ভাব সম্পর্কে বলেছেন- "যখনই ধর্মের গ্লানি বা অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই। সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য, দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।"

শ্রীকৃষ্ণের অপার করুণা লাভের জন্য শতসহস্র বছর সাধু, সন্ন্যাসী, যোগীরা আরাধনা করার পরেও ব্যর্থ হতে পারে। অথচ প্রেমপূর্ণ ভক্তির দ্বারা ভগবান ভক্তের অনুগত হয়ে পড়েন। এভাবেই ভগবান আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য যুগে যুগে পৃথিবীতে অবতরণ করে পাপীদের উদ্ধার করে মানব মুক্তির পথ প্রদর্শন করেছেন।এজন্যই তিনি মুক্তিদাতা।

প্রার্থনা করি যেন আজকের অশান্তিময় পৃথিবী পুনরায় শান্তিময় হয়ে উঠুক। সব অন্যায় - অত্যাচার যেন তাঁর করুণায় দূর হয়। সব সৎ শক্তির জাগরণে জগৎবাসী যেন মুক্তির পথ খুঁজে নিতে পারে। হৃদয়ের ভীরুতা কাটিয়ে  আত্মশক্তিতে বলিয়ান হয়ে অন্যায়কে যেন প্রতিহত করে ন্যায় সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে পৃথিবীর সর্বত্র। পুণ্য লগ্নে শ্রীরাধাকৃষ্ণের শ্রীচরণে এই হোক আমাদের সবার প্রার্থনা।

হে নাম ! করুণা সিন্ধু অধম জনার বন্ধু
স্বকৃপায় এসেছ ভুবনে।
গোলোকের প্রেমধন হরিনাম সংকীর্ত্তন
কৃপা কর অধম দুর্জনে।।
নাম নামি ভেদ নাই দুই এক যেন ভাই
নাম রুপে নামি অবতার।
কলি যোর তিরে গ্রাসল জগতেরে
নাম অর্ক করেন উদ্ধার।।
অন্যাশ্রয় নাহি মানি একাশ্রয় নাম জানি
কায় মনে লয় যে শরণ।
যেন তারে নাম প্রভু না ত্যাগ করেন কভু
নিজ গুণে দেন শ্রীচরণ।।
শ্রীনামের দুটি পদ যে করে হৃদি সম্পদ
দুই হাতে করিয়া ধারণ।
আর কিছু নাহি জানে শুধু নাম সেবা বিনে
নাম শুধু সাধন ভজন।।
যদি কেহ নাম তারে লও ভক্তি অঙ্গ মোরে
ছেড়ে ধামে বাস গুরু পদাশ্রয়।
সাধু সঙ্গ হরি কথা পূজার্চ্চনা তীর্থ যাত্রা
বিবিধ ভকতির উদয়।।
কহে নামাশ্রয়ী তাঁরে না দিব  চরণ ছেড়ে
আছি দুই হাতে হৃদয়ে ধরিয়া।
খোলা আছে তব কর যদি প্রয়োজন মনে কর
কৃপা করি দাও গো আনিয়া।।
তোমা ছাড়ি নাহি জানি কোথায় খুঁজিব আমি
সাধু গুরু ভক্তি শুভ অঙ্গ।
যদি দাও আনি তুমি গ্রহণ করিব আমি
মোর ব্রত না হইবে ভঙ্গ।।
একে কহে নামাশ্রয় অন্য দিকে নাহি চায়
তারেকলি’ না পারে গো দিতে বাধা।
হও মন নামাশ্রয়ী হইও না(মাত্র) নাম গ্রহী
নামের চরণে রবে বাঁধা।।
নামে সর্ব্বশ্রষ্ঠ জ্ঞান কায় মনে কর ধ্যান
জপ নাম কর সংকীর্ত্তন।
নাম সম কেহ নয় জানিও সুনিশ্চয়
নাম হতে ভক্তির উদ্গম।।
বীজ হতে হয় যথা বৃক্ষ লতা পুষ্প পাতা
নাম বীজে ভক্ত্যঙ্গ প্রকাশ।
নামাশ্রয় করি ভজে তারে নাম নাহি ত্যজে
অপরাধ হতে পায় রক্ষা।।
আর কিছু নাহি চাই (যেন) হতে পারি নামাশ্রয়ী
নামের চরণে এই ভিক্ষা।।
অধম দাসে কয় ধরিয়া শ্রীনাম পায়
প্রসন্ন হও গো একবার।
অপরাধে জর জর পাপ দোষে গর গর
তোমা বিনা গতি নাহি আর।।।
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।"
 জয় নিতাই জয় গৌরহরি।। জয় নিতাই জয় গৌরহরি।। জয় নিতাই জয় গৌরহরি।।

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...