♥পাপমোচনী একাদশী♥
♥♥শুভ একাদশী♥♥ ♥♥শুভ একাদশী♥♥ ♥♥শুভ একাদশী♥♥
হরে কৃষ্ণ, আগামী ২০/০৩/২০২০ ইং রোজ - শুক্রবার পাপমোচনী একাদশী I
(পারণ - পরদিন পূর্ব্বাহ্ন ০৮।৫৪ মিঃ মধ্যে একাদশীর পারণ)
আপনি নিজে একাদশী ব্রত পালন করুন ও অন্যকে পালনে উৎসাহিত করুন।
চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম ‘পাপমোচনী’। গরুড়পুরাণে যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে এই তিথির মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।
যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন,- হে জনার্দন ! চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপা করে আমাকে বলুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন,- হে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির ! আপনি ধর্মবিষয়ক প্রশ্ন করেছেন। এই একাদশী সকল সুখের আধার,অষ্ট সিদ্ধি আর নয় নিধি প্রদানকারী, পিশাচ যোনি থেকে মুক্তি প্রদানকারী ও পরম মঙ্গলময়। সমস্ত পাপ থেকে নিস্তার বা মোচন করে বলে এই পবিত্র একাদশী তিথি ‘পাপমোচনী’ নামে প্রসিদ্ধ। রাজা মান্ধাতা একবার লোমশ মুনিকে এই কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তার বর্ণিত সেই বিচিএ উপাখ্যানটি আপনার কাছে বলছি। আপনি মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবণ করুন।
প্রাচীনকালে ধনের পতি কুবেরের ‘চৈত্ররথ' নামক অতি মনোরম পুষ্প উদ্যান ছিল। মুনিগণ এই মনোরম পুষ্প উদ্যানে বহু বছর ধরে তপস্যা করতেন। সেই খানে মেধাবী নামে এক ঋষিকুমারকে মঞ্জুঘোষা নামে এক সুন্দরী অপ্সরা বশীভূত করতে চাইল। কিন্তু ঋষির অভিশাপের ভয়ে সে আশ্রমের এক ক্রোস দূরে অবস্থান করতে লাগল।সেই অপ্সরা নিজের ঘরে বীণা বাজিয়ে মধুর স্বরে গান গাইত ।
মেধাবী ঋষি পিতা চ্যবন ঋষির
আশ্রমে বাস করতেন।
এক দিন মঞ্জুঘোষা মেধাবী মুনিকে দেখে কামবাণে পীড়িতা হয়ে পড়ে। মঞ্জুঘোষার
উনার প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়ার ফলে ঋষি মেধাবীও অপ্সরার অনুপম সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন। তখন সেই অপ্সরা মুনিকে নানা হাব - ভাব ও কটাক্ষ দ্বারা বশীভূত করে। ক্রমে কামপরবশ মুনি সাধন - ভজন বিসর্জন দিয়ে তার আরাধ্য দেব বিস্মৃত হন।
এইভাবে অপ্সরার সাথে কামক্রীড়ায় মুনির বহু বছর অতিক্রান্ত হল।মুনিকে আচার-ভ্রষ্ট দেখে সেই অপ্সরা দেবলোকে ফিরে যেতে মনস্থ করল।একদিন মঞ্জুঘোষা মেধাবী মুনিকে বলতে লাগল,- হে প্রভু, এখন আমাকে নিজ গৃহে(দেব লোকে) ফিরে যাবার অনুমতি প্রধান করুন। কিন্তুু কামাসক্ত মেধাবী বললেন,- হে সুন্দরী ! তুমি তো এখন সন্ধ্যাকালে আমার কাছে এসেছ,প্রাতঃকাল পর্যন্ত আমার কাছে থেকে যাও। মুনির কথা শুনে অভিশাপের ভয়ে সেই অপ্সরা
আরও কয়েক বছর তার সাথে বাস করল।
এইভাবে বহুবছর (৫৫ বছর ৯ মাস ৭ দিন)অতিবাহিত হল।দীর্ঘকাল অপ্সরা
সহবাসে থাকলেও মেধাবীর কাছে তা অর্ধরাত্রি বলে মনে হল।মঞ্জুঘোষা পুনরায় নিজস্থানে গমনের প্রার্থনা জানালে মুনি বললেন,- এখন প্রাতঃকাল, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি সন্ধ্যাবন্দনা না সমাপ্ত করি, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি এখানে থাক।
মুনির কথা শুনে ঈষৎ হেসে মঞ্জুঘোষা তাকে বলল,- ''হে মুনিবর! আমার সহবাসে আপনার যে কত বৎসর অতিবাহিত হয়েছে, তা এক বার বিচার করে দেখুন।এই কথা শুনে মুনি স্থির হয়ে চিন্তা করে দেখলেন যে তাঁর ৫৬ বৎসর অতিবাহিত হয়ে গেছে।'' মুনি তখন মঞ্জুঘোষার প্রতি ক্রোধ পরবশ হয়ে বললেন,- রে পাপীষ্ঠে, দুরাচারিণী, তপস্যার ক্ষয়কারিনী,তোমাকে ধিক্ ! তুমি পিশাচী হও,এই শাপ দিলেন। মেধাবীর শাপে অপ্সরার শরীর বিরূপ প্রাপ্ত হল। তখন সে অবনতমস্তকে মুনির কাছে শাপ - মোচনের উপায় জিজ্ঞাসা করল।
মেধাবী বললেন,- হে সুন্দরী, চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া পাপমোচনী একাদশী,সর্বপাপ ক্ষয়কারিনী। সেই ব্রত পালনে তোমার পিশাচত্ব দূর হবে।এই উপদেশ দেওয়ার পর পিতার আশ্রমে ফিরে গিয়ে মেধাবী বলেলেন,- হে পিতা! এক অপ্সরার সঙ্গদোষে আমি মহাপাপ করেছি, এর প্রায়শ্চিত্ত কি? তা কৃপা করে আমায় বলুন। উত্তরে চ্যবন মুনি বললেন,- চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া পাপমোচনী একাদশী ব্রতের প্রভাবে তোমার পাপ দূর হবে। পিতার উপদেশ শুনে মেধাবী সেই ব্রত ভক্তিভরে পালন করল।তার সমস্ত পাপ দূর হল।পুনরায় তিনি তপস্যার ফল লাভ করলেন। মঞ্জুঘোষাও ঐ ব্রত পালনের ফলে পিশাচত্ব থেকে মুক্ত হয়ে দিব্য দেহে স্বর্গে গমন করল।
হে মহারাজ ! যারা এই পাপমোচনী একাদশী পালন করেন, তাদের পূর্বকৃত সমস্ত পাপই ক্ষয় হয়।এই ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণে সহস্র গো-দানের ফল লাভ হয়।
★★★সবাইকে অনুরোধ রইল অবশ্যই মনে রাখবেন যে, একাদশী ব্রত বা কোন উপবাস মানেই কিন্তু শুধু না খেয়ে থাকা নয়,বরং শুদ্ধ/পবিত্র দেহ,মন নিয়ে ব্রত/উপবাস রেখে নিরন্তর "ভগবানের নাম জপ" হরিকথা শ্রবণ, কীর্ত্তন,গীতাপাঠ করে "ভগবান কে প্রসন্ন/খুশি করাই ব্রত/উপবাসের মূল উদ্দেশ্য"★★★
‘’একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।”
–
এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগে পারণ করতে হয়।
গীতার মাহাত্ম্যে উল্লেখ আছে…
‘’যোহধীতে বিষ্ণুপর্বাহে গীতাং শ্রীহরিবাসরে।
স্বপন জাগ্রৎ চলন তিষ্ঠন শত্রুভির্ন স হীয়তে।।”
অর্থাৎ শ্রীবিষ্ণুর উৎসবের দিনে, একাদশী ও জন্মাষ্টমীতে যিনি গীতা পাঠ করেন , তিনি চলুন বা দাড়িয়ে থাকুন, ঘুমিয়ে বা জেগে থাকুন,(যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন) শত্রু কখনো তার কোন ক্ষতি করতে পারেনা।
♥জয় শ্রীকৃষ্ণের জয়♥জয় শ্রীএকাদশী মহাব্রতের জয়♥
No comments:
Post a Comment