দোল পূর্ণিমা
হরে
কৃষ্ণ, আগামী ০৯/০৩/২০২০ ইং রোজ - সোমবার শুভ দোল পূর্ণিমা এবং ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর
শুভ আবির্ভাব তিথি ও গৌর পূর্ণিমা।
দোল পূর্ণিমা বা হোলি কি
???
শ্যামল তনুতে হরিত কুঞ্জে।
অশোক ফুটেছে যেন পুঞ্জে পুঞ্জে,
রঙ - পিয়াসী মন ভ্রমর গুঞ্জে।।
ঢালো আরো ঢালো রঙ প্রেম–যমুনাতে।
ব্রজ - গোপী খেলে হোরী,
খেলে আনন্দ নবঘন শ্যাম সাথে।।
দোল সনাতন ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এর বিশেষ মর্ম ও মাহাত্ম্য হচ্ছে পরম করুণাময় অবতার শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর শুভ আবির্ভাব তিথি, গৌর পূর্ণিমা হিসেবে উদযাপিত হয়। দোলযাত্রা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বিশেষ একটা অনুষ্ঠান।।
আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে বৃন্দাবন লীলায় ব্রজবাসীগণ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তি রাধা রানীকে একত্রে পেয়ে সীমাহীন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে তাঁদের চরণে আবির ঢেলে রঞ্জিত করে দেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধা রানীও এ আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন। কিন্তু, ঐ দিনটি ছিল ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথি।। ঐ দিনটিতে এতোটাই আনন্দ উৎসব হয় যে পরবর্তীতে বৃন্দাবন বাসীরা আর ঐ দিনটিকে ভুলতে পারেন নি। যা আজও মানুষ পালন করে চলেছে। এই দিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর রাধারানীকে বৃন্দাবনবাসীরা প্রেমানন্দে দোলনায় দোল দিয়েছিল বলে এই উৎসবটিকে ‘দোল উৎসব’ বলা হয়। আর ফাল্গুন মাসের এই পূর্ণিমাকে বলা হয় ‘দোল পূর্ণিমা’।।
দ্বাপরযুগ থেকে শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা বা দোল উৎসব চলে আসছে। বলা হয় ১৪৮৬ সালের এই পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রীগৌরাঙ্গমহাপ্রভু আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে একে ‘গৌর -পূর্ণিমা’ নামে জানাযায়।
। তবে এর মূল তাৎপর্য্য হলো রাধা
- কৃষ্ণের সম্পর্কের উপাখ্যানে। ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথির এ দিনে বৃন্দাবনের নন্দন কাননে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে তার সখী রাধা ও গোপীর সঙ্গে রঙ্গ ছোড়াছুড়ির খেলায় মেতে ছিলেন। এর স্মরণে এ দিন সকালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নান করিয়ে দোলায় চড়িয়ে ভজন - কীর্ত্তন সহকারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর কৃষ্ণভক্তরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পর রঙ্গ খেলেন।।
এই উৎসবটি পরবর্তীতে সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে।এই উৎসবটি পরে হোলি নামে খ্যাতি পায়। অত্যাচারী রাজা হিরণ্যকশিপুর দানবী বোন হোলিকা থেকে এই নামের উৎপত্তি। স্কন্দপুরাণ অনুসারে ফাল্গুনমাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান কথা শোনা যায়। হোলিকা ছিলেন মহর্ষি কশ্যপ ও তাঁর পত্নী দিতির পুত্র হিরণ্যকশিপুর ভগিনী। ব্রহ্মার বরে হিরণ্যকশিপু দেব ও মানব বিজয়ী হয়ে দেবতাদের অবজ্ঞা করতে শুরু করেন। এদিকে তাঁরই পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত। প্রহ্লাদ বিষ্ণুকে নিজের পিতার উপরে স্থান দেওয়ায় ক্রোধ হয়ে হিরণ্যকশিপু তাঁর নিজের পুত্রকে পুড়িয়ে মারার আদেশ দেন। দাদার আজ্ঞায় হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুণে প্রবেশ করেছিলেন কারণ তার বর ছিল আগুণে প্রবেশ করলেও তিনি অক্ষত থাকবেন। কিন্তু সেই বরের ক্ষেত্রে শর্ত ছিল হোলিকাকে একা আগুণে প্রবেশ করতে হবে ৷ সেই শর্ত ভুলে সে যখন প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুণে ঝাঁপ দিলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অক্ষত থাকলেও আগুনে পুড়ে হোলিকারই মৃত্যু হয়।
হোলিকার এই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কাহিনিকে ভিত্তি করে দোলের আগের দিনে হোলিকাদহন বা চাঁচর উৎসবের আয়োজন করা হয়, যা ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’এর
প্রতীক স্বরূপ হিসেবে দেখা হয় ৷ সকল প্রকার দানবীর ধ্বংস যজ্ঞের বিরুদ্ধে জয়লাভের প্রতীক হলো এই রঙিন আনন্দ উৎসব। দোল আমাদের ঋতুচক্রের শেষ উৎসব।পাতাঝরার সময়, বৈশাখের প্রতীক্ষা। এই সময় পড়ে থাকা গাছের শুকনো পাতা, তার ডালপালা একত্রিত করে জ্বালিয়ে দেওয়ার মধ্যে এক সামাজিক তাৎপর্য্য রয়েছে । পুরনো জঞ্জাল, রুক্ষতা, শুষ্কতা সরিয়ে নতুনের আহ্বান হচ্ছে এই হোলি। বাংলায় দোলের আগের দিন ‘চাঁচর’ উদযাপনকে এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়।।
রাধা - কৃষ্ণকে ঘিরে অন্য এক কাহিনিও প্রচলিত I শ্রীকৃষ্ণ এক দিন বৃন্দাবনে রাধা এবং তার সখীদের সঙ্গে খেলা করছিলেন। সে সময় হঠাৎ রাধা এক বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হয়ে লজ্জিত হন। শ্রীকৃষ্ণ রাধার লজ্জা ঢাকতে এবং বিষয়টি তার সখীদের আবির খেলা শুরু করেন। তাদের সবাইকে আবির দিয়ে রাঙিয়ে দেন। এ আবির খেলার স্মরণে হোলি উৎসব পালন করা হয়ে থাকে বলে প্রচলিত আছে। এ ছাড়া বলা হয়ে থাকে, কৃষ্ণ নিজের কৃষ্ণ রঙ্গ ঢাকতে বিভিন্ন ধরনের রঙ্গ মাখিয়ে রাধার সামনে হাজির হন। সেই থেকে এ উৎসবের শুরু।।
বৈষ্ণব মতে বসন্তের পূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে বধ করেন। অন্যায়কারী, অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর সকলে আনন্দ করে। এই অন্যায় শক্তিকে ধ্বংসের আনন্দ মহাআনন্দে পরিণত হয়।
নারদ পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ ও ‘জৈমিনি মীমাংশায়’
রঙ্গ উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায় । ৩০০ খৃষ্টপূর্বাব্দের এক শিলালিপিতে রাজা হর্ষবর্ধন কর্তৃক ‘হোলিকোৎসব’ পালনের উল্লেখ পাওয়া যায় । হর্ষবর্ধনের নাটক ‘রত্নাবলী’তেও হোলিকোৎসবের উল্লেখ আছে । এমনকি আল বেরুণীর বিবরণে জানা যায় মধ্যযুগে কোন কোন অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষও হোলিকোৎসবে সংযুক্ত হতেন। ১৪৮৬ সালের এই পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে একে গৌর-পূর্ণিমা নামে জানাযায়।
''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।''
অন্যায়কে পরাজিত করার আনন্দে সকলের মন রাঙিয়ে উঠুক। চৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবে সকলের মন আনন্দে নেচে উঠুক অবশ্যই এই ‘কলিযুগের যুগধর্ম হরিনাম’ জপ ও কীর্ত্তন করুন। হোলির রঙ্গে আমাদের জীবন রঙ্গীন হোক। তবে কারো অনুমতি না নিয়ে কাউকে রঙ্গ
লাগানো অপরাধ,ধর্মের চোখেও পাপ, যাকে রঙ্গ
দিবেন তাকে প্রণাম করে সন্মান প্রদর্শনের পরে রঙ্গ দিবেন।কেউ বিষাক্ত রঙ্গ ব্যবহার করবেন না । মদ্যপান সহ অসংগত পূর্ন কাজ করবেন না ।। শুধু আবির ব্যবহার করবেন।।
জয় শ্রীরাধে💖🙏
জয় শ্রীরাধে💖🙏
জয় শ্রীরাধে💖🙏
No comments:
Post a Comment