Sunday, March 29, 2020


নিত্যলীলা প্রবিষ্ট ওঁ বিষ্ণুপাদ পরিব্রাজকাচার্য্য ত্রিদন্ডী স্বামী ১০৮ শ্রী - শ্রীমদ্ভক্তিহৃদয় বনদেব গোস্বামী মহারাজ
(আবির্ভাব)
পূর্ববঙ্গের ঢাকা জেলার অন্তর্গত মুন্সীগঞ্জ মহকুমার রাজবাড়ী থানার অধীনস্থ বিক্রমপুর জেলায় বরদ গ্রামে ব্রহ্মর্ষি শ্রীযুক্ত রজনীকান্ত মুখোপাধ্যায় তৎপত্নী  শ্রীমতি দক্ষিণাকালী দেবীকে জগৎ সম্বন্ধে পিতা - মাতা রূপে অবলম্বন করিয়া ''নিত্যধাম গোলক - বৃন্দাবন চন্দ্র স্বয়ং ভগবান - লীলা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ গৌরসুন্দরের বার্ত্তা - বাহক নিত্য পরিকর বিশেষ, বৃন্দাবনেশ্বরী - শ্রীমতি রাধারাণীর নিত্যলীলা সহচরী - বৃন্দাবনীয় - নিভৃত - নিকুঞ্জ লীলায় নিত্যসেবা পরায়ণা ''নয়নমণি মঞ্জরী'' - যূথেশ্বরীর প্রিয় - সহচরী ''লতিকা - মঞ্জরী'' তাঁহাদের চতুর্থ পুত্র তথা কনিষ্ঠ পুত্র রূপে দিব্যজ্যোতি সম্পন্ন এক অলৌকিক লক্ষণ যুক্ত হইয়া ১৯০১ সালে ২৩শে মার্চ্চ,বাংলা ১৩০৭ সালের ১১ই চৈত্র পরম মঙ্গলময়ী তিথিবরায় ব্রহ্মর্ষি শ্রীযুক্ত রজনীকান্ত মুখোপাধ্যায় ভবন আলো করিয়া জন্মগ্রহণ  করিলেন I পিতা মাতা নাম রাখিয়াছিলেন নরেন্দ্রনাথ বা ''নসু''

শিশুকাল হইতেই নসু প্রায় সময়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগিতেন।বাল্যকাল হইতেই তিনি অন্যান্য খেলার সাথীদের থেকে আলাদা থাকিতেন। তুলসী মন্দির তৈরী করা,তাহাতে তুলসী বসাইয়া পূজা করা,ভোগ দেওয়া,পরিক্রমা,প্রণাম করা,শ্রীহরিনাম - সংকীর্ত্তন করা,নিত্য গঙ্গা স্নান করা এবং গঙ্গা পূজা করা ভক্তিমতী মাতৃদেবীর সহিত বারোমাসে তেরো পার্বণ উপবাস করা ছিল তাঁহার স্বাভাবিক স্বভাব সিদ্ধ লক্ষণ।

অতি ছোট বেলা থেকেই নরেন্দ্রনাথ ছিলেন তপস্বী প্রকৃতির।পদ্মার তীরে বসিয়া দীর্ঘ সময় ধরিয়া পদ্মার বক্ষমাঝে এক দৃষ্টে চাহিয়া থাকিতেন। দেখিলে মনে হইত যেন কোন হারানো মাণিক খুঁজিয়া বেড়াইতেছেন।নরেন্দ্রনাথ সেই জীবনে প্রথম প্রভাত বেলার কোন এক শুভক্ষণে তিনি তাঁর প্রাণারাম চিরবান্ধব শ্রীকৃষ্ণকে খুঁজিতে শুরু করিয়াছিলেন।তাঁহার সমগ্র জীবনটাই ছিল ''আমি খুঁজে  বেড়াই তাঁরে।'' জীবনের শুরু থেকেই তাঁহার শ্রীকৃষ্ণ চরণে বিশুদ্ধ নির্ম্মল ভক্তি,অনুরাগ অঙ্কুরোদ্গম হইয়া ধীরে ধীরে বর্দ্ধিত হইয়া জীবন সায়াহ্নে শ্রীরাধাকৃষ্ণের যুগলসেবা স্পর্স সুখ সিদ্ধির সুম্মিত প্রকোষ্ঠে অবস্থান করিয়া বলিয়া গেলেন,- ''এই জীবনেই চেষ্টা (সাধনা) করিলে শ্রীকৃষ্ণ চরণ লাভ হয়।''

নরেন্দ্রনাথ শৈশব থেকেই শ্রীকৃষ্ণের আলেখ্য নিজের শয়ন কক্ষে রাখিতেন এবং শয়নের সময় বক্ষে রাখিয়া ঘুমাইতেন।বাড়ির বাহিরে কোথাও যাইলে শ্রীকৃষ্ণের আলেখ্য সঙ্গে থাকিত।ওই সঙ্গে শয়ন কক্ষে সদাশিবের আলেখ্য ও রাখিতেন।শ্রীকৃষ্ণ ও ধ্যানমগ্ন মহাদেবের ছবি দেখিয়া আসনে পদ্মাসনে বসিয়া নরেন্দ্রনাথ চক্ষু মুদিয়া শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান করিতেন,তখন দুই চক্ষু দিয়া অশ্রু বাহিয়া যাইত।

ছোটবেলা থেকে নরেন সাধু হইবার স্বপ্ন দেখেন।সাত বছর বয়সের সময় থেকে সন্ন্যাসী হইয়া সংসার ছাড়িয়া চলিয়া যাইবার তার খুবই ইচ্ছা।বি.এ. অনার্স পরীক্ষার দিন উপস্থিত। কিন্তু তাহার বিন্দুমাত্রও খেয়াল নাই,কেবল কৃষ্ণ চিন্তা এবং কৃষ্ণান্বেষণ,গুরুপাদপদ্মের চিন্তা তাঁহাকে পাগল করিয়া তুলিল। কোথা যাই,কি করি,কোথায় যাইলে আমার গুরুদেবের দর্শন পাইব,কে বলে দিবে ? নরেনের মনে কোন শান্তি নাই।হঠাৎ সংবাদ আসিল পিতা রজনীকান্ত দেশের বাড়িতে অতীব অসুস্থ,তাঁহার চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের বড় ডাক্তার দেখাইয়া তাঁহার আরোগ্যের ব্যবস্থা করিতে।জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার আদেশ শিরোধার্য্য করিয়া অসুস্থ পিতাকে লইয়া সঙ্গে মাতা,বড় দিদি  সরলা দেবীকে সহ ঢাকার পেণ্ডেরিয়াতে সরযূবালা দাস গুপ্তার বাড়িতে উঠিলেন।সেখানে থাকিয়া পিতার চিকিৎসা চলিতে থাকিল।সেইসঙ্গে প্রত্যহ পিতার ডাক্তার,ঔষধাদি সব ব্যবস্থা করিয়া দিয়া এখানে ওখানে গুরুর সন্ধান করিতে থাকিলেন।

নরেনের এইরূপ হতাশার চিহ্ন ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের প্রৌঢ়া কন্যা ময়ূরবালা দেবীকে চিন্তিত করিল।তিনি একদিন নরেনকে ডাকিয়া বলিলেন,নরেন তোমার মনের অবস্থার কথা আমি বুঝি,তুমি সদগুরুর অন্বেষণ করিতেছ। তুমি সংসার ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে চাও।তোমায় একটি ঠিকানা বলিয়া দিতেছি তুমি সেখানে যাইতে পারিলে তোমার মনের অভাব পূর্ণ হইবে।তুমি ''নবাবপুরে মাধবগৌড়ীয় মঠে'' চলিয়া যাও তুমি শান্তি পাইবে এবং তোমার প্রাণের আত্মীয়ের সন্ধানও পাইবে।এই কথা শুনিয়া মাত্র তিনি চমৎকৃত  হইয়া উঠিলেন।তিনি তৎক্ষণাৎ পিতার ঔষধ ইত্যাদি সকলই ভ্রাতা ভগিনীকে বুঝাইয়া দিয়া বাহির হইলেন নবাব পুরে যাইবার জন্য।

পেণ্ডেরিয়া রেল স্টেশন হইতে ঢাকা রেল স্টেশনে পৌঁছিয়া তথা হইতে ঘোড়ার গাড়ী করিয়া নবাবপুর মুখ্য রাস্তার উপর অবস্থিত ''মাধবগৌড়ীয় মঠে'' পৌঁছিলেন।কোন প্রকার দ্বিধা না করিয়া চরম উল্লাসে সিঁড়ি বাহিয়া উপরে দ্বিতলে যাইয়া এক জন সাধুকে কর জোড়ে নমস্কার করিলেন।  সাধুজী একটু ইতঃস্তত ও ব্যস্ত প্রায় হইয়া নরেনকে বেশ শিক্ষিত অতি ভদ্র পরিবারের মনে করিয়া বলিলেন,- ''মঠরক্ষক বাহিরে গিয়াছেন ফিরিতে কিছু বিলম্ব হইবে।'' উত্তরে নরেন বলিলেন আমি তাঁহার জন্য অপেক্ষা করিব,দেখা না করিয়া ফিরিব না। সেই সাধু নরেন কে সানন্দে সম্মতি জ্ঞাপন করিয়া নাট্য মন্দিরে বিশ্রামের ব্যবস্থা করিয়া দিলেন।

কিছুক্ষন পরে শ্রীমন্দিরের দরজা খোলা হইলে নরেন্দ্রনাথ দেখিলেন, সিংহাসনে দণ্ডায়মান অতি অপূর্ব নয়নানন্দকর হৃদয় হরণ শ্রীগৌরসুন্দরের বিগ্রহ।মঠে তখন রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ ছিল না।নরেন শ্রীমন্মহাপ্রভুর অভূতপূর্ব চিত্তাকর্ষক শ্রীবিগ্রহের সম্মুখে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করিয়া শ্রীগুরুপাদপদ্ম লাভের জন্য তাঁহার হৃদয়ের আর্ত্তি নিবেদন করিলেন। কিছু ক্ষণ পরে অন্নপ্রসাদ গ্রহণ করিয়া মঠরক্ষক শ্রীপাদ সত্যেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীকে চিত্রপটে দৃষ্ট মহাপুরুষের পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলে তিনি জানাইলেন,- ঐ মহাপুরুষ তাঁহাদের শ্রীগুরুদেব। নাম পরমহংস  পরিব্রাজকাচার্য্য  শ্রী - শ্রীমদ্ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী ঠাকুর। শ্রীল প্রভুপাদ বর্ত্তমান কলিকাতা গৌড়ীয়মঠে এবং মায়াপুর শ্রীচৈতন্যমঠে অবস্থান করিতেছেন। আমরা শ্রীগুরুদেব সরস্বতী ঠাকুরকে ''প্রভুপাদ'' বলিয়া সম্বোধন করি।

নরেন জিজ্ঞাসা করিলেন।কলিকাতা  যাইলে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করা যাইবে কি না ? মঠরক্ষক জানাইলেন অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে যে,নিশ্চয়ই সাক্ষাৎ করা যাইবে।নরেন তৎক্ষণাৎ মনে মনে সংকল্প করিলেন,কলিকাতা যাইয়া প্রভুপাদ শ্রীগুরুদেবের শ্রীচরণে চিরকালের জন্য আত্মসমর্পণ করিব,সংসার বন্ধন চিরতরে ত্যাগ করিব। এই ভাবিয়া কাহাকেও কিছু না বলিয়া অনেক রাত্রে মঠ হইতে নরেন পেণ্ডেরিয়া বাসভবনে ফিরিয়া আসিলেন।তৎপরদিন ডাঃ প্রতুলপতি গাঙ্গুলী মৃত্যুশয্যায় শায়িত পিতাকে দেখিতে আসিয়া জানাইলেন যে,- একটি বিশেষ ঔষধ কলিকাতা ট্রপিক্যাল মেডিকেল স্কুল হইতে আনিতে হইবে।ঔষধটি এই ঢাকাতে পাওয়া যাইবে না।আরও জানাইলেন যে, তাঁহাদের আর এখানে বাসাভাড়া করিয়া থাকিবার প্রয়োজন নাই,রোগীকে লইয়া বাড়ী ফিরিতে পারেন।

নরেন্দ্রনাথ দেখিলেন,তাঁহার স্থির সংকল্প সাফল্যের পথে ভগবান সহায় হইয়াছেন। তিনি তৎক্ষণাৎ বড় ভগ্নীপতি শ্রীমনমোহনকে টেলিগ্রাম করিয়া জানাইলেন,তিনি যেন অতি শীঘ্র ঢাকা আসিয়া রোগী পিতা ও মাতা ভগিনীকে লইয়া বহরের বাড়ীতে লইয়া যান।পত্র পাওয়া মাত্র ভগ্নীপতি ঢাকা পৌঁছিলে তাঁহাকে সকল বিষয়ে বিশেষ ভাবে অবহিত করাইয়া মৃত্যু শয্যায় শায়িত পিতা - মাতা ভগিনীর সম্পূর্ণ দায়িত্ব ভার দিয়া নৌকায় তুলিয়া দিলেন। নৌকা ছাড়িবার প্রাক্কালে মাতা কাঁদিতে কাঁদিতে আচম্বিতে বলিয়াছিলেন ''নসু ! আমাদের যেন জলে ভাসিয়ে দিয়ে তুই চলে যাস না !!'' জননী যেন নরেনের  ভবিষ্যতের মনের গুপ্ত উদ্দেশ্য জানিয়া ফেলিয়াছিলেন।এই বলিয়া নৌকা ছাড়িয়া দিলে জননী অপলক অশ্রু বিসর্জিত নেত্রে নরেনের দিকে চাহিয়া রহিলেন।

শ্রীপাদ নরেন্দ্রনাথ পরদিন ১৩১৩ বঙ্গাব্দ,১লা আষাঢ় প্রাতেই রওনা হইয়া কলিকাতা ১নং উল্টটাডিঙ্গি জংশন রোডে পরেশনাথ মন্দিরের সংলগ্ন গৌড়ীয়মঠে পৌঁছিলেন।প্রভুপাদের ঘরে প্রবেশ করিয়া প্রভুপাদকে প্রথম দর্শন মাত্রেই তিনি বুঝিতে পারিলেন ইনিই আমার জন্ম - জন্মান্তরের নিত্যকালের উপাস্য আশ্রয় বিগ্রহ পরমআত্মীয় শ্রীগুরুদেব। শ্রীল প্রভুপাদ বলিলেন,- ''সকালে বিকালে এবং রাত্রে প্রসাদ পাওয়ার সময় নীচে যাইবেন। বাকি সারাটি দিবস রাত্রি পর্য্যন্ত আমার কাছে হরিকথা শুনিবেন।আপনার এখন কেবল হরিকথা শ্রবণ ছাড়া অন্য কোন কাজ নাই।আপনার এখন প্রচুর হরিকথা শ্রবণ করা দরকার।'' নরেন শ্রীল প্রভুপাদের নির্দ্দেশ শ্রবণ করিয়া হতবাক হইয়া ভাবিতে লাগিলেন শ্রীল গুরুদেবের কত উদার অসীম স্নেহ এই হতভাগ্যের প্রতি তিনি ক্রমে ক্রমে কত কাছে টানিয়া লইতেছেন। উল্টাডিঙ্গীমঠে আসিবার এক মাসের মধ্যে শ্রীলপ্রভুপাদ নরেন্দ্রনাথকে হরিনাম ও দীক্ষামন্ত্র দান করিলেন।পারমার্থিক নাম হইল ''শ্রীপাদ নন্দসুনু ব্রহ্মচারী।'' সে সময় নরেনের বয়স ২৪ বৎসর।

প্রতি বৎসর শ্রাবণ/ভাদ্র মাসে গৌড়ীয়মঠের বার্ষিক উৎসবের আনুকূল্যে সংগ্রহ এবং মহাপ্রভুর কথা  প্রচারের  জন্য মঠস্থ সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারী সহ তিন চারটি দলে বিভক্ত হইয়া বিভিন্ন দিকে যাইতেন। এই বৎসর শ্রীলপ্রভুপাদের নির্দ্দেশে শ্রীপাদ নন্দসুনু ব্রহ্মচারী কলিকাতা হইতে যশোহর জেলার বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে শ্রীমন্মহাপ্রভুর কথা প্রচার করিতে চলিয়াছেন।শ্রীপাদ নন্দসুনু ব্রহ্মচারী অন্যান্য ত্রিদণ্ডিপাদগণের সহিত বিভিন্ন স্থানে চট্টগ্রামে ১৩৩১ বঙ্গাব্দ ৪ঠা পৌষ,বিরাট জনসভায় ''জীবনের উদ্দেশ্য ও সদগুরুর প্রয়োজনীয়তা'' বিষয়ে অপূর্ব বক্তৃতা দেন তাহাতে মানুষ - হারানো পথের সন্ধান পান,জীবনের বাস্তব কর্তব্য সম্বন্ধে অবগত হন এবং প্রচুর শান্তিলাভ করেন।

শ্রীপাদ নন্দসুনু ব্রহ্মচারীর এমন যুক্তি ও সিদ্ধান্ত পূর্ণ মনোমুগ্ধকর আত্মস্পর্শী হরিকথা পরিবেশন এবং প্রচার দক্ষতা দেখিয়া শ্রীগৌড়ীয়মঠের আচার্য্যভাস্কর শ্রীলপ্রভুপাদ ১৩৩২ বঙ্গাব্দ ১৯শে ভাদ্র, ১৯২৫,৪ঠা সেপ্টেম্বর শুক্রবার চরম উৎসাহের সঙ্গে দুইজন উচ্চ শিক্ষিত যুবক শ্রীপাদ নন্দসুনু  ব্রহ্মচারী ও শ্রীপাদ সর্ব্বেশ্বর  ব্রহ্মচারীকে ত্রিদণ্ড সন্ন্যাসমন্ত্র প্রদান করতঃ দিব্য ভক্তিসন্ন্যাস জীবনদান করিলেন। শ্রীপাদ নন্দসুনু ব্রহ্মচারীর সন্ন্যাস নাম 'ত্রিদণ্ডিভিক্ষু শ্রীমদ্ভক্তিহৃদয় বনদেব গোস্বামী মহারাজ' ও শ্রীপাদ সর্ব্বেশ্বর ব্রহ্মচারীর সন্ন্যাস নাম 'ত্রিদণ্ডিভিক্ষু শ্রীভক্তিসর্ব্বস্ব গিরিমহারাজ'।

ক্রমে ক্রমে সমাজের উচ্চস্তরের উচ্চ - সুশিক্ষিত,জ্ঞানী,গুণী,মানী,রাজা - মহারাজা,বংশ মর্য্যাদায় ব্রাহ্মণ - পণ্ডিত,বেদ - বেদান্তধ্যায়ী সমস্ত মানুষ জন শ্রীল মহারাজের আকুমার নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচর্য্য তেজঃপুঞ্জ ও ওজস্বীনী ভাষায় ঔদাত্ত কন্ঠে অলৌকিক প্রতিভা সম্পন্ন শ্রীব্যাসের উত্তর মীমাংসক নিখুঁত শুদ্ধ সিদ্ধান্ত পূর্ণ অতি বীর্য্যবতী বক্তৃতা ভাষণ,হরিকথা তথা শ্রীমন্মহাপ্রভুর বিশুদ্ধ নির্ম্মল প্রেমভক্তি ধর্মের কথা সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষ শ্রবণ করিয়া জীবনের প্রকৃত বাস্তব সত্যের কথা জানিতে পারিলেন I

শ্রীল প্রভুপাদ পরে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের মনীষীদের সঙ্গে পারমার্থিক বিষয়ে জড় বিজ্ঞানের বিধ্বংস লীলার মাঝে অপ্রাকৃত চিদ্বিজ্ঞানের প্রাকট্য আলোকের প্রেক্ষাপটে যে বিশদ গবেষণা ও আলোচনায় অত্যন্ত সুনিপুন দক্ষতার স্বাক্ষর রাখিয়াছেন,তিনি আর কেহ নহে অদ্বিতীয় প্রতিভা সম্পন্ন ''শ্রীমদ্ভক্তিহৃদয় বনদেব গোস্বামী মহারাজ'' I

২৩শে বৈশাখ ১৩৫০,কৃষ্ণচন্দ্রের চন্দনযাত্রা দিবসে অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে ভিত্তি পত্তন করত অলীগণ পরিষেবিত শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দের অপ্রাকৃত প্রেমসেবা লাভের সুনিশ্চিত আশাবদ্ধ হৃদয়ে লইয়া বুধবার ২৬শে আশ্বিন ১৩৫০ সন গোপীজনবল্লভের শরতরাস তিথিবাসরে গুর্ববানুগত্যে শ্রীবৃন্দাবনধামে একান্তে নির্জ্জন ভজনের জন্য নিজ ভজনকুটীরে প্রবেশ করিলেন I শ্রীল বনদেবগোস্বামী মহারাজ ব্রজধামে মহাপ্রভাবশালী সাধু ছিলেন I ১৯৫২ সালের এলাহাবাদ কুম্ভমেলায় চারি সম্প্রদায়ের আচার্য্যগণ স্ব - শিষ্য সমব্যবহারে পুস্পমাল্য চন্দনাদি দ্বারা ভূষিত করিয়া মস্তকোপরি ছত্রধারণ পূর্বক হস্তী পৃষ্ঠোপরি বসাইয়া মহাসংকীর্ত্তন যোগে তাহাকে সমগ্র মেলা পরিদর্শন যোগে বহু সম্মানিত করেন I

১লা শ্রীধর (৪৯৬ গৌরাব্দ),২২শে আষাঢ় ১৩৮৯ বঙ্গাব্দ,৭ই জুলাই ১৯৮২ খ্রীঃ,বৃহস্পতিবার কৃষ্ণা দ্বিতীয়া তিথিতে সাক্ষাৎ শ্রীবৃন্দাবন ধামে শ্রীশ্রীরাধামদনমোহন জীউর মন্দির সন্নিকটে তদীয় কালিয়দহস্থিত ''ভজনকুটির ভজনাশ্রমে'' রাত্রি ৯ঘটিকা ৪মিঃ সময়ে শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দের রাত্রি লীলায় সম্পূর্ণ সজ্ঞানে প্রবেশ লাভ করিলেন I

No comments:

Post a Comment

🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴🌴🌳 🌻🌼 শ্রীবলরামের রাসযাত্রা 🌹 শ্রীকৃষ্ণের বসন্তরাস 🌼🌻 🌳🌴🪴🌲🦚🍁💐🏵️🌺🌷🌺🏵️💐🍁🦚🌲🪴...